নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রিলিয়ান্ট

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৯



ছাত্র জীবনের একটি ঘটনা -
হঠাৎ ব্রিলিয়ান্ট হবার সখ জাগলো আমার! যদিও আমি জানিনা ভালো ছাত্র হওয়াকেই ব্রিলিয়ান্ট বলে নাকি ভালো রেজাল্ট হলে তাকে ব্রিলিয়ান্ট বলে। কিভাবে নিজেকে ব্রিলিয়ান্ট হিসাবে আর দশটা মানুষের কাছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তা জানার জন্য এবং সে মোতাবেক চলার জন্য গেলাম আকিবের রুমে ব্রিলিয়ান্ট হবার টিপস এন্ড ট্রিকস নেয়ার জন্য।
আকিব আর আমি চিটাগাং ইউনিভারসিটির ২য় বর্ষের ছাত্র। সেই স্কুল জীবন থেকেই বরাবর আমি আকিবের থেকে দশ হাত পিছনে। আকিব হত ফার্স্ট বয়, আর আমি হতাম লাস্ট! তার পরেও টেনে হিঁচড়ে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে কোনরকম পাশ করেছি ঠিকই কিন্তু দেশের কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চাঞ্ছ পাবো তা সাধারন কোন স্বপ্ন তো দুরের কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। নেহায়েত সখ মেটানোর জন্য আকিবের সাথে এসে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, কিন্তু এভাবে সুযোগ পেয়ে যাব তা কে জানতো! আমার অবশ্য ছোট বেলা থেকেই কম্পিউটার, আইটি, টেকনোলজি এগুলোর উপরে প্রচণ্ড পরিমানে ঝোঁক। সফটওয়্যার ধরার জন্য একবার একটা ল্যাপটপ অপারেশন করেছিলাম!! ফলে যা হয় তাই হল, ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গেল কিন্তু সফটওয়্যার ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেল। সফটওয়্যার যে ধরা যায়না এটুকু বুঝতেই আমাকে ঢের বেগ পেতে হয়েছিল। তবে সফটওয়্যার ধরতে না পারলেও সফটওয়্যার সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করেছিলাম ঠিকই। যায়হোক, এরপর আমি আর আকিব এক সাথেই ভর্তি হলাম এবং ভার্সিটির একই হলে থাকতে শুরু করলাম। যদিও আমাদের রুম ছিল আলাদা।
রাত তখন তিনটা বাজে, আমি হুড়মুড় করে আকিবের রুমে প্রবেশ করলাম। দেখি ও তখনও টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে চোখে মোটা পাওয়ারের চশমা পরে বইয়ের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে উকুন খোঁজার মত করে পড়ছে। আমি ওর পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পরলাম। কিন্তু আমার দিকে ওর কোন ভ্রূক্ষেপ দেখতে পেলাম না! আশ্চর্য ! এই যদি হয় ব্রিলিয়ান্টদের অবস্থা তবে দেখা যাবে ঘুমের মধ্যে ওদের কিডনি খুলে নিলেও টের পাবেনা! আমি ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললাম-
-”দোস্ত, আমি ব্রিলিয়ান্ট হতে চায়”
কথাটা শুনে আকিব আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন রাত ৩ টার সময় আমি ওর গার্ল ফ্রেন্ডকে ধার চেয়েছি!
-”সকাল হোক, দোকান থেকে এক প্যাকেট ‘ব্রিলিয়ান্ট’ কিনে তোকে খাইয়ে দেব!”
-”দোস্ত, আমি মশকরা করছি না”
-”তবে কি ইদানিং উল্টাপাল্টা খাওয়াও ধরেছিস?”
-”কেন ? এর সাথে উল্টাপাল্টা খাওয়ার সম্পর্ক কি?”
-”আছে! উল্টাপাল্টা খেলেই মানুষ হঠাৎ করে রাতদুপুরে আজগুবি জিনিস নিয়ে সিরিয়াস হয়ে যায়”
বুঝলাম এভাবে কথা বললে সেই কথা ওর কাছে ধোপেই টিকবে না! তাই এবার ওর হাত চেপে ধরে বললাম-
-”বিশ্বাস কর দোস্ত আমি ব্রিলিয়ান্ট হতে চাই, তোর মত ব্রিলিয়ান্ট!!”
আকিব হাই তুলতে তুলতে বলল -
-”ঠিক আছে, রুম ফাকা হলে, আমার রুমে এসে উঠিস”
আমি আনন্দে আহ্লাদিত হয়ে বললাম -
-”তাহলে কি তোর মত ব্রিলিয়ান্ট হতে পারব? যেভাবে চুম্বকের সংস্পর্শে লোহা চুম্বক হয়ে যায়!!”
চরম বিরক্তি নিয়ে কিছুটা মুখ ভেংচে আকিব বলল -
-”জী নাহ! আমার কাছে থাকতে হবে, আমি যা যা করি তা হুবহু পালন করতে হবে, আমার টোটাল লাইফ স্টাইল ফলো করতে হবে। যেমনঃ খাওয়া, ঘুম, ব্যায়াম, পড়াশুনা, সবকিছু। এক কথায় আমি যা যা করব এবং যেভাবে করব তোকেও তাই তাই ফলো করতে হবে।”
কেমন জানি একটু হাসি পেলো, এবং সেই হাসি কিছুতেই আটকাতে পারলাম না!! আকিব আমার দিকে হা করে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল -
-”এখানে হাসির কি হল??”
আমি কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালাম এবং হেসেই চললাম! তারপর আমার রুমের দিকে পা বাড়াতেই ও আমার কলার চেপে ধরে রাগি রাগি কণ্ঠে বলল -
-”বল হাসছিস ক্যান? না বললে তোকে যেতে দেবনা”
হাসিটা বহু কষ্টে চেপে ধরে বললাম-
-”বললে তুই আমাকে মারবি !”
-”না মারব না, বল”
-”ঠিক আছে কলার ছার বলছি”
তারপর আকিব আমার কলার ছাড়তেই দরজার কাছে ছুটে গিয়ে বললাম-
-”দোস্তো, তুই কিভাবে হাগু করিস সেটা কিভাবে ফলো করবো? আর এছাড়া অন্যান্য বিষয় গুলো তো বাদই দিলাম...!!”
বলেই আমি এক দৌরে আমার রুমে চলে আসলাম, এবং পিছন থেকে শুনতে পেলাম আকিবের গালাগালি।
যায়হোক আজ দীর্ঘ দশ বছর পর পুরনো কথা গুলো মনেপরে মনের অজান্তেই হেসে উঠলাম। ক্লাসের সবচে গাধা হয়েও আমি কিন্তু আমার লক্ষে পৌঁছে গেছি। আজ আমি দেশের অনেক বড় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই কিছু না কিছু গুন থাকে, যা আমরা সহজে ধরতে পারিনা। ক্লাসের ফার্স্ট বয় কেই কেবল আমরা ব্রিলিয়ান্ট খেতাব টা দিয়ে থাকি। অথচ ক্লাসের লাস্ট বয় হয়েও আমি প্রমাণ করেছি যে আমিও “ব্রিলিয়ান্ট”। আকিব ছিল সবার চোখে ব্রিলিয়ান্ট, এবং সে একজন নাম করা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছে ঠিকই কিন্তু কোন সমস্যা নিয়ে যেমন আমি যাচ্ছি ওর কাছে, তেমনি ওর প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ডেভেলপিং ও প্রোগ্রামিং এর জন্যও ওকে কিন্তু আসতে হচ্ছে আমার কাছে । তবে কি আমিও ব্রিলিয়ান্ট নই? প্রশ্ন থাকলো আপনাদের কাছে।
লেখক কলামঃ আমি বিশ্বাস করি আমরা প্রত্যেকে স্রষ্টার খুব গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি এবং পৃথিবীতে তিনি কাউকেই অযথা প্রেরণ করেননি। আমরা প্রত্যেকেই "ব্রিলিয়ান্ট"। একটু চেষ্টা করলেই হয়তো নিজের বিশেষত্ব টাকে খুজে পাবো। আমাদের সবচে বড় দোষ হল- আমরা সৃষ্টিকর্তা এবং নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হাঁড়িয়ে ফেলি, এবং নিজেকে মূল্যায়ন না করে সমাজের তথাকথিত ব্রিলিয়ান্টদের পিছনে ঘুরে বৃথায় মূল্যবান সময় নষ্ট করি। তাই আমি বলব- আয়নার সামনে দাঁড়ান ও নিজেকে প্রশ্ন করুণ
“কে আপনি? কি আপনার লক্ষ্য? কিসে আপনার আনন্দ? আপনি কি হতে চান?”
আপনার প্রতিবিম্ব যদি আপনাকে রিকশা চালানোর কথাও বলে, তবে সংকোচ বা লজ্জা না করে ঝাপিয়ে পরুন রিকশা নিয়ে। কেননা, আমি বিশ্বাস করি- চেষ্টা, আত্মবিশ্বাস এবং আপনার পরিশ্রম আপনাকে ঠিক একদিন আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে এবং ১ টি রিকশা থেকে একদিন আপনি ১০০ টি রিকশার মালিক হবেন ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:১০

মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: [/si"আমি বিশ্বাস করি আমরা প্রত্যেকে স্রষ্টার খুব গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি এবং পৃথিবীতে তিনি কাউকেই অযথা প্রেরণ করেননি। আমরা প্রত্যেকেই "ব্রিলিয়ান্ট"।


কথাটা জোস হইছে!☺☺✌✌

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:২৭

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৮

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: " আজ আমি দেশের অনেক বড় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।" কত বড়?যত বড়ই হোন না কেন ,এটা নিজে দাবী করার মত বিষয় না।আপনি "বড়" হলে মানুষই বলবে আপনি "বড়"।

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১৩

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধুর মিয়া ভাই আমি কোন ইঞ্জিনিয়ার না। আমি একজন পাতি লেখক। বিরাট এক পরামর্শ দিলেন না জেনে বুঝে। লোল

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৫

আইকুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লেগেছে

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:০৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ব্রিলিয়ান্ট ব্যপারটা আমাদের দেশে একটু বড় করে দেখানো হয়। সামাজিক কারণেই সবাই চায় ব্রিলিয়ান্ট হতে। আর যারা ব্রিলিয়ান্ট তারা পাশের বাসা, আত্মীয় স্বজন সবার কাছ থেকে বাড়তি কদর পায়। আমি বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র। ৩ ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট(আসলেই কি!) ছিলাম। আমার বড় বোন দুই বার এইচ এস সি ফেইল করেছিল। আর আমার ছোট ভাইয়ের হাতের লেখা ছিল খুবই বাজে(এখনও বাজে)। অথচ আজকে আমি ডিগ্রী ফেল করে বিদেশে কামলা। আমার বোন মাস্টার্স পাস করে গৃহিনী। আর ছোট ভাই একটা ব্যাংকে এফ এ ভি পি...

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২৫

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: খুব সুন্দর উদাহারন দিলেন ভাই। আরও অনুপ্রাণিত হবে সবাই আপনার এই কমেন্ট পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:২৯

কালীদাস বলেছেন: শেষের দিকে কথাগুলো ভাল। যে, সবাই ব্রিলিয়ান্ট।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:১৯

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.