নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেডলি ট্রাভেল লাভিং ওয়ান।

মোরতাজা

আমি সাধারণের একজন। বেড়াতে, বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।

মোরতাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রূপবতী পাহাড়ে, তিন্দুর পথে

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৪৮



তিন্দুর পথে দেখা
উত্তরে বাতাস স্পর্শ করলে তপ্ত গরমের আঁচটা কমে আসে। সাধারণত দখিনা বাতাস- শীতল! কিন্তু পাহাড়ের তপ্ত গরমে- বাতাস, সে যে দিক থেকেই আসুক, সে বাতাস শীতল-মধুর।

সকাল আটটায় যখন মাহিন্দ্রায় নু মঙ দা'র সাথে পথ চলছিলাম, অনেক কথা-আলাপ হচ্ছিল। ক্যাম্পাসের সে সব দিন! সোনালী সময়। আমাদের প্রিয় তীর্থ, আমাদের হৃদ-স্পন্দন- ক্যাম্পাস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরেই জমেছিল পুরোটা সময়।

ক্যাম্পাসে বহু নিপীড়নের গল্প আছে- বহু কষ্টেরও। তবুও সব ছাপিয়ে ক্যাম্পাস যেন - প্রথম প্রেম। প্রথম আবিষ্কারের আনন্দ।

বান্দরবান আমার সেকেন্ড হোম। যদিও সেখানে আমার কোন বসতি নেই। তবে আত্মার বসতিই তো উত্তম বসতি। সেই ২০০০ সাল থেকে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে যাওয়া হতো, যেখানে! সেটা তো সবচে কাছের আবাস, আমার।

মাহিন্দ্রা মিলনছড়িতে থামল। আমরা মিলছড়ি রিসর্টের রেস্টুরেন্টের বারান্দায় এসে বসলাম। উত্তরে বাতাসের ঝাপটা এসে পড়লো, মুখে। বারান্দায় চেয়ার টেনে বসতে বসতে নু মঙ দা ও আমাদের আরেকজন পাহাড়ি সহযাত্রী পাহাড়ের গল্প বলছিলেন। এ সবই আমার বহুবার শোনা, তবুও আবারো শুনছি! খারাপ লাগছে না।


সাঙ্গু নদী, মিলনছড়ি থেকে দেখা


সকালের নাশতা আমি বাদে সবাই খেয়েছেন। নু মঙ দা পান্তা ভাত খেয়ে আমার সফরসঙ্গী হয়েছেন। আরেকজন চাকমা ভদ্রলোক যাচ্ছেন, তার আশ্রমে থাকা পুত্রকে দেখতে; তিনিও একই নাশতা সেরে যাত্রা করেছেন। আনন্দময় যাত্রায় আমাদের চালক জজ চাকমা, যার সিগ্রেটের অসহ্য ধোঁয়া আমাকে ৬ ঘণ্টা সহ্য করতে হয়েছে, সে পরোটা খেয়ে এসেছে।

তাই আপতত, আমি একাই নাশতা খাবো। বাকিরা ধোঁয়া ওঠা কফি। নাশতার অর্ডার একজনের জন্য হবে না- রিসর্টের বেয়ারা এমনটা জানিয়ে নিজের মনে ঘুরছে। জানতে চাইলাম, কয়টা পরোটা হলে তুমি নাশতা দেবে। বলল, কমপক্ষে তিনটা। একেকটা পরোটা নাকি একজনে খায়। বল্লাম, নিয়ে আসো!

'খাদক' হিসাবে আমার সু বা কু খ্যাতি অনেক পুরনো। আমার ছোট ভাই- বড় ভাই এবং বন্ধু-বন্ধু স্থানীয়দের কাছে এটা বহুল আলোচিত বিষয়ও বটে। মিনিট কুড়ি বাদে যে পরোটা আসল, তা দেখে আসলেই ভয় পেলাম। একটা একজন খাইলেও সেটা বাজারের সাধারণ পরোটার তিনটার সমান।
সে যা-ই হোক আমি, প্রমাণ সাইজের এ পরোটা ২ টা খেয়ে তৃতীয়টায় হাত দেয়ার সাহস পেলাম না।

রিসর্টের বারান্দায় পরোটা খেতে খেতে সাঙ্গু দেখছিলাম। পাহাড়ের ভাঁজে, রমণীয় উষ্ণতার সকালে সাঙ্গু-দু'চোখ জুড়িয়ে গেলো। এ খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, এ নদীর জল এবং পাহাড়ের প্রকৃতি- এ সব সৃষ্টিকর্তা তার মনের মত করে সাজিয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। অনন্য, অসাধারণ।







রিসর্টের রেস্টুরেন্টের বারান্দায় আগে বেশ পাখি ছিল। এখন সে রকম নেই। তবে কাছাকাছি পাখিদের ডাক শুনছিলাম। মধুর ডাক। মধুর সকাল।

নাশতা সেরে মাহিন্দ্রা আবার ছুটছে। চারজনের মধ্যে আমি একমাত্র বাঙালি। পাহাড়িদের টুকিটাকি গল্প শুনছিলাম। ফারুক পাড়া পেরিয়ে আমরা যাচ্ছি। গন্তব্য থানছি।

পথ যেতে যেতে পাহাড়ে ব্যবসা, জীবিকা এবং অভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়ে আলাপ হলো। চিম্বুক বেল্টে পাহাড়ের ভাঁজে দাঁড়িয়ে ছবিও তুললাম বেশ কয়েকটা। তারপর আবার যাত্রা।

পথে সেনা বাহিনীর চেকপেস্টে রিপোর্ট করার জন্য নীলাদ্রিতে দাঁড়ালাম। আমি অবশ্য নেমে এক মিনিটের একটা ভিডিও ক্লিপ রেডি করলাম। রবি'র থ্রিজি ছিল, সাথে সাথে আপলোড করে দিলাম।
ভ্রমণ আমার কেবল নেশা নয়, জীবনী শক্তি। তবে এবারে ভ্রমণটা ছিল ভিন্ন কারণে। ইচ্ছা ছিল এমন রমণীয় ভ্রমণে বড় ছেলেকে সাথে নেবার। কিন্তু পুত্র মাতা সাহস সঞ্চয় করতে পারেনি বলে, ছেলেটা এমন স্বর্গ পিতার সাথে ভ্রমণ করতে পারেনি!

বলা যায়, এটা আমার একক ভ্রমণ। সঙ্গী ছিল- নু মঙ দা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। ঢাকা থেকে আর কয়েকজন যাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। তাদের আমি সঙ্গী করতে পারিনি।

নীলগিরি যখন ক্রস করছি, দেখলাম পুরোই হাটবার। ভেতরে বাইরে লোকে লোকারণ্য। তেতে ওঠা রোদে সবাই ঘামছে, আর মাথায় বাবুয়ানা ক্যাপ দিয়ে ঘুরছে। খারাপ লাগেনি, তবুও মানুষ ঘুরছে। এ ঘোরাঘুরি বাতিকটা যেন স্থায়ী হয়, সে জন্য আমরা ছোট্ট একটা গ্রুপ সেই ১৯৯৯ সাল থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছি। যদিও সেটি অনেক বৃহত আকারে নয়, তবুও এর কিছুটা প্রভাব এখানে থাকবে- সেটা নিশ্চিত জেনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।

নীলগিরি পর রাস্তার পুরোটাই নীরব। নু মঙ দা'র সাথে বান্দরবান, পাহাড়ি ছাত্র রাজনীতি, জাতি গোষ্ঠীর রাজনীতি, আঞ্চলিক রাজনীতি, বিম্পি আম্লীগের রাজনীতি নিয়ে আলাপ করতে করতে বলিপাড়া এসে পড়েছি। বিজিবি'র একটা চেক পোস্ট আছে, সেখানে। রিপোর্ট করে আসলেন নু মঙ দা। আমি নামলাম না।


নীলগিরির পথে

আমাকে এখনো অনেকে জিগেশ করেন, ভাই অমুক জায়গায় দেখার কি আছে? আসলে স্পট সম্পর্কে জানতে চান। আমি যদি বলি ভাই আপনি তো সিমলা গেছেন? সেখানে দেখার কি আছে। উত্তর কি হবে? সেটা ভেবে নিন না।

বলিপাড়া পার হলে আম গাছের অনেক সারি দেখা মিলবে, এখানে আমাদের চাষ হচ্ছে বেশ কয়েকবছর ধরে। পাহাড়ে এখন প্রচুর ফল হয়। মানে ফলের চাষ বেড়েছে। যেখান থেকে পাহাড়িরা বেশ ভালো আয় করছেন। জেনে ভালো লাগলো।

এক সময় পাহাড়ে সেগুন কাঠের চাষ বেশ জনপ্রিয় ছিল। এখন সেটি কমছে। এর কারণ জানতে চাইলে, নু মঙ দা বলছিলেন, এটা অনেক পানি চুষে নেয়। এতে করে পানি সঙ্কটে থাকা পাহাড়ে আরো পানির সঙ্কট বাড়ায়। তাই এ দিকটা অনেকে বুঝতে পেরে, চেষ্টা করছেন বিকল্প কিছু করতে।

কথা-গল্পে আমরা থানছি বাজারে পৌছালাম। এক কাপ চা হলে মন্দ হতো। তপ্ত রোদ মাথার উপরে। মুখের উপর লু হাওয়ার ঝাপটা। জজ মিয়া চায়ের সাথে বিস্কুট চুবাইতে চুবাইতে বললেন, ঘাটে চলেন, তাড়াতাড়ি। নইলে নৌকা পাইবেন না। তারই তখনো চা বিস্কুট শেষ হয়নি। তবুও আমরা উঠলাম।

থানাছি বাজার থেকে বিজিবি পোস্ট হয়ে নৌকা ঘাটে পৌঁছালাম। লাইনের নৌকার দেখা নেই। পরে অন্যের একটা রিজার্ভ করা নৌকায় সওয়ার হলাম, আমরা দু'জন। তপ্ত রোদের হল্কায় চামড়া পুড়ে যায় যায় অবস্থা। সাঙ্গুর জল মেখে নিলাম মুখে হাতে। মার্চের শেষ সপ্তাহে শুনেছিলা, সাঙ্গুতে ব্যাপক কারেন্ট। তার কিছুই এখন দেখা মিলল না।

তবুও এ যাত্রা আনন্দের। কারেন্ট থাকলে, এক রকমের আনন্দ। না থাকলে আরেক রকমের আনন্দ। নৌকা ছুটছে। আনেকটা ভিডিও করার খায়েশ হলো। করলাম । এবং তাও রবি'র থ্রিজির কল্যাণে সাথে সাথে আপলোড মারলাম। বিস্মিত হলাম, ঢাকার চেয়ে থানছিতে থ্রিজির স্পিড অনেক বেশি। এর ব্যাখ্যা হয়ত, সেখানে থ্রিজি ইউজার কম!

https://www.facebook.com/touristplus.bangladesh/videos/620257991502591/

সে যাই হোক, কিছুটা পথ পেরোনোর পর বাম পাশে একটা চরের মত চোখে পড়ে। এটা অনেকটা ইউরোপীয় স্টাইলে কেয়ারি করা। দেখে ভালো লাগল। ইউরোপে এ রকম দৃশ্য চোখে পড়ে। যারা ইউরোপে থাকেন, অথবা বেড়াতে যান, তাদের পিকচার দেখে এটা বুঝতে পারলাম!


সাঙ্গুর পাড়ে ইউরোপীয়ান কেয়ারি!


সাঙ্গুর তিন্দু রেমাক্রি অংশের জল স্বচ্ছ। এর ধারা একেবারেই ভিন্ন। নিচে মাছ দৌড়াচ্ছে, সবুজের প্রতিবিম্ব বা মুদ্রণ জলের উপর চোখ রাখলেই দেখা যাবে। আমার দেখা সাঙ্গু নদী আর তিন্দু-রেমাক্রির জলপথের মত এত বৈচিত্রময় রূপবতী আর দ্বিতীয় পথ দেখা হয় নাই।

অবশ্য সাঙ্গুর এ অংশটার সাথে কিছুটা মিল আছে সুন্দরবনের কচিখালী টাইগার পয়েন্টের ভেতরে একটা জল পথের। সেটি আমি ও আমার বন্ধু বাবু একবার পাড়ি দিয়েছিলাম, সম্ভবত ২০০১ সালে। এটা যে কতটা ভংয়ঙ্কর ঘটনা, সেটি অবশ্য পরে বুঝতে পেরেছি। সেখান থেকে আমাদের ফেরার কোন সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু এডভেঞ্চারের নেশা আমাদের এতটা উন্মাদ করেছিল, আমরা ঢুকে গিয়েছিলাম জঙ্গলের ভেতরে। একা একা।

সে যা-ই হোক তিন্দুর পথে পথে পাহাড়, সূর্য আর সমতলের লুকুচুরি দেখা, পাহাড়ি পাথুরে নদী জলে পাহাড়িদের দেখতে দেখতে ঘণ্টা দুই পর আমরা তিন্দু পৌছালাম। শিগরঙ ত্রিপুরার সাথে আগেই আলাপ ছিল। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে ইলেকশন করে বিপদে আছেন বেচারা।

সাঙ্গুর জলের কাছে একটা ছোট দোকানে বসে আড্ডা হলো কিছুক্ষণ। তারপর তিন্দুর পাড়ায় উঠে এলাম। সুনসান নীরবতা। প্রেনথাংয়ের সাথে কথা হলো, প্রেনথাং এখানকার হেডম্যান। পাহাড়িদের মধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খুমি সম্প্রদায়ের লোক। অনেক আড্ডার ফাঁকে খাবারেরও আয়োজন করলেন, থাওবো বউদি। থাওবো প্রেনথাংয়ের স্ত্রী।



দুপুরের পাহাড়ি খাবার আর শান্ত-সৌম্য-রম্য পাহাড়ে রাজনীতির বিষবাষ্পের গল্পও শোনা হলো, ঘন্টা দেড়েকের আড্ডার পর আমরা ফিরছি। প্রেনথং আমাদের সাথে বের হলেন। আস্ত এক গেলাস দো চুয়ানি খাওয়ার পরেও স্বাভাবাবিকই আছেন। বললেন, দাদা মাছ মারবো। আমাকে পথে নামিয়ে দেবেন।

বিকালের দিকে নৌকায় চড়ে বসলাম। ফেরার পথে সময় কম লাগে। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্য। পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য এ ঘটনা দেখে খুবই ভালো লাগবে, যে কারো। সূর্য সবখানেই ডোবে। সে নিঝুম দ্বীপ, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন্স কিম্বা কক্সবাজার। নায়াগ্রা কিম্বা জুরিখে। সবখানেই ডোবে।



তবে একেক জায়গায় সূর্য ডোবার দৃশ্য একেক রকম। সেটি কারো কারো জীবনকে রাঙিয়ে যায়। সূর্য ওঠা এবং ডোবার দৃশ্য আমার বহু জায়গা থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের ভাঁজে , সবুজের ফাঁক গলিয়ে সে সূর্যের আলো পাথুরে নদীতে এসে পড়ার মোহনীয় দৃশ্য আমি প্রথম উপভোগ করলাম। অসাধারণ সেই দৃশ্য।

সন্ধ্যা নামতে নামতে আমরা থানছি চলে এলাম। আরেক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে। তাই হলো। বিজিবি পোস্টের সামনের দোকানে আমরা চা খেলাম।
মাহিন্দ্রায় চড়ে ফিরছি বান্দরবান শহরে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে বলিপাড়া বিজিবি পোস্ট ত্যাগ করার নিয়ম, আমাদের মাথায় ছিল না, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষার বিজিবি'র অনুমোদন মিলল। সে অনুমতি নিয়েই আমরা ফিরলাম।

নির্জন পাহাড়ি পথে একমাত্র যাত্রিবাহী যানবাহন আমাদের মাহিন্দ্রা। দু'জন পাহাড়ি আর একজন বাঙালি নিয়ে ফিরছে। পথে পথে স্থানীয় বহু তরুণ এ পাড়া ও পাড়া যাচ্ছে, আড্ডার দৃশ্যও চোখে পড়লো। দোকান গুলো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে গুটিয়ে যেতে থাকলো।

দূরের গ্রামে নিভু নিভু আলো, সে দৃশ্য, আনন্দ-উত্তজেনা অনুভব করা যায়, বলে বোঝানো মুশকিল। নীলাদ্রি পাহাড়ে আসার পর আবার চেকপোস্টের অনুমতি নিয়ে আমরা ছুটলাম। চেক পোস্ট থেকে জানালো, রাত ৮ টার পরে এ রাস্তায় চলাচল নিষেধ। এর কারণ ব্যাখা করে বললেন, আপনারা যদি কোন বিপদে পড়েন, সেটি মানব সৃষ্ট না হােক, প্রাকৃতিক ; তখনো তো আপনাদের কিছু করার থাকবে না।
কথা ঠিকই। কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে। তাই নিজেদের বিবেচনার উপর আমাদের ছেড়ে দিলেন তারা।

পাড়ায় পাড়ায় কিশোর-তরুণরা নিভৃতে সখাসখির আড্ডার কথা বলছিলেন- জজ চাকমা। বললেন, দাদা এই ছেলেরা তাদের সখীদের কাছে যাচ্ছে। প্রেমিকার কাছে। মন খুলে কথা বলবে। গল্প করবে। আড্ডা দেবে। এটা আমাদের সংস্কৃতিরও অংশ। আমি বললাম, নিভৃত মিলনে , যদি কেউ শারিরীক সম্পর্কে জড়ায়, তাহলে ?

জজ এবং নু দু'জনেই স্মিত হাসলেন, বললেন, তাতে খারাপ কিছু হবে না। এমনকি বাচ্চা পেটে আসলেও। বরং তখন দু'পরিবারে আনন্দ। সন্তান সম্ভাবা তরুণীকে ওই তরুণ বিয়ে করে। তার লয়ালিটি আরো বেশি প্রমাণিত হয়।

মাহিন্দ্রা এগিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন পাড়ার আশপাশে দাওনা হাতেও কয়েক তরুণকে দেখা গেল। প্রথম কেউ দেখলে ভয়ে ভড়কে যাবেন। আক্রমণ করতে পারে, সেটা আশঙ্কা মনে নিশ্চিতভাবে উঁকি দিবে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই পাহাড়ের কাজ সেরে বাসায় ফিরছেন।

আবার 'পাঙকো' ছেলেপুলেও আছে। মোটর বাইক নিয়ে এ দিক ও দিক রাইড দিচ্ছে। দেখে মনে হতে পারে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু এমনটা ঘটে না । বা ঘটেছে বলে শোনা যায় নি। এমনকি মাহিন্দ্রার ভেতরেও কেউ টর্চের আলো ফেলেনি। সমতলেও রাতের বেলা কোন কোন এলাকায় নির্জন রাস্তায় কোন বাহন গেলে দুষ্টু ছেলেরা টর্চের আলো ফেলে। এখানে সে রকম অভিজ্ঞতা নেই।

দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে শহরে এসে নু মঙ দা'র বাসায় রাতের খাবার খেতে খেতে গল্প হচ্ছিল। বৌদি শুনলেন, আমাদের চেকপোস্টের গল্প। অস্পুটে তিনি সেই কথাটিই বললেন, যেটি আমি এর আগে বহুবার শুনেছি-- 'আমরা নিজভূমে পরবাসী'। এ ভাবনাটা আমাদের বদলে দিতে হবে। এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষ নাই। একসাথে আমরা এগিয়ে যাবো। পাহাড়ি-বাঙালি মিলে আমরা বাংলাদেশী। আনন্দ -দুঃখ ভাগাভাগি করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়বো, আমরা।
শুভ পর্যটন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:১৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন। পড়ে অনেক ভাল লাগল। কথাটি সত্য আমরা নিজ দেশে পরবাসী।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২

মোরতাজা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভ পর্যটন।।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:০১

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: পাহাড়ী সৌন্দর্যের চমৎকার ধারা বর্ণনা। ভাল লাগল.........

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯

মোরতাজা বলেছেন: ধন্যবাদ।।

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৫৬

পুলহ বলেছেন: এতো সুন্দর করে লিখেছেন আপনি ! পাহাড় , নদী আর দৃষ্টিসীমানার ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম, যার প্রতি ঘরের চালে চালে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা নেমে আসে- এতো অপূর্ব দক্ষতায় তার ছবি একেছেন !
লেখার অধিকাংশ অংশ পড়ার সময়ই শান্তি শান্তি লাগছিলো। খুব খুব খুব ভালো।
থানছি- রেমাক্রি নদীপথটা আসলেই অনন্য। থানছি-বান্দরবান পাহাড়ি পথটাও....
শেষের প্যারাটা সম্পর্কে বলার কিছু নেই। শুধু আপনার কিছু কথাই ইকো করি - "এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষ নাই। একসাথে আমরা এগিয়ে যাবো। পাহাড়ি-বাঙালি মিলে আমরা বাংলাদেশী। আনন্দ -দুঃখ ভাগাভাগি করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়বো, আমরা..."
শুভকামনা জানুন ভাই।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৫১

মোরতাজা বলেছেন: আপনি ধৈর্য ধরে লেকাটি পড়েছেন, এ জন্য কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.