নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেডলি ট্রাভেল লাভিং ওয়ান।

মোরতাজা

আমি সাধারণের একজন। বেড়াতে, বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।

মোরতাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফালানীকে নিয়ে পুরনো লেখা--

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৮

“লাশ হয়ে ঝুলে থাকল কিশোরী ফেলানি। হবু স্বামীর জন্য ভালোবাসার কথা লিখেছিল সে। সুঁই-সুতোয় সেটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাও চলছিল। সাথে একটি ফুল। হাতরুমালে নকশা করে নিজের মনে লুকিয়ে রাখা আবেগটা জানাতে চেয়েছে ফেলানি। সেটি আর হলো না। জানুয়ারির সাত তারিখে ঘন কুয়াশায় কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে গেল স্বপ্ন”।




ফেলানীকে ভারত খুন করে ঝুলিয়ে রাখার দু'দিন পর আমি সেই সীমান্তে গেছিলাম। এখনো মনে আছে ধূ ধূ বালুর নদী পার হয়ে নৌকায় চড়ে মোটর বাইকে করে সীমান্ত ঘেঁষা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গিয়েছিলাম। সেখানকার বহু মানুষের সাথে কথা হয়েছিল, স্থানীয় মানুষের কাছে সীমান্তে বিএসএফ'র নিপীড়নের যে বর্ণনা শুনছিলাম তা কতটা ভয়ঙ্কর---ঢাকায় বসে তার কষ্ট বোঝা ভারি মুশকিল।

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বর উপজেলা সীমান্ত। মধ্যরাত। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। বিএসএফের গুলি খেয়ে যে কিশোরী মেয়েটা ঝুলে থাকল কাঁটাতারে নাম তার ফেলানী। হবু স্বামীর জন্য ভালোবাসার কথা লিখেছিল সে। সুঁই সুতোয় সেটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাও চলছিল। সাথে একটি ফুল। হাত রুমালে নকশা করে নিজের মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা আবেগটা জানাতে চেয়েছে সে। সেটি আর হয়ে ওঠেনি। কুড়িগ্রামের ঘন কুয়াশায় ঢাকা রাতের আঁধারে কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে গেলো তার স্বপ্ন। সেই সাথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলিতে গেলো জীবন। ডান বুকে বিঁধে যাওয়া গুলির সাথে বেরিয়ে আসা রক্তের দাগটা স্পষ্ট ছিল। সাদা কাফনে জড়ানো কচি মুখের দিকে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বর উপজেলা দক্ষিণ রামখানার মানুষ। এমন বর্বরতা তারা আগে দেখেনি। তাই অনেকেই ছিলেন বিস্ময়ে বিমূঢ়।

দেশে ফেরার দু’দিন পর ৯ জানুয়ারি ২০১১---স্বামীর ঘরে যাওয়ার কথা ছিল ফেলানীর। নানী হাজেরা জানিয়েছিলেন, ছোটবেলায় দুই বোনের ছেলে মেয়েতে বিয়ের পাকা কথা। তার দুই ছেলে ও চার মেয়ের সংসারে ফেলানীর মা তৃতীয়। বড় মেয়ে আনজুমা বেগমের ছেলে আমজাদের কাছে ফেলানীর বিয়ের কথা ছিল। বাড়িতে সে মতে সব প্রস্তুতি চলছিল। ফেলানী এলেই বিয়ে। যে দিন তার শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা সে দিন তাকে অন্তিম শয়ানে শুইয়ে দেয়া হলো দাদার পাশেই। রামখানায়, গাছের ছায়ায়। সে সময় ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ফোলানীদের ভাঙাচোরা ঘর। চারপাশে বাঁশের বেড়া। তারা থাকত না বলে হয়তো সে ভাবে মেরামত করা হয়নি।

ফেলানীর ব্যবহৃত সালোয়ার কামিজ, জুতো, পারফিউম জড়ো করে রাখা ছিল মাটিতে পাতা বিছানার এক কোনায়। এ সব কিছুর মধ্যে প্রিয়তম হবু স্বামীর জন্য নিজ হাতে তৈরি করা একটি হালকা গোলাপী রঙের সুতি রুমাল। রুমালের মাঝখানে ফুল আঁকা হয়েছে নীল রঙের কলমে। সুঁই সুতোয় তার অর্ধেক তুলেছিল ফেলানী। হৃদয় চিহ্ন আঁকা হয়েছে। তার মধ্যে কোনাকুনি করে দেয়া তীর। উপরের অংশে লেখা ইংরেজিতে ‘লাভ’ ভালোবাসা।

অকপটে ভালোবাসার সেই বার্তা চিরতরে অসম্পন্নই থেকে গেলো ফেলানীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে। ভারতের আসামে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। সেখানে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। ফেলানীর বাবা বলেছিলেন ভারতীয় দালালের সহায়তায় কিতাবের কুঠি অনন্ততপুর সীমান্তের ৯৪৭ নম্বর মূল পিলারের কাছে ৩ ও ৪ এস পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে তারা দেশে ফিরছিলেন। সে জন্য মই দিয়ে ভোরের দিকে তাদের পার করার ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় তিনি পার হতে পারলেও মেয়ের জামা আটকে যায়। ফেলানী ভয়ে চিৎকার করায় টহলরত বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এরপর সে ইন্তেকাল করে।

ফেলানীর মামা মোহাম্মদ হানিফ আলী বলেন, সকাল ৭টার দিকে তাকে বোন জামাই নুরুল ইসলাম জানান, বর্ডারে ভাগনীর লাশ ঝুলছে। বর্ডারের লোকজন তাকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সদস্যদের কাছে না গিয়ে লাইনম্যানদের বলতে বললো। লাইনম্যান হলো বিজিবির সহযোগী সাধারণ মানুষ। তাদের সাথে আলাপ করে তিনি তাদের ইউনিয়নের গত নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলীম এবং মেম্বার রশিদকে নিয়ে বিজিবির সাথে আলাপ করেন। সে দিন সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় বিএসএফ লাশ ফেরত দিলো না। পরের দিন লাশ হস্তান্তর এবং ৯ জানুয়ারি তারা লাশ পান এবং দাফন করেন।

তিনি বলেন, বোন জামাই মেয়ের গায়ে গুলি লেগেছিল কি না বলতে পারেননি। আমি গিয়ে ঝুলানো লাশ দেখলাম। সেখানকার লোকজন আমাকে বলল, ফেলানীকে মেরে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে বিএসএফ। গুলি হতে শুনেছেন পশ্চিম রামখানা মিস্ত্রিটারির বাসিন্দা মো: জমির হোসেন। তার বাড়ি থেকে সীমান্ত ৫০ গজের মতো হবে।

তিনি বলেন, ভোরেই গুলির শব্দ পাই। চিল্লাচিল্লি শুনলাম। বেরিয়ে কিছু দেখিনি। কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সকালে ৯টার দিকেও দেখলাম লাশ ঝুলে আছে। যেখানে ফেলানীর লাশ ঝুলে ছিল তার ঠিক পাশেই বাড়ি আজিরনের। তিনি বলেন, ফজরের একটু আগে গুলির শব্দ শুনলাম। সকালে দেখি লাশ ঝুলছে। ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে দেখলাম বিএসএফ লাশ নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফেলানীর বড় চাচী লাইলী বেগম বলেন, ফেলানীর মতো কেউ যেন এ ভাবে মারা না যায়। ওরা (বিএসএফ) তাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। ফেলানী নেই। এটা ভাবতেই খুব খারাপ লাগে।

তিনি বলেন, ভারত সরকার এটা কী বিচার করলো! আমরা এর সঠিক বিচার ও দোষীদের শাস্তি চাই। তার অভিযোগ ‘অত্যাচার করে’ হত্যা করা হয়েছে ফেলানীকে। একই রকম মনে করেন এলাকার অনেকে। যেমনটা বলেছেন, কাশীপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সেক্রেটারি আবদুল জলিল। তিনি বলেন, তাকে ‘নির্যাতন’ করে হত্যা করা হয়েছে। তবে ‘নির্যাতন’ নয় গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ফেলানীর লাশের ময়নাতদন্তের তিন সদস্যের অন্যতম ডা: অজয় কুমার রায়।


জীবনের দাম কম একটা আমরা জানি। বিশ্বজুড়েই স্বীকৃত এটা। কিন্তু গরিব মানুষের জীবন যেনো পাপ। অসুখ--- ক্যান্সার। কেটে ফেললে--- ছেঁটে ফেললেই মুক্তি। ফালানীর লাশ-রক্ত আর কষ্ট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। একজন মানুষ তার কন্যাকে হারালেন। তারা কষ্ট পেলেন। বহু রথি মহারথী তার কাছে গেলেন-- তিনি তার সন্তান হত্যার বিচার পেলেন না।

নোট: গত বছর লেখাটি সামুতে একবার পোস্ট করেছিলাম। এখনো প্রাসঙ্গকি বলে আবার শেয়ার করলাম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৯

অতৃপ্তচোখ বলেছেন: ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না কি ভাষায় সমবেদনা জানবো!
বড়ই মর্মান্তিক ঘটনা। ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে থাকবে মানবতার নির্মম এ অবক্ষয়!

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২৮

মোরতাজা বলেছেন: হুমমম :(

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভার্চুয়ালে সবই বুঝি ভার্চুয়াল...

কত নিভৃেত চলে গেল - আমরা নতুন নতু চুক্তির নামে দাসখত লিখে ফেলানীর আত্মদানে নুনের ছিটা দিচ্ছি!

জয়তু চেতনা!
একজন বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশী হিসেবে লজ্জ্বায় মাথা নুইয়ে আসে!!!!

ধন্যবাদ স্মরনে আনায়
ফেলানীর বিদেহী আত্মা শান্তি পাক ।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২৯

মোরতাজা বলেছেন: ফালানীর আত্মা শান্তি পাক।।

৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১২

বিমূর্ত নীল বলেছেন: কত নিভৃেত চলে গেল - আমরা নতুন নতু চুক্তির নামে দাসখত লিখে ফেলানীর আত্মদানে নুনের ছিটা দিচ্ছি!

ফেলানীর বিদেহী আত্মা শান্তি পাক ।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭

মোরতাজা বলেছেন: ফেলানীর বিদেহী আত্মা শান্তি পাক ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.