নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (৫ম পর্ব)

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫২


বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পৌছালাম হাফিজ সাহেবের বাসায়। ঠিক এক ঘন্টার ভিতরেই যে আমি তার বাড়ি এসে পৌছাবো এমনটা অনুমান করেই ছাতি হাতে বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। প্রধান ফটকের দারোয়ান আমার পথ রোধ করতেই তিনি বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন -
-"ছলেমান, ওনাকে ভিতরে আসতে দাও"
ছলেমান ছাতা মাথায় দিয়ে এগিয়ে এসে দরজাটা খুলে দিল। আমি ছলেমাদের দিকে তাকিয়ে একটু থমকে দাড়ালাম! ছেলেটার বয়স খুব জোর ২৮ থেকে ৩০ এর উপরে হতেই পারেনা। আমি বিষ্মিত হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম -
-"তোমার নাম ছলেমান?"
-"জে স্যার"
-"একটা প্রশ্ন করি, কিছু মনে না করলে?"
-"জে স্যার, জিগান কি জিগাইবেন"
আমি আমার দৃষ্টিতে একটু দৃঢ়তা এনে বললাম -
-"তুমি অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে এখানে দারোয়ানগিরি করছো কেন ছলেমান?"
এমন সময় প্রচন্ড বৃষ্টির ভিতরেই প্রকান্ড এক বজ্রপাতের শব্দ হল। আমার কথা শুনে, নাকি বজ্রপাতের শব্দে ছলেমান চমকে উঠে ছিটকে মাটিতে পরে গেল তা ঠিক পরিষ্কার হতে পারলাম না। তার আগেই সেখানে ছাতি মাথায় দিয়ে হাফিজ সাহেব ছুটে এলেন -
-" আরে আপনি তো ভিজে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা!! চলুন ভিতরে চলুন।"
আমি বললাম -
-"আমার একটু ছলেমানের সাথে কথা ছিল"
-"ঠিক আছে সেটা পরে হবে, আগে আপনি ভিতরে চলুন, ঠান্ডা বাঁধিয়ে ছাড়বেন নাকি?"
-"কি বলেন!! কতদিন ঠান্ডা লাগেনা, নাকের মধ্যে কাটি ঢুকিয়ে হাঁচি দেয়ার মজায় আলাদা"
হাফিজ সাহেব হো হো করে হেসে দিলেন। বাড়ির ভিতরের দিকে এগোলাম আমরা। ভিজে সমস্ত শরীর জবজবে অবস্থা। হাফিজ সাহেব আমাকে শুকনো কাপড় দিলেন পরতে। আমি কাপড় পাল্টানোর সময় শুনতে পেলাম ভেজা প্যান্টের ভিতরে ফোনটা বেজে উঠলো। আশ্চর্য!! আমার কখোনোই এই ফোনটার কথা মনেই থাকেনা!! থাকলে ওটা একটা পলিথিনের ভিতরে রাখতাম। কিন্তু ভিজে যাওয়ার পরেও ওটা ভাল আছে? আমি পকেট হাতরে ওটা বের করলাম। ডিসপ্লের ভিতরে পানি পৌঁছে গেছে তবুও ওটা সচল!! বাহ ... আমি রিসিভ করলাম কলটা -
-"হ্যালো"
-"হ্যালো নাঈম ভাই"
-"হ্যাঁ নিপা বল"
-"যাক আমাকে চিনতে পেরেছ তাহলে"
-"হ্যাঁ চিনেছি"
-"শোনো যেটা বলার জন্য ফোন দিলাম, এ্যাপেল কে তোমার কেমন লেগেছে?"
-"কোন আপেল?"
-"আপেল না নাঈম ভাই, এ্যাপেল!! এ ডাবল পি এল ই "
-"ও আচ্ছা, হ্যাঁ ছেলেটা ভালো"
-"কেমন ভালো?"
-"অনেক ভালো"
-"সে আমাকে প্রোপোজ করেছে, আমি কি করবো?"
-"রাজি হোসনা!"
-"কেন!!"
-"সমবয়সী বিয়ে বেশিদিন টিকে না, আর তাছাড়া ওই ছেলের পিছে বহু মেয়ের সিরিয়াল, তুই সামলাতে পারবি না। বিয়ে করবি বোবা টাইপের কোন ছেলেকে, যার চুপচাপ হজম করার ক্ষমতা বেশি।"
-"হ্যালো ... হ্যালো ..."
পানির প্রভাব এতক্ষণে পরলো বোধহয় ফোনটার উপর!! বন্ধ হয়ে গেল! কিন্তু কথাগুলো ও শুনতে পেল কিনা সেটা পরিষ্কার হতে পারলাম না। সে যাইহোক, আমি আর হাফিজ সাহেব তাদের দোতালার বারান্দায় এসে আরাম করে দুইটা আরাম কেদারায় বসলাম। তার স্ত্রী এখোনো খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজি করা নিয়ে ব্যস্ত। একটা মেয়ে এসে আমাদের কে দুই কাপ কফি দিয়ে গেল। মেয়েটার বেশভূষা বলে দিচ্ছে সে এ বাড়ির কাজের মেয়ে। আমি কফিতে চুমুক দিলাম আর বারান্দা দিয়ে বাইরে চোখ রাখলাম। চারিদিকে কালো মেঘের গর্জন আর তার সাথে অঝোর বৃষ্টি। মনে হচ্ছে এটা নিন্মচাপের লক্ষণ। হালকা ঘন কুয়াশার মত মৃদু বৃষ্টির ছাট চোখে মুখে লাগাতে শরীরের ভিতরে একটা শিরশিরে ভাব পরিবেশ টাকে দান করেছে চমৎকার একটা আমেজ। গল্প বা আড্ডার জন্য এরকম পরিবেশ পায়ে ধরেও আনা যায়না। তবে দশে চক্রে ভগবান ভুত হবার মত করে আজ ঠিক যথাযোগ্য সময়েই এই দূ্র্লভ প্রকৃতিকে পাশে পাওয়া গেছে। যদিও কারো পোষ মাস, কারো সর্বনাশের মত নাজানি কত কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে আল্লাহ্ মালুম। তাতে আমার কি? যে এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের মালিক তার যেভাবে খুশি সেভাবেই সবকিছু পরিচালনা করবেন। আমরা যাদের পোষ মাসের সুখ নেয়ার দরকার তারা সুখ নেব, যাদের সর্বনাশের দুখ নেয়ার কথা তারা দুঃখ নেবে, এটাই স্বাভাবিক। দুনিয়াতে একই সময়ে সমস্ত মানুষ যেমন সুখী হয়না, তেমনি একই সময়ে সবাই দুখিও হয়না।
-"তো, আমরা কি খাওয়ার আগে আলোচনা করবো নাকি খাওয়ার পর?"
আমার চিন্তার মধ্যে বাধা দিয়ে বললেন হাফিজ সাহেব। আমি যেন একটু বিরক্তি নিয়েই বললাম -
-"কিসের, আলোচনা?"
তারপর তার অসহায়ত্ব মুখটা দেখেই আবার বললাম -
-"ওহ হ্যাঁ, আমরা আলোচনা টা খাওয়ার আগে এবং এই বারান্দায় বসেই করবো। আগে আপনার স্ত্রীর রান্না হোক তারপর"
আমার কথাটা শেষ না হতেই ২৪ থেকে ২৫ বছর বয়সের এক সুন্দরী রমনী টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বারান্দায় প্রবেশ করল এবং বলল -
-"আসসালামু আলাইকুম, নাঈম ভাই। আমি জুথি। কেমন আছেন আপনি? আপনার প্রশংসা শুনলাম অনেক"
আমি সালামের উত্তর নিয়ে হাসি বিনিময় করলাম। তিনি হাফিজ সাহেবের পাশের চেয়ারটাতে পায়ের উপর পা তুলে বসলেন।
আমি হাফিজ সাহেব এবং তার স্ত্রীকে উদ্যেশ্য করে বললাম -
-"আমি কি শুরু করতে পারি?"
-"হ্যাঁ, শুরু করুন নাঈম সাহেব, আমার আর দেরী সহ্য হচ্ছে না প্লিজ ..."
বললেন হাফিজ সাহেব, তার স্ত্রীও সম্মতি জানালেন। আমি আবারো বললাম -
-"আমার একটা অনুরোধ ছিলো"
-"জ্বী বলুন"
-"আমি কথা শেষ না করা পর্যন্ত আপনি বা জুথি ভাবি একটি কথাও বলবেন না"
-"ok তাই হবে, আপনি বলুন"
আমি কফির কাপটা সামনের টি টেবিলের উপর রাখতে রাখতে হাফিজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম -
-"খুব সংক্ষেপে বলছি - জুথি আর বিথী আপন দুই বোন। বাবা মারা যাওয়ায় তাদের সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ফলে দারিদ্রতার উপর যোগ হল অভাবও। বড়বোন বিথী কে আপনি ভালোবেসে বিয়ে করলেন, এবং ক্রমেই তাদের অভাব মুক্তি ঘটলো। আপনার কপালেও ছিলো রেনেসাঁ তিলক, ফলে পইপই করে ব্যবসায় উন্নতি করলেন ও দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। কিন্তু অভাব অনটন না থাকলেও ছোটবোন জুথির কোন ভাবেই বড় বোনের এই সুখ সহ্য হচ্ছিল না। সে তার বাল্যকালের প্রেমিক ছলেমানের সাথে বসে আপনার এই বিশাল সম্পত্তি নিজের করে নেয়ার জন্য এক চরম মাস্টার প্লান করলেন, এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছেন। নিজের বোন কে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিয়েছেন, তারপর আপনাকে বিয়ে করলেন এবং খুনের দায় আপনার ঘারে চাপালেন, এখন শুধু বাকি টার্গেট আপনি!! আপনাকে সরাতে পারলেই জুথি আপনার সমস্ত সম্পত্তির লিগাল ওয়ারিশ হবে এবং ছলেমান কে বিয়ে করে সুখের সংসার করবে!!"
আমি একটু পানি খাওয়ার জন্য থামলাম, কিন্তু তার আগেই জুথি ক্ষোভ প্রকাশ করলো -
-"What do you mean??? মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন??? বের হন!!! এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বের হন!!! ভন্ডামী করার জায়গা পাননা??? কিসের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়?? সব বোগাস!!"
আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে পানির বোতলের মুখ খুলতে খুলতে বললাম -
-"এখোনো তো এটা আপনার বাড়ি হয়নি তাইনা ভাবি? হাফিজ ভাইকে মারবেন, সম্পত্তির মালিক হবেন, তারপর নাহয় বলবেন এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে!! যদিও ততদিন তো আর এভাবে এখানে বসে থাকব না।"
এতক্ষণ পর হাফিজ সাহেব মুখ খুললেন, তিনি ঠান্ডা মাথায় শক্ত কন্ঠে বললেন -
-"আপনি শেষ করুন নাঈম সাহেব"
আমি কয়েক ঢোক পানি খেয়ে আবারো শুরু করলাম -
-"জুথির বুদ্ধিতেই ছলেমান এ বাড়িতে দারোয়ান সেজে এসেছে এবং তারা দুজন মিলেই বিথী কে হত্যা করে আপনার ঘুমন্ত মুখের উপরে বালিশ চাপা দিয়ে বিথীর মরদেহটা বালিশের উপরে ছেরে দেয়, আপনি ঘুমের মধ্যে ঘড়িটা দিয়ে মৃত বিথীকেই আঘাত করলেন এবং আপনি বুঝে ওঠার আগেই জুথি ও ছলেমান সেখান থেকে সরে পরে। ঘরটা অন্ধকার থাকায় কাজ টা করতে সুবিধা হয় খুনিদের। ব্যস বিথীকে হত্যার দায়ে আপনি গেলেন জেলে, এবং আপনাকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য জুথি কোর্টে নিজের বোনের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেয় এবং বলে যে - বিথী দুশচরিত্র ছিল এবং আপনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারপর আপনি ছাড়া পেলেন এবং জুথির উপর খুশি হয়ে তাকে বিয়ে করলেন...........
কিন্তু আর বোধহয় বেশিদিন ছিলনা আপনাকে খতম করার। এইতো কিছুদিন আগে ছলেমান কে দিয়ে একটা সিরিন্জ কিনে এনেছেন তিনি। যেকোন এক দিন ঘুমের ভিতরেই ওটা আপনার শিরায় ঢুকিয়ে ফাকা বাতাস পুস করে মারার প্লান ছিল তাদের। যাতে কোন প্রমাণ না থাকে। আপনি জানেন নিশ্চয়ই যে, মানুষের রক্ত নালিতে সিরিন্জ ঢুকিয়ে ফাকা বাতাস ঢুকালেও তার মৃত্যু ঘটে। আর হ্যাঁ নতুন ওই সিরিন্জ টা এখোনো ইনট্যাক অবস্থায় জুথি ভাবির বিছানার তোসকের নিচেই রয়েছে।"
বলে আমি থামলাম। জুথি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার এই অদ্ভুত চাহুনিটাও খুব সুন্দর লাগছে!! এধরনের চাহুনি সচারচর সবাই দিতে পারেনা।
হাফিজ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। আমি বললাম-
-"কোথায় যাচ্ছেন? সিরিন্জ টা ওখানে আছে কিনা দেখতে?"
-"না...!! ছলেমান কে ধরতে যাচ্ছি।"
-"যেয়ে লাভ নেই, সে এতক্ষণে মহাখালি বাসষ্টান্ডে পৌছে গেছে। আপনি চিন্তা করবেন না, পালিয়ে বাচঁতে পারবেনা সে"
হাফিজ সাহেব ধপাস করে মেঝেতে বসে পরলেন। চসমা খুলে চোখের পানি মুছছেন। জুথি এখোনো অপলক তাকিয়ে আছে আমার দিকে ... মনে হচ্ছে একটা কাঠের পুতুল! শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কিনা তাও বোঝা গেলনা। বৃষ্টির তেজ মনে হল একটু কমতে শুরু করেছে ... ক্ষিধেও লেগেছে অনেক! আর তাছাড়া বৃষ্টি থেমে গেলে খিচুড়ি আর ইলিশ খাওয়ার কোন মর্মই থাকবেনা। কিন্তু এদের দুজনের যে ভাব দেখছি তাতে সেচ্ছায় আর খিচুড়ি ইলিশ খাওয়া হবেনা। আমি নিজেই রওনা দিলাম রান্না ঘরের দিকে!! তারা দুজন বারান্দায় ওভাবেই ঠাঁই বসে আছে। আমি একটা থালায় খিচুড়ি ভাত আর ইলিশ মাছ নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলাম। তবে খাওয়ার আগে মনে মনে বিথীর আত্মার কাছে বললাম
"তোমার হত্যাকারির হাতের রান্না খাচ্ছি ... আমায় ক্ষমা কোরো বোন, সে পাপ করেছে ... এই খাবার গুলোতো আল্লাহর নিয়ামত, এরা তো কোন অন্যায় করেনি"

*********************

একটা চায়ের দোকানে চুলোর পাশে ভেজা ফোনটা শুকাতে দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে আদা দিয়ে চা খাচ্ছিলাম। হাফিজ সাহেবের বাড়ি থেকে বের হয়ে হিমুর মত কিছুক্ষণ খালি পায়ে হাঁটার চেষ্টাও করেছিলাম, যদিও স্যান্ডেল জোড়া হাতেই ছিল! কিন্তু কয়েক কদম হাঁটার পর ছোট ছোট ইট পাথরের আঘাতে পায়ের তলে চরম ব্যথা অনুভব হওয়ায় সে চেষ্টা বাদ দিলাম। এখানেও উপলব্ধি করলাম হিমু হওয়া সহজ কাজ নয়। তার উপর আবার হিমু আমার মত এমন ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভেজা রাস্তা দিয়ে হাটতো না। সে হাটতো চৈত্রের খরা রোদে মধ্য দুপুরের উত্তপ্ত পিচের রাস্তায়। চিন্তা করতে গেলেও গায়ে জ্বর চলে আসে। তাছাড়া হিমু ছিলো হিমালয়, মহান বা মহা মানব। আর আমি হলাম মিচকা শয়তান!! কেননা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমাদের সবার ভিতরেই কম বেশি আছে, কেউ কেউ সেটা কাজে লাগাতে পারে, আবার কেউ ব্যর্থ হয়। আমি সেটাকে কাজে লাগাতে পারি বিধায় সহজেই হিমুর ভেক ধরতে পারি। আসলে সবই ভন্ডামী!! হিমু, হিমুই ... তার মত হবার সাধ্য আর কারো নেই। তাই হিমুর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে একটা টোস্ট বিস্কুট নিয়ে চায়ে ডুবিয়ে খেতে লাগলাম। এমন সময় চায়ের দোকানের টিভি নিউজের দিকে চোখ গেল। সাউন্ড ভলিউম কম থাকায় সংবাদ উপস্থাপকের কথা শুনতে না পারলেও টিভিতে যে বাড়িটি দেখাচ্ছে সেটা খুব চিনতে পারলাম। কিছুক্ষণ বাদেই টিভিতে দেখালো হাফিজ সাহেব কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলছেন। নিচে ছোট্ট করে যে হেডলাইন টি লেখা ছিল সেটা এরকম -
"বাড়িধারার সেই গৃহবধূ বীথি হত্যা রহস্যের নতুন মোড়, মুখ খুললেন স্বামী হাফিজুর রহমান"
আমি চায়ের দোকানি কে টিভির ভলিউম টা একটু বাড়িয়ে দিতে বললাম। দেখলাম এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জনাব হাফিজুর রহমান একটা ইনট্যাক সিরিন্জ উচিয়ে ধরে বলছেন -
-"এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোন প্রমাণ নেই"
তখন সাংবাদিক ঘুন্নি সাহা প্রশ্ন করলেন -
-"কিন্তু এই সিরিন্জ টা দিয়ে কিভাবে প্রমাণ হয় যে এটা দিয়ে আপনাকে হত্যার পরিকল্পনা হচ্ছিল? আর তাছাড়া বীথির হত্যা যে তার বোন মানে আপনার বর্তমান স্ত্রী করেছেন সেটাই বা আপনাকে কে বলল?"
-"এটা আমাকে বলেছেন নাঈম সাহেব"
-"কে এই নাঈম?"
-"আমার অফিসের কর্মচারী, নতুন জয়েন করেছেন"
-"তিনি কিভাবে এতকিছু জানলেন?"
-"তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে"
-"ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে এত পুংখানুপুঙ্খ বর্ননা কিভাবে দিলেন তিনি?"
-"সেটা আমি জানিনা"
-"তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তো ভুলও বলতে পারে!!"
-"না, তিনি একটাও ভুল কথা বলেননি"
এরপর সাংবাদিক ক্যামেরার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন -
-"দর্শক, আপনারা শুনছিলেন বীথি হত্যার ব্যপারে তার স্বামীর বক্তব্য। তবে তার বক্তব্যে ক্রমেই রহস্যের জট ঘনিভুত হচ্ছে। গল্পে নাঈম নামের নতুন আরেকটি চরিত্র যোগ হয়েছে। যদিও আমরা এখোনো এই নাঈম সম্পর্কে কোন তথ্য পাইনি। পুলিশ তার বর্তমান স্ত্রী জুথি কে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, আশা করছি পুলিশ খুব শীঘ্রই এই রহস্যের সমাধান করতে সক্ষম হবে। বাড়িধারা ডি.ও.এইচ.এস থেকে 'ঘুন্নি সাহা' "
আমার সাথে সাথে চায়ের দোকানদারও নিউজ টা দেখছিল মনযোগ দিয়ে। তারপর টিভিটা বন্ধ করে একগাল পানের পিক ফেলতে ফেলতে বলল -
-"হালার মুখে গু কুলি করে মারা উচিত"!!
আমি যেন বুঝতে না পেরে বললাম -
-"কার মুখে চাচা?"
-"ওই যে নাঈম না ফাইম ওই হালার মুখে"
-"কেন?"
-"হালায় একটা ভন্ড!! আপনিই কন অনুমান কইরা কুনুদিন কারো খুনের কাহিনী কওন যায়?? তাইলে তো ওই হালায় কইতে পারবো ভবিষ্যৎ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে হইবো!! তাইনা?"
-"জ্বী একদম ঠিক, ব্যাটা আসলেই একটা ভন্ড"
-"ওই হালারে লেংটো কইরা কাঠাল গাছের লগে বাইন্ধা পিডাইলেই সব ভন্ডামী যাইবো গা"
আমি একটু শংকিত হয়ে ঢোক গিলে বললাম-
-"ক্যান ভাই, কাঠাল গাছ কেন?"
-"আরে মিয়া কাঠাল গাছে মৌমাছির চাক থাকে, তারে বাইন্ধা মৌমাছির চাকে একখান ঢিল মারলেই হবে ... ব্যস বাদ বাকি কাজ মৌমাছিই করবো।"
সাথে সাথে মনে হল, হাজার হাজার মৌমাছির ভো ভো শব্দ কানে ভেসে এলো। আমি তৎক্ষণাৎ উঠে দাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে চায়ের দোকানের বিল মিটিয়ে রাস্তায় নেমে পরলাম। রাস্তায় নেমেই আবারো সেই বিপদ্গ্রস্ত কুকুর যুগলের দেখা মিলল। সেদিন ওদের সাহায্য করার সুযোগ না মিললেও আজ একটু চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু যেভাবে একে অপরের সাথে এটে রয়েছে এবং হাজার টানাটানি করেও ছুটছে না দেখে আসলেই খুব মায়া হলো। আমি একটা ঢিল হাতে নিয়ে ছুড়লাম ওদের দিকে!! কিন্তু ঢিলটা গায়ে লাগতেই কুকুর দুটো একটু খেইখেই করে চিল্লিয়ে উঠলেও কোন লাভ হলনা!! উপায়ান্তর না দেখে এবং ওদের অসহায়ত্ব অনুভব করে একটা লাঠি নিলাম হাতে। লাঠিটা নিয়ে ধীরে ধীরে ওদের কাছে গিয়ে যেইনা উচিয়েছি মারার জন্য ওমনি টের পেলাম কেউ একজন আমার মাথায় শক্ত কোন লাঠি বা হকিস্টিক টাইপের কিছু একটা দিয়ে জোরে আঘাত করলো ........!!!
আমার হাত থেকে লাঠিটা পরে গেল, মাথায় হাত দিয়ে দেখি রক্ত ...!!! কিন্তু কেন? আমার জানা মতে এমন তো কোন কাপুরুষ শত্রু নেই আমার, যেকিনা পিছন থেকে আঘাত করতে পারে ..!! প্রচন্ড ব্যথা আর যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলাম আমি... কিন্তু কে আমাকে আঘাত করলো তা দেখার জন্য পিছন ঘুরে তাকাবার মত সময় পেলাম না , তার আগেই জ্ঞান হারালাম ...!!! তবে জ্ঞান হারাবার আগে দেখেছিলাম কুকুর দুটোর দৌড় ..!! আমাকে মারতে দেখে ভয়ে তাদের বিপদ মুক্তি ঘটে! তাদের মুক্তি এবং দৌড় দেখে একটু খুশিও হলাম আবার হাসিও চেপেছিল...!!

***********************

জ্ঞান যখন ফিরলো তখন নিজেকে একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আবিষ্কার করলাম, এবং মাথায় ব্যান্ডেজ। নরম বিছানা আর গরম চাদরে বেশ আরাম লাগছিল। বুঝলাম আমি কিডন্যাপ হয়েছি!! কিন্তু কেন, কি উদ্যেশ্যে আর কেই বা আমাকে কিডন্যাপ করল সে বিষয়ে আমার সিক্সথ সেন্স এখনিই কিচ্ছু বলল না। আমি পিট পিট করে চোখ মেললাম এবং দেখলাম কয়েকজন স্বাস্থ্যবান যুবক আমার বিছানা ঘিরে বসে আছে। তাদের মাজায় পিস্তল জাতীয় কিছু একটা উকি দিচ্ছিলো। আমি চোখ মেলতেই তাদের ভিতরে একজন এগিয়ে এসে বলল -
-"ওয়েলকাম মিঃ ষষ্ঠী ইন্দুর"!!
মানে!! ষষ্ঠী ইদুর!! এই প্রথম আমার নামের এমন বিকৃত রূপ দেখে রাগ হওয়ার বদলে হাসিই পেল। আমি উঠে বসে একটু অভিযোগের সুরেই বললাম -
-"ভাই, দেখলেন আমার মাথাটা টাক, তাহলে কেন আঘাত করতে গেলেন? একটুও মায়া হলনা? আমাকে বললে আমি সেচ্ছায় আপনাদের সাথে চলে আসতাম।"
লোকটা আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে কাকে যেন ফোন দিল -
-"বস, ইন্দুরের জ্ঞান ফিরছে, আবার ফটোর ফটোর কইরা বুলিও ছুটতাছে মুখ দিয়া .... ওকে বস .... জ্বী বস..."
বলে ফোনটা রেখে দিল। অনুমান করার চেষ্টা করলাম ফোনের অপর প্রান্তের এই বস কে হতে পারে? অনুমান করে যেটা বুঝলাম তাতে এই বস ঢাকার খুব প্রভাবশালী কেও একজন এবং সে আমার কাছে কিছু ভবিষ্যৎ বানী জানতে চায় সেটা বুঝলাম...!! কিন্তু যে ধরনের প্রশ্ন সে আমাকে করতে চায় তা ভাবতেই আমি হো হো করে হেসে দিলাম ... হাসতে গিয়ে একটু ব্যথা পেলেও হাসলাম, কেননা এত প্রভাবশালী ধনী কোটিপতিরা এতো বোকা আর বলদ হয় কেমনে তা আমার মাথায় আসলো না।

চলবে...

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:০১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চালিয়ে যান একদিন ভালো করবেন।





ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫১

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:২০

ময়না বঙ্গাল বলেছেন: আপনার বর্ণণ এবং ভাষার বুনট সাথে নাটকীয়তা ভালো লাগল

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫০

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ অসংখ্য।

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:২৯

রুদ্র পাঠক বলেছেন: অপেক্ষায় রইলাম ..........

৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৪

ফয়সাল রকি বলেছেন: সাংবাদিকের মতো আমারো একই প্রশ্ন -"ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে এত পুংখানুপুঙ্খ বর্ননা কিভাবে দিলেন তিনি? "ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে এত পুংখানুপুঙ্খ বর্ননা কিভাবে দিলেন তিনি?"
আর যদি জেনেই থাকে তাহলে তার মাথায় আঘাত করে, অজ্ঞান করে, অপহরণ করবে- এটাও তো তার অজানা থাকার কথা নয়।
যুক্তি মিলছে না.... মানে সিক্সথ সেন্সটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০১

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: হাহাহা জী ভাই ঠিক বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.