নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মীরজাফর ও সুন্দরী

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১১


ওর নাম সফিক। আমার বাল্যকালের মূল্যবান বন্ধু। একই এলাকার পাশাপাশি বাড়িতে আমরা থাকতাম। আমরা ভাড়া বাড়িতে থাকলেও সফিক থাকতো তার নিজের বাড়ি। ওরা ঝিনাইদহ জেলার স্থানীয়ও বটে। ওর সাথে তিল তিল করে গড়ে ওঠা এবং আজ অব্দি তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমাদের এই অটুট বন্ধুত্ব যেন আজীবন অক্ষুন্ন থাকে সে কামনা অন্তরে গেথে, ওর জীবনের একটা ক্ষুদ্র খন্ডচিত্র তুলে ধরতে চলেছি আমার দোয়াতের কালিতে।

সে সময় সফিক একটা অদ্ভুত কাজ করত প্রত্যেক মাসে। বেশ কয়েকটি টিউশনি করাতো, এবং মাস শেষে ৬ হাজার ৫০০ টাকা স্থান করে নিত তার পকেটে। তবে পুরো ছয় হাজার পাঁচশত টাকা এক জায়গায় না হওয়া অব্দি একটা টাকাও খরচ করত না সফিক!! অর্থাৎ কোন স্টুডেন্ট মাসের ১ তারিখেই টাকা দিয়ে দিলেও কেউ কেউ আবার ১০ তারিখের মধ্যে যেকোন এক দিন দিয়ে দিত। আর যেদিন তার ছয় হাজার পাঁচশত টাকা পূর্ণ হত সেদিন সে টাকাগুলো একসাথে নিয়ে রাস্তায় বের হত নিরুদ্দেশ ভঙ্গিতে। এবং এই যাত্রাপথে সর্বপ্রথম যে বন্ধুটির সাথে তার দেখা হত তাকেই সে বন্ধুটির পছন্দ অনুযায়ী পেট পুরে খাবার খাওয়াত। তা সে যে খাবারই হোক না কেন। এবং সে যদি একদিনেরও বন্ধু হয় তবুও!! তবে অবশ্যই "বন্ধু" হতে হবে!! এবং ঐ বিশেষ দিনের প্রথম সাক্ষাৎ হওয়া বন্ধু!! যদিও নির্দিষ্ট করে সেই বিশেষ দিনটি কবে হবে তা অনুমান করাও মুশ্কিল ছিল।

আমার অবশ্য কপাল গুনে দু-দুবার সফিকের প্রীতিভোজ ভোগ করার সুযোগ হয়েছিল। একবার নাক মুখ চুবিয়ে খাসি আর খিচুড়ি ভুনা... আর একবার কাবাব, মুরগির রোস্ট ও নান রুটি দিয়ে দাত মেজেছিলাম!! ফলে পেট যে আমার ৭ মাসের ন্যায় হয়েছিল সে কথা অস্বীকার করছি না!!
বড় অদ্ভুত ছেলে!! এভাবে কষ্টের টাকা দিয়ে প্রতিমাসে বন্ধু ভোজন করিয়ে কি সুখ সে পেত তা জানার পর খুব অবাক হয়েছিলাম। প্রতি মাসের ১০ তারিখের ভিতরে উন্মুখ হয়ে থাকতাম কবে ও বের হবে, ওর সাথে দেখা হবে, আর পেট পুরে খাওয়াটাই ছিল মূখ্য!! কেন খাওয়াচ্ছে কি কারণে খাওয়াচ্ছে তা আর ভাবার সময় ছিল কই!! সময় থাকলেও ভাবিনি!! বাঙালি জাতি!! বড্ড স্বার্থপর যে!! পেটে খাবার পরলেই খুশি!! কুকুরের মত খাবার পেলেই আমরা প্রভুভক্ত না হলেও অন্তত সৌজন্যসূচক কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করতে কুন্ঠিত হয় আমাদের মানুষত্ব। সেক্ষেত্রে সফিক যদি এতদিন কোন কুকুর কে খাওয়াত তবেই হয়তো বেশ করত!! অন্তত বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হতে হতনা!

আমাদের বন্ধুদের ভিতরে সফিক ছিল ভিষণ চতুর ও বুদ্ধিমান সেকথা স্বীকার করতে সংকোচ নেই বরং অহংকার বোধকরি। তাই বলে যে আর দশজনের থেকে সে একেবারে ভিন্ন সে কথা বলছিনা! কেননা আর দশজনের মত সেও প্রেমে পরেছিল একটি মেয়ের! ... গভীর প্রেমে। তবে আর দশজনের মত যেনতেন সস্তা প্রেম নয় সেকথা হলফ করে বলতে পারি। সঙ্গত কারণেই গল্পে আমি মেয়েটির ছদ্মনাম "জেবা" ব্যবহার করবো।

জেবার সাথে সফিকের কুসুম কুসুম প্রেম যখন কেবল ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটবে ফুটবে করছে ঠিক এমন সময় পুরো ডিমটাই ছিনতাই করে নিয়ে গেল সফিকের সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাফর। আমি সফিক আর জাফর ছিলাম তিন অভিন্ন হৃদয়। কিন্তু বন্ধুর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে তার প্রেমিকাকে হাতিয়ে নেয়ার মত জঘন্য অন্যায় করেছিল জাফর। আর তারপর থেকেই আমরা বন্ধু বান্ধব মিলে আকিকা দিয়ে জাফরের নাম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে রাখলাম "মীর জাফর"!!

সফিক তখন ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং একাধারে শিক্ষকও!! কেননা তখন থেকেই সে নিজের খরচ নিজে চালানোর লক্ষ্যে প্রাইভেট টিউশনি শুরু করে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে রীতিমত ছাত্র বিরম্বনার শিকার হতে হয় তাকে। প্রয়োজনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়াতে অস্বীকৃতি জানানোই বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী কে মুখ কালো করে ফিরে যেতে হয়েছে সফিকের বাড়ির চৌকাঠ থেকে। কিন্তু জেবা নামের মেয়েটা যখন চুলের খোঁপায় একটা রজনীগন্ধা গুঁজে, কপালে একবিন্দু নীল টিপ একে এবং ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপিস্টিক মেখে সফিকের চোখের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল -
-"স্যার, আমি আপনার কাছে পড়তে চাই, প্লিজ প্লিজ প্লিজ না করবেন না"
তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য সফিক জেবার মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে কোন পুকুরে ডুব দিল তা সে নিজেও জানেনা, তবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত করে নিজেকে সংযত করে যথাসম্ভব গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল -
-"হুমম, তো কোন ক্লাসে পড়া হয়?"
-"ক্লাস নাইনে স্যার"
-"হুম, একটা পরীক্ষা নিব যদি পাশ করো তবে ভেবে দেখবো"
মেয়েটা একটু সংকিত হয়ে গেলেও শক্ত কন্ঠে বলল -
-"ঠিক আছে আমি রাজি"
-"Ok তিন সেকেন্ডের ভিতরে তোমাকে বলতে হবে ১৩০ এর সাথে ৪০ যোগ করে, তার সাথে ৩০ বিয়োগ করে, তার সাথে ৩ যোগ করলে ফলাফল কত হবে? Your Time Is Start Now 1..2.."
কিন্তু থ্রি বলার আগেই জেবা বলে ফেলল -
"১৪৩"
-"ব্রিলিয়ান্ট ...!! ঠিক আছে কাল থেকে তুমি আসতে পারো"
ধন্যবাদ বিনিময় করে জেবা সেখান থেকে চলে গেল, কিন্তু ১৪৩ এর অর্থ জেনে গেলনা তা কিন্তু নয়!! ক্লাস নাইনে পড়ুয়া একটা মেয়ে "ওয়ান ফোর থ্রি" এর মানে জানবে না তা তো হতে পারেনা। সফিক অবশ্য এরপর ১৪৩ এর মত আরো বিভিন্ন বোকামির পরিচয় দেয়াই ধীরে ধীরে জেবার কাছে সব কিছু আরো পরিষ্কার হতে থাকলো এবং জেবা নিজেও সেগুলো মুখ টিপে প্রশ্রয় দিতে থাকলো। ফলে প্রেম প্রেম ভাবটা কেবলমাত্র শুরু হয়েছে ঠিক এমন সময় কোত্থেকে জাফর জেবার দেখা পেল এবং ওর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পাগল বলদ হয়ে গেল!! এবং বিবেকের গায়ে আগুন লাগিয়ে প্রতারণা করল সফিকের সাথে! ভুলে গেল কে বন্ধু! কিসের বন্ধু!
যদিও আমার থেকে জাফরের সাথেই বেশি সখ্যতা ও দেখা হত সফিকের ওই বিশেষ দিনে, এবং খেতোও আমার থেকে ঢের বেশি!! কিন্তু তবুও! বেইমান তো আর মানুষের গায়ে লেখা থাকেনা ...।

যাইহোক, জাফর ঘোড়ার আড়াই চালের মত করে জেবা কে নিজের করে পাবার জন্য জেবার বাবা মায়ের কাছে সফিক সম্পর্কে যা না তাই বলে তাদের মন বিষিয়ে তোলে ও সফিকের থেকে জেবা কে আলাদা করতে সক্ষমও হয়!! সফিক বা আমি প্রথমে ঘটনার আকস্মিকতা এবং এর কারণ বুঝতে না পারলেও কদিন পর জাফরের "মীর জাফর গীরি" ধরা পরলে সফিক চরম ভাবে আহত হয়। সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর এহেন কর্মে বাকরুদ্ধ সফিক ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও তার ওই প্রতি মাসের বিশেষ কর্মসূচি কিন্তু অব্যাহতই থাকে এবং কোন না কোন বন্ধুকে খাইয়ে তৃপ্ত হয়।

এর প্রায় পাঁচ মাস পরের ঘটনা -
ফজরের নামাজ আদায় করে মাসের প্রথম সপ্তাহে ছয় হাজার পাঁচশত টাকা হাতে নিয়ে বের হল সফিক। কিন্তু বের হতেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হয়ে গেল জাফরের সাথে!! চরম অসস্তিতে পরে গেল সফিক!! এখন কি উপায়? শর্ত হল এই বিশেষ দিনের শুরুতে যে বন্ধুর সাথেই প্রথম দেখা হবে তাকেই সে খাওয়াবে। কিন্তু জাফর তো এখন আর তার বন্ধু নয়!! শত্রু!! ... চরম শত্রু ..
কিন্তু তবুও এতদিনের নিয়ম কিভাবে ভাঙ্গবে সে? মনের ভিতরে প্রশ্ন আর উত্তরের ঝর বয়ে যাচ্ছে ... তবে কি এ যাত্রা বাড়ি ফিরে যাবে? নাহ ... তাই বা হয় কি করে! এরকম টা করা যাবেনা অবশ্যই!! তারপর এটা সেটা ভাবতে ভাবতে জাফরের সামনে এসে দাড়ালো সফিক এবং বলেই ফেলল -
-"কি রে কেমন আছিস? এতদিন পর আজ আবারো তুই হয়েছিস লাকি ম্যান ... চল তোর পেট পুজো করিয়ে নিয়ে আসি। তোর পছন্দের খাবার তো আমার জানাই আছে, হাহাহা"
বলে অট্টহাসি দিল সফিক। কিন্তু স্পষ্ট বোঝা গেল, এ যে নকল হাসি!! এবং অপরিপক্ক অভিনয়ও বটে!

কিন্তু সফিক কে বিব্রত ও বিষ্মিত করে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল জাফর ... আর ঘোৎঘোৎ করে বলল -
-"আমাকে মাফ করে দে ভাই!!! আমাকে মাফ করে দে"
সফিক বিচলিত হলেও একটু স্বাভাবিক স্বরে বলার চেষ্টা করল -
-"আরে কিসের মাফ? কেন মাফ বলবি তো?"
-"আমি বেইমানি করেছি তোর সাথে দোস্ত ...!! আমায় মাফ করে দে"
-"আশ্চর্য কিসের বেইমানি?"
-"জেবা কে তোর কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছি! প্রতারণা করেছি তোর সাথে"
এবার সফিক একটু শক্ত কন্ঠে বলল -
-"কেন করলি এটা জাফর? কেন? আমার কাছে কি একবারও বলতে পারতিস না?"
-"ভুল করেছি ভাই আমি, চরম ভুল ... আমায় ক্ষমা কর"
-"কেন তোর তো খুশি থাকার কথা, জেবা তো এখন তোর! তবে কাঁদছিস যে?"
-"না রে ভাই, জেবার মত সুন্দরী মেয়েরা কারো একার হয়না!! এরা অনেকের, বহু জনের!! সে এখন অন্য কারো!! শুধু শুধু তোর মত বন্ধু হারালাম, ক্ষমা কর ভাই"
সফিক জাফর কে শান্ত করে বলল -
-"ঠিক আছে শান্ত হ, আজ তোকে একটা গোপণ সত্য কথা বলব"!!
বলে জাফর কে শান্ত করে ওর কৌতুহলী চোখের দিকে দৃষ্টি স্থির করে আবারো বলল-
-"আমি যেদিন প্রথম আমার টিউশনির টাকা হাতে পেলাম ওইদিন রাতে স্বপ্নে দেখলাম গাঢ় অন্ধকার একটা ছায়া আমায় বলছে -প্রতি মাসে এই টাকা দিয়ে আমি যেন দিনের প্রথম সাক্ষাৎ হওয়া কোন বন্ধু কে পেট পুরে খাওয়াই! এবং তাদের ভিতরেই লুকিয়ে থাকবে আমার এক বন্ধু বেশী শত্রু!! এরপর একদিন সে প্রকাশ্যে আসবে এবং নত মস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে! কিন্তু সাবধান!! তাকে যেন আর ক্ষমা না করি!! কেননা ভুলের ক্ষমা আছে কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার কোন ক্ষমা নেই। এ ছাড়াও অধিক সুন্দরী নারী হইতে সতর্ক করেছে! যে নারী একবার বুঝে ফেলবে যে সে অতিরিক্ত সুন্দরী, সে নারীর লাগাম পাওয়া মুশ্কিল। চিনির একটি দানা কে ঘিরে যেমন অসংখ্য পিপড়া আহাজারি করে এবং শেষ মেষ ঐ চিনির দানা বিলিন হয়ে যায়, তেমনি সুন্দরী নারীর পিছেও হাজার চক্রের ভীড় থাকায় সে নিজেকে ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়। কেবল যথাযথ ধর্মভীরু সুন্দরী নারীরাই নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তবে তাদের পরিমাণ অকালপক্ব চুলের মত। যেমন এক মাথা চুলের মধ্যে হাতে গোনা কয়টি পাকা চুল। কিন্তু বিশ্বাস কর কখোনো ভাবিনি তুই হবি আমার শত্রু!! তাই তোর মত বন্ধু এবং জেবার মত সুন্দরী নারী সর্বদায় পরিতেজ্য। আর হ্যাঁ আজকের পর থেকে মানুষের বদলে কুকুর কে খাওয়াবো। সে অন্তত ভুলেও আমায় কামড় দিবে না!! বরং বিপদজনক মানুষ হতে আমাকে রক্ষা করবে।"

কথা গুলো শেষ করে সফিক তার বাড়ির দিকে পা বাড়ালো ... জাফর জলে ভেজা ঝাপসা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সফিকের দিকে ... এমন সময় কোথা থেকে একটা কুকুর ছানা জাফরের দিকে একবার "ঘেউ" করে দৌড়ে চলে গেল সফিকের পিছু পিছু।

[ছবিঃ গুগল]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভালো...

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২১

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: ধন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.