নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি(অন্তরালের বর্ণফুল)

০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ১০:৩৮

প্রিয় ছোট্ট বাবুঈ , জগতের যত সুন্দর সুন্দর নাম আছে ,সব নাম দিয়ে একে একে ডাকতে ইচ্ছে করছে,এটা ওটা বলে শেষে ঠিক করলাম  তোমাকে বাবুঈ,কি নাম পছন্দ হল তোমার?এখন বল কেমন আছ?নিশ্চয়ই অন্ধকার গর্ভে বেশ ভালো আছ।আমি  জানি তুমি আসছ আর তোমার আসবার কথা শুনে মনে হল তোমায় স্বাগত জানায়, , তুমি যখন অনেক  বড় হবে তখন পড়বে আর হাসবে এই ভেবে "বাবা!কী পাগলামিটা ই না করেন! তোমায় ভাবছি- একটু একটু করে তোমার পরিপূর্ণতা আসছে।আর কদিন পর তুমি থাকবে বাবার কোলে।যদিও তোমার বাবা, ভালো কোলে নিতে জানেনা।যখন তোমার বড়বোন হল তখন তাকে কোলে নিতে গিয়ে জানো, কি কান্ডটাই না ঘটিয়েছিলাম!তোমার আপুকে ফেলে দিয়েছিলাম আমি,এই অধম!সে ঘটনার পর শাস্তি হিসাবে একমাস মেয়েকে কোলে নেয়ার উপর ১৪৪ধারা জারি করেছিল তোমার আম্মু।সে কষ্ট যে কি, বোঝায় কি করে! প্রতিদিন তোমার বোনকে দেখতাম,অথচ কোলে নিতে পারতাম না।তুমিই বল,আমি কি ইচ্ছে করে অমন করেছিলাম,তোমার আম্মু শুধু শুধু কষ্ট দিল না বল।সন্তান পড়ে গেলে যেন ব্যথা স্‌ মায়েরই একা লাগে, বাবাদের যেন লাগেনা! জানো পৃথিবীর সব বাবা খুব ছোট্ট বাবুদের কোলে নিতে ভয় পায়,কেন ভয় -যদি পড়ে যায় !ছেলেরা বেশি ভয় পায় বলেই তো এমনটি হয়।বলো দেখি কেন এত ভয়?থাক বলে কাজ নেই,তুমি আগে আসো, অনেক গল্প আছে বলা বাকি।দিন গোনা শুরু আমার,একটা দিন চলে যাওয়া মানে তোমাকে আরো বেশি কাছে পাওয়া।দেখতে দেখতে আরমাত্র কিছুদিন,তারপর তুমি আসবে আলোর জগতে।যে আলোর জগতে তুমি নিজেও হবে আলোর নক্ষত্র।আর সে নক্ষত্র আছে তোমার ভিতরে,তোমার তুমিতে। শোন ,তোমার আলো জগতে ছড়িয়ে দিতে কার্পণ্য কর না কখনো, পৃথিবী জানুক, মানুষ জানুক তুমি আলোর নক্ষত্র, যে রঙ ছড়িয়ে দিতে জানে! জানো বাবুঈ,আমার কি মনে হয়, মনে হয় প্রতিদিন তুমি মায়ের পেট হতে আমার কন্ঠ ও শুনতে পাও, এ জন্য রোজ তোমার মায়ের কাছাকাছি এসে তার পেটে হাত রেখে বলি বাবুঈ বলে ডাক দেয়।আর তুমিও কি কম,মায়ের পেটে খোচাঁ দাও। আর কয়েকদিন পর তুমি সব দেখবে, দেখবে পৃথিবীর আলো, দেখবে তুমি চোখ মেলে,বিশ্বাসের নব নব প্রত্যয়ে। আমি পথ চেয়ে আছি তোমায় দেখবার। কেমন হবে হবে তুমি?আমার মত নাকি তোমার মায়ের মত!, আমার এই চিঠি আমাদের ভালোবাসার সাগরের এক বিন্দু উপহার।গ্রহণ করো। বাবুসোনা, আমার এই চিঠি হাতে নিয়ে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে কি ভাবছ??? তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ।শুন,বাবার কথা যদি বিশ্বাস না হয় তবে আয়নার সামনে দাঁড়াতে ভুল করোনা। জগতটা খুব সুন্দর তাইনা বলো, অনন্য সৌন্দর্যের মাঝ দিয়ে নিপুণ কারুকার্য, আর স্রষ্টার উত্তম সৃষ্টি। তোমার জন্য আমার কিছু কথা বাবা,পারলে মনে রেখ।এই  জগতে সব কথা যদি মুখেই প্রকাশ করা যেত তবে লেখ্যভাষার কোন প্রয়োজন হতনা!তাই তোমাকে লিখছি বলতে পার সন্তানের প্রতি বাবার উপদেশ নামা।
তোমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের মুহূর্তকে সুধা ভরে পান করে নাও ।শুধু বাচঁতে শেখ মুহুর্তের মানুষ হয়ে।জীবন কি সেটা জানতে খুব বেশি সময় নিও না। জন্মের মাঝে জীবনের পথ শুরু।যে পথ শুরু হয়ে গেছে সেই পথের মালিকানা তোমারি।তুমি ভাব কি কি গাছ লাগাবে পথের ধারে,পথ অমসৃণ তাই বলে থেমে যেওনা,অমসৃণতার হাত ধরে সামনে যেতে থেকো,ঠিকানা পাবেই।তবে হ্যাঁ, জীবন পথের রাস্তা সবার এক নয়।কার কতটুকু সেটা কেউ জানেনা!স্বল্প সময়কে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা জানতে শিখতে হয় ,তুমিই একা ব্যক্তি নও,যার জন্য সময় স্বল্প বরাদ্দ।তাই সব ভুলে হাসো,মনে রেখ স্রষ্টা দেখছে তোমায়,তাই তার জন্য হলেও হেসো।মনে রেখ বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনো অভিযোগ করে না। আমি জানি তুমি অনেক বড় হয়ে উঠেছ,বুঝতে শিখেছ, জানতে শিখছ কিন্তু এটা শেখনি কি করে মন ভাল রাখতে হয়,স্রষ্টা তোমায় যা দিয়েছেন তার শুকরিয়া আদায় কর।অন্তরে হাসি রেখ,ব্যথা রেখ না।মন খারাপ করে সময় নষ্ট না করে এই পৃথিবীকে জানার চেষ্টা কর।মন খারাপ হলে কখনো ঘরে থেকোনা,প্রকৃতির কাছে চলে যাও।সেখানে তুমি নিরবতা পাবে।খেয়াল করে দেখ, কি করে নিরবতার মাঝে ঘাস,ফুল,গাছ জন্ম নিয়েছে।বাবুঈ আকাশ দেখ,কত উচুঁ। খেয়াল কর উচ্চতা আর সীমানা।সে আকাশে চাদঁ, সূর্য, তারা কত কি না আছে! ভাবছ কি এটা ছেলেমানুষি ভাবনা বাবার, না কখনোই তা নয়,খুব ছোট্ট কিছুর মাঝেই আনন্দ,অথচ আনন্দের খোঁজে বিভোর মানুষ ছোট্ট সুখ কি অবহেলা করে যায়। তুমি দেখ, তোমার চোখ ক্লান্ত হয়ে তোমার কাছেই ফিরে আসবে,স্তম্ভবিহীন আকাশে কোন ফুটো নেই। চলার পথের পথকে দেখ,খেয়াল করলেই দেখবে শুধু ফুলের ছড়াছড়ি। অনুভব করতে শিখ ফুলের কোমলতায় নিজেকে। মনে রেখ তুমি অসীম সম্ভাবনা তোমার নিজস্ব সত্তায় লুকিয়ে।তাকে খুজঁতে থাকো যতক্ষণ না তার সাথে দেখা হয় থেমে যেও না।তুমি সব কিছু হতে পারবে,কিন্তু কি হতে চাও সেটা আগে ভাব।সেটা করতে শেখ যেখানে তুমি আনন্দ পাও,যা তোমায় তোমাকে দিয়ে আনন্দ দিয়ে করিয়ে দেয়। যা খুশি তাই করতে পারো,এই পৃথিবীকে বদলে দিতে পারো।প্রতিদিন নতুন কিছু করো,নতুন কিছু শিখ,নতুন কিছু ভেবো। কখনো কোন কিছু নিয়ে যদি মন উদাস হয় তবে আকাশটাকে দেখ।আকাশের বিশালতা কে দেখ।নিজের মাঝে উদারতা ধারণ করতে শিখ দেখবে কখনো মন খারাপ তোমায় ছুঁতে পারবেনা। স্রষ্টা ছাড়া অন্য কারো কাছে মাথা নত করোনা,অন্য কোন কিছুতে এতো টা আসক্ত হয়ে যেওনা, যা তোমায় স্রষ্টার কাছ হতে দূরে সরিয়ে দেয়।নিজের অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করো,অভ্যাস যেন তোমায় নিয়ন্ত্রণ করে না যেন! জীবন চলার পথে কখনো ভুল করে থেমে যেওনা।ভুল হোক শুদ্ধ হোক নিজের অন্তর কি বলে সেটা শোনার চেষ্টা কর। দুঃখ তোমায় খুঁজে বেড়াক,তুমি যেন ধরা দিও না দুঃখের হাতে,আর বেশি ধরা দিতে চাও তবে আনন্দের কাছে ধরা দিও।একটা জিনিস খেয়াল কর যত বড় হবে তত সবাই তোমাকে অন্যের মত হতে বলবে তার মত বড় হও।কেন তুমি, তোমরা বলতে শেখোনা-তুমি তোমারি মত হও।।এটা ঠিক নয় ,অন্যের মত হতে চাওয়া,তুমি তোমার মত হবে বাবুঈ সোনা।ঘুমন্ত মনকে জাগিয়ে তোল,সেখানে দেখ খুব বিনয়ী একজন দাঁড়িয়ে আছে,সেখানে দেখ হাসি হাসি মুখ নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছে,সেখানে দেখ নবপল্লবের রঙে প্রাণের রসে ভরপুর কেউ হাতছানি দিয়ে ডাকছে দ্বিধা করোনা, তুমি তার হাতখানি ধর।সে তো অন্য কেউ নয়,সে তো তোমারি তুমি। আমি তোমার তুমিকেই ধরতে বলছি,আমি অন্য তুমিকে ধরতে বলছিনা তো! অন্যকারোর মত তোমায় হতে হবেনাতো! তুমি শুধু তোমার রঙকে চিনে নাও।তোমাকে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও -ওই ভেতরের শুভ্র মানুষটা তুমি।
জানো তো,আমাদের জীবন খুব সহজ।কিন্তু কি জানো এই সহজ জীবনকে আমরা কঠিন করি, বড় বড় চিন্তা করি,নিজেই নিজের জীবন কে কঠিন করে জীবনের দোষ দেয়া শুরু করি।জীবন সম্পর্কে কখনও অভিযোগ করোনা।মনে রেখ, অভিযোগ করে নিজের প্রতি রুদ্র রূপ বানানোর কোন প্রয়োজন নেই।যদি অভিযোগ জমে তবে তুমি সবুজ ঘাসে নগ্ন পায়ে হেঁটো,আর মনে মনে ভেবো তোমার সাথে যে যায় করুক তুমি প্রতিটি মানুষের সত্তরটি ভুল ক্ষমা করে দিবে,তবে হ্যাঁ, ক্ষ্মমা করার আগে নিজেকে ক্ষমা করতে শিখ,নিজেকে ক্ষমা করতে যে পারে,সে সহজে অন্যকে ক্ষমা করে দিতে পারে।সবাইকে ক্ষ্মমা করে দাও।কি দরকার মনের মাঝে ক্ষোভের বীজ বাচিঁয়ে রাখা।আমি জানি ক্ষমার রং কি,ক্ষমা পেলে ধরণীর রং বদলে যায়,অন্ধকারময় থেকে হয়ে ওঠে সে আলোকময়। মনে রেখ আমরা জানিনা, কার জীবনে কি চলছে, কে কি অবস্থায় তার দিন অতিক্রম করছে, তা কি জান,না জানতে পারি?শোন,তোমাকে বিচার করার অধিকার কারো নেই,আর তোমারও অন্য কাঊকে বিচার করার অধিকার নেই।যদি খুব বেশিই ইচ্ছে করে তবে প্লিজ,তার চলার পথের জুতাটা পরে নিয়ে তবেই বিচার করতে এসো। একবার কি পরবে দয়া করে- তুমি তার জুতাটা? একবার পরেই দেখনা,তারপর পায়ে দিয়ে, রাস্তা দিয়ে জুতাটা পরে উঁচু আর নিচু আর কাদামাটি মাখা রাস্তা ধরে পথ চল না।এই পথ চলায় তোমার কষ্ট হতে পারে,হয়ত শীত নয়ত গ্রীষ্পের উত্তাপ না হয় অবিরাম বর্ষা। তুমি পথ চলার সময় খেয়াল করে দেখ তোমার পায়ে ব্যথা করছে,পথের দূরত্ব কি আর কম,কিন্তু একটু মন দিয়ে দেখেছ রাস্তার পাশে অযত্নে লালিত বিভিন্ন গাছে কত রকম ফুলের বাহার।ওই দেখ দেখ,সোনালি পাখার লাল কালো প্রজাপতি হলুদ ফুল টায় বসল।ফুলটা খুব সুন্দর তাইনা বল,একি! তোমার হাতে রক্ত,ফুল গাছে কাটাঁ থাকে তাও কি জানোনা তুমি। শোন, তুমি কিন্তু সেই পথ ধরে হেটেঁ যাচ্ছ,যে পথে হেটেঁ গেছি সে,হতে পারে একই রাস্তা, একি বাগান, একি সময়ে হাটঁছ তুমি, কিন্তু আমার অনুভবের অস্তিত্বের মাঝে তুমি যাচ্ছ ছুটে আমার চলার পথের বাকেঁ বাকেঁ।পথ চলতে চলতে রাত নেমে এল, জানো তো কেউ কেউ বলে এই পথে বাঘ থাকে,ভয় করছে কি তোমার? ভয় পেয়ে ও না - এটা সেই পথ যে পথে সে হেটেঁছে, হাটাঁর সময় কখনো পড়ে গেছে, কখনো হেরে গেছে-এই পথ চলতে, আজ কিন্তু তুমি সব দেখছ এই পথে চলার সময় কেমন গেছে তার জীবন,কেমন ছিল তার চলার পথ। গল্প বলি তোমায় মাংসবিক্রি হয় এমন কোন এক দোকানে গল্পের সেই মেয়েটি কাজ করত।কাজের দায়িত্ব শেষে সে গোশত রাখা র সেই স্থান(ফ্রিজ)পরিদর্শন করতে গেল আর কোন একভাবে অঘটন ঘটে গেলো।সে সেই হিমঘরে আটকা পড়ে গেল আর তার কোন সাহায্যকারী ছিল না সেখানে।সে আপ্রাণ চেষ্টা করছিল বের হবার জন্য।এভাবে চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে প্রায় মরমর অবস্থা সৃষ্টি হল।তার চিৎকার কেউ শুনতেই পেল না।শুনবেই বা কি করে,অফিস যে ছুটি হয়ে গেছে,আর ঠান্ডা এই ঘরের কোন শব্দ বাহিরে যাবার কোন ব্যবস্থায় নেই। পাঁচ ঘণ্টা পর যখন সে হার মেনে নিল যে বিদায় নিচ্ছে নিজেই নিজের কাছ থেকে,তখন সেই ঠান্ডা ঘরের দরজা খুলে গেল।আশ্চর্যজনকভাবে সেই মেয়েটি বেঁচে এল মৃত্যুর দ্বার হতে। মেয়েটি সুস্থ হবার পর তার উদ্ধারকারী নিরাপত্তাকর্মী কে ডেকে জিজ্ঞেস করল,"তুমি কি করে জানলে আমি হিমঘরে!!!"?তোমার তো এটা ডিউটি নয়,তুমি তো কখনো ভেতরে আসো না! তার ব্যাখা ছিল এমন"আমি এই ফ্যাক্টরিতে গত ৩৫ বছর চাকরি করি।একশ জনের বেশি কর্মীর সাথে প্রতিদিন দুবার দেখা হয়। তাদের অনেকের মধ্যে তুমি হলে সে যে, আমায় শুভেচ্ছা জানায় প্রতিদিন "শুভ সকাল,আর রাত্রে জানায় "শুভ রাত্রি "। অনেকের সাথে দেখা হয় যারা আমাকে দেখেও দেখে না।আজ সকালে তুমি এসেছ সেটা জানি কিন্তু চলে যাবার আগে আজ তো তুমি আমায় বলো নি "শুভ রাত্রি,কাল আবার দেখা হবে" আজ তোমার বিদায় সম্ভাষণ না পেয়ে আমার মনে হল,তোমার কিছু হয়েছে তাই চারিদিক আমি খোঁজা শুরু করলাম। গল্পটা তোমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখ।অনেক উপদেশ দিচ্ছি তাইনা বল, বাবার কথা মনে রেখ আর ভালোবেসো,শুধুই ভালোবেসো সবকিছুকে।জানোতো,এই জগতে সব পাওয়া যায় কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া যায়না।মানুষকে ভালোবেসো আন্তরিকতার সাথে।কিন্তু ভুলেও প্রতিদান পাবার জন্য ভালোবেসো না।ভালোবাসার ভীষণ প্রয়োজন। তুমি যখন আরো অনেক বড় হবে তখন তুমিও বুঝবে ভালোবাসার কি ভীষণ প্রয়োজন। যখন ভাবি এই ধরার অনেক কিছুই অধরা রয়ে গেল,তখন মনে হয় জীবন এত ছোট কেন?জানো,আজকের সকাল ছিল অসাধারণ। পাখির কাছে,ফুলের কাছে,বালুর মাঝে,শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে মিলেমিশে একাকার।যে ফুল দেখেছি ঘাসফুলে,সে ফুলের রেণু উড়িয়েছি আকাশেতে,উড়ন্ত রেণুর সাথে সাথে নিজেকে উড়িয়েছি মুগ্ধনয়নের চোখের তারাতে।ঘাসফুল তুমি অসীম সুন্দর সৃষ্টি।আমি দেখেছি সবুজ শস্যক্ষেতের মাটিতে ঝরে পড়া শস্যদানা হতে জন্ম নেয়া ছোট্ট চারা।ছোট চারা,তবুও বেড়ে উঠার আগেই আবারো নব জীবনের নব আহবান।আচ্ছা,যা দেখ তুমি, তা কি সত্যি তাই,তুমি দেখতে পাও তো?" যখন গান গাইবে তখন অন্তরের দরদ থেকে গান করো,যাবতীয় লজ্জা, সংকোচ সব ঝেড়ে প্রাণ খুলে হেসো,নিজের জন্য হেসো,আন্তরিকতা দিয়ে হাসো।যখন খাবে তখন মন ভরে খেও।মনে মনে ভেব,এই খাবার স্রষ্টা তোমার জন্য বানিয়েছে।সর্বঅবস্থায় তাঁকে স্মরণ রেখ,সে আছে শুধু তোমারি পাশে। শরীরের মাঝের শরীরে বেড়ে উঠছ তুমি ক্রমশ,যতই বেড়ে উঠো না কখনো বড় হতে যেও না, নিজের ভেতরের ছোট্ট তুমিকে সব সময় বাঁচিয়ে রেখ,নিজের নিষ্পাপ কোমলতা ধরে রাখতে শিখ,মনে রেখ তোমার মাঝের কোমলতা,নিষ্পাপতা যেদিন চলে যাবে সেদিন তুমি হারিয়ে গেলে,সেদিন তোমার বয়স বাড়ল।সবসময় শিশুদের চোখে দেখা বিশ্বের মত করে পৃথিবীকে দেখতে শিখ। মনে কর,একজন মানুষ যদি ষাট বছর বাচেঁ তবে সে জীবনের একটা ভাগ শুধু ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়।আমি যতটুকু বেচেঁ ছিলাম, তার দুই ভাগ ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম।কিচ্ছু দেখা হল না,কিচ্ছু জানা হলনা,ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাত পার করে ,আবার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দিন। কেন বুঝিনা,আমি যদি বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত বাচিঁ তবে তো তখনো ঘুমিয়ে দিন আর রাত কেটে যাবে!এমন তো হতে পারে,এখন এতো ঘুমালাম বলে তখন আর ঘুমই আসবে না আমার।আচ্ছা, আমি যে অনেক বছর বাচঁব সে আশা করিনা,আমি বেচেঁ থাকি আমার সময়ে -এই মুহূর্তকালের পলকে পলকে।কিন্তু এর মাঝেও কিন্তু আছে।যে পলকে পলক হারায়,সে পলকের মাঝে ফিরে আসি অন্য জগতে।যে জগতে একজন কর্ম থেকে ছুটি নেয়া মানুষ দেখি।কতবার ভেবেছি,তার জগৎ কেমন হয় যখন সে ছুটি নেয়।কর্মে মানুষ বিরতি নেয় সাময়িক আর চিরতরে।সাময়িক বিরতি হল জীবনের বৃদ্ধকাল।আমি যদি পথ চলতে চলতে ষাট বছরে থেকে সত্তর,সত্তর হতে আশি-উহ,ভাবায় যাইনা।এত বছর বেচেঁ থাকা কি শুধুই বেচেঁ থাকা নয়।আমার নানা ,তোমার বুড়ো ভাই,প্রায় আশি বছর বেচেঁ ছিলেন।খুব শক্ত আর সামর্থ্যবান মানুষটা পথ চলতে চলতে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লেন।যেতে তো হবেই,শুধু যাবার ধরনটাই যা ভিন্ন।নানা অসুস্থ হয়ে পড়ে রইলেন।দেখা করতে গেলে হাতে হাত রাখলে হালকা চাপ দিতেন।কথা যে আর বলতে পারতেননা।আমার নানা কিছু বলতে গেলেই বলতেন"মানে কথা হচ্ছে বাপু"।এরপর মানি লোকের মানে কথার সব মানে থেমেই গেল একদিন।আমার নানী,চেয়ারম্যান সাহেবের বউ একা হয়ে গেলেন সেই বাড়িতে-যে বাড়িতে সারাদিন চব্বিশ -পচিঁশজনের রান্না চলত।সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ।সকালের খাবার খেতে বারোটা আর দুপুরের খাবার খেতে বিকাল পাচঁটা কি ছয়টা।সারাদিনে এত কাজ যেন নিঃশ্বাস নেবার ফুসরত নেই।সেই আমার নানী,এখন অবসরে। বাচ্চাদের মানুষ করে বিয়ে দিয়ে নানা আর তিনি গ্রামেই থাকতেন।নানা চলে গেল,তাকে কি আর একা রাখা যায়!ছেলেদের বাড়ি থাকেন তিনি।ঘুরে বেড়ান।এই ঘুরে বেড়ানো কর্মহীন, বড়ই সুখের।ইচ্ছে মত ঘুমানো যায়,ঘুমের রাজ্যে ঘুমময়।তাই নয় কি? সত্যিই কি তাই? কর্মহীন এই ছুটিহীন জীবন কত সময় শুধু ঘুমিয়ে কাটানো যায়?ঘুমিয়ে ক্লান্তি চলে গেলে পরে যে আর ঘুম আসতেই চাই না।কাজ নেই যে।কি করবে সে ?একটু রান্নাঘর হতেইই না হয় ঘুরে আসি।এমা! একি,শহর বাজার যে,এখানে খোচাঁ দিয়ে আগুন যে ধরাতে হয়।একে বলে গ্যাস।এখানে আগুন এ ভাবেই জ্বলে।আমি যে একটু তরকারি কাটবো কিন্তু কি যে বলি-আমি যে ভালো দেখতেই পায়না,একচোখে একটু ঝাপসা ঝাপসা দেখি,অন্য চোখে তো দেখিনা।নাহ,রান্না আর হবে না আমায় দিয়ে। ঘরের দিকে যায়।কি করি, কি করি।অন্য কিছু করি।কি করব,কাচের গ্লাস টা ভেঙে গেল,কি করব বড্ড হাত কাপঁতে কাপঁতে,কখন কি ভাবে যে পড়ে গেল! অন্য কিছু করি,কিন্তু কি করব।গ্রাম ছেড়ে শহুরে জীবন,সবাই ব্যস্ত তাদের জীবনকে নিয়ে।আমার সাথে যে কেউ দুটো কথা বলবে তেমন কেউ যে নেই।দাদু ভাইয়ের স্কুল,ছেলে-বউমা কারো যে সময় নেই।মাঝে মাঝে ছোট নাতনি এসে গল্প শুনতে চাই।কি যে করি, গল্পও মনে আসেনা।সব যেন কেড়ে নিয়েছে কেউ। একাকী জীবনের চরম একাকীত্ব নিয়ে বেচেঁ থাকার মানুষ এই অবসর প্রাপ্ত বৃদ্ধ মানুষগুলো।দেখতে দেখতে সংসারের ভাঙা কুলোয় পরিণত হয়ে যায় সময়ের নিরব স্রোতে।তোমার সেই বুড়ো আপাকে দেখলে মনে হয় -সব কাজ শেষ করে এখন শুধুই দিন গোনার দিন-কবে আসবে সেই দিন,চলে যাবার দিন।কারণ এই পৃথিবীতে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।এই জীবনের অন্য নাম অপেক্ষা,যদি কেউ আসে দেখা করতে,যদি কেউ একটু বাহিরে নিয়ে যায় আকাশ দেখাতে,যদি কেউ আসে গল্প করতে! তার কথা ভাবতে ভাবতে বুকের গভীর হতে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস বের হয়ে আসে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে না থেকে চোখ মেলতে হবে যে ,যে চোখের তারায় বদলে যাবেবহু মানুষের জীবনের রঙ।সময় খুব যে বেশি নেই,বার্ধক্য যে আসছে ঐ,একটু একটু করে কচ্চপের গতি আর নয় ঘুম,এবার জাগরণের গান বাজুক তবে!যে স্বপ্ন নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠা,সে স্বপ্ন পূরণ না করে নতুন কোন ঘুম,আর নয়। আমি স্বপ্নের মানুষ,স্বপ্ন দেখতে খুব ভালোলাগে,তুমিও স্বপ্নের মানুষ হবে।অনেক বড় বড় স্বপ্নের কারিগর।তবে আর না আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা নয়,এবার স্বপ্ন জেগে উঠো আর কখনো ভবিষ্যতের ব্যাপারে ভেবোনা,এই মুহূর্তের তুমি হয়ে বাচোঁ।জীবন নিয়ে চিন্তা কর কিন্তু ভাবনা নিয়ে হতাশ হয়োনা। মনে রেখ জীবনে ভালো দিন আর খারাপ দিন পাশাপাশি চলে।দিন আর রাতের মত একজন আসে আর একজন চলে যায়।কেউ কাউকে ছুঁতে পারেনা। সমস্যায় ঘাবড়ে কি হবে,যত সমস্যায় থাক না কেন সাহসের অভিনয় কর,মানুষ বুঝবে না কোনটা তোমার সাহস আর কোনটা অভিনয়। হেরে যাবার আগে নিজের কাছে হেরে যেওনা।তোমার মন শুধু তোমার না,তোমার মন শুধু তোমার মন নয়,তোমার মন, তোমার দেহ মিলেই তুমি।তাই তোমার তুমিকে ভালোবাসতে শিখ,সব মিলিয়ে তোমার জীবনকে শিখিয়ে দিও নিরুত্তাপ নিরবতার মাঝে ছন্দপতনের আনন্দের জয়গান।তোমাকে স্বাগত সম্ভাষণ ছোট্ট বাবুঈ পাখি।ভালো থেকো সময় থেকে সময়ে সময়ে।ইতি তোমারি বড় বন্ধু।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.