নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদায় বন্ধু! ভালো থাকিস রে হারামজাদা, ভালো থাকিস।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৭

গতকাল একটা ইম্পরট্যান্ট দিন ছিল। অবশ্য গতকাল সেটা টের পাইনি। টের পেলাম আজকে। ঘটনা বিস্তারিত বলা দরকার।

ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর আমার মাথায় পোকা ঢুকল – “বিদেশ যাবো। এম.এস. করবো।” ভালো কথা। এমনিতে আমার মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি একেবারেই নাই। অনেক মাথা খাটানোর পর আমার মস্তিস্ক থেকে যেসব আইডিয়া বের হয়ে আসে তার প্রত্যেকটাই অত্যান্ত মারাত্মক এবং বিপদজনক। শুরুতে কিছুই বোঝা যায় না। মনে হয় এর চাইতে ভালো কিছু আর হতেই পারে না। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর আসল বিপদ বোঝা যায়। অবশ্য ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে, ফেরার পথ বন্ধ। সেকারণে বিদেশ যাওয়ার আইডিয়াটা আপাত দৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও একা একা রিস্ক নিতে ইচ্ছা করলো না। আমি ভুলিয়ে ভালিয়ে আবিদকে রাজী করিয়ে ফেললাম। শুধু তাই না, আমরা একটা কোচিং এ ভর্তিও হয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য IELTES এর প্রিপারেশন।

তখনো আমরা সবাই বেকার। কাজকর্ম নেই। সারাদিন খাই-দাই আর নাক ডেকে ঘুমাই। সন্ধ্যার পর আর বাসায় থাকতে ভালো লাগে না। কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগে।

সন্ধ্যাকালীন অস্থিরতা কমানোর জন্য আমরা আড্ডা দেয়া শুরু করলাম ধানমণ্ডি আট নম্বরে, রবীন্দ্র সরোবরের ওখানে। ওই জায়গাটাই তখন সবার জন্য কনভেনিয়েন্ট ছিল। কারণ আবিদের বাসা ছিল নয়াপল্টন আর আমরা কয়েকজন থাকতাম শ্যামলী আর মোহাম্মদপুরের আশেপাশে। আড্ডা দেয়ার জন্য রবীন্দ্র সরোবরটাই মাঝামাঝি পড়ে।

যেহেতু শুধু কোচিং করলেই হবে না, আড্ডাও দিতে হবে – শুধু সেই কারনে আমরা রবীন্দ্র সরোবরের কাছাকাছি কলাবাগান শাখায় ভর্তি হয়েছিলাম।

আমার আবার কোন কিছুই বেশীদিন ভালো লাগে না। প্রথম প্রথম খুব উৎসাহ নিয়ে কোচিং শুরু করলাম। ক’দিন পর উৎসাহে ভাটা পড়লো। তাছাড়া বেকার অবস্থায় শ্যামলী থেকে অতদুর ধানমন্ডি গিয়ে আড্ডা দেয়ার ইচ্ছাটাও আস্তে আস্তে মরে গেল। এর মধ্যে কেউ কেউ চাকরী পেয়ে গেল। চাকরী করছে এমন কারো সাথে কোন বেকার কখনোই আড্ডা দেবে না। আমরাও পারলাম না। ধীরে ধীরে ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর শুন্য হয়ে গেল। আর আমিও চাকরী পেয়ে যাবার পর কোচিং যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। ব্যস! বিদেশ যাবার সেখানেই সমাপ্তি।

সমস্যা হল, এই বিদেশ যাবার ব্যাপারটায় যেহেতু ফুল কোর্স শেষ হয়নি, সেহেতু এই বিষয়টা আমার মাথা থেকে পুরোপুরি দূর হল না। হঠাৎ হঠাৎ আমার মনে পড়ে যায় – কিরে, আমার না বিদেশে পড়তে যাবার কথা?

র‌্যাংগস এ তিন বছর চাকরী করার পর আবার আমার বিকার উঠলো। তবে এবার বলা যায় বিনা খালার অনুপ্রেরনায়। এদিকে আম্মার বহুদিনের স্বপ্ন সবার কাছে বড়াই করে বলবে – “আপা জানেন, আমার ছেলে আমেরিকায় আছে। কম্পিউটারে এম.এস. করে এখন চাকরী করছে। ওখানেই সেটেল্ড। আমার আবার বিদেশ টিদেশ একদম ভালো লাগে না। কিন্তু আমার ছেলে আবার আমাকে ছাড়া থাকতেই পারে না। টিকিট পাঠিয়ে দিয়ে দিয়েছে, সামারে আমেরিকা বেড়াতে যাচ্ছি।”

আম্মার এই স্বপ্ন পূরণ হয়নি কারণ দেশের মায়া কাটিয়ে আমি বিদেশে যেতে পারিনি। আম্মা সম্ভবত সেই দুঃখের কথা বিনা খালার কাছেও বলেছে। শুধু বলেছে না, বলতে বলতে মনে হয় অতিষ্ঠ করে ফেলেছে। যে কারনে খালা এবার আটঘাট বেঁধে নেমেছে আমাকে এবার জার্মানিতে নিয়ে যাবেই। প্রস্তুতি হিসেবে বিনা খালা সেই জার্মানি থেকে আমার মোবাইলে ফোন করেছেন, খালু আর তমা আমাকে আলাদা আলাদা ইমেইল পাঠিয়েছে, এমনকি খালার চাপে পড়ে লাভলু ভাইও গতকাল একবার ফোন করে ফেলেছে। লাভলু ভাইকে আমি চিনি না। আম্মার কাছে শুনলাম তিনি জার্মানিতেই থাকেন। আমার মতো বলদ ছেলেদের বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ।

অতএব এবার কিছু একটা হলেও হয়ে যেতে পারে। চেষ্টা করতে তো দোষ নেই!

এতো দিনে দেশে থেকে কেমন যেন একটা শেকড় গজিয়ে গেছে। হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় কি হবে এতো সব করে, ভালোই তো আছি। দিনতো চলেই যাচ্ছে। এতো আরাম আয়েশ রেখে বিদেশে গিয়ে কি আর হবে! সামান্য কয়টা টাকার জন্য এতো রিস্ক নেয়ার কিইইই দরকার! তারচেয়ে দেশেই থাকি। দেখা যাক না, কতদুর কি হয়!

কিন্তু না। পর মুহূর্তে আবার মনটাকে শক্ত করতে হচ্ছে। নাহ! এসব দুর্বলতাকে এবার কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এবার আমি যাবোই।

এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। আগের ঘটনার সাথে এই ঘটনার একটা সূক্ষ্ম সম্পর্ক আছে। এতো ডিটেইলসে গেলাম না। আজ আমাদের ফুয়াদ ভাই দেশ ছেড়ে কম্বোডিয়া চলে গেল। ও যে শেষ পর্যন্ত চলেই যাবে ব্যাপারটা গতকাল পর্যন্ত ঠিক বিশ্বাস হছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল শেষ মুহূর্তে এমন একটা কিছু হবে যে ওকে আর যেতে হবে না। এমনকি গতকাল ফুয়াদকে যখন বিদায় দিচ্ছিলাম তখনো আমার একই অনুভূতি হচ্ছিল যে - না, এখনো তো সময় আছে। হয়তো আগামী কাল এয়ারপোর্ট থেকে ফুয়াদ ফোন করে বলবে, “দোস্ত, ক্যাম্বোডিয়া আর গেলাম না। অফিস শেষ করে তুই শ্যামলী চলে আয়। অনেক দিন আড্ডা দেই না।”

কিন্তু না। আমাকে প্রচন্ড হতাশ করে দিয়ে ফুয়াদ হারামজাদা চলেই গেল। বারোটার দিকে ও শেষবারের মতো ফোন করে জানালো, বোর্ডিং পাশ নিয়ে ফেলেছে আর কিছুক্ষণ পর নাকি সত্যিই চলে যাবে! ওর কথাগুলো শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু মন খারাপ করে কি হবে? চারপাশে যে অবস্থা তাতে দেশে থাকার মতো পরিস্থিতি নেই।

ফুয়াদের কম্বোডিয়া চলে যাওয়া আর আমার বিদেশ যাওয়ার বিকার ওঠার মধ্যে একটা দূরবর্তী সতর্ক সংকেত আছে। ব্যাপারটা আমরা কেউ কি খেয়াল করেছি? দেশের যে অবস্থা তাতে কারো অবস্থাই স্টেবল না। এই যে ফুয়াদ ধুম করে দেশের বাইরে চলে গেল, কেন গেল? চমৎকার চাকরী করছিল, বেতনও পাচ্ছিল আমাদের চাইতে বেশী। হঠাৎ করেই বেচারাকে বিপদে ফেলে কোম্পানিই বন্ধ হয়ে গেল। কোন মানে হয়?

চাকরীর জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরও ওর কোন ব্যাবস্থা হল না। আর বেকার জীবনের যে কি যন্ত্রণা সেটা আমাদের চাইতে ভালো আর কে জানে? সেই যন্ত্রণা দূর করার জন্য একজন দীর্ঘদিনের বেকার যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকে। বিদ্রোহী নেতাজীর মতো ঘরকুনে কুঁড়ের বাদশা, চাকরী বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে সেই মিরের সরাই গিয়ে রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে আকাশের তারা গুনছে। আর ফুয়াদের তো সেই তুলনায় রাজকপাল, কেবল দেশ ছাড়তে হচ্ছে, তারা গোনার ঝামেলা নেই। হা হা হা।

এতো সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ-ই ঢং ঢং করে একটা ঘন্টা বাজতে থাকে মনের ভেতর। ভয়াবহ একটা কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এই চিন্তাটা এতোই বিভীষিকাময় যে আতংকে আমার হাত পা জমে যায়। আচ্ছা, ফুয়াদের মতো করে আমিও যদি হঠাৎ বেকার হয়ে যাই? যদি সময় মতো চাকরী খুঁজে না পাই? তখন কি হবে?

আমার প্রশ্নের উত্তর আমি কোথাও খুঁজে পাই না। চারপাশে যে দিকে তাকাই, শুধু শুনি কে যেন “হায় হায়!!!” করছে। কোন হারামজাদা কে জানে?

ক্লান্তিকর এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কাটছে আমার প্রত্যেকটা দিন। আর ভাল্লাগে না। হে অশান্তি! দূর হ তুই আমার জীবন থেকে! ফুয়াদের সাথে কম্বোডিয়া চলে যা। গুই সাপের সাথে খেলা কর। আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

সত্যযুগের মানুষ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। আমাদের অনেকেরও একই চিন্তা।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫২

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: হ্যাঁ রে ভাই! চিন্তায় চিন্তায় যায় বেলা

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৮

মামুন রশিদ বলেছেন: অস্থির সময় অস্থির ভাবনার চিত্র সুন্দর লিখেছেন ।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৭

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ধন্যবাদ, মামুন ভাই!

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪২

ড. জেকিল বলেছেন: ক্যান জানি বিদেশ যাইতে মন টানেনা। :( :(

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪০

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: খারাপ ভাবে না নিলেই হলো। কয়দিনের জন্য একটা এক্সপেরিয়েন্স নিতে যাচ্ছি সেটা ভেবে নিলেই সমস্যা অনেকখানি কমে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.