নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (Season-2) - পর্ব- ৫

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫



একটা মেয়ে … কপালে কালো এক বিন্দু টিপ। ঝরঝরে ফুরফুরে সিল্কের মত চুল গুলো বার বার আমার চোখে মুখে নাকে সুরসুরি দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে উদাস হয়ে। আমি হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে পানিতে পা চুবিয়ে বসে আছি। মেয়েটাও আমার মত করেই আমার বাম পাশে বসে আছে। পরন্তু বিকেলের বাড়ন্ত বাতাসের ঢেউয়ের কারণে তার চুলগুলো আমার চোখেমুখে এক অন্যরকম এডিকশন তৈরি করে চলেছে।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার, মেয়েটির মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা!! কে এই মেয়ে, কোথা থেকে এলো? আর কেনইবা আমি তার সাথে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি!! তবে তার চুল থেকে যে ঘ্রাণ টা ভেসে আসছে সেটা আমার হৃদয়ে গেথে থাকবে আজীবন। এ কোন কৃত্রিম ঘ্রাণ নয়। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব একটি একক ঘ্রাণ থাকে। সিমিলারিটি অনেক কাছাকাছি হলেও লক্ষ কোটি মানুষের ভীড় হতেও এ ঘ্রাণ আমি আলাদা করতে পারবো…
এমন সময় একটা উটকো পচা গন্ধে নাক জ্বলে গেল!! মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে কিছু চেচামেচি কানে ভেসে আসছে … ভাসা ভাসা সেই কথাগুলো অনেকটা এরকম -
“কোন হালার পুতে যে এই কামডা করলো!!”
বুঝলাম না, আমার আর এই অচেনা মেয়েটির মাঝখানে আবার কোন “হালারপুত”এর আগমন ঘটলো!! আর অন্য কারো কথার শব্দই বা আসছে কোথা থেকে!! লক্ষ্য করলাম আস্তে আস্তে মেয়েটি মিলিয়ে যাচ্ছে … চোখের সামনেই সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে … আমি একবার বলতে গেলাম -
“এ এই কোথায় চললে? এই মেয়ে? এই…!!”

কিন্তু বলতে পারলাম না। ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙতেই চরম বিচ্ছিরি ঝাঝালো গন্ধটা তখোনো নাকের কাছে মো মো করছে। চোখ মেলে দেখলাম আমি বাসের ভিতরে। আমার কাধেঁ মাথা রেখে সিরাজও ঘুমুচ্ছে! বুঝলাম চলন্ত বাসের ভিতরে কেউ একজন গোপনে বায়ু নিষ্কাশন করে বাসের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। তখন ওই লোকটি আবারো চেঁচিয়ে বলে উঠলো -
“ইয়া আল্লাহ্ যে হারামি এই কামডা করছে তার পিছে তুমি ঠুসা উডাইয়া দাও”
এটা কেমন কথা!! একটা মানুষের বায়ু নিষ্কাশনের প্রয়োজন হতেই পারে, তাই বলে এভাবে তাকে অপমানিত করার মানে কি? তাও আবার শুধু এটুকু বলেই থামলো না, আরো বলল -
“উহ হুরে কি গন্ধ!! মনেহয় পঁচা মইষের মাংস খাইছে রে!!”
এবার কন্টাকটর সাহেব খেপে গিয়ে ওই লোককে বলল -
“কি মিয়া? সামন্য এক পাদের লিগা আমাগো মাথা খাইবেন নি? আপনি কি কুনুদিন পাদেন নাই?? যত্তসব”
এবার লোকটা চুপ মেরে গেল এবং অনেকটা কাচুমাচু হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে নিজেকে আড়াল করল। বাসের ভিতরে কয়েকটি মেয়ে এবং মহিলারা মুখে কাপড় চেপে খিলখিলিয়ে হাসছে।
চেঁচামেচির শব্দে সিরাজের ঘুম ভেঙে গেছে। ঘুম ভেঙে সেও আমার মত হতবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।এর মধ্যে আবার পানিসিং হেয়ার স্টাইলের ওই ছেলের ফোনে একটা ফোন আসলো এবং সে তার কোন এক বিশেষ মায়ের বিশেষ ভাইকে মামা সম্মোধন করে বেশ উল্লসিত ভঙ্গিতে বলল -
“মাম্মা, ওই মাইয়ার সাইজ দ্যাখছো? আমি তো পুরাই ক্রাশ খাইয়া গেছি মাম্মা… ওরে না পাইলে আমি কইলাম ব্লু হুইল খেলুম!!”
শুনে সিরাজ আমাকে প্রশ্ন করল -
“ক্রাশ কি জিনিস নাঈম ভাই?”
আমি খুব গুরুত্ব সহকারে ওকে বোঝালাম-
“ক্রাশ হল একটা বিশেষ টুটপেস্ট। ক্রাশ দিয়ে ব্রাশ করলে দাত এমন ঝকঝকে হবে যে- তুমি নিজেই নিজেকে চিনতে পারবে না!! আর সেই দুঃখে তুমি পাগল হয়ে যাবে!! যেভাবে তুমি এতদিন পাগল হয়ে ছিলে।”
সিরাজ মিটমিট করে হাসলো। তারপর আবার জিজ্ঞাসা করল-
“আর ব্লু হুইল?”
আমি আবারো বললাম-
“দীর্ঘদিন পাগল হয়ে থাকার জন্য তুমি এসব যন্ত্রপাতি সম্পর্কে কিছুই জানতে পারনি। এটি হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে সমাজের বোকা, মূর্খ ও জ্ঞানী প্রতিবন্ধীরা সমাজের ভারসাম্য রক্ষার্থে নিজেরা সেচ্ছাই আত্মহত্যা করে।”
সিরাজ লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল-
“হুম”
কি ভেবে বা কি মনেকরে সে হুম বলল জানিনা তবে দশ বছর আগে যদি সে এই যন্ত্র হাতে পেত তবে অবশ্যই তার সদ্ব্যবহার করতো বলেই মনে হয়।

গাড়ী যশোর পালবাড়ির মোড়ে এসে থামতেই নেমে পরলাম গাড়ী থেকে। সূর্যের দিকে তাকিয়ে ঘরির কাটা বিকেল পাঁচটা সাড়ে পাঁচটার ঘরে আছে বলেই অনুমান করলাম। আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে বাসটা চলে যেতেই রাস্তার অপর প্রান্তে অবস্থিত পাবলিক টয়লেটে ঢুকলাম প্রকৃতির কড়া নির্দেশ অনুযায়ী। সিরাজকে বাইরে দাড় করিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম দেয়ালের বিভিন্ন জায়গাই হাজারো প্রেমিক যুগলের নাম আকিবুকি করে লেখা। যেমন- শাহিন+টুম্পা, আবেদ+খাদিজা, জহির+রিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। দুনিয়াই এত জাইগা রেখে এসব প্রেমিকরা কেন পাবলিক টয়লেটে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে তার যথাযথ কারন অনুসন্ধান করতে করতে দরজা লাগিয়ে ভিতরে গিয়ে বসে পরলাম। কিন্তু উপযুক্ত কোন কারণ না পেয়ে কাজ সেরে যখন উঠতে যাব তখন খেয়াল করলাম মুখ বরাবর দরজার গায়ে লেখা - “ওহে জ্ঞানী, হাগিয়া লইয়ো পানি”
একটু বিব্রত হলাম বটে তবে অবশ্যই পানি ব্যবহার করেছি তাই আর পরীক্ষা করলাম না।

পাবলিক টয়লেট থেকে বের হতেই দেখলাম সিরাজ ৩৫-৩৬ বছরের একটা লোকের সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছে আর হা হা করে হাসছে! মনে হচ্ছে অনেক দিনের খাতির। সরু চিকন গোঁফ, আপেলের মত দুই গাল আর ডাগাডাগা দুটি চোখ দেখলে যেকোনো বাচ্চা ভয় পেয়ে যাবে, তবে তার চেহারায় অসম্ভব একটা মায়া লুকিয়ে আছে। এই মায়া জোনাকির আলোর মত। এই দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়।তার হাতের ঝালমুড়ির ঠুঙ্গাটা লক্ষ্য করে মনে মনে ভাবলাম, এধরনের মায়াবী চেহারার মানুষরা দুনিয়াতে দুঃখ কষ্ট পাওয়ার জন্যই জন্মায় হয়তো!! আমিও যোগ দিলাম তাদের সাথে এবং ঝালমুড়ি খেতে খেতেই পরিচিত হলাম অচেনা ব্যক্তিটির সাথে। সিরাজ শুরু করলো প্রথমে-
“নাঈম ভাই, ইনি নাকি পাগল হয়ে গেছেন। ফোনে দেখলাম বার বার কারে যেন পাগলা গারদে ভর্তি হওয়ার কথা বলতেছিলেন। তাই ওনারে বললাম পাগলামি ছোটানোর ডাক্তার আছে আমার সাথে। ওনারে একটু ট্রিটমেন্ট দিয়ে দেননা ভাই”
বলে আমার দিকে অনুরোধের দৃষ্টিতে তাকাল সিরাজ। আমি রাগ ধামাচাপা দিয়ে হো হো করে হেসে ভদ্রলোক কে “নাইস টু মিট ইউ” বলে সিরাজ কে টানতে টানতে সেখান থেকে অন্যদিকে রওনা দিলাম। গাধা একটা !! আমার জন্য পাগল ধরে বেরাচ্ছে ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য!!
আমরা সোজা হেটেই চলেছি এমন সময় ওই ভদ্রলোক আমাদের পাশে এসে মোটরসাইকেলের হর্ন দিলে সেদিকে তাকালাম-
“কোথায় যাবেন? চলুন আপনাদেরকে পৌঁছে দিয়ে আসি”
আমি “ধন্যবাদ” দিয়ে তৎক্ষণাৎ সিরাজকে নিয়ে তার বাইকে চেপে বসে বললাম-
“রেল স্টেশন”

কেন হটাত রেল স্টেশনে যেতে চাইলাম জানিনা!! একটু আগেও জানতাম না কোথায় যাব!! হটাত আমার মস্তিস্ক থেকে সিগন্যাল এলো রেল স্টেশনে যেতে হবে!! কিন্তু কেন?? সব সময় প্রতিটা পদক্ষেপই কি আমরা সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ মোতাবেক নিয়ে থাকি? অর্থাৎ সবকিছুই কি পূর্ব নির্ধারিত? আমরা শুধু অভিনয় করে যাচ্ছি একটা মহান গল্পকারের গল্পের স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী? হবে হয়তো। নাহলে কোথা থেকে আসলাম, কেন আসলাম, আবার কেনই বা চলে যেতে হবে, এবং কোথাই বা যাব তার তো কোন ছক নেই আমাদের হাতে!! তবে প্রকৃতি অবশ্যই একদিন বলবে তার গোপন কথা।

স্টেশনে পৌঁছে দেবার পর সিরাজের ওই পাগল বন্ধুকে ধন্যবাদ দিয়ে স্টেশনের ভিতরে প্রবেশ করলাম। দেয়ালে টাঙ্গানো বিশাল দেয়াল ঘড়িতে দেখলাম সন্ধ্যা ছয়টা বেজে চল্লিশ মিনিট। শতশত যাত্রীতে মুখরিত দুইটা প্লাটফর্ম। বাদাম, পপকর্ণ, আচার, মুচি, আর হরেক ডিজাইনের ফকিরের আনাগোনা সর্বত্র। ডিজাইন বললাম কেননা কোন ফকিরের মুখ বাকা, কারো পা বাকা, কেউ অন্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি। যার ডিজাইনে যত ডিফেক্ট তার ইনকাম তত বেশি। খুব ভালো করেই জানি এগুলোর বেশির ভাগ ভণ্ড ও জেলা ফকির কমিটির সদস্য। তবুও দুয়েকটা রিয়েল ফকির থাকে যাদের দেখলে কোন মানুষের মনে দয়া জন্মায় না। তারা ভিক্ষাও পায় কম। মাঝে মাঝে ভিক্ষা করার অপরাধে “সুশীল” সমাজ কর্তৃক লাঞ্ছিতও হয়। সিরাজের কাছ থেকে দশ টাকা নিয়ে বেছে বেছে একটা ফকির কে দিলাম এবং একটা বেঞ্চে গিয়ে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলাম। ডানে বায়ে একটু ব্যায়াম করতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম!! ওই ভদ্রলোক আমার পাশে বসে আছে!! উনি ফিরে না গিয়ে আমাদের কে ফলো করছেন কেন তা চট করে ধরতে পারলাম না।
আমি মৃদু হাসি বিনিময় করে আবারো ব্যায়াম করায় মনোযোগ দিলাম। শুনতে পেলাম একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর -
“আমার নাম, জুনায়েদ”
শুনে আমি যেন খুব অবাক ও খুশি হলাম এমন ভঙ্গিতে তার সাথে হ্যান্ডসেক করতে করতে বললাম-
“ও তাই !! আমি নাঈম। ভালো আছেন? আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুব খুশি হয়েছি এবং আপনার এই উপকার কোনদিন ভুলবোনা। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।”

বলে আবারো সিরাজ কে নিয়ে সরে পরলাম সেখান থেকে। একজন অপরিচিত ব্যক্তি পিছু নিয়েছে এটা মোটেও ভালো কথা নয়। তার উপর আবার যে লোক স্ত্রীর পাঠানো ডিভোর্স লেটার দিয়ে ঠুঙ্গা বানিয়ে ঝালমুড়ি খেতে পারে সে পাগল ছাড়া আর কি !! আমি টয়লেটে থাকাকালীন সিরাজ ওনাকে আমার সম্পর্কে কিকি বলেছে সেটা এখন চিন্তার বিষয়… কেননা আমি জানি উনি এত তাড়াতাড়ি আমার পিছু ছাড়বেন না…

চলবে…

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২০

কুকরা বলেছেন: +++++++++++++

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: এই রকম বিষয় পড়তে ইচ্ছা-ইচ্ছা করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.