নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখ

০১ লা জুন, ২০১৭ রাত ১০:০৩

চোখে কম দেখার অনেক সুবিধা।অনেক কিছু দেখতে হয় না।বিরক্তিকর যে দৃশ্যটা, সহজে চোখ থেকে চশমা সরালে আর তা দেখতে হয় না।কিন্তু যাদের চোখ ভালো তাদের তো আর এই সুবিধা নেই।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।

রাস্তার ধারের বাতিগুলো আলো ছড়ান বলের মত দেখায়। কী যে মায়া এক একটা আলোর খেলায়, দেখলে মন ভরে যায়।সুখ আর সুখ।
গাড়ি ছুটে চলেছে, জানালার কাচের বাহিরে তাকিয়ে মুনা মনে মনে ঠিক করে সে কখনো লেজার করাবে না, অথচ ও এখন চোখের ডাক্তারের কাছেই যাচ্ছে তাও আবার আয়াতের সাথে।বছর খানেক হয়েছে আয়াত ও মুনার বিয়ে হয়েছে।

সেদিন ওরা দু'জনে মিলে যখন টিভি দেখছিল তখন হেডলাইনের যে নিউজ দেয়া ছিল, মুনা কিছুতেই সেটা পড়তে পারছিল না,অথচ চশমা তার চোখেই ছিল।পাওয়ারটা বোধ হয় বেড়েছে।

আজ আয়াত মুনাকে বলা যায় জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ডাক্তার দেখাতে।

আয়াত খুব সহজ সরল ছেলে,ছোট্ট একটা কাপড়ের ব্যবসা।বেশ খোঁজ খবর নিয়েছে, যে মস্ত বড় চোখের ডাক্তার,পাশের দোকানের পলাশ বলেছিল এই ডাক্তারের কথা।

চেম্বারের ওয়েটিং রুমে বসে আছে আয়াত ও মুনা।মুনার বিরক্তি লাগছে এত লম্বা সিরিয়াল দেখে।অবশেষে মুনার সিরিয়াল এল।খুব ছোট্ট একটা রুম,একপাশে ডাক্তারের চেয়ার টেবিল, একটা বেড আর কিছু যন্ত্রপাতি।

ডাক্তার মুনার চোখ টেনে টেনে দেখছে।আচ্ছা, চোখ এত টানার কী দরকার?এমনিতেই আমার চোখ টানা টানা, ডাক্তার এত টানছে কেন?

ডা: "আপনার কী চোখ দিয়ে পানি পড়ে?"

মুনা,"না,আমার চোখে শুধু কম দেখি আর কোন সমস্যা নাই।"

ডা: "সমস্যা নাই বললে কী হবে! আপনার চোখে তো দেখি বিশাল সমস্যা।আপনার তো পাওয়ার আগে ছিল অথচ দেখেন হুট করে দেখতে পাচ্ছেন না,আপাতত ওষুধ লিখে দিচ্ছি।পনের দিন পর আসবেন, যদি ওষুধে কাজ না হয় তাহলে ছোট্ট একটা অপারেশন করা লাগবে।
ভয়ের কিছু নেই, আশা করি এমনিতেই ভালো হয়ে যাবেন।"

ডাক্তার কিছু খাওয়ার ওষুধ আর চোখের ড্রপ দিয়েছে মুনাকে।মুনা বসে আছে ছাদে।আকাশ মেঘাচ্ছন্ন।মুনা চোখ থেকে চশমা খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।মনটা ভীষণ খারাপ।ডাক্তারের কাছ থেকে আসার পর থেকে মুনা শুধু ঘুমিয়ে থাকে,কোন কাজ করতে কিছু করতে ভালো লাগে না।তাছাড়া সত্যি যদি অপারেশন করা লাগে।ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের কথা মনে হলে মুনা যেন হিম হয়ে যায়।আর মাত্র দুদিন পর পনের দিন পূর্ণ হবে।ডাক্তারের চেম্বারে আবার যেতে হবে।

মুনা ও আয়াত ডাক্তারের চেম্বারে,ডাক্তার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে মুনাকে যে তার চোখের অপারেশন প্রয়োজন।মুনা কিছুতেই ভাবতে পারছে না তার চোখের অপারেশন করা হবে।

ক্লিনিকের বেডে শুয়ে আছে মুনা।আয়াতের জোরাজুরিতে মুনা অবশেষে রাজি হয়েছিল অপারেশন করাতে।অপারেশন হয়ে গেছে।গত পনেরদিন ধরে মুনা বাস করছে অন্ধকার পৃথিবীতে।মুনার চোখ বাঁধা আছে সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে।

বাহিরে মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।মুনার চোখ খোলা হচ্ছে।আর একটু পর মুনা তার চোখের সামনে আয়াতকে দেখতে পাবে সেই সাথে দেখবে আকাশের অবিরত কান্না মন ভরে।

আজ মুনার আনন্দের দিন কারণ আজকের পর থেকে মুনাকে আর চশমা পরে ঘুরতে হবে না।যদিও মুনা তার মায়োপিয়ার জীবনটাকে বেশ উপভোগ করে।

মুনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত।আয়াত আকাশী রঙয়ের একটা টি শার্ট পরে আছে।আয়াতের হাতে একটা বকুল ফুলের গাঁথা মালা।মুনার বকুল ফুল ভীষণ পছন্দের।মুনার চোখ খোলার পর আয়াত এটা মুনাকে দিবে।

ডাক্তার মুনার চোখ খুলে দিয়েছে।আয়াত সুগভীর আগ্রহভরে মুনার দিকে তাকিয়ে আছে,যেন এই প্রথম মুনা পৃথিবীর আলো দেখতে চলেছে।

ডাক্তার মুনার চোখের সামনে হাতের আঙ্গুল তুলে বলছে,"দেখুন তো কয়টা আঙুল।"

মুনা কিছু বলছে না, সে কাঁদছে তার চোখ গড়িয়ে জল চিবুক বেয়ে নেমে যেন মিশে যাচ্ছে মাটির সাথে।হঠাৎ মুনা,আয়াত বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।আয়াত এগিয়ে গিয়ে মুনাকে জড়িয়ে বলে এই তো।

"আয়াত! আয়াত! কোথায় তুমি! আমি যে কিছু দেখতে পাচ্ছি না।"

আয়াতের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে।
তড়িঘড়ি করে ডাক্তার বের হয়ে গেছে।আয়াত বুঝতে পারছে কোথায় জানি হিসেবে বড্ড বেশি ভুল হয়ে গেছে।

আয়াত মুনাকে অন্য ক্লিনিকে নিয়ে যায়,সেখানে গিয়ে জানতে পারে ভুল চিকিৎসায় মুনা তার চোখ হারিয়েছে।পরবর্তীতে আয়াত এটাও জানতে পারে মুনাকে যে ডাক্তার দেখান হয়েছে সে সত্যিকারের ডাক্তার নয়,ভুয়া সার্টিফিকেটধারী একজন ডাক্তার।গুটিকয়েক ওষুধের নাম মুখস্থ করে অধিক মুনাফার আশায় এই ডাক্তার প্রায় এমন অপারেশন করেন।

আয়াত, পুলিশের কাছে ডাক্তারের নামে কেস করেছে অথচ এই ডাক্তার দিব্যি তার ডাক্তারি কার্যক্রম নির্দ্ধিধায় চালিয়ে যাচ্ছে কারণ এই ডাক্তার আদালতে রিট করেছে।রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থায় নেয়া যাবে না।এই ভাবেই তারা পার পেয়ে যাবে সেটা যেন আয়াত কোন মতেই মেনে নিতে পারে না।
আয়াত মনে মনে কঠিন পণ করেছে,এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সে মুনার সামনে আর যাবে না।

অন্ধকার গলি,গলির মুখে আয়াত দাঁড়িয়ে আছে।এখান থেকে ডাক্তারের চেম্বার বেশি দূরে নয়

আয়াত জানে আজ ওই ক্লিনিকের সামনে আর একটা অপারেশন হতে যাচ্ছে।যে অপারেশনে আজ ডাক্তার নিজেই রোগী।

রাত নেমেছে।বিদ্যুৎ চলে গেছে।পথ ঘাট অন্ধকার বেশ।দূর থেকে ডাক্তারের ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে।গলির মুখে ঢুকতেই বাতাসে তীব্র আহাজারি ভেসে আসে,এই মাত্র একটা মানুষ তার দু'টি চোখ হারিয়েছে।আয়াতের হাত রক্তে ভিজে গেছে,পৃথিবীতে যেন আর কোন মুনাকে এমন ডাক্তারের কাছে এসে চোখ হারাতে না হয়।

আয়াত হাসছে উচ্চস্বরে,বাতাসে সে হাসি আর এক কান্না মিলেমিশে তরঙ্গের সৃষ্টি করে একে অপরের গায়ে স্পর্শ করে ফিরে যাচ্ছে প্রতিটি মুনার কাছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৭ ভোর ৬:০১

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: এমন ঘটনা এখন প্রতিদিন ঘটছে। যে দেশে আইনের প্রয়োগ নেই সেখানে এসব চলতেই থাকবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.