নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (২য় পর্ব)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:১৬


এপয়েন্টমেন্ট লেটার টা হাতে নিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসে টোস্ট বিস্কুট ভিজিয়ে চা খাচ্ছিলাম। পকেটে ১ হাজার টাকার ৯ টা নোট তার নিজস্ব তাপমাত্রা দিয়ে পকেট টাকে গরম করে তুলেছে। সেই গরমের আঁচ টাও কিছুটা অনুভব করছি। একসঙ্গে এতগুলো টাকা এর আগে কখোনো পেয়েছি বলে মনে পরল না। ১৮ হাজার টাকা বেতনের ৫০% এডভান্স স্বরূপ আজই অফিস থেকে পেলাম এবং ৩ দিন পর থেকে আমাকে রিতিমত ভদ্র মার্জিত পোশাক পরে অফিসিয়াল কাজে নিযুক্ত হতে হবে।
চায়ের দোকানের বিল মিটিয়ে রওনা দিলাম কাঁচা বাজারের দিকে, কিছু তরিতরকারি কিনবো। ইলিশের গায়ে আগুন! তবুও আমাকে ইলিশ কিনতে হবে! দরকার হলে পুরো টাকাটা দিয়েই ইলিশ কিনবো!
কেননা, বকুলদের বাড়িতে একবার মামী ইলিশ মাছের দোপেঁয়াজা করেছিলেন এবং তার গন্ধে পুরো বাড়ি মো মো করছিল। আমি বাড়িতে ঢুকতেই ইলিশের গন্ধে ক্ষিধের মাত্রাটা আরোও বেড়ে গিয়েছিল। আমার আর দেরী সইছিল না, তাই গোসল সেরে দ্রুতই ছুটলাম রান্না ঘরের দিকে। তখন অবশ্য ওরা খাবার দাবার রান্না ঘরেই খেত। গিয়ে দেখলাম মামী তার ছেলে বকুল কে বড় এক চাকা ইলিশ দিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছেন। আমি রান্না ঘরে ঢুকতেই বেশ বিরক্ত সহকারে মামী বললেন -
-"কি চাই?"
-"খেতে আসলাম মামী"
-"তোমার খাবার বকুলের ঘরে দেয়া হয় তুমি জাননা?"
আমি মাথা নিচু করে বললাম -
-"জী মামী জানি"
-"তাহলে ঢ্যাং ঢ্যাং করে রান্নাঘরে চলে এলে কেন বেহায়ার মত? ইলিশের গন্ধ আর সহ্য হচ্ছিল না বুঝি?"
-"আসলে অনেক দিন ইলিশ মাছ খাইনি, তাই ভাবলাম বকুল কে নিয়ে একসাথে খাবো"
-"কেন আমার বাপের কি ইলিশের ব্যাবসা আছে? নাকি তোমার বাড়ি থেকে ইলিশের বস্তা দিয়ে গেছে? মামার বাড়ি বসে বসে খাচ্ছো লজ্জা লাগেনা? বলি গলা দিয়ে সেই খাবার নামে কি করে?"
আমি বকুলের ঘরে চলে এলাম, এবং দেখলাম টেবিলের উপর একটা প্লেটে ভাত আর একটা বাটিতে তরকারি ঢাকা রয়েছে সাথে এক জগ পানি আর একটা গ্লাস। আমি চেয়ার টা টেনে আয়েশ করে জামার হাতা গুটিয়ে ঢাকনা গুলো সরালাম। একটু হতাশ হয়ে দেখলাম বাটিতে লাউ আর বেগুন ঘন্ট !
বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলাম। এসময় দেখি বকুল একটা বাটি হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ঘরে প্রবেশ করল এবং ফিসফিস করে বলল -
-"চুরি করে এনেছি, জলদি খেয়ে ফেলো"
বলে একটা বড় ইলিশ আমার পাতে ঢেলে দিল! আমি খুব খুশি হয়ে ইলিশ ভোজন করলাম। বকুল যেভাবে নিঃশব্দে ঘরে এসেছিল ঠিক সেভাবেই নিঃশব্দে বাটি টা নিয়ে চলে গেল, কিন্তু মনে হলো বকুলের চোখে পানি দেখলাম!! আবার সুকৌশলে সেই পানি লুকানোর একটা ব্যর্থ চেষ্টাও লক্ষ্য করলাম। ও তো ছোট মানুষ, নিষ্পাপ! ও কেন চোখের পানি লুকাবে? চোখের পানি তো লুকায় পাপীরা।
-"মামা, ছোট গুলা নিলে ৫০০ ট্যাকা, মাঝারি গুলান ৮০০ ট্যাকা আর বড় গুলান ১০০০ ট্যাকা পরবো"
বাজারের সবচেয়ে বড় মাছ ব্যবসায়ীর সামনে দাড়িয়ে মাছের দাম জানতে চাইলাম। দাম শুনে আমি বললাম -
-"সবথেকে বড় ৫ টা মাছ দেন"
৫ টা ১০০০ টাকার নোট গুনে গুনে মাছওয়ালা কে দিয়ে কাঁচাবাজারের দিকে ঢুকলাম। বেছে বেছে ৫ টা লাউ আর ৫ কেজি বেগুন কিনলাম। তারপর একটা রিকশা নিয়ে রওনা দিলাম বকুলদের বাড়ি।
-"মামী আসসালামু আলাইকুম"
দরজা খুলে আমাকে দেখেই মামী ভুত দেখার মত হা করে থাকলেন। তাকে সরিয়ে দিয়ে বকুল ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো!! আমার দুই হাতে ব্যাগ থাকায় আমি ওভাবেই দাড়িয়ে থাকলাম! বকুল ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদল আর তোতলাতে তোতলাতে বলল -
-"আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছিল আজ তুমি আসবে"!
না হেসে পারলাম না, এইটুকু ছেলের আবার সিক্সথ সেন্স!! আমি একটা ব্যাগ ওর হাতে দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। মামী ওভাবেই ঠাঁই দাড়িয়ে থাকলেন, এমনকি আমার সালামের উত্তর টাও তখোনো নিরুত্তর। কে জানে, আমার উপরের সেই অদৃশ্য ক্ষোভ এখোনো হয়তো বিদ্যমান। বকুলের কাছে জানতে পারলাম আমার দেয়া টিকিটের ১ম পুরষ্কারের ১০ লক্ষ্য টাকা গ্রহণ করার জন্য মামা সংশ্লিষ্ট পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। আমি বকুলের ঘরে গিয়ে বসলাম, তবে চোরের মত নয় বীরের মত। আমাদের পিছু পিছু মামীও আসলেন। লক্ষ্য করলাম তাকে কেমন যেন অনুশোচিত দেখা যাচ্ছে। আমি তাকে বিনয়ের সাথে বললাম -
-"মামী, আপনার হাতের লাউ আর বেগুন ঘন্ট কতদিন খাইনি!! দুপুরে খেয়ে তারপর কিন্তু যাব।"
মামী হ্যাঁ না কিছুই না বলে নিচে নেমে গেলেন। আমি বকুল কে বললাম -
-"কিরে তোকে তো নিপার বিয়েতে দেখলাম না?"
-"ছোট খালা নিজে না এসে বিয়ের কার্ড পাঠিয়ে দাওয়াত করেছে, তাই মা রাগ করে যায়নি"
-"ওহ"
তারপর ও একটু থেমে আবার বলল -
-"নাঈম ভাই"
-"হমম"
-"তুমি নাকি নিপা আপুর বিয়ে ভেঙে দিয়েছ?"
-"হমম"
-"কেন?"
-"ওই ছেলে বদ"
-"আচ্ছা একটা কথা বলবো, যদি রাগ না করো?"
-"হমম বল"
-"তুমি নিপা আপুকে বিয়ে করে ফেল"
-"আচ্ছা করবো, কিন্তু নিপা কে না"
-"তো কাকে?"
-"এখোনো তার দেখা পাইনি, তবে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে আমার শশুর বাড়ি হবে উত্তরা, ঢাকা।"
-"তোমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বউয়ের ঠিকানা না দিয়ে শশুরবাড়ির ঠিকানা দিল কেন?"
-"জানিনা"
-"জানতে চাও না?"
-"ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমার কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়না, তার যেটা মর্জি হয় সেটাই আমাকে জানায়। যেমন আজ সারাদিন আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে আমার সাথে হিমুর দেখা হবে"
-"হুমায়ূন আহমেদের হিমু?"
-"হমম"
-"কবে??"
-"কবে সেটা তো বলেনি"
এমন সময় নিচ থেকে মামী বকুলকে ডাকলেন। বকুল চলে গেল এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলল -
-"ভাই, রান্না হয়ে গেছে মা ডাকছে, খাবে চলো"
আমি আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে নিচে নেমে এলাম, এবং খেতে বসে তরকারির আইটেম দেখে রিতিমত হার্ট ফেইল হবার জোগাড় হল!! হরেক রকমের ভর্তা, ইলিশ মাছ, গরু, খাসি, মুরগি আরো কত কি। আমি হাত ধুতে ধুতে বললাম -
-"মামী, লাউ আর বেগুন ঘন্ট কই?"
তিনি লাউ আর বেগুন ঘন্টের বাটি টা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি ওটা দিয়েই খাবার শুরু করলাম, এবং ওটা দিয়েই শেষ করলাম। বকুল হা করে দেখল কিন্তু কিচ্ছু বলল না। আমি খেয়ে উঠে গামছা দিয়ে হাত মুছে পকেট থেকে ২৪৫০ টাকা বের করে বকুলের হাতে দিয়ে
বললাম -
-"এই নে তোর ২৪৫০ টাকা ফেরত দিলাম, ঋণ মুক্ত হলাম"
টাকাটা হাতে নিয়ে ও দুচোখ ভরা বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি আবারো বললাম -
-"চিন্তা করিস না, তোর অপারেশন ঠিক মতই হবে, ঠিক মত পড়াশোনা করবি আর কোনদিন যেন শুনিনা যে তুই বাবা মায়ের অবাধ্য হয়েছিস, তাদের মনে কষ্ট দিয়েছিস... তাদের কথা শুনবি সব সময়, মনে রাখবি বাবা মায়ের থেকে বেশী আপন ও বড় বন্ধু দুনিয়াতে আর কেউ নেই"
বলে আমি বের হয়ে পরলাম। বের হতেই হালকা চাপা কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো কানে। ওটা মামীর কান্নার আওয়াজ ..!! মামী তো মায়ের সমান, তার মনে কোন কষ্ট দিলাম নাতো? দিয়ে থাকলে পরে একসময় এসে ক্ষমা চেয়ে নেব, কেননা আমার হাতে একদম সময় নেই ... আমার জন্য অপেক্ষা করছে হিমু ...

**************************************************************

গুলশান বাড্ডা লিংক রোডের ফুটপাত দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম বাদাম খেতে খেতে। সূর্যের প্রখর তাপ গাছের ফাক দিয়ে শরীরের যে জায়গায় পরছে সেখানেই পুরে যাচ্ছে। এর মধ্যেই অবাক হয়ে দেখলাম, গাছের ফাক গলে বড় একটা জায়গা জুড়ে যেখানে সবচেয়ে বেশি রোদ পরেছে ঠিক সেইখান টাতে একটা ফকির পাটি পেতে মুখের উপর গামছা দিয়ে শুয়ে আছে ! তার পাশে একটা বড় থালা, যার ভিতরে ২ টাকা ৫ টাকা আর কিছু কয়েন। গামছার আড়ালে মুখ রেখে জোরে জোরে আল্লাহ্, আল্লাহ্ বলে চিল্লাচ্ছে। আমার একটু মায়া হওয়াতে তার কাছে গিয়ে পাটির দুই মাথা ধরে জরে টান দিয়ে গাছের ছায়ার নিচে নিয়ে আসলাম। কিন্তু পাটি ধরে টানতেই সে হুড়মুড় করে উঠি বসল!! এবং প্রচন্ড রাগ নিয়ে আমাকে বলল -
-"ওই মিয়ে ওই, কি করবার লাগছেন??"
আমি হাসিমুখে বললাম -
-"রোদে আপনার কষ্ট হচ্ছে! তাই ভাবলাম আপনাকে ছায়ার নিচে নিয়ে আসি"
-"ধুরো মিয়া!! আমি কইছি আপনেরে আমার কষ্ট হইতাছে?"
-"না বলেন নি"
-"কারো অনুমতি ছাড়া কাউরে এভাবে টানা হেছড়া করন ঠিক?"
-"না ভাই ঠিক না, আমার ভুল হয়ে গেছে!!"
-"ভুল হইছে বললি তো হবেনা!"
-"তাহলে কি করতে হবে?"
-"যেমনে আমারে টাইনা সরাইছেন ওমনে আবার জায়গার জিনিস জায়গায় রাইখা আসেন"
নিরুপায় হয়ে আমি তাই করলাম! সে আগের মতই মুখের উপর গামছা দিয়ে শুয়ে পরে জিকির করতে থাকলো। কৌতুহল বশতঃ তার পাশে গিয়ে একটু নিচু হয়ে বসে বললাম -
-"ভাইজান, একটা কথা ছিল!"
সে মুখের গামছা টা না সরিয়েই বলল -
-"কি কতা? তাড়াতাড়ি কইয়া বিদায় হন"
-"ভাইজান, ছায়া রেখে এভাবে রোদের মধ্যে শুয়ে ভিক্ষা করছেন কেন?"
-"তার আগে আপনি কন, রৌদ্রের মইধ্যে দেইখাই তো আমার লিগা আপনের মায়া জন্মাইছে ঠিক কিনা?"
-"জী একদম ঠিক!"
-"তাইলে এইবার আপনিই কন আমার প্রতি যদি পাবলিকের সেমপথি (মায়া) না জন্মায় তাইলে কি ভিক্ষা পামু?"
যুক্তিসঙ্গত উত্তর। আমি আর কিছু না বলে উঠে হাটা শুরু করলাম। তখনই পিছন থেকে ফকিরটা ডাক দিল! আমি আবার তার পাশে গিয়ে দাড়ালাম, সে বলল -
-"এত যখন মায়া দেখাইলেন, তখন কিছু না দিয়াই যাইবেন গা?"
আমি পকেট থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট তার থালার উপরে রাখলাম। দেখলাম ফকির বেটা মুখ থেকে গামছা টা সরিয়ে উকি দিয়ে থালার দিকে তাকালো এবং ওই নোট টা ওখান থেকে নিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকালো! আমি জানার জন্য আবারো তাকে জিজ্ঞাসা করলাম -
-"ভাইজান, টাকা টা পকেটে রাখলেন কেন?"
সে একটু বিরক্ত নিয়ে বলল -
-"আচ্ছা আপনি কি ভবিষ্যতে এই ধান্দায় ঢুকবেন নাকি?"
-"না ভাই আমার তেমন কোন ইচ্ছা নেই"
-"তাইলে এতকিছু জানতে চান ক্যান?"
-"আমার একজন বন্ধু আছে ভিক্ষা করে, তাকে শেখাবো"
-"ও! তাইলে শুনেন, ৫ টাকার উপরে কোন নোট আইলে হেইডা সাইরা (লুকিয়ে) ফেলতে হয়"
-"কেন?"
-"আপনি তো দেখি মহা বলদ!! আরে বড় নোট থালার উপ্রে ভাসলে কেউ কি আর ভিক্ষা দিবো? উল্টা আমার থেকেই ভিক্ষা চাইবো"
-"ও আচ্ছা"
-"অক্ষন বুজছেন?"
-"জী বুঝেছি"
-"তাইলে বিদেয় হন"
-"আচ্ছা"
বলে উঠেই সামনের পুলিশ বুথটার দিকে এগোলাম। সেখানে কর্তব্যরত অনেকগুলো পুলিশ তাদের দ্বায়িত্ব পালন করছিল। আমি অফিসার গোছের একজনের কাছে গিয়ে বললাম -
-"আসসালামু আলাইকুম স্যার"
-"ওয়ালাইকুম আসসালাম, বলুন কিভাবে আপনার সাহায্য করতে পারি?"
-"আমি আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে চাই"
-"জী বলুন"
আমি একটু ইতস্তত হয়ে বললাম -
-"এই রোড দিয়ে এক্ষুনি কালো রংয়ের একটা গাড়ী যাবে, তার ভিতরে ৩ জন সন্ত্রাসী আছে, তাদের সাথে বিষ্ফোরকও আছে!!"
পুলিশ অফিসার আমার দিকে তীব্র দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন এবং আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে বললেন -
-"আপনি কি ভাবে জানলেন?"
-"আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে"
তার চোখেমুখে আরোও সন্দেহ ফুটে উঠলো।
-"আপনি শিওর?"
-"মোটামুটি"
-"কতক্ষণের ভিতরে আসবে?"
-"তা তো বলতে পারবো না, তবে আধা ঘন্টার মত লাগতে পারে"
এরপরে তিনি আমাকে তাদের ক্যাম্পের ভিতরে বসতে বলে সবাইকে সতর্ক হবার নির্দেশ দিলেন। আমি তাদের ক্যম্পের ভিতরে বসে জানালার কাচের ভিতর দিয়ে তাদের সাঁড়াশি অভিযান দেখতে থাকলাম বাদাম খেতে খেতে। অফিসার ওয়্যারলেসে কন্ট্রোল রুমে জানালেন তার আরো পুলিশ ফোর্স লাগবে। সবাই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে, এবং কালো রংয়ের কোন গাড়ি দেখলেই দাড় করিয়ে চলছে তল্লাশি। মূহুর্থেই প্রশাসনের বোমা স্কোয়াড চলে এলো তাদের প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে, এবং দেখতে দেখতে জায়গাটায় একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। আমি খুব মজা নিয়ে সবকিছু উপভোগ করছিলাম। এর মধ্যেই দেখলাম একটা পুলিশ গিয়ে ওই ফকিরটার পাছায় লাঠি দিয়ে গুতো দিয়ে ওখান থেকে সরে যেতে বলল, এবং সে তার থালা আর পাটি নিয়ে দিল দৌড়। আমি হো হো করে হেসে ফেললাম। বাইরে লক্ষ্য করলাম কয়েকজন সাংবাদিক তাদের স্যাটেলাইট গাড়ী নিয়ে এসে সরাসরি তাদের চ্যানেলে প্রচারিত করছে এই অভিযান। লিংকরোড থেকে গুলশান ১ পর্যন্ত বিশাল জ্যাম তৈরী হয়েছে। জ্যামের মধ্যেই পুলিশ একটি চালক বিহীন কালো গাড়ী উদ্ধার করলো এবং তৎক্ষণাৎ ওই গাড়ির আসেপাশের সমস্ত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলল। বোমা বিশেষজ্ঞরা সেখান থেকে প্রচুর বোম আর অস্ত্র উদ্ধার করলো। তারমানে সন্ত্রাসীরা আগে থেকে টের পেয়ে সেখান থেকে সরে পরেছে। যাইহোক ততক্ষণে সারা দেশে এটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েগেল। এতগুলো অস্ত্র পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে ঢাকায় ঢুকলো কিভাবে তা নিয়ে উচ্চ মহলে শুরু হয়ে গেল ব্যাপক হই হুল্লোড়। এর ভিতরে ঘটলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা! দেখলাম ওই অফিসার ক্যাম্পে এসে আমার হাতে হাতকড়া পরিয়ে সাংবাদিক দের সামনে নিয়ে আসলেন!! সাথে সাথে ১৫ - ২০ টা ক্যামেরা আমাকে ঘিরে জড়ো হল!! একেক সাংবাদিক এক এক প্রশ্ন ছুরে দিচ্ছে অফিসারের দিকে। অফিসার সবাইকে বললেন -
-"আমরা ওই গাড়িতে কোন আসামীকে পাইনি, তবে ধারণা করছি এই লোক এই চক্রের সাথে জড়িত, আমরা তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এর মূল রহস্য উৎঘাটন করতে পারবো বলে আশা রাখি।"
বলে আর একটা প্রশ্নেরও উত্তর না দিয়ে গাড়িতে তুললেন আমাকে। আমি ক্যামেরা গুলোর দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে পোচ দিচ্ছিলাম। হাজার হোক সারা দেশের কোটি কোটি মানুষ আমাকে দেখছে, সেখানে কি মুখ গোমরা করে থাকা উচিৎ? অবশ্যই না। ...
---
গুলশান থানার ভিতরে এনে গারোদের মধ্যে ঢোকানো হল আমাকে। কিন্তু ভিতরে চোখ রাখতেই চমকে উঠলাম এবং আনন্দিতও হলাম!! হলুদ পানজাবি পরে খালি পায়ে এক কোনে চুপচাপ বসে আছে স্বয়ং হিমু!!! .....আমি ছুটে গেলাম তার দিকে ... পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে উত্তেজিত হয়ে বললাম -
-"হিমু ভাই!! ভালো আছে?"
হিমু হাই তুলতে তুলতে বলল -
-"হ্যাঁ নাঈম ভাই, কেমন আছেন আপনি?"
-"আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি, আপনি আমার নামও জানেন!!"
-"হ্যাঁ জানি, এবং আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম!!"
-"কি বলেন ভাই!! আমার জীবন ধন্য!! আমি আপনার দেখা পেয়েছি!!"
-"আমাদের প্রত্যেক মানুষ কে দেখেই ধন্য হওয়া উচিত।"
-"কেন হিমু ভাই?"
-"কারণ প্রত্যেক মনুষই আল্লাহর আশ্চর্য ও নিখুত সৃষ্টি যে সৃষ্টিতে কোন ভুল নেই এবং প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। তাই আমরা প্রত্যেকেই এক একটা আশ্চর্য।"
-"তার পরেও হিমু ভাই ... সবাই তো আর আপনার মত সুপার ন্যাচারাল না"
-"কে বলেছে? ভুল কথা"
এসময় দেখলাম হিমু ভাইকে একজন সিপাহী এসে চা দিয়ে গেল। এটা আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, কেননা যে দারোগা তাকে ধরবে সেই দারোগা তাকে আপ্যায়ন করবেই। তিনি সিপাহী কে আরোও এক কাপ চা দিতে বললেন, সম্ভবত আমার জন্য। সিপাহী আমাকেও দিল এক কাপ চা। থানার ভিতরে চা পেয়ে খুব খুশি হলাম। তারপর আমার দিকে ফিরে কেমন এক অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে হিমু বলল -
-"নাঈম সাহেব, চাকরি বাকরি করেন, বিয়ে শাদী করেন, সংসার ধর্ম করেন, খালি খালি কেন 'হিমু' হওয়ার চেষ্টা করছেন? সবাই হিমু হতে পারেনা, হিমুর যেমন জন্ম হয়েছিল, তেমনি মৃত্যুও হয়ে গেছে, হিমুরা একটা গ্রহে একবারই আসে। হিমুুর মত কেউ হতে পারবে না, যারা হওয়ার চেষ্টা করবে তারা শুধু নিজের ক্ষতিই করবে"
কথাগুলো আমার সবকিছু কেমন এলোমেলো করে দিল!! আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার মত করে বললাম -
-"আপনার জন্ম, মৃত্যুর ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না!!"
তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন -
-"আমার জন্ম ১৩ ই নভেম্বর ১৯৪৮ আর মৃত্যু ১৯ শে জুলাই ২০১২"
-"ওটা তো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ!!"
-"হম ... তার ভিতরেই তো আমার অস্তিত্ব!!"
-"তাহলে এখানে, আমার সামনে আপনি কে?"
-"আমি হিমু, তার সৃষ্টি ... "
-"তাহলে আপনি বেচেঁ আছেন কিভাবে?"
-"মানুষ মরে, কিন্তু তার সৃষ্টি কখোনো মরে না"
এমন সময় রূপারও দেখা মিলল, সত্যিই প্রসংশা করার মত রূপ রূপার। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখলাম একটা নীল শাড়ী পরে এসেছে সে। একা আসেনি, সঙ্গে মন্ত্রী গোছের কাউকে নিয়ে এসেছে হিমুকে ছাড়ানোর জন্য। হিমুর অপরাধ সে নাকি রাত ৩ টার সময় এদিকে ওদিকে হাটাহাটি করছিলেন সন্দেহজনক ভাবে।
দেখলাম থানার ওসি খুব ঘাবড়ে গিয়ে জী স্যার জী স্যার করছে। তারপর সিপাহীকে নির্দেশ দিলেন হিমুকে বের করার জন্য। হিমু বের হয়ে গেল ... যেতে যেতে বলে গেল -
-"রূপা এসেছে আমাকে ছাড়ানোর জন্য, অপেক্ষা করেন নিপা আসছে ..."
আমি তাকে থামিয়ে বললাম -
-"এটা কি আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে?"
হিমু হাসলো ... কিছু বলল না ... তার হাসি যে এত সুন্দর সে কথা তো হুমায়ূন স্যার কোথাও বলেছেন বলে মনে পরল না! ...

চলব...

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চলুক ;সাথে থাকলাম ।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৫

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্য হলাম।

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ছোট লেখা পড়তে সুবিধে হয় বড় লেখা ব্লগে কম পড়া হয়।





ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৩

খালিদ আহসান বলেছেন: গল্পে ++

দেশ প্রেমিক বাঙালী ভাই। আপনার মন্তব্যে আমি একমত। ব্লগে বড় লেখা কম পড়তে চায়না। কিন্তু ব্লগে আমার মত কিছু পাঠক আছে যারা ছোট লিখার চেয়ে বড় লিখাই পড়েই আনন্দ পায়। :)

৪| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৫

খালিদ আহসান বলেছেন: দুঃখিত: ব্লগে বড় লেখা কেউ পড়তে চায়না।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৯

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

কানিজ রিনা বলেছেন: প্রথম গল্পটা বেশ ভাল লাগল। ধন্যবাদ।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৯

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: জী, ধন্যবাদ।

৬| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৪

শামছুল ইসলাম বলেছেন: বড়লেখাদের নির্বাসনে পাঠানো হোক আন্দামানে । আমিও আন্দামানে যাবো!!!
হুম গল্প বলাটা ভালো হয়েছে ।
আমি হুমায়ূন আহমেদের গল্পের পোকা । তবে কোন যেন হিমু চরিত্রটা ভালো লাগে না । চরিত্রটা অতিরঞ্জিত মনে । এটা একান্তই আমার নিজস্ব ভাবনা ।
অপেক্ষা আবারও ।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।

৭| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭

ফয়সাল রকি বলেছেন: হিমু পর্ব ভালই হলো... এরপরে একবার শুভ্রকে আনবেন...
চালিয়ে যান।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: এটা যেহেতু হিমুর আদলে লেখা তাই হিমুকেই আনলাম ভাই। তবে পরবর্তী পর্বে হালকা মিসির আলি ফ্লেভার থাকবে।

৮| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৪২

শরীফুর রায়হান বলেছেন: অসাধারণ, চালিয়ে যান

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৭

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.