নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট থাকতে পছনদো করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন

সত্য কে সত্য আর মিথ্যা কে মিথ্যা বলার চেষ্টা করি

নাঈম ফয়সাল নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (Season-2) - পর্ব- ৭

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০২



আবারো সেই মেয়েটি! অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে, আর আমি পানিতে হাঁটু পর্যন্ত পা ডুবিয়ে তার পাশে বসে আছি। আবারো হালকা বাতাসে তার সেই সিল্কের চুল গুলো আমার চোখে মুখে সুরসুরি দিয়ে যাচ্ছে। এত চেষ্টা করেও তার মুখটা কিছুতেই দেখতে পাচ্ছিনা। দেখার জন্য যতই কাত হচ্ছি ততই সে অন্যদিকে ফিরে তাকাচ্ছে। আমিও নাছোড়বান্দা !! সে যতই অন্যদিকে তাকাক না কেন, ঠিক তাকে দেখেই ছাড়বো। আমি কাত হচ্ছি সেও অন্যদিকে তাকাচ্ছে, আমি কাত হচ্ছি সেও অন্যদিকে তাকাচ্ছে... এভাবে কাত হতে হতে আমি ধপাস করে পানির মধ্যে পরে গেলাম!! আমি যখন পানির ভিতরে তলিয়ে গেছি তখন তল থেকেই মেয়েটির রিনরিনে কণ্ঠে হাসির শব্দ কানে ভেসে এলো। বুঝলাম আমি পানিতে পরে যাওয়ায় সে বড্ড মজা পেয়েছে। আমি তাড়াহুড়া করে পানির উপরে ওঠার চেষ্টা করলাম, কেননা এটাই সুযোগ তাকে দেখতে পাবার...

কিন্তু নাহ… পানির উপরে উঠলাম ঠিকই কিন্তু চোখ মেলতেই দেখলাম আমার চোখে মুখে কেউ একজন পানি ছিটাচ্ছে। পানি ভরা ঝাপসা চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন পুলিশ দাড়িয়ে আছে আমার সামনে ! আমার পাশেই পরে আছে সিরাজ। আস্তে আস্তে মনে পরতে শুরু করলো সব।

গতকাল সিরাজের চুলদাড়ি কাটিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার “সরদার পাড়া” নামের একটা মহল্লার ভিতর দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। রাত তখন ১০ টার মত বেজেছিল। উদ্দেশ্য ছিল এখানকার কোন এক মসজিদের বারান্দায় দুজন রাতটা কাটিয়ে দিব। মসজিদে রাত কাঁটাতে গিয়ে এভাবে কোন এক উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির গ্যারেজে রাত কাঁটাতে হবে তা কখনোই ভাবিনি।

মসজিদ একটা পেয়েওছিলাম, কিন্তু মসজিদের সদর রাস্তা দিয়ে না এসে পিছনের রাস্তা দিয়ে আসতে গিয়েই হল যত বিপত্তি। যদিও রাত্রে আলোর সল্পতার জন্য বুঝতে পারিনি কোনটা সদর আর কোনটা অন্দর!! তবুও সেই সল্প আলোর ভিতরেই স্পষ্ট দেখতে পেলাম পুলিশের ওই কর্মকর্তা মসজিদের পিছনের অন্ধকারে দাড়িয়ে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করছে। সিরাজ কিছু খেয়াল করেনি, এবং আমিও কিছু দেখিনি এমন ভাবে হেটে গেলেও পার পেলাম না। সারাজীবন শুনেছি “চোরের মন পুলিশ পুলিশ” কিন্তু এখানে দেখলাম তার উল্টো- “পুলিশের মন চোর চোর”!!
ঝটপট দুই তিনজন পুলিশের বিশেষ সহকারী এসে আমাদের নাম, ঠিকানা, ইত্যাদি জানতে চাইলো এবং পকেট সার্চ করতে থাকলো। তারপর তাদের একজন সিরাজের পকেট চেক করতে করতে চিৎকার করে বলল-
“স্যার, এই বিটকুটার পকেট থেকে ২ টুপলা গাঞ্জা পাইছি”
বলে কেলাতে থাকলো। শুনে তাদের স্যার বলল-
“দুইজনকেই গাড়িতে তোল”
সাথে সাথে তারা যেন ৮০/৮০ ভোল্টেজে আমাদের টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে তুলল, আর আমি “চেয়ে চেয়ে দেখলাম”। গাড়িতে ওঠার পর আমি একটু নিশ্চিন্ত বোধ করলাম। শীতের রাতে থানার গারদে আর কিছু না পেলেও বিচ্ছিরি গন্ধযুক্ত অনেক গুলো কম্বল পাওয়া যাবে। এসব ভেবে যখন সস্থির নিঃশ্বাস ফেলছি তখন সিরাজ আমার দিকে একটু ঝুকে এসে ফিসফিস করে বলল-
“বিশ্বাস করো নাঈম ভাই, আমি গাঁজা খাইনা, আর ওরা আমার পকেটে কোন গাঁজা পাইনি। সব ওদের সাজানো নাটক”
আমিও ফিসফিস করেই জবাব দিলাম -
“হ্যাঁ, আমি জানি”

তারপর থানার বদলে আমাদেরকে নিয়ে আসা হল ওই অফিসারের বাসার গাড়ির গ্যারেজে!! গ্যারেজের ভিতরে পুরনো এক নষ্ট সোফা সেট পরে থাকায় তার উপরে শুয়ে খুব আরামে রাতটা পার হয়েছে কিন্তু আমাদেরকে নিয়ে কি করা হবে বা সামনে আরও আরামের কিছু, নাকি কষ্টের কিছু অপেক্ষা করছে তা অনুমান করতে পারছিনা। সিরাজ দেখলাম গুটিসুটি মেরে আমার পাশে বসে আছে। অফিসার সাহেব আসলেন আমার সামনে, তারপর একটা চেয়ার টেনে আমার মুখোমুখি হলেন এবং শুরু হল আমাদের কথোপকথন-
“তোর নাম কি?”
“নাঈম”
“কি করস?”
“ঘুরাঘুরি”
“সন্ন্যাসী?”
“জী না”
“এই শীতের ভিতরে রাত্রিবেলা ওই খানে কি কামে গেছিলি?”
“মসজিদে ঘুমাতে”
“একটা থাপ্পর খাবি!! সত্যি কইরা বল তোর আসল পরিচয় কি?”

লোকটা ভয় পেয়েছে। গোপনে আর্থিক লেনদেনের সময় আমরা ওখানে হাজির হওয়াই সাংবাদিক টাংবাদিক ভেবে বসে আছে। আমি বললাম-
“আমার আসল পরিচয় আমি ‘আদম পুত্র’ মানুষ”

এসময় তার একটা চ্যালা বলে উঠলো-
“স্যার, হালায় বিশাল বিটকুইল্লা, ওদের দুজনরে গাঁজা সমেত চালান দিয়া দেন”
“আহ !! তোমারে না বলছি আমার কথার মধ্যে বা হাত না ঢুকাইতে”
চ্যালাকে শাসালেন তিনি। তবে এ সময় আমার মাথায় একটা প্রশ্ন উদয় হল- মানুষ বাম হাত, বাম পা, বাম চোখ এগুলোকে খারাপের প্রতিক হিসাবে ব্যাবহার কেন করে? বাম জিনিস গুলোর কি সমাজে কোন মূল্য নেই? ধরে নিলাম বাম হাত দিয়ে শৌচালয়ের কর্ম সাধন করা হয় বলে তাকে মানুষ ঘৃণা করে বা খারাপ এর প্রতিক হিসাবে ব্যবহার করে। কিন্তু যার বাম হাত নেই সেই ব্যক্তি তখন কি করে? আবার যদি কোন ব্যক্তির বাম দিকের অণ্ডকোষে কোন ঝামেলা হয় তবে সে সন্তান উৎপাদনের জন্য অক্ষম হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে কেন বাম দিকের জিনিস গুলোকে নিকৃষ্ট চোখে দেখা হয়? এসব কুসঙ্গস্কারের জনক বা জননী কে সামনে পেলে অবশ্যই প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত ছারতাম না।

এ সময় আমার মস্তিষ্কে কেমন যেন একটা ব্যস্ততার সিগন্যাল এলো!! কি যেন একটা দেরী হয়ে যাচ্ছে… আমি কোন রকম ভনিতা ছাড়া জনৈক পুলিশ অফিসার কে বললাম-
“আপনার একমাত্র মেয়ে আত্মহত্যা করতে চলেছে !!!”

হঠাৎ করেই যেন চুপচাপ হয়ে গেলো ঘরটা! কথাটা অফিসারের কান দিয়ে ঢুকে মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাত হয়ে তার উত্তর তৈরি করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেলো। আমি তার উত্তরের আশা না করে বললাম-
“জলদি আপনার মেয়ের কক্ষে যান, হাতে সময় খুব কম”

কিন্তু অফিসার সাহেব ভ্রু কুঁচকে সরু চোখে আমার দিকে তাকালেন। ধীরে ধীরে চেয়ারে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরালেন। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না, তার ২০ বছরের অভিজ্ঞতায় অনেক চোর, ডাকাত, চিটার, বাটপার, ভণ্ড পীর নিয়ে খেলা করেছেন, কিন্তু তার সামনে বসে থাকা জন্তুটা কোন লেবেলের ভণ্ড তা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না। তবে আমার ধারণা এই মুহূর্তে তিনি আমাকে কোন ভণ্ড বা বাটপার ভাবছেন না, বরং তার থেকেও বড় কোন উন্মাদ বা বদ্ধ পাগল ভাবছেন। প্রায় ৩০ সেকেন্ড আমাকে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শেষে মুখ খুললেন তিনি-
“আমার মেয়ে সুইসাইড করবে?”
“জী, আমার ধারণা এতক্ষনে সে আত্মহত্যার সমস্থ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলেছে”
“হাহাহা হাহাহা হাহাহা”

বলে সিগারেট টানতে টানতে অট্টহাসি দিতে গিয়ে অফিসার সাহেব রীতিমত কাশতে শুরু করলেন। আমি জানি দুনিয়ার সমস্ত প্রমাণ বেটে খাওয়ালেও তিনি আমার কথার মূল্য দিবেন না। দেখলাম কাশতে কাশতে মুখ দিয়ে লালা বের করে ফেলেছেন অফিসার। আমি তার হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে টানতে টানতে বললাম-
“এই সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই আমার কথা প্রমাণ হবে স্যার”
তিনি রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকালেন, যেন এক্ষুনি আমাকে কুত্তার মত গুলি করে মারতে পারলে তার কাশি থামবে। আমি অবশ্য সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে সিগারেট খাওয়ায় মন দিলাম। যত তাড়াতাড়ি সিগারেটটা ফুরাবে তত তাড়াতাড়ি একটা জীবন বাঁচবে!!

আজকের এই ঘটনার সময় প্রাচীন আমলের সেই বিশেষ কুসংস্কারবিদরা উপস্থিত থাকলে - “ধুমপানে জীবন বাঁচে” টাইপের নতুন স্লোগান বা কুসংস্কার জন্ম দিয়ে ছাড়তেন। যা যুগ যুগ ধরে বয়ে বেড়াতো ভবিষ্যৎ কুসংস্কারপ্রেমীরা। তবে আমি বলছি - “ধূমপান কখনোই উপকারী পানীয় নয়।”

“সাহবে, আফামনি ঘর বন্ধ কইরা জোরে গান হুনতাছে!! এত্ত কইরা ধাক্কাইলাম কিন্তু দরজা খুলে না!!”

অফিসারের কাজের বুয়া ৬তালা থেকে সিঁড়ি ভেঙ্গে হাপাতে হাপাতে এক হাত লম্বা জিব বের করে চিৎকার করে কাদতে কাদতে বলল কথাগুলো।

আমি ভাঙ্গা সোফার উপরে পা তুলে আরাম করে বসলাম। আমার হাতের সিগারেটের ফিল্টার দিয়ে তখনো ধুয়া উরছে…

চলবে…

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৫

পলাতক মুর্গ বলেছেন: ++++++++++++

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর হয়েছে। দুই একটা বানান ঠিক করে নিতে হবে।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২৭

নাঈম ফয়সাল নয়ন বলেছেন: শুকরিয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.