নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রেমের গল্পটা

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭



অল ইন্ডিয়া রেডিওর অফিসটা গোহাটি বাজারের কাছেই। বাজারের সাথে লাগোয়া ভিক্টোরিয়ান কায়দার যে বড় বাড়িটা আছে ওটাই অল ইন্ডিয়া রেডিওর অফিস। বাড়িটা শতায়ু এবং বেশ জীর্ণ হলেও এর আভিজাত্য এখনো টিকে আছে। এই মুহূর্তে অফিসের সামনের পোর্চে একটা মারুতি জিপ দাড়িয়ে আছে ষ্টেশন ডিরেক্টর মিসেস কিরণ দেব বর্মণের অপেক্ষায়।

এদিকে সন্ধ্যার পরপরই চারদিক সুনসান হয়ে যায়। রাত আটটা বাজলেই মনে হবে যেন গভীর রাত। ষ্টেশন ডিরেক্টর মিসেস কিরণ দেব বর্মণের আজ একটু দেরীই হয়ে গেল। তবে সমস্যা নেই, সাথে গাড়ি আছে। বাসায় পৌছাতে বেশী সময় লাগবে না। তবে বাসায় পৌঁছেই হুলুস্থুল শুরু হয়ে যাবে। তিনি বাসায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তাঁর ছেলে দু’টো পড়ার টেবিলে বসবে না। এতো পাজি হয়েছে ওরা! অথচ কদিন আগেই এই এত্তটুকু ছিল! আহ! কিভাবে দিন পার হয়ে যায়! সময় যত যাচ্ছে দিককে দিন ছেলে দু’টো পাজির পাঝাড়া হয়ে উঠছে! এখনই ওদের শায়েস্তা না করলে পরে পশ্চাতে হবে।

এতো কিছুর পরও ছেলেদের নানান দুষ্টুমির কথা ভেবে মিসেস কিরণের ঠোঁটের কোণে প্রশ্রয়ের হাসি দেখা যায়। তবে পর মুহূর্তেই ক্ষীণ সেই হাসি সরে গিয়ে তাঁর স্বভাবসুলভ কাঠিন্য ফুটে ওঠে চেহারায়। নাহ! অনেক বাঁদরামি হয়েছে, আর না।

ওদের পড়তে বসিয়ে তিনি রান্না শুরু করবেন, সময় পেলে আগামী মাসের অন এয়ারে যাবে এমন কয়টা প্রোগ্রামের শিডিউলটা মিলিয়ে নিতে হবে। অনেক কাজ। অথচ অফিস থেকে বের হতেই দেরি হয়ে গেল।

খানিকটা বিরক্তি নিয়ে তিনি গজগজ করতে করতে অফিস থেকে বের হলেন।

গাড়িতে উঠতে যাবেন এমন সময় তাঁর চোখে পড়ল রিলে রুমের আলো জ্বলে আছে।

“অ্যাই সুবীর, রিলে রুমে আলো জ্বলছে কেন?”

সুবীর এই রেডিও ষ্টেশনের রেকর্ডারের কাজ করে। সময় সুযোগ মতো ম্যাডামের বাসার কিছু ফাই ফরমাশের কাজও করে দেয়। মিসেস কিরণের প্রশ্নের জবাবে সুবীর হাত কচলাতে কচলাতে চওড়া হাসি দিয়ে বলল,

“অমর দাদা আজ স্টেশন দখল করেছে ম্যাডাম! বলছিল, আজ কিছু অন্যরকম হবে।”

সুবীরের জবাব শুনে তিনি রিলে রুমের দিকে একবার তাকালের। মুখের হাসিটা আবার ফিরে এলো তার। অমর ভার্মা দিল্লী থেকে এসেছে। প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ। দারুণ উচ্ছল ছেলে। সারাক্ষণ হাসি ঠাট্টা করে চারপাশ মাতিয়ে রাখে। আজ আবার কোন পাগলামি মাথায় চেপেছে কে জানে? গাড়িতে উঠে মুখের হাসি নিয়ে বহুদিন পর কর্মস্থল ত্যাগ করলেন তিনি।



ওদিকে রিলে রুমের সাউন্ড প্রুফ রুমে অমর ভার্মা নাটকীয় ঢঙ্গে বলে চলেছে : -

“নিশুতি রাত। হাফলং ষ্টেশন। আমি ষ্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলাম। আধঘণ্টার মধ্য ট্রেন চলে আসার কথা কিন্তু চলে এলো ঝড়!

অমর মুখ দিয়ে ঝড়ের দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার মতো একটা শব্দ করে শ্রোতাদের তুমুল ঝড়ের রাতের কথা মনে করিয়ে দিয়ে দ্রুত লয়ে বলতে থাকে-

“ঝড়টা এলো যেন শিশুদের মতো খেলতে খেলতে, বিদ্যুৎ শিখার তীব্র ফলায় আকাশের বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে চিড় ধরাতে ধরাতে! ঝড়ো হাওয়ায় গাছগুলো এমনভাবে ঝুঁকে যাচ্ছিলো যেন তার হুঁশ হারিয়ে ফেলবে!!...টিনের চালে গাছের ডালপালাগুলো চাবুকের মতো আছড়ে পড়ছিল। খানিক-বাদেই মুহুর্মুহু বজ্রপাতের সাথে মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হল। প্রকৃতি যেন আজ তৈরি হয়ে এসেছে - তীব্র রোষে পৃথিবীকে আজ ধ্বংস করে দেবে! বুম!”



প্রচণ্ড উত্তেজনায় টেবিলে ধাম করে একটা চাপড় দেয় অমর-



“আর এইসবের মধ্যে আমি প্লাটফর্মের অপর প্রান্তে অন্ধকারে যেন একটা অবয়ব দেখতে পেলাম। আমার হাতে একটা সিগারেট ছিল, কিন্তু ম্যাচ নেই। হাঁক দিয়ে আগন্তুকে জিজ্ঞেস করলাম-

“এই যে ভাই, আপনার কাছে ম্যাচ হবে?”

“হঠাৎ এক দমকা হাওয়া সেই আগন্তুকের গায়ে জড়িয়ে রাখা চাদরটা হ্যাঁচকা টানে সরিয়ে দিল!”



অমরের গলার স্বর হঠাৎ করে খাদে নেমে যায়-



“ওহ! এ যে একটা মেয়ে!”

“ছোট ছোট চোখ দু’টোয় কি অদ্ভুত গভীরতা!”

“চিবুকের পাশ থেকে ওপরের দিকে, গালের কাছটায় একটু উঁচু হয়ে গেছে। বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে গালের ওপর।”

“ছোট্ট একটা নাক, যেন খুব তাড়াহুড়ায় নাকটা লাগানো হয়েছে।”

“সোনালী চুল...”



অমরের মুখে একটা লাজুক হাসি ফুটে ওঠে। একই সাথে ওর বুকের ভেতরটা কেমন যেন হুহু করে উঠছে! কথা বলতে বলতেই লজ্জিত ভঙ্গিমায় মাথা ভরা ঘন চুলে হাত চালিয়ে নেয় সে, যেন লুকিয়ে প্রেমিকাকে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে। ক’দিন আগে হাফলং ষ্টেশনে দেখা হওয়া মেয়েটার মিষ্টি চেহারাটা মনে পড়ে যায় তার। মেয়েটাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে সে। সে কথা ভেবেই ওর চোখের তারায় খুশির দ্যুতি খেলা করতে থাকে।



তারপর একটুখানি বিরতি। অমরের গলার স্বর এবার দ্রুত হয়ে ওঠে-



“মেয়েটাকে দেখা মাত্র ছেলেটা সিদ্ধান্ত নেয় ওকে গুণ্ডাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে একটা সাদা ঘোড়ায় তুলে নিয়ে পালিয়ে যাবে সে অনেক দূরে...

টগবগ...টগবগ...টগবগ...”

নিজের সাথে রেডিওর শ্রোতাদেরকেও ঘোড়ায় চড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকে অমর ভার্মা।

“কিন্তু সেখানে না ছিল গুণ্ডারা, না ছিল সাদা ঘোড়া!”



আবার নীরবতা!



“চারপাশে ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দ।”

“মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে আমি গলা চড়িয়ে ক্ষমা চাইলাম,

“মাফ করবেন! আমি অন্ধকারে আপনাকে ভালভাবে দেখতে পাইনি। আপনাকে ছেলে ভেবে ম্যাচ চেয়েছিলাম!!”

“মেয়েটার জবাব – কিছু না, এক রাশ নীরবতা! শান্ত দৃষ্টিতে শুধু একবার তাকিয়ে দ্যাখে। কি মোহনীয় আর জাদুময় সে দৃষ্টি!”

“আমি ভেতর ভেতর অস্থির হয়ে উঠি। মেয়েটা কথা বলে না কেন? একটু হাসে না কেন? কিছু জিজ্ঞেস করে না কেন? আমি আনমনেই বলে উঠি-

“সিগ্রেট?...ওহ! সরি!”

হঠাৎ ... যেন ... মালা ছিঁড়ে এক ঝাঁক মুক্তা ঝরে পড়লো... মেয়েটা মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলো-

“এক কাপ চা!”

...

“ইয়েস!!!”

...

...

“ফুলের নকশা তোলা চায়ের কাপে গরম চা নিয়ে আমি প্লাটফর্মের দিকে পড়িমরি করে দৌড়ালাম। অন্যকোন দিকে আমার খেয়াল ছিল না শুধু এতটুকুই যেন চা পড়ে না যায়! প্লাটফর্মের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতেই আমি ট্রেনের হুইসেল শুনলাম।”

শঙ্কিত কণ্ঠে মাইকের সাথে মুখ লাগিয়ে অমর বলতে থাকে,

“দৌড়াতে দৌড়াতেই আমি ট্রেনটাকে প্লাটফর্মে প্রবেশ করতে দেখলাম। বুকটা ধ্বকধ্বক করে উঠলো অজানা আশংকায়। আমার জানা নেই ট্রেনটা কি আমার, না মেয়েটার? রেলের গার্ড লাল পতাকা দেখানোর সাথে সাথে সবুজ পতাকায় উড়িয়ে দিল।”

হুসসসস...হুসসসস...হুসসসস...

ট্রেনটা চলে গেল!

সে-ও চলে গেল!

...

“ফুলের নকশা তোলা কাচের গ্লাসে বৃষ্টির পানি জমতে থাকে। আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অন্ধকারে অপস্রিয়মাণ ট্রেনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি।”

...

নিশুতি রাত। আকাশে আজ একটা ফ্যাকাসে চাঁদ উঠেছে। গোহাটির অল ইন্ডিয়া রেডিওর রিলে রুমের নির্জনতায় দিল্লীর উচ্ছল ছেলে অমর ভার্মার বুকের গভীর থেকে একটা হাহাকার উঠে আসে-

“এটা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রেম কাহিনী।”

=============================================

Based on one of my faviorite movie: Dil se...

Starring Shahrukh Khan and Monisha Koirala



For those who haven't seen the movie:









আমার অন্যান্য লেখাঃ



১) একটি অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প

২) ফেরা

৩) জয়ানালের মধ্যরাতের কবিতা

৪) নিগূঢ় প্রতিবিম্ব

৫) পুনর্জাগরন

৬) একজন জাহেদা বেগম

৭) আক্ষেপ

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪৬

মামুন রশিদ বলেছেন: দিল সে রাখেন! আপনার লেখা গল্পটাই বেশি মজা হয়েছে :)

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১৭

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: হা হা হা! মামুন ভাই, দিল সে রেখে দিলে তো গল্পটা আসতো না!

ঘটনা হল - যে বয়সে দিল সে মুভি টা দেখেছিলাম সে সময় জীবন নিয়ে অনেক উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা ছিল, লুকিয়ে লুকিয়ে একজনের সাথের প্রেমও করছিলাম! বহুদিন পর মুভিটা আবার দেখে মনে হল শালার জীবনটাই আসলে উল্টা পাল্টা - তবে প্রেমের ব্যাপারটা ঠিক আছে ;)
সে কারণে "দিল সে"- চাইলেই বাদ দেয়া যাচ্ছে না মামুন ভাই!

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৫৪

শুঁটকি মাছ বলেছেন: ফুলের নকশা তোলা কাচের গ্লাসে বৃষ্টির পানি জমতে থাকে। আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অন্ধকারে অপস্রিয়মাণ ট্রেনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি।

আহারে মনটা উদাস হয়ে গেল!

১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৩৩

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: B:-)

৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৩৮

রাজিব বলেছেন: দিল সে সিনেমাটা খুব ভাল না লাগলেও দু একটা গান বেশ ভাল লেগেছিল।

১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১৯

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ভালো লাগেনি? অবশ্য, দিল সে সিনেমাটা ঠিক মেইন স্ট্রিম সিনেমা না। অনেকের কাছে ভালো না-ও লাগতে পারে!
যে গানগুলো আপনার ভালো লেগেছিল সে গানগুলোর সুরকার এ আর রহমান, ভালো লাগারই কথা।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: দিল সে মুভির কিছু কিছু অংশ আছে যা শুধু অনুভব করা যায়, ব্যাখ্যার চেয়েও বেশি গভীর।

খুব ভালো লাগলো ছোট প্রেমের গল্পটা

১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: আপু আপনি যদি জীবনকে সঠিকভাবে পরিমাপ করতে জানেন তাহলে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই গভীর অনুভূতির উপস্থিতি টের পাবেন। সমস্যা হল আমরা আমাদের নিজেদের সার্থেই জীবনের এইসব গভীর অনুভবগুলকে ত্যাগ করেছি। কারন তা না হলে নাকি মানুষ হওয়া যায় না। মজার ব্যাপার।

ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.