নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মশা (ইছু ও আমি)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪১


মানব জাতি বরাবর স্বার্থপর এবং হিংসুটে প্রাণী। তাদের ধারণা সৃষ্টির শুরু থেকে কেবল মনবজাতিরই পরিশোধন, পরিবর্তন বা উন্নয়ন ঘটছে। অন্য সব প্রাণী আজীবন মূর্খই থেকে যাচ্ছে বা পিছিয়ে থাকছে! যেমন হাতি, ঘোড়া, মশা, বাঘ, ভাল্লুক, টিকটিকি, ছুঁচো, ইন্দুর, বান্দর এদের পোশাক, ভাষা বা জীবন যাত্রার কোন পরিবর্তন না আসায় মনুষের ধারণা একমাত্র তারাই শিক্ষিত হচ্ছে ও তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। কিন্তু না ...!!! এটা যে জেগে জেগে দেখা দ্বিবা স্বপ্নের মতই চরম ভুল তা প্রমাণ পেলাম আমাদের বাড়ির পাশের ঝোপে বসবাসরত মশাদের রাজ্যে বেড়াতে যাবার পর!! সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ব্যপারটা একটু খোলাসা করে বলছি।

মশার কামড়ের থেকে তার গাওয়া গান যে বেশি বিরক্তিকর তা সবার জানা। আর তার সাথে যখন হুলটা গেথে দেয়, ক্ষোভ আর সীমা তখন অতিক্রম করে চলে যায় হিংস্রতার কাছে এবং হুল ফোটানো ওই মশাকে না মারা পর্যন্ত যেন ঠান্ডা হতে চায়না শরীরের রক্ত। ঠিক এই ধরনের এক পরিস্থিতির শিকার হয়ে সেদিন মশারির ভিতরে একটা মশাকে ধরলাম তিলে তিলে মারার জন্য। যেমন, প্রথমে একটা একটা করে পাখনা ছিড়ে তারপর একটা একটা করে পা ছিড়ে এবং সবশেষে যে হুলটা দিয়ে তারা রক্ত চোষে সেই হুলটা ছিড়ে গায়ের জ্বালা মেটাবো বলে মনস্থির করেছি এবং একটা পাখনা ছিড়েও ফেলেছি ওমনি হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে মশাটা বলে উঠলো -
-"উফফ ..!! মিয়া ভাই এইডা কুন ধরনের বিয়াদবি? এক্কেরে এক থাবা দিয়া না মাইরা ইতরামি কইরা মারতাছেন কিল্লিগা?"
আমি সম্পূর্ণ থ মেরে গেলাম এবং এদিক ওদিক তাকালাম!! কই নাতো .. আশেপাশে কেউ নেই!! তবে কি সত্যি সত্যি মশা কথা বলে উঠলো? নিতান্তই মনের ভুল এবং মশার কথা বলার কোন প্রশ্নই ওঠেনা ভেবে আরেকটি পাখা ছিড়তে যাব ঠিক এমন সময় মশাটা আবারো বলে উঠলো -
-"এহ হে... ভাই খাড়ান খাড়ান। আগে কন আফনেরে যদি কেউ এম্বা কইরা মারতো তই আফনের কেম্বা লাগত?"
এবার আমি আরো অবাক হলাম কেননা কথাটা যে আমার হাতে বন্দী মশাটাই বলছে তাতে আর কোন সন্দেহ থাকেনা তখন, যখন আমি সূক্ষ্ম চোখে স্পষ্ট দেখতে পেলাম মশাটার হাতে একটা ক্ষুদ্র মাইক!!! সেই মাইকে মুখে লাগিয়ে দিব্যি কথা বলছে সে আমার সাথে!!! তাও আবার বাংলায়!! আমি আমার অন্য হাত দিয়ে নিজের গায়ে চিমটি কেটে ব্যপারটা যে কোন স্বপ্ন নয় তা নিশ্চিত হয়ে মশাটাকে উদ্যেশ্য করে বললাম -
-"জনাব, আপনি কি আমার সাথে কথা বলছেন? নাকি এটা আমার মনের ভুল?"
-"না ভাই, আফনের মনের ভুল না!! আর হ্যাঁ আফনের অবগতির জন্যি জানাচ্ছি যে পোলা মশারা রক্ত খায়না, আফনে আমারে জনাব না কইয়া জনাবা কইতে পারেন!!"
-"ওহ তাই!! তো জনাবা, আপনার নাম কি জানতে পারি?"
-"জী, আমার নাম 'ইস্টিছন' তই আমার bf আমারে 'ইছু' কইয়া ডাকে!"
-"ইস্টিছন!! এটা কেমন নাম?"
-"জী, রেল ইস্টিছনের একটা ড্রেনে আমার জন্ম তাই আমার নাম ইস্টিছন।"
আমি একটু গুরুগম্ভীর হয়ে বললাম -
-"হমম...একটা মশা কিনা মানুষের মত কথা বলছে!! এটা কি আদৌ সম্ভব?"
-"অবশ্যই সম্ভব ভাইজান, শুধু ভাষা নয়, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সহ তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়াও আমরা অনেক আওগাইয়া গেছি"
-"তাই নাকি!! কিভাবে?"
আমার কথার সুরে অবিশ্বাসের গন্ধ পেয়ে ইছু নামের মশাটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেশ কনফিডেন্টের সাথে বলল -
-"বিশ্বাস না হইলে আমার লগে চলেন, আফনেরে লাইভ দেখাইতেছি।"
-"ক্যামনে!!"
-"চোউক্ষু বন্ধ করেন, আফনেরে হিপ্নোটিজম কইরা আমাগো সবকিছু দেখাইয়া আনমু। আমরা কিন্তু হিপ্নোটিজমেও পিছিয়ে নেই হিহিহি"
বলে হাসলো ইছু। আমি অবশ্য সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সত্যি সত্যি আমার চোখ বন্ধ করলাম।

কিন্তু আশ্চর্য!! মনে হচ্ছে আমি নিজেও একটা মশা হয়ে গেলাম!! দিব্যি চারটি পাখা সহকারে পইপই করে উড়ছি আমি!! হালকা হয়ে গেল সমস্ত শরীর!! ইছু আমার হাতটা ধরে আমাকে আশ্বস্ত করে বলল -
-"ভয় পাবেন না!! আপনি সাময়িক ভাবে মশায় রূপান্তরিত হয়েছেন। আপনাকে আমাদের রাজ্য ঘুরিয়ে নিয়ে আসি চলুন।"

আমি কেমন যেন হিপনোটাইসড হয়ে গেলাম এবং রওনা দিলাম তার সাথে! তবে একটুও উড়তে বা পাখা ঝাপটাতে কষ্ট হলনা। বরং মনে হচ্ছে জন্ম থেকেই আমি একটা মশা এবং এভাবেই উড়ছি জন্ম থেকেই!! তবে খুব ইচ্ছা করছে আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটু নিজের চেহারাটা দেখতে। কিন্তু আমার সে ইচ্ছা পূরন না হলেও সম্পূর্ণ আশ্চর্যজনক এবং অবিশ্বাস্য কিছু যে আমার জন্য অপেক্ষা করছে তা বুঝতে পারলাম কিছুক্ষণ বাদে।

মানুষের বাড়ির দেয়ালে যেসব ফাক ফোঁকর থাকে সেসব ফাক ফোকরেই নাকি গড়ে উঠছে তাদের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া। আমরা যেভাবে তিল তিল করে নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করে প্রতিনিয়ত আপডেট ও আপগ্রেড হচ্ছি ঠিক একই ভাবে তারাও তাদের মত এগিয়ে চলেছে। যেমন, প্রথমে উড়তে উড়তে আমরা যে ফোঁকর টাতে গেলাম সেখানে সদ্য পাখনা প্রাপ্ত মশাদের হুলে ধার দেওয়ার কাজ হয়!! এক এক করে সিরিয়াল অনুযায়ী মশারা এগোচ্ছে হুলটা একটা যন্ত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে ধার দিয়েই বেরিয়ে পরছে রক্তের সন্ধানে।

এরপর আরেকটি ফোকরে গেলে জানতে পারলাম, সেখানে কিছু বিজ্ঞানী মশা বিভিন্ন কয়েল বা স্প্রে নিয়ে রিসার্চ করছে এবং মশাদের জন্য এমন ওষুধ তৈরি করছে যেন কয়েলের ধোঁয়া বা স্প্রে তে মশারা জ্ঞান না হারায়!! এমতাবস্থায় খুব মজা নিয়ে এবং খানিকটা চিবিয়ে চিবিয়ে ইছু কে আমি বললাম -
-"আচ্ছা, কয়েল বা স্প্রের হাত থেকে নাহয় রক্ষা পেলে, কিন্তু মশারি থাকলে তো আর তোমাদের কোন বাহাদুরী নেই, তাইনা!!"

আমার কথা শুনে ইছু এমন ভাবে মুখ টিপে হাসলো যেন খুব বোকার মত হাস্যকর এক প্রশ্ন করে ফেলেছি!! তবে এ সময় খেয়াল করলাম ইছুর মুখ টিপে হাসিটা আমার কাছে কেমন যেন খুব ভালো লাগল!! যদিও মানুষ থাকাকালীন সময়ে তার হাসি এত ভালো করে খেয়ালও করিনি বা এই ভাল লাগাও কাজ করেনি। তবে মশা হবার পর এত কাছ থেকে ইছু কে দেখলাম এবং ও যে অনেক সুন্দরী ও আকর্ষণীয় তাও লক্ষ্য করলাম (আবেদনময়ীও বটে!!!)। মানুষ যেমন মনুষের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়, এক কুকুর যেমন আরেক কুকুরের রূপের পিছনে ছোটে ঠিক তেমনি এই মূহুর্থে আমি নিজে এক মশা হয়ে আরেক মশার রূপে মুগ্ধ হচ্ছি!! যাইহোক, আমার ওই প্রশ্নের জবাবে ইছু হাসতে হাসতেই বলল -
-"চলেন তাইলে আফনেরে ড্রিল ম্যানের কাছে নিয়ে যায়।"
-"ড্রিল ম্যান?? অর্থাৎ যার কাজ ফুটো করা?"
-"হুম"

তারপর আমরা গেলাম ড্রিল ম্যানের কক্ষে। দেখলাম আসলে আমরা যেটাকে ভিমরুল নামে চিনি সেই ভদ্রলোকই হল এদের ড্রিল ম্যান!! তার কাজ হল মশারীর বিভিন্ন জায়গায় ছিদ্র তৈরি করা, যাতে করে মশারা ওই ছিদ্রপথে ঢুকে ঘুমন্ত মানুষের উপরে চরম বর্বরতা চালিয়ে আবার নির্বিঘ্নে বের হয়ে আসতে পারে।
ব্যপারটা ভাবতেই ইছু কে বললাম -
-"আচ্ছা, তারপরেও মানুষের রক্ত তোমাদের খেতেই হবে? একটুও মায়া লাগেনা তোমাদের?"
-"হুম, লাগে তো ... তবুও কিছু করার নেই যে!!"
-"কেন?"
-"কারণ আমরা তো রক্ত. খাই আমাদের পেটের সন্তান কে ভালো ভাবে দুনিয়ায় নিয়ে আসার জন্য। আপনারা যেমন আপনের সন্তানের ভালোর জন্য ছোটখাট অন্যায় কাজ করতে পিছপা হননা, তেমনি আমরাও আমাদের সন্তানের জন্য আপনাদের রক্ত খাই। আপনাদের যদি প্রজনন অধিকার থাকে, তবে আমরাও সে অধিকার সংরক্ষণ করি নিশ্চয়ই।"

অবশ্যই অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা এবং এই প্রথম লক্ষ্য করলাম ইছু আমার সাথে আগের মত ক্ষ্যাত ভাষা পরিহার করে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছে। তবে কথা যতটাই যুক্তিসঙ্গত হোকনা কেন ইছুর পেটে অন্য কারো বাচ্চা, বিষয় টা ভাবতেই মনের অজান্তেই একটু কোথায় যেন খোচার মত লাগলো!! After all আমি মানুষ তো!! তবে মানুষের ভিতরে হিংসা বিদ্বেষ আছে জানি কিন্তু মশাদের ভিতরে এই বদ গুনটা আছে কিনা তা জানতে চাইলে ইছু বলল -
-"হিংসা!! ওটা আমাদের সংবিধানে নেই।"
-"কেন!! তোমাদের সংবিধানে প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে এগুলোও নেই?"
-"হা হা হা কিসের প্রেম!! কিসের ভালবাসা? ওগুলো মানব দ্রব্য!! মশাদের জন্য নয়। আপনাদের আয়েশী জীবন, দীর্ঘদিন বাঁচতে পারেন, প্রেম ভালবাসা উপভোগ করার জন্য যথেষ্ট সময় পান! কিন্তু আমাদের তিনদিনের জীবন!! চোখ ফুটতেই যে যাকে সামনে পায় সহবাসে লিপ্ত হয়, তারপর সন্তানের জন্য রক্ত গ্রহণ, সন্তান প্রসব, অতপর স্রষ্টার ইবাদতে মশগুল... এই তো আমাদের জীবন।..."
ইছুর হাসিটা অস্বাভাবিক সুন্দর লাগলেও তা এড়িয়ে গিয়ে বললাম -
-"তোমরাও ইবাদত কর?"
ইছু খুব অবাক হয়ে বলল -
-"আমরাও মানে? বলুন একমাত্র মনবজাতি ছাড়া আর সমস্ত প্রাণী প্রতিটি মূহুর্থ আল্লাহকে স্বরন করে। ইবাদত করে.."
আমি অনেকটা নাথিং টু সে এর মত করে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম -
-"আচ্ছা তোমার হাতে আর কয়দিন আছে?"
-"আমার জন্ম গতকাল, আজ দ্বিতীয় দিন এবং আগামীকাল আমার মৃত্যু। আর এর ভিতরে কারো থাপ্পড় খেয়ে মরে গেলে তো হয়েই গেল, হিহিহি"

ইছু কথাগুলো হাসতে হাসতে অবলীলায় বলে ফেললেও আমি সেগুলো কে অবলীলায় মেনে নিতে পারলাম না। তিন দিনের জীবন অথচ তার ভিতরেও প্রেম, সন্তান, হাসি, ইবাদত সবকিছু বিদ্যমান। আর আমাদের জীবন ... এত দীর্ঘ ... এত লম্বা... এত প্রশস্ত... অথচ ...

যাইহোক, এরপর এক এক করে ইছুদের ঘরবাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং অবশেষে ফিরে আসলাম আমার ঘরে। একই প্রক্রিয়ায় আবারো চোখ বন্ধ করার পর ইছু আমাকে তার সম্মোহন মুক্ত করলে আমি আবারো মানুষ রূপে ফিরে আসলাম। তবে সাথে সাথেই কোথাও ইছুকে খুজেঁ না পেয়ে ইছু ইছু বলে চিৎকার করতে থাকলেও কোথাও ইছুর দেখা পেলাম না বটে তবে দেখলাম একটা লাল পিপড়া আমার নাকের ডগায় বসে কামড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি কোন বাধা না দিয়ে চুপচাপ চোখের মনিটাকে যতটা সম্ভব ক্লোজ করে দেখতে লাগলাম ব্যাটা কি করে।
একটু পরেই নাকের ডগাটা কামড়ে, জ্বলিয়ে লাল করে দিয়ে হঠাৎ যেন পিঁপড়েটা দুঃখিত কন্ঠে বলে উঠলো -
-"ভাইজান, ব্যথা পাইছেন? সরি ..."

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:১১

রাজীব নুর বলেছেন: রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতার প্রুফ কে দেখেছিলেন ?

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৮

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: জানিনা ভায়া

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.