নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

666-number of the beast (Part 03)

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৫



(৬)

দানিয়েল এই ধরনের স্বপ্ন আবারো দেখলেনঃ



৮-১ বেল্শত্‌সরের রাজত্বের তৃতীয় বছরে আমার এই স্বপ্নদর্শন হয়েছিল। এটি ছিল আমার প্রথম স্বপ্নদর্শন হবার পরে।

৮-২ এই স্বপ্নে আমি দেখেছিলাম আমি এলম প্রদেশের রাজধানী শূশনে ঊলয় নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছি।

৮-৩ আমি ওপরে তাকালাম এবং একটি দুই শিং বিশিষ্ট মেষকে ঊলয় নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তার দুটি শিং লম্বা কিন্তু একটি অপরটির চেয়ে বেশি লম্বা এবং লম্বা শিংটি অন্য শিংটির পরে গজিয়েছিল।





(দুই শিং বিশিষ্ট মেষ Book of Revelation এও ছিলঃ-



১৩-১১ এরপর আমি পৃথিবীর মধ্য থেকে আর একটি পশুকে উঠে আসতে দেখলাম, মেষশাবকের মতো তার দুটি শিং ছিল, কিন্তু সে নাগের মত কথা বলত।)





৮-৪ আমি দেখলাম মেষটি তার শিংগুলো উঁচু করে পশ্চিমে, উত্তরে এবং দক্ষিণে আক্রমণ করছে এবং কোন জন্তু তাকে থামাতে পারছে না। অন্য জন্তুদের কেউ বাঁচাতেও পারল না। মেষটি তার ইচ্ছামত করতে লাগল এবং ভীষণ শক্তিশালী হয়ে উঠল।



(মেষটা পশ্চিমে, উত্তরে এবং দক্ষিণে আক্রমণ করছে। আচ্ছা, মেষটা কি তাহলে পূর্বে অবস্থান করছে?)



৮-৫ আমি যখন এই মেষটির কথা ভাবছিলাম তখন দেখলাম যে পশ্চিমদিক থেকে একটি বিরাট শিংযুক্ত পুং ছাগল আসছে। পুং ছাগলটি এত জোরে দৌড়ে এল য়ে তার পা মাটিতে প্রায় ঠেকলই না।

৮-৬ সেই পুং ছাগলটি দুই শিংযুক্ত মেষের কাছে এলো যাকে আমি ঊলয় নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। পুং ছাগলটি তার ভীষণ রাগ নিয়ে মেষের দিকে তেড়ে গেল।

৮-৭ যখন পুং ছাগলটি মেষের কাছে পৌঁছল, সে খুব রেগে ছিল। ছাগলটি মেষের শিং দুটি ভেঙে ফেলল। তাকে মেষটি আটকাতে পারল না। তারপর পুং ছাগলটি মেষটিকে গুঁতো মেরে মাটিতে ফেলে দিল এবং তাকে পদদলিত করল। ছাগলের হাত থেকে মেষকে বাঁচাবার মত কেউই ছিল না।

৮-৮ তারপর ঐ পুং ছাগলটি আরো বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠল। কিন্তু সে যখন সব চেয়ে বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠল তার বড় শিংটি ভেঙ্গে গেল এবং তার জায়গায চারটি শিং গজাল। এই চারটি শিংকে সহজেই দেখা যেত এবং এরা চারটি ভিন্ন দিকে মুখ করে ছিল।

৮-৯ এরপর ওই চারটির মধ্যে একটি শিং থেকে একটি ছোট শিং গজাল। এই ছোট শিংটি দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে এবং সুন্দর ভূমির দিকে বেড়ে উঠল।

৮-১০ তারপর এই ছোট শিংটি এত বড় হয়ে গেল যে স্বর্গের দূতসমূহ পর্য়ন্ত পৌঁছে গেল এবং কয়েক জন দূত ও কয়েকটি তারাকে মাটিতে নামিয়ে আনল এবং তাদের মাড়িয়ে দিলো।

৮-১১ সেই ছোট শিংটি ভীষণ শক্তিশালী হয়ে উঠল এবং সে দূতসমূহের অধিপতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। সে লোকদের নিত্য নৈবেদ্য থেকে বিরত করল এবং মন্দিরকে ভূপতিত করল।

৮-১২ সেই ছোট শিংটি নিত্য নৈবেদ্যর পরিবর্তে পাপ কার্য়্য়ে লিপ্ত হয়েছিল। সে ধর্মকে ভূপতিত করল। সে যা কিছু করেছিল তাতেই সাফল্য লাভ করল।

৮-১৩ তারপর আমি পবিত্র দূতদের এক জনকে কথা বলতে শুনলাম। তারপর আমি আরেকজন পবিত্র দূতকে প্রথম জনের কথার উত্তর দিতে শুনলাম। প্রথম জন বলল, “কত দিন ধরে এসব জিনিষ চলবে? কতদিন দৈনিক উত্সর্গ করা বন্ধ থাকবে? কতদিন এই ভয়ানক পাপ স্থায়ী হবে? কত দিন ধরে এই মন্দির এবং দূতেরা শ্রদ্ধাহীন ভাবে পদদলিত হবে?”

৮-১৪ অপর পবিত্র ব্যক্তি বলল, “এই ঘটনা ২,৩০০ দিন ধরে চলবে। তারপর পবিত্র স্থানটি সারানো হবে।”



দানিয়েল এই স্বপ্ন দেখে বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। তিনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না এই অদ্ভুত স্বপ্নের মানে কি। পরবর্তী অংশে এর বর্ণনা আছেঃ-





৮-১৫ আমি, দানিয়েল এই স্বপ্নদর্শন করেছিলাম এবং তার অর্থ বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। যখন আমি এই স্বপ্নদর্শনের কথা ভাবছিলাম তখন একজন মানুষের মতো দেখতে ব্যক্তি এসে আমার সামনে দাঁড়াল।

৮-১৬ তারপর আমি ঊলয় নদীর ওপর থেকে এক জন মানুষের স্বর শুনলাম। সেই স্বর বলল, “গাব্রিয়েল তুমি এই লোকটিকে স্বপ্নদর্শনের অর্থ ব্যাখ্যা করে দাও।”

৮-১৭ তাই মানুষের মতো দেখতে সেই দূত গাব্রিয়েল আমার কাছে এল। আমি ভয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। কিন্তু গাব্রিয়েল আমাকে বলল, “হে মানুষ, বুঝে নাও এই স্বপ্নদর্শন যা হল শেষ সময়ের সম্বন্ধে।”

৮-১৮ যখন গাব্রিয়েল কথা বলতে শুরু করল তখন আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম এবং মাটির ওপর মুখ খুবড়ে পড়ে গেলাম। কিন্তু সেই গভীর ঘুম থেকে গাব্রিযেল আমাকে টেনে তুলে নিজের পায়ে দাঁড় করাল।



(এই গ্যাব্রিয়েল কি জিবরাঈল? সম্ভবত তাই।)



৮-১৯ গাব্রিয়েল বলল, “এখন আমি তোমাকে স্বপ্নদর্শনটি ব্যাখ্যা করব। ঈশ্বরের ক্রোধর শেষ সময়ে কি হবে তা আমি তোমাকে বলব। একটি নির্দিষ্ট সময় সমাপ্তি আসবে।

৮-২০ “তুমি দুটি শিং বিশিষ্ট একটি মেষ দেখেছো। ওই শিং দুটি হল মাদীয় (Media) ও পারসীক (Persia.) দেশের রাজ্যদ্বয়।

৮-২১ ছাগলটি হল গ্রীস দেশের রাজা এবং তার চোখের মাঝখানের বড় শিংটি হল প্রথম রাজা।

৮-২২ সেই শিংটি ভেঙে তার জায়গায় আরো চারটি শিং গজাল। ঐ চারটি শিং হল চারটি রাজ্য যা প্রথম রাজার দেশ থেকে আসবে। কিন্তু ঐ চারটি দেশ প্রথম দেশটির মতো শক্তিশালী হবে না।

৮-২৩ “ওই রাজ্যগুলির শেষ সময় এক জন কঠোর ও নির্দয রাজা আসবে যে হবে ভীষণ ধূর্ত। এটা ঘটবে যখন ওখানে অনেক অনেক পাপী লোক হবে।

৮-২৪ ঐ রাজা ভীষণ ক্ষমতাবান হবে কিন্তু এই ক্ষমতা তার নিজের থেকে হয় নি। এই রাজা ভয়ঙ্কর ধ্বংস ঘটাবে। সে যা করবে তাই সফল হবে। সে শক্তিমান লোকদের, এমনকি ঈশ্বরের বিশেষ লোকদেরও ধ্বংস করবে।

৮-২৫ “এই রাজা হবে ভীষণ চতুর ও ধূর্ত। সে তার মিথ্যাগুলো লোককে বিশ্বাস করাবে। সে নিজেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। সে হঠাত্‌ লোকদের ধ্বংস করবে। সে এমনকি রাজার রাজাকে যুদ্ধে লিপ্ত করতে চাইবে। কিন্তু কোন মানুষের দ্বারা সেই নিষ্ঠুর রাজার ক্ষমতা ধ্বংস করা হবে না।

৮-২৬ “আমি সেই সময় কি ঘটবে তা নিয়ে স্বপ্নদর্শনের য়ে ব্যাখ্যা দিলাম তা সত্য। কিন্তু এই স্বপ্নদর্শনের ওপর সীলমোহর করে দাও। এইগুলি ঘটবার আগে অনেক কাল কেটে যাবে।”

৮-২৭ আমি, দানিয়েল এই স্বপ্নদর্শন করার পর ভীষণ দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তারপর আমি সেরে উঠে আবার রাজকার্য়্য়ে য়োগ দিলাম। কিন্তু আমি ওই স্বপ্নদর্শনের ব্যাপারে খুব বিভ্রান্ত ছিলাম। আমি ঐ স্বপ্নদর্শনের অর্থ বুঝতে পারিনি।





(৭)

দানিয়েলকে ফেরেশতা জিবরাঈল এতো কিছু বলেও যখন কিছুই বোঝাতে পারেনি তখন আমার সেখানে চেষ্টা করার মানে হয় না।

তার চাইতে আসেন এবার আমরা দাজ্জাল সম্পর্কিত কিছু হাদিস শুনিঃ-



[১] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।



ফাতেমা বিনতে কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

আমি মসজিদে গমণ করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে নামায আদায় করলাম। আমি ছিলাম মহিলাদের কাতারে। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে মিম্বারে উঠে বসলেন।

প্রথমেই তিনি বললেনঃ প্রত্যেকেই যেন আপন আপন জায়গায় বসে থাকে।

অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি?

তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।

অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যে একত্রিত করেছি যে তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার কাছে আগমণ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছে যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম। লাখ্ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশ জন লোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানে একটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটা এবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হলোনা।

তারা বললঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি?

সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা।

তারা বললোঃ কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?

অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

তামীম দারী বলেনঃ প্রাণীটি যখন একজন লোকের কথা বললোঃ তখন আমাদের ভয় হলো যে হতে পারে সে একটি শয়তান। তথাপিও আমরা ভীত হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে ঘরটির ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে প্রবেশ করে আমরা বৃহদাকার একটি মানুষ দেখতে পেলাম। এত বড় আকৃতির মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাত দু’টিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে।

আমরা বললামঃ মরণ হোক তোমার! কে তুমি?

সে বললোঃ তোমরা আমার কাছে আসতে সক্ষম হয়েছ। তাই আগে তোমাদের পরিচয় দাও।

আমরা বললামঃ আমরা একদল আরব মানুষ নৌকায় আরোহন করলাম। সাগরের প্রচন্ড ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করলো। অবশেষে তোমার দ্বীপে উঠতে বাধ্য হলাম। দ্বীপে প্রবেশ করেই প্রচুর পশম বিশিষ্ট এমন একটি জন্তুর সাক্ষাৎ পেলাম, প্রচুর পশমের কারণে যার অগ্রপশ্চাৎ চেনা যাচ্ছিলনা।

আমরা বললামঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি?

সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা।

আমরা বললামঃ কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?

অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে এই ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের নিকট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাই আমরা তার ভয়ে তোমার কাছে দ্রুত আগমণ করলাম। হতে পার তুমি একজন শয়তান- এভয় থেকেও আমরা নিরাপদ নই।

সে বললোঃ আমাকে তোমরা ‘বাইসান’ সম্পর্কে সংবাদ দাও।

আমরা তাকে বললামঃ বাইসানের কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো?

সে বললোঃ আমি তথাকার খেজুরের বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। সেখানের গাছগুলো এখনও ফল দেয়?

আমরা বললামঃ হ্যাঁ।

সে বললোঃ সে দিন বেশী দূরে নয় যে দিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবেনা।

অতঃপর সে বললোঃ আমাকে বুহাইরাতুত্ তাবারীয়া সম্পর্কে সংবাদ দাও।

আমরা তাকে বললামঃ বুহাইরাতুত্ তাবারীয়ার কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো?

সে বললোঃ আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? আমরা বললামঃ তথায় প্রচুর পানি আছে।

সে বললোঃ অচিরেই তথাকার পানি শেষ হয়ে যাবে।

সে পুনরায় বললোঃ আমাকে যুগার নামক ঝর্ণা সম্পর্কে সংবাদ দাও।

আমরা তাকে বললামঃ সেখানকার কি সম্পর্কে তুমি জানতে চাও?

সে বললোঃ আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? লোকেরা কি এখনও সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে?

আমরা বললামঃ তথায় প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে।

সে আবার বললোঃ আমাকে উম্মীদের নবী সম্পর্কে জানাও।

আমরা বললামঃ সে মক্কায় আগমণ করে বর্তমানে মদীনায় হিজরত করেছে।

সে বললোঃ আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে?

বললামঃ হ্যাঁ।

সে বললোঃ ফলাফল কি হয়েছে?

আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, পার্শ্ববর্তী আরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে।

সে বললঃ তাই না কি?

আমরা বললাম তাই।

সে বললোঃ তার আনুগত্য করাই তাদের জন্য ভাল। এখন আমার কথা শুন। আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই ফেরেশতাগণ কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।



হাদীছের বর্ণনাকারী ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করতে করতে বললেনঃ এটাই মদীনা, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা।

অর্থাৎ এখানে দাজ্জাল আসতে পারবেনা।

অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষকে লক্ষ্য করে বললেনঃ

“তামীম দারীর হাদীছটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদীনা সম্পর্কে।

শুনে রাখো! সে আছে সাম দেশের সাগরে (ভূমধ্য সাগরে) অথবা আরব সাগরে। তা নয় সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে।”

এই বলে তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।

ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ “আমি এই হাদীছটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট থেকে মুখস্থ করে রেখেছি।



[২] - তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, সহীহুল জামে আস্-সাগীর, হাদীছ নং-৩৩৯৮।



নিশাপুর, হিরাত, মরো, বালখ এবং পার্শ্ববর্তী কতিপয় অঞ্চলের নাম খোরাসান।

দাজ্জাল বের হওয়ার স্থান সম্পর্কেও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা দিয়েছেন। সে পূর্ব দিকের পারস্য দেশ থেকে বের হবে। সে স্থানটির নাম হবে খোরাসান। সেখান থেকে বের হয়ে সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করবে। তবে মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনা। ফেরেশতাগণ সেদিন মক্কা-মদীনার প্রবেশ পথসমূহে তরবারি নিয়ে পাহারা দিবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “পূর্বের কোন একটি দেশ থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে যার বর্তমান নাম খোরাসানমুমিন।



[৩] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।



নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জাল হবে বৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লাল, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া, কপাল হবে উঁচু, বক্ষ হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু।



[৪] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।



সাহাবীগণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে তিনি বলেছেনঃ সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের মতই হবে। আমরা বললামঃ যে দিনটি এক বছরের মত দীর্ঘ হবে সে দিন কি এক দিনের নামাযই যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ না; বরং তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করে নামায পড়বে।



[৫]- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।



নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দাজ্জাল বের হয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদীনার নিকটবর্র্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমণ করবেন। তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মুমিন। দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাবধান করেছেন। তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবেঃ আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবেঃ না। অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবেঃ আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল- এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো। দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হবেনা।



[৬]- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।



মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবেঃ হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাবধান করেছেন। অতঃপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবেঃ একে ধর এবং প্রহার কর। তাকে মেরে-পিটে যখম করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবেনা? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উক্ত যুবক বলবেনঃ তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে। অতঃপর বলবেঃ উঠে দাড়াও। তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবে এখনও ঈমান আনবেনা? তিনি বলবেনঃ তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ হে লোক সকল! আমার পরে আর কারো সাথে এরূপ করতে পারবেনা। অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর তাঁর হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ “এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারীমুমিন।



[৭] - নেহায়া, আল-ফিতান ওয়াল মালাহিম, (১/১২৮-১২৯)



সহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে।

বিস্তারিত বিবরণ এই যে, মক্কা-মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই সে প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে।

ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময় বায়তুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে।

অতঃপর ঈসা (আঃ) ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আঃ)কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে।

ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ “তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবেনা।

মুমিন ঈসা (আঃ) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।



===========================================



তথ্যঃ

১) প্রথম পোষ্ট 666-number of the beast (Part 01) -এর শুরুতে দেয়া ছবিটার নাম "The Number of the Beast is 666"

এটা উইলিয়াম ব্লেকের আঁকা।

২) দ্বিতীয় পোষ্ট 666-number of the beast (Part 02) -এর শুরুতে দেয়া ছবিটার নাম "The Great Red Dragon and the Woman Clothed with the Sun"

এটাও উইলিয়াম ব্লেকের আঁকা।

৩) তৃতীয় পোষ্ট এর শুরুতে দেয়া ছবিটাও উইলিয়াম ব্লেকের আঁকা। এর নাম The Great Red Dragon and the Beast from the Sea।

৪) কিছু হাদিস এখানে অ্যাড করেছি যা আমি ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে পেয়েছি। রেফারেন্স হিসেবে সেসব সাইটের উল্লেখ করলাম না কারণ নেটের রেফারেন্স আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারি না। এই হাদিসগুলো নিয়ে যদি কেউ উল্টা পাল্টা কিছু পান, তাহলে দয়া করে আমাকে জানাবেন। কৃতজ্ঞ থাকবো।

৫) Book of Revelation কিংবা Book of Daniel এর সরাসরি বঙ্গানুবাদ এখানে ব্যাবহার করেছি। তার রেফারেন্স দেয়া আছে।

৬) ধর্মীয়ভাবে কাউকে আঘাত করার জন্য এখানে কোন কিছু বলা হয়নি। এটা কেবল ব্যাক্তিগত কৌতূহলের থেকে সন্নিবেশিত কিছু তথ্য নিয়ে সাজানো এক ধরণের নোট বলা যেতে পারে। এখান থেকে কোন সিদ্ধান্তে কখনোই উপনীত হওয়া যাবে না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:০১

ডি মুন বলেছেন: ঘুরে গেলাম।

সময় করে আপনার পোস্ট গুলো পড়ে নেব।

ভালো থাকুন সবসময়।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২১

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ওকে! ভালো আছি, ভালো থাকবেন।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৮

শার্লক_ বলেছেন: +

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৫

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.