নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি গর্বিত

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১১



বলছি নিরবের কথা। দেশের শীর্ষস্থানীয় এক ধনীর আলালের ঘরের দুলাল নিরব। তার জন্ম হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ওটিতে। ৪ কেজি ওজন নিয়ে বেশ নাদুস নুদুস একটা শরীর সহকারে পৃথিবীর বুকে পা রাখে সে। কোনরকম রোগবালাই ছাড়াই আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতই জন্ম হয়েছিল তার। কিন্তু সমস্যা দিখা দিল যখন তার বয়স ৬ বছর। আগেই বলেছি তার জন্ম হয়েছিল এসি রুমে, এবং ৬ বছর অব্দি এসির বাইরে কখনোই পা রাখতে দেইনি তার বাবা মা। বিশাল বাড়ির প্রত্যেক কোনে কোনে এসি। এমনকি নিরবের ওয়াশরুমেও এসি। ফলে ৬ বছরে পা রাখার পর যখন নিরব কে স্কুলে ভর্তি করার প্রয়োজন হয় তখন ভিষণ বিপাকে পরতে হয় নিরবের মা বাবা কে। কেননা এসি বাদে ঘরের বাইরে পা রাখলেই নিরব চরম ভাবে অসুস্থ হয়ে পরে এবং সারা গায়ে চামড়ায় লাল চাকা চাকা র‍্যাশ ওঠে, তার সাথে শুরু হয় প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট। ফলে প্রচন্ড দুঃশ্চিন্তায় পরে যায় নিরবের বাবা মা। ডাক্তারের সরনাপন্ন হলে তারা জানতে পারেন যে - নিরব প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ তার চামড়ায় আরেকটু পুরুত্ব না আসা পর্যন্ত তাকে বাইরের আবহাওয়ায় রাখা সম্পূর্ণ বিপদজনক! কিন্তু ১৮ বছরের পরে এই সমস্যার সমাধান হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডক্টর জানান - 'আশা করা যায়, তবে এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতেই নির্দিষ্ট'।

এরপর নিরবের বাবা মা খোঁজাখুঁজি করে এমন কয়েকটা স্কুলের সন্ধান পেলেন যেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস নেয়া হয়। সুতরাং সেখানেই নিরব কে ভর্তি করা হল এবং প্রতিদিন এমন ভাবে তাকে বাড়ি টু স্কুল আনা নেওয়া করা হত ঠিক যেমনটা পোল্ট্রি মুরগীর বাচ্চার ক্ষেত্রে করা হয়। যেমন -বাড়িতে এসি -> বাড়ি থেকে গাড়িতে করে স্কুলে যেত -> গাড়িতে এসি -> এবং গাড়ি থেকে নেমেই ভো দৌড় দিয়ে ঢুকতো ক্লাসরুমে। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় ফিরতো বাড়িতে। এই হল নিরবের জীবন।

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নিরবের এই সমস্যা দূর হয়েছিল কিনা এটা মূখ্যবিষয় নয়। আসল কথা হল নিরবের বাবা মায়ের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া, নিরবের প্রতিবন্ধকতা কে অনুভব করা, (সব থেকেও যেন কিছু নেই!) তথা আমাদের অনেকের ভিতরেই খুব ধনী পরিবারে জন্ম না হওয়ার আফসোস কে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো। এক সময় আমিই ভাবতাম ইসস আমার যদি কোটিপতি ঘরে জন্ম হত! তাহলে জীবনটা কত সহজ, সুন্দর আর উপভোগ্য হত! কোন অভাব থাকতো না, দুঃখ থাকতো না, কষ্ট থাকত না, যা চাইতাম তাই পেতাম, ইত্যাদি ইত্যাদি ... কিন্তু এখন উপলব্ধি করি আল্লাহ্ আমাকে যেখানে জন্ম দিয়েছেন তার পিছনে সুনির্দিষ্ট কারণও রয়েছে এবং এজন্য নিজের জন্ম টাকে ধন্যই মনে করি। কেননা, আমি শিখেছি জীবন কাকে বলে, জীবনযুদ্ধ কাকে বলে, হেরে যাওয়ার বেদনা কেমন, জয়ী হওয়ার স্বাদ কেমন, এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে যাচাই করার অব্যক্ত আনন্দ যে কতটা মধুর তা বুঝতে পারি হাড়ে হাড়ে। একাধারে আমি জানি নদীতে ঝাপ মারার আনন্দ, আকাশে ঘুরি ওড়ানোর মজা, গাছের সবথেকে উচু ডালে বসে হাগু করার কৃতিত্ব, কাদা হাতরে জিওল মাছের বিষাক্ত কাটা কে উপেক্ষা করে তাকে শিকার করার উৎফুল্লতা, হারিকেন জালিয়ে বইয়ের উপরে মুখ থুবড়ে পরে ঘুমানোর শান্তি, এবং মায়ের দেয়া গামছা দিয়ে বাধা ভাত আর এক জগ পানি কৃষক বাবার জন্য বয়ে নিয়ে যাওয়ার সুখ। এজন্যই আমি সুখী আমার এই গরীব বাবা, মায়ের ঘরে জন্মানোর জন্য, আমি গর্বিত এই বাংলাদেশে আমার জন্ম হওয়ার জন্য।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৩২

তারেক ফাহিম বলেছেন: একাধারে আমি জানি নদীতে ঝাপ মারার আনন্দ, আকাশে ঘুরি ওড়ানোর মজা, গাছের সবথেকে উচু ডালে বসে হাগু করার কৃতিত্ব, কাদা হাতরে জিওল মাছের বিষাক্ত কাটা কে উপেক্ষা করে তাকে শিকার করার উৎফুল্লতা, হারিকেন জালিয়ে বইয়ের উপরে মুখ থুবড়ে পরে ঘুমানোর শান্তি, এবং মায়ের দেয়া গামছা দিয়ে বাধা ভাত আর এক জগ পানি কৃষক বাবার জন্য বয়ে নিয়ে যাওয়ার সুখ।


আমার শৈশবকেও মনে করিয়ে দিলো।

অাপনার লিখাগুলো বরাবরই ভালো লাগে।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০২

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ফাহিম ভাই।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৩

আবু তালেব শেখ বলেছেন: শিক্ষনীয় গল্প। খুব ভালো লাগলো

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২১

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ তালেব ভাই।

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৪

এনসিয়েন্ট মেরিনার বলেছেন: ভালো , অাপনার লিখাগুলো বরাবরই ভালো লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.