নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের রং

আসাদ ইসলাম নয়ন

লেখক ও পরিচালক ।

আসাদ ইসলাম নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তরুণ শেখ মুজিবের বর্ণনায় ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট শুরু হওয়া হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা(৩য় কিস্তি)

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:২৬

শেখ মুজিবুর রহমানঃ
...................................
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা কাকে এ ধারণাও আমার ভাল ছিল না। দেখি শত শত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক মসজিদ আক্রমণ করছে। মৌলভী সাহেব পালিয়ে আসছেন আমাদের দিকে। তাঁর পিছে ছুটে আসছে একদল লোকট লাঠি ও তলোয়ার হাতে। পাশেই মুসলমানদের কয়েকটা দোকান ছিল। কয়েকজন লোক কিছু লাঠি নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াল। আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ দিতে শুরু করল। দেখতে দেখতে অনেক লোক জমা হয়ে গেল। হিন্দুরা আমাদের সামনা সামনি এসে পড়েছে। বাধা দেওয়া ছাড়া উপায় নাই। ইট পাটকেল যে যা পেল তাই নিয়ে আক্রমণের মোকাবেলা করে গেল। আমরা সব মিলে দেড় শত লোকের বেশি হব না। কে যেন পিছন থেকে এসে আত্মরক্ষার আমাদের কয়েকখানা লাঠি দিল। এর পূর্বে শুধু ইট দিয়ে মারামারি চলছিল। এর মধ্যে একটা বিরাট শোভাযাত্রা এসে পৌঁছল। এদের কয়েক জায়গায় বাধা দিয়েছে, রুখতে পারে নাই। তাদের সকলের হাতেই লাঠি। এরা এসে আমাদের সঙ্গে যোগদান করল। কয়েক মিনিটের জন্য হিন্দুরা ফিরে গেল, আমরাও ফিরে এলাম। পুলিশ কয়েকবার এসে এর মধ্যে কাঁদানো গ্যাস ছেড়ে চলে গেছে। পুলিশ টহল দিচ্ছে। এখন সমস্ত কলকাতায় হাতাহাতি মারামারি চলছে। মুসলমানরা মোটেই দাঙ্গার জন্য প্রস্তুত ছিল না, একথা আমি বলতে পারি।

আমরা রওনা করলাম গড়ের মাঠের দিকে। এমনিই আমাদের দেরি হয়ে গেছে। লাখ লাখ লোক সভা উপস্থিত। কালীঘাট, ভবানীপুর, হ্যারিসন রোড, বড়বাজার সকল জায়গায় শোভাযাত্রার উপর আক্রমণ হয়েছে। শহীদ সাহেব বক্তৃতা করলেন এবং তাড়াতাড়ি সকলকে বাড়ি ফিরে যেতে হুকুম দিলেন। কিন্তু যাদের বাড়ি বা মহল্লা হিন্দু এরিয়ার মধ্যে তারা কোথায় যাবে? মুসলিম লীগ অফিস লোকে লোকারণ্য। কলকাতা সিটি মুসলিম লীগ অফিসেরও একই অবস্থা। বহু লোক জাকারিয়া স্ট্রিটে চলে গেল। ওয়েলেসলী, পার্ক সার্কাস, বেনিয়া পুকুর এরিয়া মুসলমানদের এরিয়া বলা চলে। বহু জখম হওয়া লোক এসেছে; তাদের পাঠাতে হয়েছে মেডিকেল কলেজ, ক্যাম্বেল ও ইসলামিক হসপিটালে। মিনিটে মিনিটে টেলিফোন আসছে, শুধু একই কথা, ‘আমাদের বাঁচাও, আমরা আটকা পড়ে আছি। রাতেই আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে শেষ হয়ে যাব।’ কয়েকজন ফোনের কাছে বসে আছে, শুধু টেলিফোন নাম্বার ও ঠিকানা লিখে রাখবার জন্য।

লীগ অফিস রিফিউজি ক্যাম্প হয়ে গেছে, ইসলামিয়া কলেজও খুলে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা মাদ্রাসা যখন খুলতে যাই, তখন দারোয়ান কিছুতেই খুলতে চাইছে না। আমি দৌড়ে প্রিন্সিপাল সাহেবের কাছে গেলে তিনি নিজেই এসে হুকুম দিলেন দরজা খুলে দিতে। আশেপাশে থেকে কিছু লোক কিছু কিছু খবর দিতে লাগল। বেকার হোস্টেল, ইলিয়ট হোস্টেল পূর্বেই ভরে গেছে।

এখন চিন্তা হল টেইলর হোস্টেলের ছেলেদের কি করে বাঁচাই। কোন কিছুই জোগাড় হচ্ছে না। কিছু ছাত্র দুপুরে চলে এসেছে। কিছু আটকা পড়েছে। বিল্ডিংটা এমনভাবে ছিল যে, একটা মাত্র গেট। চারপাশে হিন্দু বাড়ি, আগুন দিলে সমস্ত হিন্দু মহল্লা শেষ হয়ে যাবে। রাতে কয়েকবার গেট ভাঙবার চেষ্টা করেছে, পারে নাই। ( চলবে)
সূত্র: শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:০৪

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
চলুক....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.