নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিজিবিজিঃ ০২ পালাবদল

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪





ছোটবেলার ঘটনা বলি। আমরা তখন আব্বার বদলির চাকরীর সুবাদে ময়মনসিংহের উপজেলা ঈশ্বরগঞ্জে। সেখানে সরকারী অফিসারদের জন্য কোয়ার্টার বানানো আছে। আমরা সেই কোয়ার্টারেই থাকি। ওখানেই এক স্কুলে ভর্তি হয়েছি। জীবনটা ছিল মার্ক টোয়েনের টম স্যয়ার বা হাকল বেরি ফিনের মতো আনন্দ আর অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ। কোয়ার্টারের এক দল বিচ্ছুর সাথে সকালে স্কুলে যাই, দুপুরে স্কুল শেষে সবাই মিলে হই হই করতে বাসায় ফিরে আসি। স্কুল থেকে আসার পথে যত রকম ফলের গাছ, নার্সারি বা ব্যাক্তিগত বাগান পাওয়া যেত আমাদের অত্যাচারের হাত থেকে কেউ রক্ষা পায় নি।

বিকেলটা ছিল খেলাধুলার জন্য। কোয়ার্টারে মাঠে আমরা ছোটাছুটি করে গোল্লাছুট, সাত চাড়া কিংবা দাঁড়িয়াবান্ধা খেলতাম। ক্রিকেট তখনো আমাদের কাছে এতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। খেলা সম্পর্কে আমাদের চিন্তা ভাবনা তখন অন্যরকম ছিল। সারাক্ষণ ঝেড়ে দৌড়াতে না পারলে সেটা আবার খেলা হয় কি করে আমরা তখন বুঝতাম না। মাঝে মাঝে বোম-বাস্টিং নামে একটা ভয়াবহ খেলা খেলা হতো। এই খেলার একটাই নিয়ম - একটা টেনিস বলকে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের গায়ে আঘাত (আমরা বলতাম হিট। আঘাত শব্দটা দিয়ে জিনিষটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।) করতে হবে। আঘাত যত জোরে হবে তত মজা। ব্যাথা পেয়ে প্রতিপক্ষ যত বেশী আর্তনাদ করবে আনন্দের পরিমান তত বেশী। ভাগ্য ভালো বলতে হবে, এই ধরণের সংগত কারনেই পৈচাশিক নিয়মিত খেলা হতো না।

সেসময় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার এতো যুগান্তকারী উন্নতি হয়নি। রাত আটটার পর যখন লোড শেডিং শুরু হতো তখন আমরা পঙ্গপালের মতো বাসা থেকে বের হয়ে আসতাম। এখন লোড শেডিং হলে আমরা বিরক্ত হই। আর তখন লোড শেডিং কখন হবে আমরা সেই অপেক্ষায় থাকতাম।

সেই অন্ধকারেও নানান খেলা চালু ছিল। সব চেয়ে মজা হতো যখন আমরা দল বেঁধে কোয়ার্টারের সীমানা প্রাচীরের ওপর বসে গল্প শুরু করতাম। পরিবেশটাও ছিল গল্প করার জন্য পারফেক্ট। কোয়ার্টারে কেন্দ্রস্থলে আমাদের যে খেলার মাঠটা ছিল তার একপ্রান্তে নিচু একটা দেয়াল ছিল। দেয়ালের পাশে ছিল একটা হাসনাহেনা গাছ। ছোটবেলায় আমাদের ধারণা ছিল রাতে হাসনাহেনা ফুলের তীব্র মাদকতাময় গন্ধে মাতাল হয়ে বিষাক্ত সাপেরা এই গাছের ডাল ধরে ফনা তুলে ঝুলে থাকতো। যদিও সেই দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আমাদের কখনোই হয় নি। জ্যোৎস্না রাতে হাসনাহেনার সৌরভে ডুবে থেকে আমরা যখন সে দেয়ালে বসে গল্প করতাম তখন সে গাছটাকে ঘিরে ঝাঁক ঝাঁক জোনাকি পোকা জ্বলতো আর নিভতো, হঠাৎ হঠাৎ ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থেকে একটা ঝিঁঝিঁ পোকা কোথা থেকে যেন তীক্ষ্ণ স্বরে ডেকে উঠতো। কি অদ্ভুত আর স্বপ্নময় ছিল সে সময়টা! সেসময় কি গল্প করতাম তা আজ আর মনে নেই, শেষ কবে জোনাকির আলোয় মুগ্ধ হয়েছি তাও মনে নেই। শুধু সেই সময়টার আবেশটুকু রয়ে গেছে।

জীবন বদলে যাচ্ছে। আনন্দের সময়টুকুও কীভাবে কীভাবে যেন হারিয়ে যাচ্ছে, নতুন অ্যাডভেঞ্চার এসে সেই জায়গা নিয়ে যাচ্ছে। তবুও ফেলে আসা কিছু জিনিষ কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেয়া মনে হয় ঠিক না। অন্যায় মনে হয়। এ যেন নিজের সাথে নিজের প্রতারণা। তবে দোষটা মনে হয় আমাদেরই।

গ্রীষ্মের দাবদাহে এখন প্রতিটি প্রাণেরই ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। তবে আমরা এখনো আশা ছাড়িনি। আমরা জানি এক সময় আকাশ পাতাল অন্ধকার করে মেঘ জমবে। দুপুর বেলাতেও সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসবে। গুরুগম্ভীর আওয়াজে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাবে। কাল বৈশাখীর দমকা শীতল বাতাস রাস্তার সমস্ত ধূলা উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তারপর সব শান্ত হয়ে যাবে। হঠাৎ করে বড় বড় ফোঁটায় শুরু হবে অঝোর শ্রাবণ। শুরু হবে বৈশাখের প্রথম অবিরাম বর্ষণ।

ভুলে যাওয়া কোন এক সময়ে, আমার অতি প্রিয় একজনকে নিয়ে এমনই এক বর্ষায় রিকসার হুড তুলে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। এই বছর তাকে সাথে নিয়েই আবার আমার ভিজতে হবে। যে করেই হোক। জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। আমিও বদলে গেছি। সূক্ষ্ম অনুভুতির দরজাগুলো একে একে সব বন্ধ হয়ে আসছে। তারপরও পেছনে ফেলে আসা কিছু জিনিষ কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেয়া ঠিক না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০৫

আমিনুর রহমান বলেছেন:



অনুভূতিগুলোর সুন্দর প্রকাশ !

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:২৫

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: আমিনুর রহমানভাই, দেরীতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত ভাই। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.