নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (৩য় পর্ব)

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩


-"অগ্রীম জামিন?"
-"জী, আমি হাইকোর্ট থেকে অগ্রীম জামিন নিয়ে এসেছি। দয়া করে নাঈম ভাইকে ছেড়ে দিন।"
গুলশান থানার ওসি সাহেব সেন্ট্রি কে বলে আমাকে বের করলেন। দেখলাম নিপা একটা নীল শাড়ি আর নীল টিপ পরে ওসি সাহেবের সামনে বসে আছে। কিন্তু আমার দিকে একবারও তাকালো না। ওসি সাহেব নিপা কে বললেন -
-"আপনি জানেন এই পাবলিক কতবড় ধুরন্দর?"
-"জী জানি, এবং সবার থেকে বেশিই জানি"
-"আপনি জানেন উনি আমাকে কি বলেছেন?"
-"জী না, জানিনা"
-"আমার মত পুলিশ অফিসারকে বলে কিনা তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে বলেছে যে কিছু সন্ত্রাসী এদিক দিয়ে যাবে তাও আবার কালো গাড়িতে,!! হাহাহা!! আমার এই যে মাথার সাদা সাদা চুল গুলো দেখছেন এগুলো কিন্তু বাতাসে পাকেনি বুঝলেন ম্যাডাম?"
-"জী বুঝেছি!!"
-"কি বুঝেছেন?"
-"এই যে, আপনার চুল বাতাসে পাকেনি, সেটা বুঝেছি"
-"যাইহোক, নিয়ে যান আপনার রোমিও কে, আর তাকে এসব ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় টাইপ ভোগাস গাল গল্প অন্য কোথাও দিতে বলবেন।"
-"জী বলব"
বলে নিপা কি একটা কাগজে সই করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল -
-"নাঈম ভাই চলো"
আমি ওসি সাহেবের সাথে হ্যান্ডসেক করতে করতে আস্তে করে বললাম-
-"স্যাঁর, ডায়মন্ডের নেকলেস টা যার জন্য কিনেছেন, সে এখন অন্য কারো গলার নেকলেস হয়ে ঝুলছে!! বাজে মেয়ে ছেলের জন্য খরচ করে কি লাভ বলুন? তারচে বরং নেকলেস টা বউকে উপহার দেন!! অনেক খুশি হবে বেচারি!!"
বলে নিপা কে নিয়ে বের হলাম থানা থেকে। ওসি সাহেব হয়তো কিছুক্ষণ বিব্রত হয়ে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে, আর চিন্তিত হয়ে ভাবছিলেন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে আসলেই কিছু আছে কিনা
-"কোথায় যাবা নাঈম ভাই?"
বলল নিপা।
-"সেলুনে"
-"কেন?"
-"টাক করবো"
-"কেন?"
-"এমনি"
-"আমি জানি তুমি এমনি কোন কাজ করোনা!"
-"তুই বাড়ি যাবিনা?"
-"আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে যাচ্ছো?"
-"না এড়াচ্ছি না"
আমি আর নিপা পাশাপাশি হাটছি। আমি ওর থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখলেও ও যেন একটু ঘেষে ঘেষে আসছে আমার দিকে। আমি বললাম-
-"তুই একটা রিকশা নিয়ে চলে যা"
বলে ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি একটা সেলুনের দোকানে ঢুকে পরলাম। আমি জানতাম, আজ নিপা রিকশা নিয়ে অনেকক্ষণ আমার সাথে ঘোরার জন্য সেজেগুজে বাসা থেকে বের হয়েছে। কিন্তু কেন জানিনা কিছুতেই ওর সাথে এক রিকশায় ঘেঁষাঘেঁষি করে ঘোরার আমার কোন ইচ্ছা নেই। নিজের গর্ভধারিণী মা আর রক্তের বোন ছাড়া যেকোন মেয়ের শরীরের স্পর্শে পুরুষের ভিতরে কেমন একটা অন্য শিহরণ অনুভুত হয়। নিপার কাছ থেকে ওই ধরনের গুপ্ত সুখ নেয়ার ইচ্ছা কোন সময় আমার ছিলনা। আর তাছাড়া ওটা আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর ব্যাপারও বটে।
নাপিত মশাই প্রথমে আমার দিকে উদ্ভট দৃষ্টিপাত করলেও সানন্দেই আমার মাথা টা কামিয়ে ফেলল কোনরকম টু শব্দ ছাড়াই। সাধারণ চুল কাটার থেকে যে টাক করা টা বেশি ঝামেলার তাও বেশ বুঝতে পারলাম। মাথা টা কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। মাথার তালুতে সচারচর বাতাস ঢুকতে না পারা এবং সেলুন টা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ঠান্ডাটা একটু বেশিই অনুভব করলাম। টাক করার পর আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ভ্রু কুচকালাম!! মনে হচ্ছে গরু চুরি করার অপরাধে গ্রাম্য শালিসে হাজার হাজার মানুষের সামনে আমাকে টাক করে ছেড়ে দিয়েছে। আমি নাপিতের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বুঝলাম ব্যাটা বহু কষ্টে হাসি চেপে রেখেছে। তাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, টাক করলে যে আমাকে এতটা বিচ্ছিরি লাগবে তা তো আমিই জানতাম না। মনে মনে ভাবলাম দুনিয়ার সবাই যদি হঠাৎ করে টাক হয়ে যেত ...!! দারুণ হত। তবে কেন জানিনা দুনিয়ায় এত মানুষ থাকতে মিয়াংমারের প্রধানমন্ত্রী ভং চং ছুচির টাকাওয়ালা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো!! সাথে সাথেই এই ভেবে আনন্দিত হয়ে হেসে উঠলাম যে, ছুচির থেকেও আমাকে দেখতে বেশি সুন্দর লাগছে। আমাকে যদি গরু চোর লাগে তবে তাকে যেটা লাগছে তা বলার ভাষা নেই। থাকলেও বলতে চাচ্ছি না।
সেলুন ওয়ালা কে টাকা দিয়ে বের হয়ে গেলাম। কিন্তু বের হতেই ধাক্কার মত খেলাম!! নিপাকে যেখান থেকে বিদায় দিলাম ঠিক সেখানেই ঠাই দাড়িয়ে আছে ও!! আমি কাছে যেতেই একটা রিকশা দাড় করিয়ে তাতে চেপে বসে আমাকে বলল -
-"উঠে বস নাঈম ভাই"
আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। তারপর ও আবারো বলল -
-"উঠে বস সমস্যা নাই! আমার শরীরের সাথে তোমার স্পর্শ লাগবে না!!"
আমি উঠে বসলাম। খেয়াল করলাম ও যতটা সম্ভব ওইদিকে চেপে বসে আছে। রিকশা চলতে শুরু করেছে। আমি ওকে বললাম -
-"ওভাবে বসে আছিস কেন?"
-"কেন, তোমার সাথে স্পর্শ লাগলে তোমার শরীরে ফোসকা পরবে না?"
-"আমি কি বলেছি তোকে সেকথা?"
-"তুমি বলবা কেন? আমার কি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নেই? আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমাকে বলেছে"
-"না, তুই তোর রাগ থেকে এগুলো বলছিস"
-"কেন নাঈম ভাই? তোমার উপর আমার কিসের রাগ?"
-"তা তো জানিনা!!"
-"তুমি মিথ্যা কথাও বলো দেখি!!"
-"কি মিথ্যা বললাম?"
-"এই যে বললা জাননা"
-"কিভাবে বুঝলি যে মিথ্যা বলছি?"
-"বোঝা যায়, মিথ্যা বলার সময় মানুষের গলা কেপে ওঠে"
-"ও আচ্ছা, জানলাম।"
রিকশা কতক্ষণ চলেছে তা ঠিক জানিনা তবে আমি রিকশা দাড় করিয়ে নিপা কে বললাম -
-"তুই যা, আমি একটু মেডিকেলে যাব"
-"আমিও যাব তোমার সাথে"
জেদ ধরলো নিপা। আমি না করলাম না। ওকে নিয়েই একটা দোকান থেকে কিছু চকলেট কিনে হসপিটালে প্রবেশ করলাম। তারপর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে একটা বেডের পাশে দাড়ালাম। ১৪-১৫ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের মাথার কাছে রাখলাম চকলেট গুলো। মেয়েটার মাথায়ও চুল নেই। গরীব কৃষকের একমাত্র চোখের মনি এই মেয়েটি ক্যান্সারে আক্রান্ত! আমার চেহারার বিদঘুটে ভাবের জন্যই হোক আর গরু চোরের মত দেখতে হওয়ার জন্যই হোক, আমাকে দেখেই মেয়েটি তার ফোকলা দাত বের করে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তার মা এক কোনে নিথর হয়ে বসে আছে। বাবা গেছেন তার যা আছে সবটুকু বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে। মেয়েটার পাশে বসে ভাবলাম, কেন যে গরিব মানুষের এসব রোগ হয়!! সর্দি কাশি ছাড়া গরিবদের রোগ থাকতে নেই!! রোগ হল বিলাসী জিনিস! এগুলো কোটিপতিদের মানায়।
নিপা অবাক হয়ে মেয়েটির নিষ্পাপ হাসি দেখছে। মৃত্যু পথযাত্রী কোন মানুষের হাসি যে কি ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার, তা যে না দেখেছে সে প্রকৃতির নিষ্ঠুর রূপ দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমার মত মানুষ দুইটাকার চকলেট কিনে দেয়া ছাড়া আর কিইবা করতে পারে!! মেয়েটির চিকিৎসার জন্য তাকে টাক করা হয়েছে, আর সেই যন্ত্রণার কিছুটা স্বাদ গ্রহণ করার জন্য আমি টাক করেছি!! মেয়েটি তা দেখে হেসেছে ... এতেই কি আমার ধন্য হওয়া উচিত নয়? কেননা, মৃত্যু পথযাত্রী কোন রোগীকে হাসাতে পারাও তো খুব সহজ ব্যাপার নয়।

********************************************

-"গুড মর্নিং নাঈম সাহেব, বসুন"
-"গুড মর্নিং স্যার"
বলে হাসি বিনিময় করে বসলাম অফিসের জিএম জনাব হাফিজুর রহমানের সামনে। ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্য বয়স্ক জনাব হাফিজ সাহেব যে জীবনে কঠোর অধ্যবসায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ এই চেয়ারের মালিক হয়েছেন সেটা তার কপালের ভাজ, রোদে পোরা তামাটে গায়ের রং আর মাথার কাচাপাকা চুল বলে দিচ্ছে। আর চোখের হাই পাওয়ারের চশমা তার জ্ঞানের মাত্রা আর কঠোর ব্যাক্তিত্বের পরিচয় বহন করছে। একটা পিয়ন এসে আমাদের দুই কাপ চা দিয়ে গেল। হাফিজ সাহেব আমাকে চা খাওয়ার আহবান করে নিজেও চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে কথা শুরু করলেন -
-"কেমন আছেন নাঈম সাহেব?"
-"জ্বী, ভালো আছি স্যার"
-"টাক করেছেন কেন?"
-"মাথার চুল ঘন করার জন্য স্যার"
-"আমাকে কথায় কথায় স্যার বলার দরকার নাই, বিরক্ত লাগে!"
-"আচ্ছা, আর বলব না"
-"হমম, আপনার বয়স কত?"
-"২৮ বছর ১ মাস ২ দিন"
-"তো এত অল্প বয়সেই মাথার চুল পরে যাচ্ছে?"
-"(আমি চুপ)"
তিনি একটু গলা খাকারি দিয়ে বললেন -
-"শুনলাম আপনার অনুমান ক্ষমতা নাকি প্রখর?"
-"(আমি হাসলাম)"
-"যাইহোক, আপনি কি আমাদের বিজনেস সম্পর্কে কিছু জানেন? I mean আমাদের প্রডাক্ট কি কি সেটা জানেন?"
-"জী জানি"
-"বলুন তো কি কি?"
-"আটা, ময়দা, সুজি"
-"গুড! আচ্ছা আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কি বলে?"
-"ভয়ে বলব? না নির্ভয়ে বলব?"
-"অবশ্যই নির্ভয়ে বলবেন"
আমি একটু চুপ থেকে কিছুক্ষণ পর ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম -
-"কোম্পানির বর্তমান যে অবস্থা তাতে সামনের ৩ মাস পর কর্মচারীদের বেতন দেয়া দুশকর হয়ে যাবে!! আর ৫ মাসের ভিতরে কোম্পানি দেউলিয়া হবে।"
জনাব হাফিজ সাহেব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। তারপর একটু নড়েচড়ে বসে চোখ থেকে চশমাটা খুলে কেমন যেন একটু Hopeless খাওয়া কন্ঠে বললেন -
-"কোম্পানির বর্তমান অবস্থা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা, কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন?"
-"আপনি প্রচন্ড রকমের সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ সেখান থেকেই অনুমান করে বলেছি। কারণ সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষরা কখোনো উন্নতি করতে পারেনা, উন্নতি করে অসৎ ও প্রতারক রা"
-"হা হা হা আমি সৎ?"
বলে অট্টহাসি দিয়ে উঠলেন হাফিজ সাহেব। তার চেয়ার ছেরে উঠে দাড়ালেন তিনি,তারপর একটু থেমে টেবিলের উপর দুই হাতে ভর দিয়ে আমার দিকে একটু ঝুকে আবারো বললেন -
-"আপনি জানেন আমি একজন খুনি? একজন খুনি কখোনো সৎ হতে পারেনা"
-"হম জানি"
-"তাহলে কিভাবে আমাকে সৎ বলছেন?"
-"কারণ খুন টা আপনি ইচ্ছা করে করেননি, নিজের জীবন বাচানোর জন্য করেছেন"!!
হা হয়ে গেলেন তিনি! তারপর ধপাস করে নিজের চেয়ারে বসে পরলেন। একটু যেন কাপা কাপা কন্ঠে বললেন -
-"মানে?"
আমি চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে কাপ টা পিরিচের উপর রাখতে রাখতে বললাম -
-"মানে, যে রাতে আপনি ঘুমের মধ্যে টের পেলেন যে, কেউ একজন আপনার মুখে বালিশ চেপে আপনাকে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করছে তখন আপনি বাঁচার জন্য হাতের কাছে এলার্ম ঘরিটা পেলেন এবং তা দিয়ে আততায়ীর মাথায় আঘাত করলেন, ফলে মাথা ফেটে প্রচুর রক্ত ক্ষরণের দরুন আততায়ীর মৃত্যু হয়। ঘড়িটা জার্মানির তৈরি এবং অনেক শক্ত ও মজবুত থাকায় রক্ষা পেয়েছিলেন আপনি। যদিও আঘাত করার আগে আপনি জানতেন না যে আক্রমণ কারী ছিল স্বয়ং আপনার স্ত্রী!! যদি জানতেন তাহলে হয়তো সেচ্ছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেন।"
আমি দম নেয়ার জন্য থামলাম। চাকরি করতে এসে এসব অনর্থক কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিলনা, তবুও বলে ফেললাম। রুমটা এয়ার কন্ডিশন হওয়া সত্বেও দেখলাম হাফিজ সাহেবের কপাল ঘামছে, এবং তিনি জমে পাথর হয়ে বসে আছেন। আমি নিরবতা ভেঙে বললাম -
-"স্যার, আজ আমার মামাতো ভাই বকুলের অপারেশন, আপনি অনুমতি দিলে আমি সেখানে যেতে চাচ্ছি।"
কিন্তু তিনি যেন বোবা হয়ে গেছেন এমন একটা ভাব প্রকাশ করে ইশারা করলেন আমাকে চলে যেতে। আমি উঠে পরলাম এবং তার রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। বেরোনোর আগে তাকে বলে আসলাম -
-"স্যার, আপনার ফ্যাক্টরিতে যিনি মূল দ্বায়িত্বে আছেন উনি মহা দুর্নিতিবাজ, আপনাকে দিনের পর দিন ঠকাচ্ছে!! ওনাকে অপসারণ করুন দেখবেন আপনার কোম্পানি আবারো দাড়িয়ে গেছে।"
---
বাঘাট ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে ৪৮০ টাকা দিয়ে এক কেজি ভালো মিষ্টি কিনলাম, তারপর রেলষ্টেশনের দিকে রওনা দিলাম। উদ্যেশ্য- আমার এক রাতের সেই ফকির বন্ধুকে মিষ্টি খাওয়ানো। কিন্তু মিষ্টির দোকানের মালিক কে দেখে আমার মনে একটা প্রশ্ন উদয় হল - দুনিয়ার সমস্ত মিষ্টির ব্যবসায়ী রা এরকম অস্বাভাবিক মোটকু হয় কেন? যদিও প্রশ্নটা অনেক আগে থেকেই মাথায় ঘুরপাক খেলেও এর রহস্য উৎঘাটন করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আবার কবে মিষ্টি কিনতে আসব তার তো কোন ঠিক নেই তাই দোকানিকে প্রশ্নটা করেই ফেললাম -
-"একটা প্রশ্ন ছিল জনাব"
-"জী ভাই বলুন"
-"না মানে, আপনি এত চিকন কেন?"
লোকটা আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন আমি তার দুটো কিডনিই খুলে নিয়েছি!! সে রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলল -
-"আপনার আর কিছু লাগবে?"
-"জী না, আর কিছু লাগবে না"
-"তাহলে আসতে পারেন"
অগত্যা আমি বের হয়ে চলে আসলাম। তারপর আবিষ্কার করলাম তার হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারন। ভুল বশত তার মোটা হবার কারণ জানতে চাওয়ার বদলে তার চিকন হবার কারণ জানতে চেয়ে ফেলেছি!! মাঝে মাঝে মানুষের কথার একটু ভুলের জন্য পুরো অর্থটাই পাল্টে যায়। আবার কেউ যদি কানে কম শোনে সেক্ষেত্রেও বিরম্বনার শেষ নেই। যেমন- যতদূর মনে পরে ক্লাস ফোরে একবার আমার ক্লাস টিচার আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন -
-"কি রে আজ কি দিয়ে ভাত খেয়েছিস?"
-"পুনা মাছ দিয়ে স্যার"
সাথে সাথে দেখলাম স্যার আমার কান মলে দিয়ে পিঠের উপর ডাস্টার দিয়ে মারলেন!! পরে অবশ্য জেনেছিলাম স্যার ওটাকে "পুঙা মাছ" শুনেছিলেন!!
ষ্টেশনের নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে এসে মিষ্টির প্যাকেট টা পাশে রেখে একটা বেঞ্চের উপরে বসলাম পা ঝুলিয়ে। বসে বসে ট্রেনের আসা এবং যাওয়া দেখছি। যথারীতি ১০ টাকার বাদাম কিনে খাওয়া শুরু করলাম, এমন সময় বাদামওয়ালা ফিক করে হেসে ওঠায় তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলাম, ৫ থেকে ৭ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে চুরি করে আমার পাশে রাখা মিষ্টির প্যাকেট টা খুলে একটা মিষ্টি খাওয়া শুরু করেছে!! আমি তাকাতেই ভয়ে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করলেও আমি খপ করে ওর হাত চেপে ধরলাম। এবং ভ্যাঁ করে সে কেঁদে দিল। আমি ওকে কোলে নিয়ে আশ্বস্ত করে বললাম -
-"নাম কি তোমার মামনি?"
সে ঠোঁট উল্টে তোতলাতে তোতলাতে বলল -
-"থিউলি" (শিউলী)
-"তাই খুব সুন্দর নাম, খুব ক্ষিধে লেগেছিল বুঝি?"
-"হু"
-"কেন বাড়িতে কিছু খাওনি?"
-"খেয়েতি" (খেয়েছি)
-"কি খেয়েছো?"
-"ভাত আল মাত" (ভাত আর মাছ)
-"তাই! কি মাছ?"
-"পুঙা মাত" (পুনা মাছ)
আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে বাচ্চার মা অথবা বাবা কে খুজতে লাগলাম। বাচ্চার মা, বাবা কে না পেলেও যার জন্য এখানে আসা তাকে দেখতে পেলাম। দুর থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমার সেই ফকির বন্ধু টি। যদিও আমি জানি সে মোটেও খোড়া নয়।
-"কি মিয়া, কোলে তোমার বাচ্চা? নাকি এইডাই তুমার ধান্দা?"
-"না, আমার বাচ্চা না"
আমি কথা বলা শুনে খুব অবাক হয়ে সে বলল -
-"আরে!! তুমি দেহি কতা কইতে পারো!!"
-"জী পারি! আমি একটা চাকরি পেয়েছি ১৮ হাজার টাকা বেতন, তাই আপনার জন্য মিষ্টি এনেছি। কিন্তু কোম্পানির অবস্থা ভালো না, টিকবে কিনা জানিনা!!"
মিষ্টির প্যাকেট টা হাতে নিয়ে মিষ্টি খেতে খেতে ফকির টা বলল -
-"দুরো মিয়া টেনশান নিয়ো না, আমি আছি না!! যেকোন একটা ধান্দা ধরাইয়া দিমুনে। চাকরি কইরা পাইবা ১৮ হাজার, আর আমার মত ধান্দা করলে পাইবা ৫০ হাজার!! কুনু সময় এর থেকে বেশিও হইবার পারে"
এমন সময় ষ্টেশনের মাইকে রেল কর্তৃপক্ষের ঘোষণা ভেসে এলো কানে -
"একটি হারানো বিজ্ঞপ্তিঃ কিছুক্ষণ আগে শিউলী নামের একটি ৬ বছরের বাচ্চা হারাইয়া গিয়াছে, তার পরনে ছিলো লাল রংয়ের "পাখি" জামা। কেউ তার সন্ধান পেয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে কাউন্টারে যোগাযোগের জন্য বলা হচ্ছে"
আমি শিউলী কে কোলে নিয়ে কাউন্টারের দিকে এগোলাম। এতক্ষণে বকুলেরও সফল অস্ত্রপচার হয়ে গেছে। মামা, মামী সবার মুখে হাসি। নিপা বকুলের বেডের পাশে খোঁপায় শিউলী ফুল দিয়ে সেজেগুজে বসে আছে! কারো জন্য অপেক্ষা করছে ও ...! আমি জানি আমার জন্য না ...!! তবে কার জন্য? আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এর থেকে বেশি আর কিছু বলল না!! কৌতুহল মেটানোর জন্য পা বাড়ালাম হসপিটালের দিকে। যদিও আর কেউ না হলেও বকুল আমার পথ চেয়ে বসে আছে।

চলবে...

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৭

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভালো হয়েছে তবে ছোট করে লিখতে হবে ভাই তা না হলে কেউই পড়বেনা।





ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১০

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ভাইয়া আমি লিখছিই বড় পাঠকদের জন্য, যারা পড়ার শেষে বলবে "ইসস এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল !!!" হাহাহা, ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ভালোই লাগছে ।
চলুক গল্প ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১১

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০২

কম্পমান বলেছেন: আপনার কথাটা ই ঠিক, পড়েই মনে হল এত তাড়াতাড়ি শেষ। আগামী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম, খুব বেশি অপেক্ষা যাতে করতে না হয়। আর আরেকটা কথা, সব গল্পের শেষে তাঁর আগের পর্বের লিংক গুলো দিলে ভাল হয় । বাকিতা আপনার ইচ্ছা ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৬

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ও পরামর্শের জন্য।

৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভাই আপনি হয়তো ভাবছেন আমি পড়িনি। আমি কিন্তু পুরো গল্পই পড়েছি। সত্যিই চমৎকার কিন্তু যাদের সময় কম তারা কী ভাবে পড়বে এতো বড় গল্প?





ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৯

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: আপনি পড়েছেন জেনে খুশি হলাম। আপনার মত ভাইরা পড়লেই চলবে। যাদের সময় নেই তাদের জন্য তো লিখিনি। ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।

৫| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

রাতু০১ বলেছেন: ভাললাগা এবং শুভকামনা।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: জানাচ্ছি আপনার প্রতিও।

৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮

ফয়সাল রকি বলেছেন: পরের পর্বে যাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.