নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (৬ষ্ঠ ও শেষ পর্ব)

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫০


পকেট হাতরে ফোনটা খুজে পেলাম না। মা কে একবার ফোন দেয়া দরকার, নাহলে খুব চিন্তায় থাকবে সে। আমার পাশে এখন মাত্র একজন গুন্ডা বসে আছে। আমার একদম কাছে বসে থাকায় দেখলাম সে তার এন্ড্রয়েড ফোনে ইন্টারনেটে এ.কে-৪৭ সম্পর্কে ছবিসহ বিস্তারিত বিশ্লেষণ করছে খুব মনোযোগের সাথে। বুঝলাম লোকে কেন বলে "মুচির নজর জুতোর দিকে"!! আজ যদি এই গুন্ডাটা কোন ডক্টরের ঘরে জন্ম নিত আর যদি ভাল ছাত্র হত তবে নিশ্চয়ই ইউটিউবে বসে বসে পোস্টমর্টেম দেখত। তাহলে তো সূত্রমতে এর বাবারও গুন্ডা বা সন্ত্রাস টাইপের কিছু একটা হওয়ার কথা! কিন্তু আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ইনার বাবা একজন মসজিদের ঈমাম ছিলেন!! একজন ঈমাম সাহেবের সন্তান কেন গুন্ডা মাস্তান হতে যাবে? ঈমাম সাহেবের ছেলে হবে মাওলানা।
আমি লোকটাকে একটু চমকে দেয়ার জন্য বললাম -
-"কি সিন্দাবাদ সাহেব, মোবাইলে কি দেখছেন?"
সিন্দাবাদ হলো তার বাবার দেয়া নাম। ছোটবেলায় প্রচুর সিন্দাবাদ দেখার নেশা ছিল তার এমনকি সিন্দাবাদ দেখার জন্য বেচারি মারও খেয়েছিল অনেক। একবার লোকের বাড়িতে সিন্দাবাদ দেখতে যাওয়ার অপরাধে কাঠাল গাছের সাথে বেধে পেটানো হয়েছিল তাকে। যেহেতু তার বাবা ঈমাম ছিলেন তাই তাদের বাড়ি কোন টিভি ছিলনা এবং টিভি দেখা তিনি পছন্দও করতেন না। তার কথা ছিল 'টিভি হল দোজখের অগ্রীম টিকেট!' এরপর অবশ্য তিনি ছেলের সিন্দাবাদ দেখার জন্য টিভিও কিনেছিলেন এবং ছেলের নামও দিয়ে দিলেন সিন্দাবাদ! যদিও এই নামে তিনি ছাড়া আর কেউ ডাকত না। আজ এতদিন পর সম্পুর্ন অপরিচিত একজন মানুষের মুখে ডাক টা শুনে যে সিন্দাবাদ সাহেব বেজায় হকচকিয়ে গেলেন তা তার চোখেমুখেও ফুটে উঠলো। একটু আমতা আমতা করে বলল -
-"কেক .. কে সিন্দাবাদ? আপনি কি আমাকে বললেন?"
-"জ্বী, আপনাকেই বলেছি জনাব"
-"আপনি জানলেন কিভাবে আমার নাম সিন্দাবাদ? ওটা আমার বাবা আমাকে ডাকতেন"
-"জ্বী জানি! যেহেতু আমি ষষ্ঠী ইদুর তাই এগুলো জানা আমার কাছে তেমন কোন বড় বিষয় নয়"
-"আপনি মিথ্যা বলছেন"
-"হ্যাঁ আমি মিথ্যা বলি ঠিকই, কিন্তু অপ্রয়োজনে না"
-"মিথ্যা মিথ্যাই, সেটা প্রয়োজনে হোক আর অপ্রয়োজনে হোক, আপনি মিথ্যা বলছেন"
-"আচ্ছা ঠিক আছে, মানলাম আমি মিথ্যা বলেছি। এখন তোমাকে একটা কথা বলি যদি কিছু না মনে কর?"
আমি যে আস্তে করে আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছি সেটা সে বুঝেও হয়তো না বোঝার ভান করছে। এটা সাধারণত নব্য প্রেমিক প্রেমিকাদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যদি কারো প্রতি এতটুকুও আনুগত্য পোষন করি তবে তার ছোটখাটো দোষ ত্রুতি গুলো এড়িয়ে যেতে পছন্দ করি। সিন্দাবাদও ঠিক তাই করলো। যার অর্থ দাঁড়ায় আমি তার উপরে চুল পরিমাণ হলেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছি। সেটা না করে যদি সরাসরি তুমিতে আসতাম তবে আর রক্ষা থাকতো না। নিঃসন্দেহে এতক্ষণে যেখান থেকেই হোক গরু ইনজেকশন করা সিরিন্জ নিয়ে এসে গুলশানের ওই ওসি সাহেবের ইচ্ছা পূরনের চেষ্টা করত!! সিন্দাবাদ যেন নিজের দুর্বলতা একটু আড়াল করার চেষ্টা করে কঠোর ভাবেই বলল -
-"বলেন কি বলবেন"
-"না মানে, আমি জানি তুমি এই লাইনে আসতে চাওনি। তুমিও আর ১০ জন সুস্থ মানুষের মত একটা সাধারণ জীবন চেয়েছিলে! তবে কেন বেছে নিলে এই বিপদের পথ?"
-"সে কৈফিয়ত তো আমি আপনাকে দিতে বাধ্য না"
-"ঠিক আছে আমাকে নাহয় নাই দিলে কিন্তু তোমার বাবা কেও দিতে বাধ্য না?"
-"মানে?? আমার বাবা তো মরে গেছে!!"
-"হম, জানি। তবে কেন ভুলে যাচ্ছো তোমার বাবার কবর ছুঁয়ে করা সেই প্রতিজ্ঞার কথা?"
যেন আকাশ থেকে পড়লো সিন্দাবাদ!! তোতলাতে তোতলাতে বলল -
-"কোন .... কোন ... প্রতিজ্ঞা? কিসের প্রতিজ্ঞা?"
-"কেন? মনে নেই, বাবার কবর ছুঁয়ে বলেছিলে, সারাজীবন সৎপথে থাকবে, ভালো কাজ করবে?"
সিন্দাবাদ বেশ ভালমতই ঘাবড়েছে। রীতিমতো ঘামতেও শুরু করেছে! একটু নরম হয়ে বলল -
-"ইচ্ছা থাকলেই কি সৎ থাকা যায়? কত মানুষের দুয়োরে দুয়োরে ঘুরেছি, কই কেউতো আমাকে একটা চাকরীও দেয়নি!"
-"চাকরীই করতে হবে এমনতো কোন কথা নেই, ব্যবসা করতে পারতে"
-"ব্যবসা!! কিসের ব্যবসা?"
-"হযবরল ব্যবসা!!"
-"মানে?"
-"মানে একটা দোকান দিতে পারতে, যেখানে মোবাইলের চার্জার, হেডফোন, ব্যটারি, সুই, সুতো, মমবাতি, আলু, বেগুন ঝাল, পেয়াজ সব পাওয়া যাবে!! অর্থাৎ অল্প পুজিতে বেশি লাভের ব্যবসা। যেমন বর্তমানে এক কেজি মিষ্টির চেয়ে এক কেজি ঝালের দাম বেশি। ডাবল লাভ!! এবং দোকানের নাম হবে 'হ য ব র ল সুপার সপ'"
সিন্দাবাদ কিছু বলতে যাবে এমন সময় সেই প্রভাবশালী ব্যাক্তির আগমন ঘটলো, যার আদেশেই এই সিন্দাবাদ ও তার দলবল আমাকে এখানে ধরে এনেছে। সিন্দাবাদ উঠে দাড়ালো এবং তার বসকে একটা সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে চলে গেল।
আগুন্তক তামিল নাড়ুর ভিলেনের মত মুখে একটা পাইপ আর মাথায় একটা হ্যাট পরে আমার সামনের চেয়ারটায় এসে বসলো। আমি লম্বা একটা সালাম দিয়ে কোনরকম ভনিতা ছাড়াই বললাম -
-"যা জিজ্ঞাসা করার তাড়াতাড়ি করুন স্যার। আমার জরুরি কাজ আছে, আমাকে যেতে হবে!"
তিনি যেন খুব মজা পেলেন আমার কথা শুনে এমন একটা মুখভাব নিয়ে বললেন -
-"তাই বুঝি? পরিচিত হতে পারলাম না আর এখুনি যাওয়ার জন্য এত তাড়া!! আর তাছাড়া আমার পারমিশন ছাড়া এখান থেকে যাওয়ার কথা ভাবলেন কিভাবে জনাব নাঈম সাহেব?"
-"আপনি পারমিশন দিলেও আমি যাব, না দিলেও যাব।"
-"OMG তাই!!"
বলে চোখ দুটো বড়বড় করে তাকালেন আমার দিকে। আমিও আমার চোখ দুটো তার থেকেও যাথাসম্ভব বড়বড় করে বললাম -
-"জী, তাই"
লোকটা দেশের যেকোন একটা বড় দলের অনেক বড় কোন পোষ্টে নিযুক্ত আছেন। জীবনে এত পরিমাণ অন্যায় আর অপরাধ তিনি করেছেন যার জন্য আজ তার মনে চরম ভয় আর ভীতির জন্ম দিয়েছে। প্রত্যেক মানুষই একটা স্টেজে এসে তার সারা জীবনের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং বাঁচার পথ খুজতে থাকে। যাদের সীমা অতিক্রমের আগেই এই উপলব্ধিটা হয় কেবল তারাই হয়তো পথ খুজেঁ পায়। লোকটা একটু দৃঢ় কণ্ঠে আমাকে বলল -
-"আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনি এখান থেকে এক চুলও নড়তে পারবেন না"
-"আপনিও নিশ্চিত থাকতে পারেন আমি এখান থেকে বের হবোই"
লোকটা খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল -
-"বেশ, তবে আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের একটা পরীক্ষা হয়ে যাক, কি বলেন?"
আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম -
-"সেটাই তো বলছি স্যার, যা করার একটু তাড়াতাড়ি করলে আমার জন্য সুবিধা হয়। আমার অনেক কাজ বাকি আছে।"
তিনি পাইপ টা মুখে লাগিয়ে একটা লম্বা টান দিয়ে বললেন -
-"আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলুন"
-"আমি কারো ভবিষ্যৎ বলতে পারিনা, ভবিষ্যৎ শুধু একজনই জানেন যিনি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা। আমি যেটা বলি তা সবই অনুমানের উপর ভিত্তি করে বলি। যদি পুংখানুপুঙ্খ ভবিষ্যৎ বলতেই পারতাম, তবে আমার মাথায় বারি দেয়ার আগে আপনার পোষা কুত্তাদের মাথায় বারি পরত, এবং আপনার মত এত পাপীষ্ঠ মানুষের মুখোমুখিও হতে হতনা।"
-"হাহাহা কেউ আমাকে গালি দিলে কেমন যেন অহংকার বোধ কাজ করে, মনেহয় দুনিয়ার সমস্ত গালাগালি শুধুমাত্র আমার একার সম্পত্তি!! হাহাহা, যাইহোক - তাহলে আমার অতিত সম্পর্কে কিছু বলেন শুনি"
-"আপনি কি প্রেসারের রুগী?"
-"না, কেন?"
-"কেননা, যাদের প্রেসারের সমস্যা আছে আমি তাদের কিছু বলিনা"
-"হাহাহা, ঠিক আছে বলেন বলেন"
-"আমার দেখা আপনিই প্রথম মানুষ যেকিনা টাকার বিনিময়ে ধর্মান্তরিত হয়েছেন!! এরপর মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, নারী পাচার, কিডনি পাচার সহ এহেন কোন কর্ম নাই যা আপনি করেন নাই..."
-"থামুন!!"
বলে আমাকে থামিয়ে দিলেন তিনি। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে বললেন -
-"আমি আপনার কাছে আমার লাইফ হিস্টোরি শুনতে চাইনি!!"
-"তো কি ধর্ষণ কাহিনী শুনতে চেয়েছেন?"
-"মানে?"
-"মানে আপনার গুনের তো কোন শেষ নেই, একাধারে বহু ধর্ষণের অতীতও আছে আপনার জীবনে!! এমনকি জীবনের প্রথম ধর্ষণটাও করেছিলেন মাত্র ১৯ বছর বয়সে, তাও আবার অসহায় একটা শিশুর সাথে!!"
-"চুপ...!!! একদম চুপ ...! গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব ..."
বেশ উত্তেজিত হয়ে গেছেন তিনি। বোধহয় প্রেসার বেড়ে গেছে। আমি বললাম -
-"আমি চুপ হয়ে গেলেও তো আপনার পাপ চুপ করে থাকবে না তাইনা!! আপনার খেল খতম!! আপনি মহা বিপদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন!!"
এবার তিনি আবার নরম হয়ে বললেন-
-"হ্যাঁ ..হ্যাঁ .. আমি জানি আমি বিপদে আছি .. আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করার কোন উপায় থাকলে বলুন, আমি আপনাকে গাড়ি বাড়ি টাকা যা চান সব দেব, প্লিজ হেল্প মি"
-"আপনি মুসলমান তাইনা?"
-"হ্যাঁ"
-"আল্লাহর কাছে মাফ চান, একমাত্র তিনিই পারেন আপনাকে ক্ষমা করতে, যদি তিনি চান, এবং একমাত্র তিনিই ক্ষমাশীল, যিনি তার বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য বসে আছেন। কিন্তু আমরা অবুঝের মত তার কাছে ক্ষমা চাইনা।"
কিন্তু আমার এধরনের পরামর্শে তিনি হতাশ হলেন এবং আবারো পূর্বের রূপ ধারণ করে বললেন -
-"রাখেন আপনার ক্ষমা!! ভন্ড কোথাকার!!"
বলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাকে যেন ফোন দিতে দিতে বের হয়ে গেলেন। আমি জানি তিনি কাকে ফোন দিচ্ছেন!! তিনি ফোন দিচ্ছেন বিদেশের এক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কাছে! যেখানে তিনি আমাকে ১ লক্ষ ডলারে বিক্রি করবেন!! এবং ওখানকার বিজ্ঞানিরা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবে। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তথা আধ্যাত্মিক কোন ক্ষমতা আদৌ আছে কিনা, আর যদি থেকে থাকে তবে আমার মস্তিষ্কে কি আছে যা অন্যদের নেই তা দেখার জন্য আমার মাথা কেটে ঘিলু বের করে গবেষণা করতেও পিছপা হবেনা তারা!!!
আমি বুঝতে পারছি আমার হাতে সময় একদম কম, এই অল্প সময়ের ভিতরেই আমাকে এখান থেকে মুক্তি পেতে হবে! কিন্তু কিভাবে তা জানিনা ... একমাত্র সিন্দাবাদই পারে আমাকে এখান থেকে মুক্ত করতে ... কিন্তু সিন্দাবাদ কি আসবে আমাকে মুক্ত করতে? ... আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এ ব্যাপারে আর কিছুই বলতে চাচ্ছে না ... সে হয়তো আমার চিন্তিত মুখটা দেখে মজা নিতে চাচ্ছে ... কিন্তু আমি নিজের জন্য একটুও চিন্তা না করলেও মায়ের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে ... কেন জানিনা মায়ের মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে বার বার .... মাকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে ... শুনেছি মানুষের বড় কোন বিপদ বা মৃত্যুর সময় হলেই কেবল সে তার আপনজনদের দেখতে পায় ... তাদের কে কাছে পেতে চায়। তবে কি ...

***********************************

চোখ, মুখ আর হাত বেধেঁ আমাকে একটা গাড়িতে তোলা হয়েছে। চোখ মুখ বাধাতে খুব বেশি সমস্যা না হলেও নাক টা কিছুটা বাধা পরায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে এর মধ্যেই অদ্ভুত একটা ব্যাপার আবিষ্কার করলাম। কিন্তু এটা আমার মনের ভুল কিনা বুঝতে পারছিনা না। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়র ক্ষমতা টুকটাক আছে সেটা মানছি, কিন্তু এই মূহুর্থে যেটা ঘটছে সেটা কে কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা! আমার দুচোখ বাধা স্বত্বেও আমি সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি!! অনুমান করে অনেক কিছু বলতে পারা কে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে, কিন্তু চোখ বাধা অবস্থায় সবকিছু দেখতে পাওয়া কে কি বলে আমার জানা নেই। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি!!
স্পষ্ট দেখলাম একটা মাইক্রোর পিছনের ছিটে পরে আছি আমি এবং গাড়ি চালাচ্ছে সিন্দাবাদ! এও দেখতে পেলাম সিন্দাবাদ বেনসন সিগারেট খাচ্ছে আর গাড়ি চালাচ্ছে! ভাবছি সিন্দাবাদের বস যদি জানতে পারে যে আমি বন্ধ চোখেও দেখতে পায় তবে হয়তো আমার দাম আরো বাড়িয়ে দেবে! ১ লক্ষের জায়গায় তখন ১০ লক্ষ ডলারে বিক্রি করবে আমাকে ! কিন্তু তা কখোনোই হতে দেয়া যায়না! তবে এই মূহুর্থে সেসব নিয়ে চিন্তিত না হলেও, প্রচন্ড প্রাকৃতিক চাপ কে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব সেটা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। প্রকৃতির এই ডাকে সাড়া দিতে না পারলে যে কাপড় নোংরা হবে সে ব্যপারে আমি নিশ্চিত। সাধারণত আমরা জানি প্রাকৃতিক ডাক দুইটি, কিন্তু আমি অনুভব করছি ৩ টি!! প্রধান দুটির সাথে যোগ হয়েছে পানি পিপাসা। চোখের সামনেই দেখতে পেলাম পানির বোতল, কিন্তু ধরার কোন উপায় নেই খাওয়া তো দুরের কথা। তদুপরি এটাও ভাবলাম যে, শুধু পানি খেলেই তো চলবে না, তাকে নিষ্কাশনও করতে হবে। কে জানত পথে বেরোলেই এমন অসস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে!! জানলে আগেই এই গুপ্ত আকুতি পূরণ করে আসতাম।
আমি গুঙানির মত আওয়াজ করলাম, এবং সিন্দাবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলাম এবং সফলও হলাম। সে রাস্তার এক পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে মুখের বাধন টা খুলে দিল, আমি হাপাতে হাপাতে বললাম -
-"সিন্দাবাদ, আমার হাগু পেয়েছে!!"
-"আমাকে সিন্দাবাদ বলবেন না, ওটা শুধু আমার বাজানের ডাক।"
-"ঠিক আছে, এখন জলদি করে বাধন খোল ভাই"
ও আমার বাধন খুলে দিল এবং ড্রাইভিং সিটে বসে সিগারেট ধারালো। আমি গাড়ি থেকে নেমে পাশের একটা ঝোপের মধ্যে ঢুকেই বসে পরলাম। বসে বসে পাতার ফাক দিয়েই লক্ষ্য করলাম সিন্দাবাদ ওভাবেই গাড়ির ভিতরে বসে আছে, আমার দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপই নেই!! কেমন যেন কষ্ট লাগলো মনে মনে! আসামি পালালো কিনা তা যদি পুলিশ খেয়ালই না করে তবে সেই আসামির জীবন টাই বৃথা!! এর ভিতরে যুক্ত হল আরেক অশান্তি!! কোথা থেকে এক কুকুর কুই কুই করতে করতে এগিয়ে এসে আমার গা শুকতে লাগলো! আমি কয়েকবার হুসহুস করেও লাভ হলনা। খুবই বিরক্ত লাগছে, কেননা হাগু করার সময় কেউ দেখছে এটা যে কত বড় বিব্রতকর ব্যাপার তা এখন উপলব্ধি করছি, তাও তো একটা পশু দেখছে! যদিও মানুষ হলে কেমন লাগত জানিনা। আমি আমার কর্মসাধন করে পকেটে হাত দিয়ে দেখি টিস্যু নেই ....!!! অথচ আমি সব সময় পকেটে টিস্যু নিয়েই ঘুরি। আমি কুকুরের দিকে তাকিয়ে, আর কুকুর আমার দিকে তাকিয়ে ... দুজনায় অসহায়।
গাছের পাতা দিয়ে আপাতত কাজ সেরে গাড়ির কাছে এসে দাড়ালাম। গাড়িতে উঠে সিন্দাবাদ কে বললাম -
-"নাও আগের মত আবার বাঁধো"
সিন্দাবাদ আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে গাড়ি টান দিল। প্রায় ঘন্টাখানেক পর গাড়িটা যে যায়গায় এসে থামল তার নাম - আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা। গাড়ি থেকে নেমে সিন্দাবাদ আমার হাতে আমার ফোনটা দিয়ে বলল -
-"ইরা নামের একটা মেয়ে আপনাকে ফোন দিবে, ও আমার চাচাতো বোন। আপনি ওর বাড়ি দুইদিন রেষ্ট নিবেন। আমি চাচাকে সব বলে রেখেছি। তারপর ও আপনাকে আপনার গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার সমস্ত বন্দবস্ত করে দিবে। আমার অনুরোধ- আগামী ৬ মাসের ভিতরে ঢাকায় আসবেন না এবং আপনার এই অতিন্দ্রীয় কার্যকলাপ কাউকে প্রদর্শন করবেন না। .... আর হ্যাঁ খুব তাড়াতাড়ি 'হযবরল সুপার সপ' চালু করব এবং আপনি এসে উদ্বোধন করে দিয়ে যাবেন!"
একদমে কথাগুলো বলে সিন্দাবাদ গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে সিন্দাবাদের চলে যাওয়া দেখছি। দেখতে দেখতে কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলিয়ে গেল এবং তারপর পরই ফোনটা বেজে উঠলো -
-"হ্যালো আসসালামু আলাইকুম"
-"ওয়ালাইকুম আসসালাম, নাঈম সাহেব বলছেন?"
-"জী বলছি"
-"আমি ইরা বলছি। আপনি আজমপুর ওভার ব্রিজের নিচে অপেক্ষা করুন, আমি আসছি আপনাকে নিতে"
-"জী, আচ্ছা"
বলে ফোনটা কেটে দিল ইরা নামের মেয়েটা। আমি ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে হাটতে হাটতে ভাবলাম, বকুলকে বলেছিলাম উত্তরাতে হবে আমার শশুরবাড়ি!! তবে কি ভাগ্য আমাকে এখানে এনে ফেলেছে ইরা নামের এই মেয়েটির জন্যই? তাছাড়া তো আর কোন কারণও খুজে পাচ্ছিনা!! কেননা ঢাকা উত্তরাতে আমার পূর্বপুরুষের কেউ ছিলনা বা ভবিষ্যতেও থাকার কোন সম্ভাবনা নেই।
সে যাইহোক, কিছুক্ষণ বাদে দূর থেকে দেখতে পেলাম ইরা নামের মেয়েটি কালো রংয়ের একটা জামা পরে রিকশায় চেপে আসছে। এত রং রেখে কালো রং কেন বেছে নিতে হলো? কালোতে তাকে বেজায় সুন্দর লাগে সেজন্য? আমার কাছে নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার পিছনে অন্য কোন কারণ আছে কি?...
তবে কেন এবং কিভাবে তাকে আগে কোনদিন না দেখেও চিনে ফেললাম জানিনা। কিন্তু মোটেও আর ভন্ডামী নয়, আর কাউকে চমকে দেয়া নয়, কেননা সিন্দাবাদের কথামতো আমাকে আপাতত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নামক ভন্ডামী বন্ধ রাখতে হবে, নাহলে আবার কন বিপদে পরি তার ঠিক নেই। আর তাছাড়া চোখ বন্ধ করলে আমি সব দেখতে পাচ্ছি এটাও খুব উদ্বেগের বিষয়!!!

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৮

কম্পমান বলেছেন: শেষ হয়ে ও হইল না শেষ।

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৭

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: হাহাহা

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
সিক্সথ সেনস মারাত্মক একটা জিনিস! সবার কপালে জোটে না!

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৬

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই।

৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১৮

রুদ্র পাঠক বলেছেন: waiting for new one........

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫১

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:১৩

খালিদ আহসান বলেছেন: দারুন একটা গল্প পড়লাম।

যদিও গল্পের চরিত্রের সাথে হিমু চরিত্রের অনেকটুকু মিল আছে এবং গল্পে এক সময় হিমুরও দেখা পেয়েছি। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় বা সিক্সথ সেন্স এর সাথে আপনার গল্পের চরিত্রে সিক্সথ সেন্স এর মধ্যে পার্থক্য যেন একটু বেশিই।

তবে আপনার গল্প বেশ উপভোগ্য ছিল এবং আপনার লিখা অবশ্যই প্রসংশনীয়। আশা করি আপনার গল্প আগামীতে সামুতে আরও পাবো।

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৪

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ খালিদ ভাই, আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য দিয়ে আমার গল্প টাকে অলংকৃত করার জন্য। দোয়া করবেন আমার জন্য।

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬

রাতু০১ বলেছেন: শুভকামনা ।

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬

ফয়সাল রকি বলেছেন: ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের গল্প ষষ্ঠ পর্বেই শেষ করলেন দেখি!
ভাল লেগেছে পর্বগুলো।
লিখতে থাকুন।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৬

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ফয়সাল ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.