নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

Three days

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:১৭


জানালার সেই দুটো শিক ধরে দাড়িয়ে আছি, যে দুটো শিক ধরে দাড়িয়ে তুমি অপেক্ষা করতে আমার ফেরার পথ চেয়ে। যে দুটো শিক ধরে পা দুটো একটু উচুঁ করে শিকের ফাকে চোখ দুটি রেখে বার বার হাত নেড়ে বিদায় জানাতে আমায়। ততক্ষণ তাকিয়ে থাকতে যতক্ষণ আমাকে দেখা যায়। যখনই আমি চোখের আড়ালে চলে যেতাম অমনি ফোনটা বের করে অপেক্ষা করতাম তোমার ফোনের। রোজ রোজ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বেশ বিরক্ত হলেও হাসি মুখেই তুলতাম ফোনটা -
-"হ্যালো"
-"এই শোন, আমার মনটা কেমন যেনো করছে .. তুমি প্লিজ আজ একটু দেখেশুনে রাস্তা পার হইয়ো"
-"প্রতিদিনই তো দেখেশুনেই পার হই!"
-"হ্যাঁ, তার পরেও"
-"আচ্ছা ঠিক আছে .. আর কিছু?"
-"হুম আরো কিছু"
-"কি?"
-"ভালোবাসি তোমাকে"
-" ok Love you too! আর কিছু?"
-"তাড়াতাড়ি ফিরো বাসায়"
-"হুম ফিরবো"

জানিনা আমি যতটুকু জানি তার থেকেও ঠিক কতটা ভালোবাসতে আমায়.. জানালার এই শিক ধরে কতটা অস্রু বিসর্জন দিয়েছ আমার অজান্তে? কত রাত জেগেছ আমার ঘুমিয়ে যাবার পরেও?
সেদিন তো আমি প্রায় ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম যেদিন রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি তোমার মুখ আমার মুখের সামনে!! অপলক তাকিয়ে আছ আমার দিকে! ঘুমের মধ্যেই ঠোঁটের কাছে তোমার হালকা গরম শ্বাসের স্পর্শে ঘুম ভেঙে সত্যিই খুব বিচলিত হয়ে পরেছিলাম। একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে যখন জানতে চাইলাম -
-"কি হয়েছে ইরা? তুমি ঘুমাওনি?"
কি অদ্ভুত শিশু কন্ঠে তুমি বলেছিলে -
-"ঘুম আসছে না তো!!"
-"ঘুম আসছে না ভালো কথা, কিন্তু ওভাবে আমার মুখের উপর পরেছিলে কেন?"
-"কার্বন ডাই অক্সাইড নিচ্ছিলাম"
-"মানে!!!"
-"তোমার ছেড়ে দেওয়া নিঃশ্বাস গ্রহণ করে আমার মস্তিষ্কের খাবার জোগাচ্ছিলাম।"
-"এসব পাগলামির কোন মানে হয়?"
-"হ্যাঁ হয় ... তুমি ঘুমাও, আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো!"

জানিনা এভাবে কত রাত না ঘুমিয়ে তাকিয়ে থেকেছো আমার ঘুমন্ত মুখের দিকে। এক ভালোবাসার কত প্রকারভেদ থাকতে পারে তা হয়তো তুমি ছাড়া জানাই হতনা কোনদিন। এক ভালোবাসার স্বাদ যে কত রকমের হতে পারে তাও থেকে যেত ধারনার বাইরে! ....

যে গ্লাসে তুমি পানি খেতে সেই গ্লাস টা হাতে নিয়ে বসে আছি। খুব চেষ্টা করছি ওটার গায়ে লেগে থাকা তোমার ঠোঁটের চিরচেনা ঘ্রাণটা আবিষ্কার করতে ! কিন্তু নেই!! কোন ঘ্রাণ নেই!!! এই তিন মাসেই সব মুছে গেছে ... ফিকে হয়ে গেছে তোমার রেখে যাওয়া সব স্মৃতিচিহ্ন!!! পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে ... ভেঙেচুরে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে সব ... উদ্ভ্রান্তের মত আলমারীর দরজা খুললাম ..যদি তোমার কোন কাপড় পাওয়া যায় ... কিন্তু নাহ্! এখানেও কিচ্ছু নেই ... একটা ওরনাও নেই, যেটা নাকে চেপে ধরে জোরে শ্বাস নিয়ে আমি আমার নিউরনে বেচেঁ থাকার খাবার জোগাবো!! কোথায় পাবো তোমার ঘ্রাণ? কিসে পাবো তোমার অস্তিত্ব???

হমমমম ... মনে পরেছে ... মনে পরেছে ...! তুমিই তো আমার বুকের বাম দিকে আমার হাতটা চেপে ধরে বলেছিলে -
-"এই যে টিপ টিপ করছে টের পাচ্ছো?"
-"হম পাচ্ছি"
-"ওটা কি জানো?"
-"কি?"
-"ওটাই হলো আমার অস্তিত্ব, ওটাই হলাম আমি ... যেদিন দেখবা ওটা থেমে গেছে সেদিন জানবা আমিও নেই হয়ে গেছি... চলে গেছি এই ধরনী ছেড়ে!!"
হ্যাঁ মনে পরেছে। কই তুমি? দেখি তো ..! বলে আমার বুকের বামে হাত দিলাম .. হ্যাঁ!! সত্যিই তো!!! টিপ টিপ করছে ..!! তার মানে আমার ইরা আছে!! আমার জান, আমার সাথেই আছে ...!! নিজের বুক টাকে নিজেই জড়িয়ে ধরে আপন আনন্দে লুটিয়ে পরলাম মেঝেতে ... এক অনাবিল আনন্দে জুড়িয়ে গেল বুক, আর বু্জে আসলো চোখ !!!

এমন সময় --
"আসসালামু আলাইকুম, বাড়াই মেহেরবানি, দাড়ওয়াজা খুলিয়ে"

ঘরের কলিংবেল টা চেঁচিয়ে উঠলো। গত তিন মাসে একবারো বাজেনি ওটা। বাজবে কিভাবে এই তিন মাসে তো কেউ আসেইনি এই বাসায়। এই কলিংবেলটাও ইরারই পছন্দে কিনেছিলাম। শুধু কলিংবেল না, এক বছরের এই সংসারে সুই থেকে শুরু করে সব কিছুই ওর পছন্দে কেনা।
কিন্তু হঠাৎ এতদিন পর কে এলো এই বাড়ি? ... আবারো বেজে উঠলো বেলটা। খুব দুর্বল লাগছে, মেঝে থেকে উঠে দাড়াতেও পারছি না। চোখেও ঝাপসা দেখছি। গত তিন মাস কিচ্ছু খাইনি আমি .. কিচ্ছু নাহ ...। বহু কষ্টে টলতে টলতে এগোলাম দরজার দিকে। এর ভিতরেই আরো একবার বেজে উঠলো কলিংবেলটা। দরজার কাছে গিয়ে খুললাম ছিটকিনিটা .. কিন্তু ...!

ঝাপসা চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখলাম অবিকল ইরার মত একজন দাড়িয়ে আছে!! ভাবলাম চোখের ভুল, কিছু একটা বলতে যাব তখনই ইরার মত কন্ঠে মেয়েটি বলে উঠলো -
-"এ কি হাল তোমার?? মাত্র তিন দিনের জন্য রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছি আর অমনি এই অবস্থা করে ফেলেছো?? আমাকে ছাড়া যখন বাঁচতেই পারবানা তাহলে কেন বল আমাকে বিদেয় হতে??"

বলেই কেঁদে ফেলল ইরা। আমি আস্তে আস্তে ভাঙা গলায় বললাম -
-"তুমি ইরা? এসেছো তুমি? এত দেরী করলে যে!"
-"দেরী করলাম কোথায়? মাত্র তিনদিন হয়েছে"!!
আমি ফ্যাকাসে গলায় বললাম -
-"কেন তিন মাস না?"
-"না!! তোমার সাথে রাগারাগি করে গত ২৬ তারিখ আমি চলে গেছিলাম, আর আজ হলো ২৯ তারিখ!!"

আমি বেশ অবাকই হলাম কথাটা শুনে। সত্যিই কি তিনদিন!! যাকে রাগের মাথাই বলেছিলাম সারাজীবনের জন্য বিদেয় হতে .. আজ তাকে ছাড়া তিন দিনকেই তিন মাস মনে হলো..!! তিন দিনেই এই দুনিয়ার প্রতি বিরক্তি চলে এসেছিল? ঘৃণা জন্মেছিল বেঁচে থাকার প্রতি?
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ... যত যাই কিছু হয়ে যাক না কেন বউয়ের সাথে আর কোন ঝামেলা নয় ... যাকে ছাড়া বাঁচতেই পারবোনা, তার সাথে কিসের ঝামেলা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.