নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের রং

আসাদ ইসলাম নয়ন

লেখক ও পরিচালক ।

আসাদ ইসলাম নয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তরুণ শেখ মুজিবের বর্ণনায় ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট শুরু হওয়া হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা(শেষ কিস্তি)

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩

শেখ মুজিবুর রহমানঃ
...................................
প্রথম ক্যাম্প খোলা হল, ‘নিগাহ’ নামে একটা ছোট্ট গুদামে। সেখানে হাজার খানেক লোক ধরবে। পরে কান্দুলিয়া ক্যাম্প খোলা হল। এতে প্রায় দশ হাজার লোকের জায়গা হবে। আমি এই ক্যাম্পের নাম দিলাম ‘হিজরতগঞ্জ’। মওলানা ইয়াসিন নামটা গ্রহণ করলেন এবং খুশি হলেন। আসানসোল স্টেশনে ও পরে রাণীগঞ্জ স্টেশনে মোহাজেরদের নামানো হত, পরে ট্রাকভরে ক্যাম্পগুলিতে নিয়ে আসা হত। আমার সাথে সকল সময়ের জন্য কাজ করতেন মওলানা ওয়াহিদ সাহেব। আমরা একসাথে পড়তাম, এখন তিনি শাহজাদপুরের পীর সাহেব।

আমাদের খাওয়া-দাওয়ার কোনো বন্দোবস্ত ছিল না। মোহারিজরদের জন্য যা পাক করতাম, তার থেকেই কিছু খেয়ে নিতাম। দোকানপাট চিল না। শত শত লোক রোজই আসছে। দিনে একবেলার বেশি খেতে দিতে পারতাম না। একটা হাসপাতাল করেছিলাম। ময়মনসিংহের ডা. আবদুল হামিদ এবং গফরগাঁওয়ের ডা. হজরত আলী এই হাসপাতালে কাজ করতেন। আসানসোলের এসডিও মিস্টার রোজ চার পাঁচ দিন পরে একজন বৃদ্ধা মেম সাহেবকে নিয়ে আসলেন। তিনি আমাদের কাজের প্ল্যান করে দিয়ে সাহায্য করবেন। কারণ, এই ভদ্রমহিলা যুদ্ধের সময় ব্রহ্মদেশ থেকে যখন লোক পালিয়ে আসিছল তখন সরকারি ক্যাম্পের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি যে প্ল্যান দিলেন, তাতে কাজের সুবিধাই হল।

ছয়-সাতদিন পর, বাংলা সরকার জনাব সলিমুল্লাহ ফাহমীকে বিহার মোহাজেরদের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী নিয়োগ করলেন। তিনি আসানসোলে এসে আমাদের খোঁজ করেন। পরে ময়রা ক্যাম্পে এসে আমাকে পেলেন। তিনি ক্যাম্পগুলিকে সরকারের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। মুসলিম লীগ স্বেচ্ছাসেবকরাও কাজ করলেন। আমি ও সলিমুল্লাহ সাহেব পরামর্শ করে মোহাজেরদের থেকে সুপারিনটেনডেন্ট, এসিসট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট, রেশন ইনচার্জ, দারোয়ান ও অন্যান্য কর্মজচারী নিযুক্ত করলাম।

এক জায়গায় খানা পাকানো সম্ভবপর হচ্ছে না। রেশন কার্ড করে প্রত্যেক ফ্যামিলিকে বিনা পয়সায় চাল, জ্বালানি কাঠ, মরিচ, পিঁয়াজ সবকিছুই সাত দিনের জন্য দিয়ে দেওয়া হবে। শুধু মাংস একদিন পর পর দেওয়া হবে। মোহাজেররা এই বন্দোবস্তে খুশি হলেন। এই সমস্ত ঠিক করতে এক মাস হয়ে গেল। এই সময় বিহার থেকে জাফর ইমাম সাহেব মোহাজেরদের বাংলাদেশের লোকেরা কেমন রেখেছে দেখবার জন্য এলেন। আমার সাথেও দেখা করলেন, আমাদের অফিসে। আমরা একটা অফিস খুলেছিলাম, তার পাশেই আমরা থাকতাম। আমাদের পাকের বন্দোবস্তও হয়েছিল ঐখানেই। আমাদের সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনা দেখে তিনি আমাকে ও আমাদেরে সহকর্মীদের অনেক ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। মোহাজেরদের সাথে দেখা করে তাদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা করছিলেন।

পরে ময়রা ও মাধাইগঞ্জে ক্যাম্প খুললাম। এই দুই ক্যাম্পর প্রায় দশ হাজার মোহাজের দেওয়া হয়েছিল। অনেক শিক্ষিত ভদ্র ফ্যামিলিও এসেছিলেন। মোহাজেরদের আর আসানসোল এরিয়ায় জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না। আমরা এর পরে বিষ্ণুপুর, অন্ডাল, বর্ধমানেও কিছু কিছু মোহাজের পাঠালাম। আমার সাথে যে সমস্ত কর্মী ছিল, আহার নিদ্রার অভাব ও কাজের চাপে প্রায় সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাই অনেককে পূর্বেই কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আমারও জ্বর হয়ে গিয়েছিল। এই সময়ে মোহাম্মদ আলী ও এ. এফ.এম আবদুর রহমান মন্ত্রী ছিলেন। তাঁরা বেগম সোলায়মান, ইফফাত নসরুল্লাহ ও আরও কয়েকজন কর্মচারীসহ আসানসোলে আসেন। আমাকে পূর্বেই খবর পাঠিয়েছিল। আমিও আসানসোলে তাঁদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাঁদের নিয়ে ক্যাম্পগুলি দেখান হয়েছিল। সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাঁদের সাথেই কলকাতা রওয়ানা হয়ে আসতে বাধ্য হলাম। বেগম সোলায়মান আমার শরীর ও চেহারার অবস্থা দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। দেড় মাস পরে আমি কলকাতায় হাজির হলাম অসুস্থ শরীর নিয়ে।( শেষ)

সূত্র: শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ৬৩-৭১ পৃষ্ঠা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.