নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুভি রিভিউঃ Dead Poets Society

১৩ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১





নটরডেম কলেজের অরিয়েন্টেশনের দিন কলেজের প্রিন্সিপাল ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা আমাদের অন্তরে গেঁথে দিলেন ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য এই কলেজের সেই তিনটি শব্দ যা আজো আমি ভুলতে পারিনি - Diligite Lumen Sapientiae অর্থাৎ জ্ঞানের আলোকে ভালোবাসো। কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে নটরডেম কলেজ সম্পর্কে অনেক মিথ শুনেছি। যেমন এখানে একবার ভর্তি হতে পারলেই হল ভালো রেজাল্ট নাকি আপনাআপনিই এসে যায়। তারপর এখানে নাকি যেনতেন ছাত্র ভর্তি হতে পারে না। ভর্তি পরীক্ষায় টিকে গেলেও অত্যান্ত সূক্ষ্ম বাছাই প্রক্রিয়ায় একমাত্র তাদেরকেই এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়া হয় যাদের ভেতরে অন্যরকম কিছু একটা আছে।

এই মিথগুলো আমার ভেতরে পাকাপাকি ভাবে বিশ্বাসে রূপান্তরিত হল যখন দেখলাম আমার আশেপাশে সব বোর্ড স্ট্যান্ডরা ভাবলেশহীন মুখে বসে আছে। ওদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হল যেন বোর্ড স্ট্যান্ড কোন ব্যাপারই না। আর একেকজন শিক্ষক যেন একেকটা জ্ঞানের জাহাজ। এতো সুন্দরভাবে প্রতিটা বিষয় তারা আমাদের সামনে উপস্থাপন করছিলেন যে মনেই হচ্ছিল না এখানে পড়ালেখা করতে এসেছি।

যাই হোক, এতকিছু দেখে আমার মাথায় একটা দুর্দান্ত চিন্তা খেলে গেল। আচ্ছা, আমি তো তেমন কোন ভালো ছাত্র না, তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষাতেও তেমন একটা ভালো করতে পারিনি। তাহলে এরা আমাকে এখানে ভর্তি করলো কেন? চিন্তার বিষয়। খুবই চিন্তার বিষয়!

অনেক ভেবেচিন্তে আমি আবিষ্কার করলাম আমার ভেতরে নিশ্চয়ই “কিছু” একটা আছে। এই “কিছু একটা” যে কি সেটা সম্পর্কে সেসময় ধারনা করতে না পারলেও নটরডেম সম্পর্কে আমার আগাধ বিশ্বাস ছিল। আমার বিশ্বাস ছিল যে ওরা আমার মধ্যে সেই “কিছু একটা” খুঁজে পেয়েছিল বলেই এই ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য কলেজে আমাকে ভর্তি করেছিল।

আহ! কি সব স্বপ্নের মতো দিন ছিল সেসব! নটরডেমে নিজের ভেতরের আগুনের দেখা না পেলেও Dead Poet Society দেখতে গিয়ে আমার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।

যেমনটা বলেছিলাম, Dead Poet Society-র গল্পটা শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য Weldon একাডেমীর অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে। প্রিন্সিপাল নোলান একটি গুরুগম্ভীর বক্তৃতার মধ্য দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে “Tradition. Honor. Discipline. Excellence” – এই চারটি আদর্শের ওপর ভর করে এই বিদ্যাপীঠ ও তার প্রাক্তন ছাত্ররা সফল হয়েছেন। অরিয়েন্টেশনের শেষে তিনি সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন এই একাডেমীতে আগত নতুন শিক্ষক মিঃ কিটসের সাথে। এ বছর থেকে তিনি Weldon একাডেমীর ছাত্রদের সাহিত্য পড়াবেন।

ক্লাসের শুরুতেই দেখা গেল মিঃ কিটসের পড়ানোর ঢং এই একাডেমীর অন্য শিক্ষকদের বিরক্তিকর আর গতানুগতিক ধারা থেকে একদম আলাদা। কবিতা পড়ার বদলে তিনি চেষ্টা করলেন তার ছাত্রদের মধ্যে কবিতার অনুভব ছড়িয়ে দিতে – আর শেখালেন “Carpe Diem”। ব্যাতিক্রমি এই শিক্ষকের প্রতিটি কথা ছাত্ররা গোগ্রাসে গিলতে লাগলো।

কারপে ডিয়েম, meaning Seize the day অর্থাৎ জীবনে কে কিভাবে সফল হবে সেটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা না করে কিভাবে আজকের এই দিনটাকে উপভোগ করা যায়। )







এর মধ্যেই কৌতূহলী এক ছাত্র আবিষ্কার করলো যে মিঃ কিটস একসময় এখানেই অধ্যয়ন করেছেন। স্কুলের অ্যানুয়াল বুক থেকে তারা জানতে পারল মিঃ কিটস শুধু ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রই ছিলেন না, এসময় ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন, মৃত কবিদের সংঘ নামে একটা দল তৈরি করেছিলেন, এমনকি এই অ্যানুয়াল বুকের সম্পাদকও তিনিই। অ্যানুয়াল বুক তার সম্পর্কে বলা আছে – “This man most likely to do anything!” অর্থাৎ, বদমাইশিতেওও তিনি কম ছিলেন না।

সেদিন বিকেলে তারা মিঃ কিটসকে জেঁকে ধরল বিস্তারিত জানার জন্য। উৎসাহী ছাত্রদের কৌতূহল নিবৃত্ত করতে মৃত কবিদের সংঘ প্রসঙ্গে তিনি জানালেন যে জীবনের সবটুকু আনন্দ রস আস্বাদন করাই ছিল এই দলের সদস্যদের আসল কাজ। আর কিভাবে তারা সেটা করতেন? প্রতিদিন রাতের আঁধারে একাডেমীর গেট কিপারের দৃষ্টি এড়িয়ে তারা বাইরে বেড়িয়ে আসতেন। তারপর চলে জেতেন গভীর জঙ্গলে। সেখানে এক গুহার ভেতর আগুন জ্বালিয়ে শুরু হতো কবিতা পড়া।







অত্যান্ত রোম্যান্টিক এই আইডিয়া ওদের সবার ভালো লেগে যায়। আর এই বয়সটাই এমন যে যেকোন অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেলেই নেশা লেগে যায়। ওদের যেন আর তর সইছিল না। সেদিনই মৃত কবিদের আত্মাকে জাগাতে গভীর রাতে বের হয়ে আসে কয়কজন তরুণ। মৃত কবিদের সংঘ নতুন করে প্রান ফিরে পায়। আর এর সদস্যরা ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে বাস্তবতা থেকে দূরে প্রেমময়, উচ্ছল আর স্বপ্নময় এক জগতে।

অবশ্য তাদের ভুল ভাঙতে দেরি হয় না। বাস্তবতার রূঢ় আঘাতে ভেঙ্গে পড়তে থাকে তাদের বর্ণিল পৃথিবী। কিন্তু অন্তরাত্মার কথা যারা শুনতে শিখেছে তারা কি এতো সহজেই হেরে যাবে?

রবিন ইউলিয়ামস আমার প্রিয় একজন অভিনেতা। মূলত তার অভিনয় দেখার জন্যই এই সিনেমাটা দেখতে বসেছিলাম। কিন্তু সিনেমাটার গল্পটা আমাকে এতোই স্পর্শ করে গেছে যে আজকে অফিসেই যেতে পারিনি। হা হা হা।



আরও জানতেঃ Dead Poets Society In IMDB





আমার অন্যান্য রিভিউগুলোঃ



১) মুভি রিভিউঃ “π”

২) মুভি রিভিউঃ The Lunchbox



মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৫৩

রঙিনমানুষ বলেছেন: ভাল লাগল রিভিউ পড়ে । মুভিটা কালেকশনে আছে। দেখা হয়নি।দেখতে হবে।

১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৩০

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: দেখে ফেলেন, ভাল লাগবে নিশ্চিত

২| ১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪২

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
রিভিউ দিয়ে লোভ লাগিয়ে দিলেন।

ডাউনলোড লিঙ্ক দিলেন না কেন??? :(( :(( :((

১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:১৫

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: সত্যি দারুন সিনেমা। আমি টরেন্ট থেকে নামিয়েছিলাম!

৩| ১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১:২১

রঙিনমানুষ বলেছেন: @একজন ঘূণপোকা আপনার দুঃখ আর সহ্য হইল না।তাই লিংক দিলাম। :) :) :D :D

http://www.rodfile.com/bwlmj1uppbk2

১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:১৫

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান

৪| ১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:৪৪

মামুন রশিদ বলেছেন: মুভির নাম দেখেই পছন্দ হয়ে গেছে । ভালোই হলো, আপনি এইসব অসাধারণ ছবির নাম বলে দিবেন, আর আমি টুপ করে দেখে নিব ।

১৪ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: এটা একটা অসাধারণ মুভি মামুন ভাই। দেখে নিয়েন। কেমন লাগলো সেটা নিয়ে আপনিও একটা রিভিউ লিখে ফেলেন।

৫| ১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:০১

শুঁটকি মাছ বলেছেন: প্রচুর মুভি দেখলেও মুভি রিভিউ লিখতে আমার তেমন স্বস্তি লাগেনা। তবে মুভি রিভিউ পড়লেই ওটা দেখে ফেলি। আর আপনার মুভি রিভিউ পড়ে শুধু মুভির না, আমি আপনার লেখারও মুগ্ধ পাঠক হয়ে গেলামরে ভাই!

এত সাবলীল!!!!!

১৪ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৩

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: লেখার মধ্যে মনে হয় লুব্রিক্যান্ট বেশী পড়ে গেছে এই কারনে এতো ফ্রিকশনলেস (সাবলীল) হা হা হা।

মুভিটা দেখে ফেলেন। দেখলেই বুঝবেন সিনেমাটা আমার রিভিউএর কাছে কিছুই না।

ধন্যবাদ পড়ার জন্য!

৬| ১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৮

চিশতী শুভ বলেছেন: আপনার রুচি আর আমার রুচির দারুন মিল । এক নিঃশ্বাসে আপনার অন্য রিভিউ গুলাও পড়ে ফেললাম । অসাধারণ । আপনার কাছ থেকে আরও রিভিউ আশা করছি ।

১৪ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: সবগুলো রিভিউ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলে ঠিক লিখবো বলেই রিভিউগুলো লেখা না, সিনেমাগুলো দেখার পর অদ্ভুত একটা অনুভূতি ছিল সেটাকে ধরে রাখার জন্যই এই রিভিউ। রিভিউ পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো।

৭| ১৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:৩৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


এই মুভিটা দেখা হয়নাই। দেখতে হবে। রিভিউ চমৎকার লাগছে। মূলত রিভিউ পড়ে দেখার আগ্রহ জাগছে।

১৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:১৬

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: কান্ডারি ভাই, দেখে কেমন লাগলো সেটা জানাতে ভুলবেন না। আপনাদের ফিলিংসটা জানতে না পারলে এই রিভিউটার কোনই দাম থাকবে না।

৮| ১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:০৫

রহস্যময়ী কন্যা বলেছেন: রিভিউ পড়ার পর মুভিটা দেখতে ইচ্ছে করছে

১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ডাউনলোড করা থাকলে দেখে ফেলেন। :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.