নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (১ম পর্ব)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০২



আস্তে আস্তে চোরের মত বাড়ির প্রধান দরজা পার হলাম, যেই না সিরি তে পা রেখেছি দোতালায় বকুলের ঘরে যাব বলে অমনি ছোট মামী পিছন থেকে ডাক দিলেন। ধুক্ করে উঠলো বুকের ভিতর! যা ভেবেছিলাম তাই হল ..!!
-"নাঈম"
-"জী মামী .. আসসালামু আলাইকুম"
-"আচ্ছা আল্লাহ কি তোমারে একটুও লজ্জা সরম দিয়া দুনিয়াতে পাঠায় নাই?"
আমি মাথা নিচু করে বললাম -
-"জী মামী, লজ্জা সরম আছে! আপনি চিন্তা করবেন না, আমি কালই চলে যাব"
-"আচ্ছা এই কথাটা বলতেও কি তোমার একটুও লজ্জা করলো না!!"
-"জী মামী লজ্জা করছে"
-"কেমন সরম তোমার? এই নিয়া কয়বার বললা কালই চলে যাবা?"
-"তিন বার বলেছি মামী"
-"বকুলের ঘরে তোমার ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি, দয়া করে আজই বিদেয় হও আমি আর পারছিনে বাপু"
-"আচ্ছা মামী, আজই বিদায় হব! মামা আসুক, দেখা করেই চলে যাব"
-"মামার জন্য অপেক্ষা করার কোন দরকার নেই, বকুলের কাছে তোমার গাড়িভাড়া বাবদ ২০০ টাকা দিয়ে দিয়েছি। ওর কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে বিদেয় হও"
-"মামী, দুপুরের খাবার টা খেয়ে যায়? কিছু খাইনি সারাদিন"
-"ও আল্লাহ্ আমাকে রক্ষা কর এই আজব প্রাণী থেকে!!"
বলে তিনি বাসন মাজতে চলে গেলেন। আমারও কেমন যেন একটু স্বাধীন স্বাধীন লাগলো, যেহেতু এতগুলো অপমান আর বিদ্রুপ এক সাথে মিশিয়ে চিনি ছাড়াই গুলিয়ে খেয়ে ফেললাম এবং হজমও করে ফেললাম সেহেতু আর ভয় কিসের? ... বুক ফুলিয়ে দুমদুম শব্দে সিড়ি ভেঙে উপরে উঠলাম। আগামী কয়েক ঘন্টা এই বাড়িতে আমাকে চোরের মত ঘুরতে হবে না। স্বশব্দে গিয়ে ঢুকলাম বকুলের ঘরে। এবার ক্লাস সেভেনে উঠলো সে, ওর বাবা, মানে আমার মামার একমাত্র ছেলে বকুল বয়সের তুলনায় বেশ বোকা সোকা। বকুলের বাবা আমার আপন মামা হলেও একটা কথা ছিল ... আমার মায়ের দুর সম্পর্কের চাচাতো ভাই হওয়ায় ঢাকা শহরে একটা চাকরির বন্দবস্ত করতে এসে তার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম সপ্তাহ খানেকের জন্য। কিন্তু সপ্তাহ না পেরুতেই মামীর দূর দূর ব্যবহার এড়াতেই রিতিমত চোরের মত বসবাস করতে হয়েছে আমাকে এই বাড়ি। প্রথমে আকারে ইঙ্গিতে বোঝালেও পরে সরাসরি বললেন চলে যাবার কথা। আর আজকে তো নাজেহাল করেই ছাড়লেন তিনি। কে চায় নিজের সংসারে উটকো ঝামেলা বয়ে বেড়াতে!! এতে মনে একটুও দুঃখ না নিয়ে বরং বেশ সুখ সুখ অনুভব করছি, কেননা আজ চাকরির ইন্টারভিউ টা অনেক ভালো হয়েছে।
বকুলের ঘরে ঢুকতেই ও বড়বড় চোখ করে ছুটে এলো আমার দিকে, ভুরু নাচিয়ে ফিসফিস করে বলল -
-"কখন এলে? মা দেখেনি তো?"
আমি হাসিমুখে জামার বোতাম খুলতে খুলতে বললাম-
-"না দেখেনি।"
তারপর আস্তে আস্তে দরজা লাগিয়ে খাটের নিচে ঢুকে পরলো ও! আমি লুঙ্গিটা পরে ওর বিছানায় আরাম করে শুয়ে পরলাম। এই বিছানাটায় আমরা ভাগাভাগি করে থেকেছি এতদিন।
বকুল খাটের নিচ থেকে একটা মাটির ব্যাংক বের করে সেটা বালিশের নিচে চাপা দিয়ে ভাঙলো, যেন শব্দ না হয় ..!! তার ভিতর থেকে চকচকে ১০ টাকা, ২০ টাকা আর ৫০ টাকার নোট গুলো এক জায়গায় করলো। সব মিলিয়ে হিসাব করে ২২৫০ টাকায় দাড়ালো। আমি কিছু না বলেই দেখছি ওর কর্মকাণ্ড। আমি জানি ওই টাকা গুলো বকুল তার অপারেশন এর জন্য জমাচ্ছিল। বছর খানেক আগে বকুলের ব্রেইন টিউমার ধরা পরে! অপারেশন এর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এরপর থেকেই স্কুলের খরচ বাচিয়ে, ঈদের সেলামী, বখসিস যখন যার কাছে যা পেয়েছে তাই জমানো শুরু করেছে।
টাকা গুলো হাতে নিয়ে তার সাথে মামীর দেয়া ২০০ টাকা এক জায়গায় করে মোট ২৪৫০ টাকা একটা রাবার দিয়ে পেচিয়ে আমার হাতে দিয়ে আবারো ফিসফিস করে বলল -
-"ভাইয়া, শুনলাম মা তোমাকে আজ বাসা থেকে চলে যেতে বলবে, তুমি এই টাকা গুলো নিয়ে এক্ষুনি চলে যাও, আমি চাইনা মা তোমাকে আর অপমান করার সুযোগ পাক, তার আগেই তুমি চলে যাও ... আর চাকরি পাবার পর আমাকে এই টাকা গুলো ফেরত দিও"
আমি টাকা গুলো পেয়ে খুব খুশি হলাম। মানিব্যাগে মাত্র ৫ টাকা ছিল! আর ছিল একটা ১০ টাকা মূল্যের লটারি টিকিট যার প্রথম পুরষ্কার দশ লক্ষ টাকা। আমি টিকিট টা বকুলের হাতে দিয়ে বললাম -
-"ইন্টারভিউ দিয়ে ফেরার পথে এটা কিনেছি, রেখে দে।"
বকুল খুব খুশি হয়ে টিকিট টা ওর ড্রয়ারে রেখে দুটো আপেল বের করলো। একটা আপেল আমাকে দিল। আমি আপেল টা খেতে খেতে বেরিয়ে আসলাম ওর ঘর থেকে। সিরি দিয়ে নামতেই মামী বললেন -
-"এই যে!! কোথায় যাচ্ছো? তুমি না বললে দুপুরে গিলে বের হবে?"
আমি আপেল টা উঁচিয়ে বললাম -
-"পেট ভরে গেছে মামী"
---
কতক্ষণ হেঁটেছি বলতে পারবো না আজানের ধ্বনিতে বুঝলাম সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে। রেলস্টেশনের একটা প্লাটফর্মে বসে ১০ টাকার বাদাম কিনলাম। বকুলের ওই রাবার দিয়ে মোড়ানো ২৪৫০টাকার বান্ডিল টা খুলে সেখান থেকে চকচকে একটা ১০ টাকার নোট বের করে দিলাম বাদামওয়ালা কে। এসময় লক্ষ করলাম দুইটা ৫০ টাকার নোটের পিছনে ছোট্ট করে লেখা "নাঈম ভাই"!! মনে পরল গত ঈদে ওকে দুইটা ৫০ টাকার নোট সেলামী দিয়েছিলাম। এসময় হঠাৎ পকেটের মধ্যে ফোনটা বেজে উঠলো!! আশ্চর্য! আমার যে একটা ফোন আছে সে কথাও ভুলতে বসেছিলাম। ফোনটার জন্য নিজেকে খুব পরাধীন লাগে! বাজার সাথে সাথেই মনে হয় কেউ একজন দড়ি ধরে টান দিচ্ছে!!
-"হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম"
-"কোথায় তুমি নাঈম ভাই?"
-"কে বলছেন আপনি?"
-"আমি নিপা"
-"ওহ নিপা!! কেমন আছিস?"
-"নাঈম ভাই, তোমাকে না বলেছি আমাকে তুই করে বলবা না?"
-"ছোট বেলার অভ্যাস! তুমি বলতে লজ্জা লাগে"
-"শুনলাম বড় খালা তোমাকে বের করে দিয়েছে? তুমি প্লিজ যেখানেই থাকো এই মূহুর্থে আমাদের বাসায় চলে এসো, কাল আমার বিয়ে, খুব মজা হবে"
-"তাই নাকি? খুব ভালো। আমি কাল বিয়ের সময় আসবো"
-"আমার বিয়ের কথা শুনে তোমার একটুও খারাপ লাগলো না?"
-"হ্যাঁ লাগছে তো .. বিয়ে হয়ে গেলে তোর কাছে টাকা ধার চাইতে পারবোনা"
-"সত্যিই তুমি চাও আমার বিয়ে হোক?"
-"আমি চাওয়ার কে? আল্লাহ্ চাইলেই হবে"
-"নাঈম ভাই, আমি তোমাকে ভালোবা....."
আর কিছু শোনা গেলনা। স্ক্রিনে একটু দেখা গেল "Battery Low!!! Good bye moto" মটোরোলা কম্পানির এই ফোনটা নিপাই দিয়েছিল। বকুলের ছোট খালার একমাত্র মেয়ে নিপা। ভিষণ সহজ সরল মেয়েটা।
আমি ফোনটা পকেটে থুয়ে বাদাম গুলো শেষ করে গুটিসুটি মেরে সুয়ে পরলাম। বোধহয় ক্লান্তির জন্যই চোখ বুজতেই ঘুমিয়েও পরলাম। ঘুমের মধ্যেই দেখলাম মামীর সাথে ফুটবল খেলছি!! আর বকুল হল রেফারি!! কিন্তু সমস্যা হল মামী ফুটবলে লাথি মারার উছিলায় ইচ্ছা করে আমার পায়ে লাথি মারছে!! ভিষণ ব্যাথাও পাচ্ছি ... মামীর পা এত শক্ত হলো কিভাবে ভেবে পাচ্ছি না!! আমিও কয়েকবার চেষ্টা করলাম কিন্তু তার পায়ে স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারলাম না। এমন সময় ঘুমটা ভেঙে উঠে দেখি একটা ফকির আমার পায়ে লাথি মেরে আমাকে ডাকছে!! আমি উঠে বসে পরলাম। সে গর্জন দিয়ে বলল -
-"মিয়া, কইত্থন আমদানি হইছেন? গত ৫ বৎসর যাবত এই জায়গা আমার দখলে!! ওই দিকে সইরা ঘুমান।"
আমি আস্তে করে সরে গেলাম। দেখলাম তার হাতে একটা লাঠি আর ব্যাগ। সেটা পাশে রেখে সে একটা সিগারেট ধারালো। লক্ষ্য করলাম ওটা বেনসন সিগারেট!! সিগারেট টানতে টানতে আমাকে বলল -
-"বাড়ি কই?"
জবাব না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। সে ভাবল আমি বোবা। তারপর সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল -
-"কইত্তন যে এগুলা আমদানি হয়!!"
বলেই তার বস্তার ভিতর থেকে একটা বালিশ বের করে শুয়ে পরল। আমিও হাই তুলতে তুলতে শুয়ে পরলাম। গুরগুর করে মেঘ ডাকছে। ঠান্ডা বাতাস ছেড়েছে। মনে মনে বৃষ্টির একটা আমেজ নিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
---
ভোরে ওই ফকিরের গুতোই আবারো ঘুম ভাঙলো। দেখলাম একটা ঠোঙায় চারটা পরোটা আর একটা পলিথিনে ডাল ভাজি নিয়ে বসে আছে। বলল-
-"বিসমিল্লাহ বইল্লা খাইয়া লন"
আমি কোন কথা না বলে খাওয়া শুরু করলাম। ক্ষিধেটাও বেশ চড়েগিয়েছিল। তারপর অবাক হয়ে দেখলাম লোকটা যে পা দিয়ে আমাকে লাথি দিয়েছিল, ঠিক সেই পা টা কে অদ্ভুত কায়দায় ল্যাংড়া বানিয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে গেল। আমি খাওয়া শেষ করে একটা হকারের কাছ থেকে একটা পত্রিকা কিনলাম। আজ লটারীর ফল প্রকাশিত হবে। বকুল কে দেয়া টিকিটের নাম্বার টা লেখা ছিল আমার কাছে। মিলিয়ে দেখলাম নাম্বার টা। প্রথম পুরষ্কারের নাম্বার টা হুবহু মিলে যাওয়ায় কিছুটা সস্থি নিয়ে উঠে পরলাম। কাল যেখানে ইন্টারভিউ দিলাম সেখানে গিয়ে এপয়েনমেন্ট লেটার টা নিয়ে নিপাদের বাড়িতে যাবো। বউ সাজে ওকে দেখতে কেমন লাগে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে ওকে আজ পরীদের রানীর মত দেখাবে।

****************************************************************

-"আপনার নাম কি?"
-"নাঈম"
-"ফুল নেম?"
-"এইচ, এম, নাঈম ফয়সাল"
কিছু কাগজ পত্র ঘাটাঘাটির পর রিসিপশনিস্ট একটু অবাক হয়ে বললেন -
-"জী, আপনার Job confirm!! কিন্তু আপনাকে তো জানানো হয়নি!! আপনি কিভাবে জানলেন?"
-"যষ্ঠ ইন্দ্রিয়"
-"sorry!! বুঝলাম না"
-"আসলে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব প্রখর"
-"ও আচ্ছা, ঠিক আছে আপনি আগামী পরশুদিন একটু দেখা করুন, আসলে আপনার এপয়েন্ট লেটার টা এখোনো আমার হাতে এসে পৌছয়নি।"
আমি ধন্যবাদ বিনিময় করে বের হয়ে এলাম।
বের হয়ে অফিসের সামনের চায়ের দোকানে গেলাম -
-"মামা, আমার ফোনটা দেন"
-"কি কন? ১০ মিনিটে ফোন চার্জ হয় নাকি?"
-"সমস্যা নাই মামা, যেটুকু হয়েছে ওতেই হবে"
ফোনটা নিয়ে চলে আসছি এমন সময় পিছন থেকে ডাক -
-"এই যে মামা, ফোন চার্জ দিলে ট্যাকা দিতে হয় জানেন না?"
-"কত দিব?"
-"২০ ট্যাকা"
-"১০ মিনিটে ২০ টাকা!!"
-"মিনিট টিনিট বুঝিনা, চার্জে লাগাইলেই ২০ ট্যাকা"
অগত্যা তাকে ২০ টাকা দিয়ে হাটা শুরু করলাম। খুব ছোটখাটো বিষয় গুলোতে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করতে চায়না!! না হলে ওই বেটা চাওয়ার আগেই ওর মুখের উপর ২০ টাকা ছুরে দিয়ে আসতাম। এমনিতেই এই উটকো ঝামেলা আমার বহন করতে ভাল লাগেনা, তার উপর আবার টাকা খরচ করে চার্জ দেয়ার কোন প্রয়োজনই নেই। শুধু মাত্র গ্রামে মায়ের দুঃশ্চিন্তা দুর করার জন্য মোবাইল ফোন নামক এই বাজে জিনিস টাকে সঙ্গে রাখতে বাধ্য হয়েছি। যদিও মায়ের থেকে নিপা আমাকে বেশি যন্ত্রণা দেয়। হয়তো সেজন্যই ফোনটা কিনে দিয়েছিল ও। নিপার কথা বলতেই ওর ফোন এলো!! মনে হচ্ছে ওর হায়াৎ আছে!! -
-"হ্যালো নাঈম ভাই?"
-"জী কে বলছেন?"
-"আচ্ছা তুমি কি আমার নাম্বারটাও সেভ করতে পারনা? বার বার বলতে ভাল্লাগে যে 'আমি নিপা বলছি?"
-"ওহ নিপা!! ভালো আছিস?"
-"নাঈম ভাই, আবারো তুই করে বলছো?"
-"তুমি তো আসে নারে!! কি করব বল?"
-"কেন তুমি আসে না কেন??"
-"কি করে আসবে? তোর জন্মের পর তোকে কত কোলে, পিঠে নিয়ে ঘুরেছি!!"
-"তাই বলে কি আমাকে তুমি বলা নিষেধ?"
-"(আমি চুপ)"
-"আচ্ছা যাইহোক, তুমি এখন কোথায়? আজ আমার বিয়ে, ভুলে গেছো?"
-"না ভুলিনি, আমি তোদের বাড়ির সামনে"
-"মানে!!!"
-"মানে তোদের বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে দাড়িয়ে আছি"
-"আশ্চর্য!! এতক্ষণ বলনি কেন?"
-"বলার সুযোগ দিলি কই?"
-"কতক্ষণ দাড়িয়ে আছো?"
-"প্রায় ৪০ মিনিট!!"
-"কেন? বাড়ির ভিতরে না ঢুকে রাস্তায় দাড়িয়ে আছো কিসের জন্য?"
-"ভয়ে"
-"কিসের ভয়?"
-"তোর মায়ের ভয়ে!! সে তো আমাকে দুচোখে দেখতে পারেনা!! যদি তার খপ্পরে পরি !"
-"তো আমাকে ফোন দিতে পারতে!!"
-"আসলে তোর নাম্বার টা আমার মুখস্ত নেই, আর তাছাড়া আমার ফোনে টাকাও ভরিনা"
-"কেন ভরনা?"
-"কিভাবে ভরবো? আমি তো আমার নাম্বারই জানিনা!!"
-"ওও"....
-"হ্যালো ... হ্যালো নিপা!!"
-"হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি বলো"
-"তুই কাঁদছিস?"
-"না তো ...!! কাঁদবো কেন?"
-"ও .. তো আমি কি চলে যাবো? নাকি দাড়িয়ে থাকবো?"
-"নাহ .... দাড়াও আমি আসছি"
ফোনটা কেটে গেল!! আমি ওদের বাড়ির সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুই বিপদগ্রস্ত কুকুরের দিকে তাকিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলাম। অবাক হয়ে ভাবলাম সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকুল কে দিয়েছেন সহজ সুন্দর ও ঝামেলাহীন সঙ্গম পদ্ধতি। কিন্তু কুকুরের ক্ষেত্রে কেন এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়!! যদিও আর কোন প্রাণীকে এর থেকেও বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয় কিনা আমার জানা নেই।
-"এই নাঈম ভাই!!"
ডাক শুনে পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখি, একটা লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি পরে নিপা দাড়িয়ে আছে। সত্যিই তো, ওকে আজ পরীদের রানীর মতই লাগছে। যদিও কোনদিন পরীদের রানীকে আমি দেখিনি, রানী তো দূরের কথা, কোন সাধারণ পরীকেও আজ অব্দি দেখিনি।
আমি এগিয়ে গেলাম নিপার দিকে।
-"একি হাল তোমার নাঈম ভাই?"
-"কেন কি হয়েছে?"
-"জামা কাপড়ে এত ধুলো! আর চুল দাড়ি কাটোনা কতদিন?"
-"এখানে দাড়িয়ে কথা বলবি, নাকি ভিতরে আসতে বলবি?"
আমরা ভিতরে ঢুকলাম। অবাক হয়ে নিপাদের বিয়ের সাজে সাজানো ৪ তালা বাড়িটাতে চোখ বুলালাম। নিপার বাবা মানে আমার দুঃসম্পর্কের খালু এক সময় দুবেলা খাবার জোগাড় করতে হিমসিম খেয়ে যেতেন। তারপর কপাল গুনে একদিন একটা সরকারি চাকরি পেয়ে গেলেন, এবং ধীরে ধীরে এই অট্টালিকা নির্মাণ করলেন।
বাড়ির সিরি ঘরে পা রাখতেই নিপার মা ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে এলেন, যেন নিপাকে না পেয়ে মহা চিন্তায় পরে গিয়েছিলেন বেচারি। রাগ, ক্রোধ আর ঘৃণা নিয়ে আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিপা কে বললেন -
-"এই ফকির টাকে কোন বস্তি থেকে তুলে এনেছিস? আর ওকে তো বিয়ের দাওয়াত দেয়া হয়নি!! ও এখানে কি করছে?"
এসময় অনেক পুরোনো প্রায় ২২ বছর আগের একটা স্মৃতি মনে পরে গেল!! তখনও নিপার জন্ম হয়নি। আমি তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি। হঠাৎ একদিন নিপার বাবা নিপার মা কে নিয়ে গভীর রাতে আমাদের বাড়ি হাজির!! কি যে বেহাল দশা বলার মত নয়, দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা বিপদগ্রস্ত ও বেশ কয়েকদিন অভুক্ত!! আমার বাবা তখনো জীবিত ছিল এবং বেশ সচ্ছল সংসার আমাদের। নিপার বাবা তার বউকে আমাদের বাড়ি কিছুদিনের জন্য আশ্রিতা হিসেবে রেখে যান তার সাময়িক অভাব অনটনের জন্য। আমার বাবা তাকে আশ্রিতা নয় বরং নিজের বোনের সম্মান দিয়ে রেখেছিলেন আমাদের বাড়ি। পরে অবশ্য মাস খানেকের মধ্যেই সরকারী চাকরি পেয়ে তার বউকে ফিরিয়ে নিয়ে যান নিপার বাবা।
-"নাঈম ভাইকে আমি আসতে বলেছি মা"
তার মাকে পাল্টা জবাব দিল নিপা। শুনে তিনি বললেন -
-"আসতে বলেছিস ভালো কথা, তাই বলে তুই নিজে এভাবে নিচে নেমে আসতে পারিস না, After all আজ তোর বিয়ে, আর তাছাড়া বাড়ির চাকর বাকর তো সব মরে যায়নি তাইনা?"
এ সময় আমি কথার মাঝে বাধ সাধলাম -
-"খালাম্মা আপনারা বোধহয় বড় একটা ভুল করছেন!!"
তিনি রেগে মেগে বললেন -
-"এই ছেলে তুমি মা, আর মেয়ের মাঝখানে কথা বলছ কেন?"
-"খালাম্মা আমি আসলে আপনার হবু জামাইয়ের কথা বলছি"
নিপা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এদিকে খালা আরো ক্ষেপে গিয়ে বললেন-
-"মানে? কি বলতে চাচ্ছো তুমি?"
-"তেমন কিছু না, শুধু এটুকু বলতে চাচ্ছি আপনার হবু জামাই লোকটা বিশেষ ভালো না!!"
-"কি ফালতু কথা বলছো তুমি? সে বিদেশ ফেরত ছেলে, তার সম্পর্কে তুমি কি জানো?"
-"কিছুই জানিনা, তবে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে ওই ছেলের বিদেশে আরেকটা বউ আছে"!!
খালা আরো উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে যাবে এমন সময় নিপা লাফিয়ে উঠে বলল -
-"মা, আমি নাঈম ভাই কে চিনি .. তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কখোনো ভুল বলে না ... তুমি প্লিজ আরো একবার ভালো করে খোজ করো"
বলেই তার মা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল বাড়ির ভিতরে!! আর খালা হা করে তাকিয়ে থাকলো ... তবে একটু অসহায়ত্বও প্রকাশ পেল তার চাহুনিতে।
বাড়ির ভিতরে ঢোকার পরপরই পোলাও কোরমা আর বিরিয়ানির গন্ধে জ্বিভে পানি চলে এলো ...! নিপা ওর ঘরে আমাকে বসতে দিয়ে বলল -
-"নাঈম ভাই তুমি যে আমার কত বড় উপকার করলে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবোনা। আজ তুমি আমার কাছে কি চাও বল? যতবড় দামী জিনিসই হোকনা কেন, আজ তুমি আমার কাছে যা চাইবে তাই পাবে। বল কি চাও?"
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম -
-"খুব ক্ষিধে পেয়েছে, সকালে চারটা পরোটা ছাড়া সারাদিন আর কিছুই খাইনি, আমাকে এক প্লেট ভাত দিবি?"
নিপার খুশি দপ করে নিভে গেল! তবে সেটাকে সুকৌশলে আড়াল করে বলল -
-"শুধু ভাত? আর কিছু না?"
-"হ্যাঁ, আর একটা ছাতা দিবি, আকাশে মেঘ ডাকছে বৃষ্টি হতে পারে, আমাকে আবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।"
নিপা পোলাও ভাত, মুরগির মাংস, খাসির মাংস, গরুর মাংস এনে আমার সামনে রাখলো। আমি নাক মুখ ডুবিয়ে ভুরি ভোজ করলাম। তারপর একটা লম্বা ঢেকুর তুলতে তুলতে বললাম -
-"খাবার টা খুব বেশি মজার ছিলো"
তারপর ওর হাত থেকে ছাতা টা নিয়ে পকেট থেকে একটা জ্যামিতি বক্স বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম -
-"তোর মনে আছে? তুই যখন ক্লাস থ্রি তে পড়তিস তখন একবার আমার একটা জ্যামিতি বক্স চেয়েছিলি? এবং তার জন্য খালার কাছে অনেক মার খেয়েছিলি?। আমি সেদিন দিতে পারিনি, কিন্তু আজ দিচ্ছি। এটা রাখ তোর কাছে। ভবিষ্যতে তোর ছেলেমেয়ে হলে তাদের দিবি।"
বলে বের হয়ে এলাম। নিচতলার সিরি ঘর পার হওয়ার সময় খালার চিৎকার চেচামেচি শুনতে পেলাম। কাকে যেন ফোনে বকাঝকা করছেন আর বলছেন -
-"কিভাবে এতবড় ভুল হল?? ছেলের আরেকটা বউ বিদেশে আছে সেই খবর কিভাবে গোপণ থাকলো? আমার মেয়ে কি পানিতে ভেসে গেছে ? বিদেশী কোন ছেলের কাছে আমি আর আমার মেয়ের সম্মন্ধ করবো না"
প্রধান ফটকের কাছে আসতেই ঝুম বৃষ্টি!! সাথে সাথে ছাতাটা মেলে ধরলাম। রাস্তায় নেমে হাটা শুরু করলাম ... আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমাকে জানান দিচ্ছে, নিপা দোতালার বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার চলে যাওয়া দেখছে। কিন্তু কেন জানিনা ফিরে তাকাতে ইচ্ছে হলনা ... একদম ইচ্ছে হলনা!

চলব...

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩

কৃষ্ণকবি বলেছেন: ভাল লাগলো খুব।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৬

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৭

কালীদাস বলেছেন: সুন্দর, পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম :)
লেখাটা দুইবার এসেছে, এডিট করুন প্লিজ!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৭

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। :|

৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৫২

ফয়সাল রকি বলেছেন: নামটা নাঈম না হয়ে হিমু হলে ভালো হতো।
যা হোক, লেখা ভাল লেগেছে... চালিয়ে যান।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: পরবর্তী পর্বে স্বয়ং হিমুকেই আনবো ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৩

ত্রিকোণমিতি বলেছেন: Himur sathe mil ache...,


Valo legeche, thanks

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫০

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:



নায়ক কি আপনি নিজেই! হা হা হা!

আপনার গল্প পড়ে মুগ্ধ হ'লাম। বর্ণনা সাবলীল!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১২

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: হিহিহি । ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১২

আহমেদ জী এস বলেছেন: নাঈম ফয়সাল নয়ন ,




চমৎকার লেখা । গল্পের গায়ে অন্য রকম গন্ধ থাকলেও লেখার হাতটি ভালো আপনার ।

শুভেচ্ছা রইলো ।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৮

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

৭| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৩১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে আমি অস্বীকার করি না।।
পড়ে গেলাম বিরতি ছাড়াই।।
ধন্যবাদ।।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৯

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:৩৮

উদাস মাঝি বলেছেন: গল্পটি পড়ে আমরা জানলাম নাইম ভাইয়ের
বর্তমান বয়স (২২+৭+৫)=৩৪ বছর !! ;)

ভাল লেগেছে মিয়া ভাই, সিঘ্রি দেন পরের পর্ব :)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৪২

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: জী ভাইজান, আপনার হিসাব ঠিক বলছে। এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আপনাকে।

৯| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:৩৯

আলামিন১০৪ বলেছেন: আপনি ভালো লিখেন স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু আরেকজনকে কি অনুকরন না করলেই নয়?

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৪

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: অনুকরন করতে করতেই তো আমরা একদিন নিজস্বতা লাভ করি। জন্মের পর থেকেই কিন্তু আমরা অনুকরন প্রিয়। বাবা , মা কেই আমরা প্রথম অনুকরন করি। এরপর নিঃস্বতা লাভ করি। ধন্যবাদ আপনাকে।

১০| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৪৬

শরীফুর রায়হান বলেছেন: ভালো লাগা রইল এবং পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০১

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ইতোমধ্যেই ২য় পর্ব প্রকাশিত হয়েছে জনাব।

১১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে গল্পটা ।

আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নাঈমের মত প্রখর না । কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি, অসাধারণ একজন গল্পকারের সাথে আজ পরিচয় হলো ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় ।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৮

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে জনাব। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি পরবর্তী পর্ব অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্ব ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।

১২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৩

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ব্লগে অনেক বড় লেখা পড়তে আলসেমি লাগে কিন্তু আপনার লেখাটা শুরু করে শেষ করতেই হলো।

পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৪

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি পরবর্তী পর্ব অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্ব ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.