নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধু বাবা

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৮

-"আব্বু তোমাকে আমি কিছু সিরিয়াস কথা বলতে চাই"
সোমা হঠাৎ করে তার ঘর থেকে বের হয়ে এসে তার বাবা কে বলল কথাটা। অসম্ভব লাল চোখ আর ঘামে ভেজা জবজবে কম্পিত শরীর টা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোন একটা মহা বিপদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। এবং শেষমেষ বিপদটার সাথে একা যুদ্ধ করতে না পেরে নিজেকে সমর্পণ করে এক অসহায় ও ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে, একটা মেয়ে হিসাবে নিজের সমস্ত লজ্জাকে বিসর্জন দিয়ে স্বয়ং নিজের বাবার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে সে। সোমা এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। পড়ালেখায় খুব ভালো না হলেও যথেষ্ট স্পষ্টবাদী ও মনোযোগী। প্রতিষ্ঠিত ও বড় শিল্পপতি জনাব মাহবুব রহমানের একমাত্র মেয়ে সোমা, মায়ের আদর আর বাবার আদর্শে বড় হলেও আর ৫ টা মেয়ের মত সেও একটা ভুল করে ফেলেছে। অনেক বড় একটা ভুল। ভুল যা হবার হয়েছে কিন্তু এই ভুল কে আর কোন ভাবেই বাড়তে দিতে রাজি নয় সে। নতুন কোন ভুল করার প্রশ্ন তো ওঠেই না, বরং সে প্রতিশোধ নিতে চায়!! নোমানের বিরুদ্ধে সর্বচ্চো কঠোর ব্যবস্থা নিতে একটুও পিছপা হবেনা সে। তার পরেও আজীবন নোমানের দাসত্ব স্বীকার করা অসম্ভব!! কিন্তু তার বাবা কি তার পাশে দাড়াবে? যদিও এই মূহুর্থে সে তার বাবা কে ছাড়া দুনিয়ার আর কাউকেই পরম বন্ধু মনে করতে পারছে না। তবুও সে কিছুতেই নোমানের কাছে মাথা নত করতে রাজি নয়, তাতে তার যদি মৃত্যুও আসে তবুও। তাছাড়া তার মৃত্যু সেদিনই হয়েছে, যেদিন সে নোমানের হিংস্র রূপ টা নিজের চোখে দেখেছে।
মাহবুব রহমান বেশ উদ্বিগ্নতা ও উৎকন্ঠা নিয়ে মেয়ের বেহাল দশা দেখে চমকে উঠে বললেন-
-"কি হয়েছে মা? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কাছে আয় আমার"
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মাত্রই পত্রিকার হেডলাইন গুলোতে চোখ বুলাচ্ছিলেন তিনি। কোথাকার কোন মেয়ে নাকি প্রেমিকের প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন একটা নিউজ সবেমাত্র পড়তে শুরু করেছিলেন।
সোমা দৌড়ে গিয়ে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমাইনি ও। মাহবুব রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। তারপর একটু শক্ত হয়ে মেয়েকে বললেন -
-"বেশ বুঝতে পারছি যে তুই কোন বিপদে পড়েছিস, শোন - যত যাই কিছু হয়ে যাক না কেন তুই আমার মেয়ে, এবং এই মূহুর্থে তুই আমার সামনে সুস্থ অবস্থায় আছিস এটাই আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকুর। আমি তো মরে যায়নি, আমাকে বল মা, কি হয়েছে? সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত মনে বল"
সোমা বাবার বুকের মধ্যে গুটিসুটি মেরে কেঁদেই চলেছে...। তারপর একটু দম নিয়ে শক্ত হয়ে বসে বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করল -
-"বাবা, নোমান নামের একটা ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক হয়, অনেক বিশ্বাসও করে ফেলেছি অল্প কয়দিনের ভিতরে। তার সাথে আমার শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে, এখন আমি জানতে পারলাম ওই জানোয়ার টা সব গোপনে ভিডিও করেছে, এবং তাকে মোটা অংকের টাকা না দিলে বা তার কথার অবাধ্য হলে সে ওগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে আমার জীবন শেষ করে দিবে!!"
বলেই চিৎকার করে কেঁদে ফেলল আবারো। ততক্ষণে সোমার মা সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। জনাব মাহবুব সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর মেয়ের দিকে শান্তনার হাসি দিয়ে বললেন -
-"তুই কি তোর ভুল বুঝতে পেরেছিস?"
-"হুম"
মাথা নিচু করে জবাব দিল সোমা।
-"ভবিষ্যতে আর হবে এমন ভুল?"
-"না বাবা হবে না ... কক্ষনো হবে না"
-"কথা দিচ্ছিস?"
-"তোমার মাথা ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি"
বলেই আবারো কাঁদলো সে। মেয়ের চোখের পানি মুছে দিতে দিতে মাহবুব সাহেব তাকে বললেন -
-"তাহলে তুই নিশ্চিন্ত থাক, কিচ্ছু হয়নি তোর, আমি, তোর মা তোর পাশে আছি, একটুও ভয় পাসনা"
এবার সোমার মাও মুখে আঁচল চেপে হু হু করে কেঁদে ফেললেন। মাহবুব সাহেব তার মেয়ে কে বললেন -
-"কই দেখি, ফোন লাগা ওই জানোয়ার টার কাছে, আমি কথা বলব"
সোমা তৎক্ষণাৎ নোমানের নাম্বারে ডায়াল করে তার বাবার কাছে ফোনটা দিল।
-"হ্যালো"
-"কেমন আছো নোমান?"
-"কে আপনি?"
-"আমি সোমার বাবা"
-"ও আঙ্কেল ভালো আছেন?"
-"হ্যাঁ আছি। তুমি?"
-"জী আঙ্কেল ভালো আছি"
-"তোমরা কয় ভাইবোন?"
-"জী আঙ্কেল, আমরা এক ভাই এক বোন কিন্তু কেন আঙ্কেল? কোন সমস্যা?"
-"আচ্ছা নোমান, ধরো তোমার মা অথবা বোন কে কেউ রেপ করলো, এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দিল, তখন তোমার কেমন লাগবে?"
-"আঙ্কেল, কি বলছেন এগুলো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না"
-"শুনলাম তুমি নাকি সোমা কে ব্লাকমেইল করছো? শোনো নোমান তোমাকে একটা কথা বলি - সোমা আমার সন্তান এবং ওকে যেদিন প্রথম কোলে নিয়েছিলাম সেদিন কিন্তু ওকে উলঙ্গই দেখেছিলাম, আজোও যদি দেখতে হয় তাতে খুব বেশি বিব্রত হবোনা, তবে তোমার বাবা মায়ের জন্য মায়া হচ্ছে এই ভেবে যে তাদের একমাত্র ছেলে ধর্ষণ ও ব্লাকমেইল করার অপরাধে আজীবন জেলেই পঁচবে"
-"না না আঙ্কেল আমার ভুল হয়ে গেছে ... আপনি এমন কিছু করবেন না... দোহাই লাগে আপনার ... হ্যালো ... হ্যালো ..." টুট ..টুট ...
লাইন টা কেটে দিয়ে মেয়েটাকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে জনাব মাহবুব রহমান তার স্ত্রীকে বললেন -
-"আমার জন্য আরেক কাপ চা নিয়ে এসো"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২০

এম. হাবীব বলেছেন: অসাধারণ গল্প.. সকল বাবাদের এরকম বন্ধু হওয়া উচিত।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৭

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: পরিবারের সাপোর্ট দরকার আছে। তবে ছোটবেলা থেকে ধর্মীয় শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিলে এসব দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকা যায়...

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৩০

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: আপনার সাথে একমত পোষণ করছি জনাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.