নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

দূরত্বের শেষ প্রহরে

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১২

গতকাল আর আজকের মধ্যে যে ব্যবধান সেইটুকু পার্থক্য আমাদের।তোমাকে চেয়েছিলাম ভুল করে নয়,কোন হিসেব করেও না।আমি সব কিছু দিয়েই তোমাকে চেয়েছিলাম কিন্তু বুঝতে দেরি করে ফেলেছি। তুমিও চেয়েছিলে আমাকেই কিন্তু কোথায় গিয়ে যেন আমাদেরকে বারবার থেমে যেতে হয়।কে যেন ডেকে উঠল।কানের কাছে কে যেন হাতে তালি বাজালো।মনে হল তোমাকে ফিরে পেলাম অনেক অনেক বছর পর।কোন কিছু হারালে মানুষ ফিরে পেলে অনেক খুশি হয়।অথচ তোমাকে ফিরে পেয়ে আমি কি খুশি হলাম!কতটুকু হলাম!বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠল অথচ তুমি চিনলে না।চিনবে কেমন করে!শুধু তাকিয়ে বললে -"শুনুন।"
কিন্তু শুনুন বলে থেমে গেলে নাকি আমাদের জীবনটা থেমে গেল।থেমে গেল আকাশ হতে খসে পড়া তারার মতন।বড় আশ্চর্য মায়ায় তুমি আমায় দেখিয়েছিলে জীবন কী? বয়সের কাঁটাতারে হাত রেখে ফিরে যায় তোমার কাছে।

কলকল শব্দের খেলার মত মনোলোভা সুন্দর ছিলে তুমি।দামাল ছেলেদের মত ভয় করো'নি তুমি বিধানের রক্তচক্ষু;ভয় করো'নি অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনের বাঁকা ভ্রুকুটিও।

তোমাকে লিখছি এত বছর পর;আমার হাত কাঁপছে।এক ফোঁটা চোখের জল দেখো কেমন করে চিবুক বেয়ে খাতার উপর পড়ে কালিটা ছড়িয়ে দিচ্ছে।কলমের কালি যেন চাইছে না আমি অতীত লিখি।কিন্তু আমি তো বলে দিতে চাই অতীত আর বর্তমানের কথা।না লিখলে জানবে কেমন করে একদিন আমিও চেয়েছিলাম তোমাকেই!

তখন বর্ষাকাল।সমস্ত দিন বৃষ্টি হয়েছে।সমস্ত আকাশ মেঘে ঢাকা।সারাদিন ভুল করেও সূর্য একবারের জন্য হলেও উঁকি দেয়নি।রাস্তাঘাট নির্জন।হাঁটু সমান পানি জমেছে।অঘটনটা ঘটেছে এর একটু পরে'ই।কলেজ ড্রেস পরে বাসায় ঢোকার গলিতে ঢুকেই পড়ে গেছি আমি।আশেপাশে দেখি কেউ নেই।উঠতে যাব এমন সময় দেখি কে যেন হাতে তালি দিল।আমি উঠে দাঁড়ালাম।সামনের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।
-"হ্যাঁ গো! খুব লেগেছে নাকি!"বলেই জোরে জোরে হাসি দিয়ে উঠল।
-আমি উত্তর কী দেব;লজ্জা কী পাব তার চেয়ে বেশি যা হল তা হল রাগ।রাগে গজগজ করতে বাসায় ঢুকলাম।মায়ের কাছে শুনলাম সামনের বাড়ির নতুন ভাড়িটিয়া।মনে হল দেখা হলে উচিত শিক্ষা দেব।এরপর ঘটনাটা প্রায় ভুলতে বসেছি।
ওই ঘটনার ঠিক এক মাস পর ছেলেটিকে আবার বারান্দায় দেখলাম।এই একমাসের মধ্যে তাকে একটিবারের জন্যও দেখিনি।আমার মন যে তাকে দেখতে চাইনি এমনটি নয়।শুনেছি ছেলেটি চাকরি করে।
এরপর একদিন সিঁড়িঘরে দেখা।আমি তখন ব্যস্ত। প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিলাম।
"-শুনুন।"
-আমি ফিরেও তাকালাম না।নিজের মতই চলে যাচ্ছিলাম।
"-শুনুন।আপনি সম্ভবত কানে কম শোনেন।নিজের মত হও মেয়ে,নিজের মত হও।"

একজন অপরিচিত মানুষ আমাকে তুমি করে বলল।আবার বলে কিনা কানে কম শুনি।আবার নিজের মত হতে বলে।হ্যাংলা কোথাকার কিন্তু কানের কাছ থেকে কথাটা মোটেও সরাতে পারছি না।তার কথাটা কানে বাজছে"নিজের মত হও।"

সত্যিই কথাটা অনেক দামি।নিজের মত মতই তো হয়েছি।
এরপর আবার ঠিক একমাস পর দেখা।তখন আমার এইচ এস সি পরীক্ষা।কোন দিকে তাকানোর সময় নেই।বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।দেখি সে আসছে।তার তো নাম জানি না।চোখে চোখে কি যেন কথা হয়ে গেল।আমি দেখলাম তার মাথাভর্তি চুল।সে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে আমার দিকে তাকাল।আমি ঘরে চলে এলাম।কী অদ্ভুত শিহরণে আমি শিহরিত আমি।খানিক পরেই জানালার পর্দা ফাঁক করে তাকাতেই দেখি সে হাত নাড়ছে।এরপর আমার মা'য়ের সাথে তার মা'য়ের বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে।আমি কখনো তাদের বাসায় যাইনি।আর যাবো কেমন করে সামনে আমার অ্যাডমিশন পরীক্ষা।নি:শ্বাস নেয়ার সময় পাচ্ছি না।এরই মাঝে একদিন সকালে বসার ঘরে দেখি সে বসে আছে আর একজন তার মা।এই প্রথম তাকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখলাম।তাদের আসা দেখে মনে হল ঠিক বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির।
মায়ের কাছে আগেই নাম শুনেছি। তার নাম নাকি নিখিল।
আর নাম পেল না।এরকম মাথাভর্তি ছেলেদের নাম হবে অরণ্য।তা না নিখিল না ফিকিল।এইসব ভেবে চা নাশতা দেবার আগে কত কি যে ভাবলাম।ভালোয় লাগছিল বিয়ের প্রস্তাবের ঝুড়িতে আরো একটা নাম যোগ হল।আমি তো খুব ভালো করেই জানি আব্বু আম্মু আমাকে বিয়ে দেবে না।

সন্ধ্যায় পড়তে বসলাম অথচ আমি জানি আজ আমার পড়া হবে না।নিখিলকে আমার ভালো লাগে।সকালে নিখিলের আম্মু এসেছিল বিয়ের কার্ড দিতে।এইবার প্রথম আমার অনুমান মিথ্যা হল।আমার খুব কান্না পাচ্ছে।নিখিলের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক নেই অথচ নিখিল যে আমার কিছু একটা হয়ে উঠেছে সেটা ঢের বুঝলাম।

রাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।নিখিলদের বারান্দায় একটা লুঙি আর একটা তোয়ালে ঝুলছে।সাদা রঙয়ের।ঝকঝকে তোয়ালে।বারান্দার একপাশে টবে লাগানো কিছু গাছ। চলে যাচ্ছিলাম যখন তখন দেখি কোথা হতে নিখিল এল।তোয়ালেতে মুখ মুছতে মুছতে
"শুনুন।যাবেন না।"
আমি ভয় পাচ্ছিলাম পাছে কেউ না দেখে এবং শুনে না ফেলে।যেই ছেলের বিয়ে ঠিক সে কিনা কথা বলবে।আর এইভাবে আমার কথা বলাও ঠিক না।মা দেখলে কী না কী ভাববে।তবুও আমি তাকালাম।

নিখিল বলছে এক সেকেন্ড;বলেই ঘরে গেল।হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এলো।হাতে ক্যালেন্ডার সাইজের একটা পৃষ্ঠা।তাতে লেখা ছিল...।তাতে যা লেখা ছিল সেই কথা আমি ভাবতে পারি না।লাল কালিতে লেখা
"তোমাকে চাই।"

আমি ঘরে চলে এলাম।পরদিন বাসা হতে বেরিয়ে দেখি নিখিল দাঁড়িয়ে।ভয়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল।কী বলব, উনি কী বলবেন।আমার মনে হল এক দৌঁড়ে ঘরে চলে যায় অথচ আমার নড়ার শক্তিটুকু যেন নেই।
"আমি জানি আপনার নাম বনশ্রী।আজ হাসব না,কিছু বলব না।শুধু বলব আপনি চাইলে বিয়েটা আপনাকেই করতে পারি।"

আমি উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম।এমন পরিস্থিতিতে কী উত্তর দিতে হয় জানি না।ভয়ে কাঁপছি।নিখিল অসভ্যের মত আমার হাত চেপে ধরল।এত সাহস নিখিল পেল কোথা থেকে।আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম।
"যার সাথে বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাকেই করুন।"

সময় গড়িয়ে যায়।ফাল্গুন মাসের প্রথম সপ্তাহে নিখিলের বিয়ে।আমি জোর করে নিজেকে ডুবিয়ে নিলাম পড়াশুনার মাঝে।যেদিন নিখিলের বিয়ে সেই দিন দেখেছিলাম ওদের সমস্ত বাড়ি অন্ধকার।নিখিল'রা চলে গেছে অন্য কোথাও।কবে গিয়েছে, কোথায় গিয়েছে জানতে পারিনি।নিখিল চলে যাবার পর মনে হয়েছে কী হত বললে যে আমিও তাকে চাই।কী হতো!নিখিল আমার জীবনে স্ফুলিঙ্গের মত এসে পড়াতে হৃদয়ের গভীরে দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছি।আমার ভেতরে জমাটবদ্ধ হয়েছে আবিষ্ট ভাবনা, অভিঘাত আর সংবেদন।আবেগের যে শস্য বুনেছি,সেখানে নিজের বিরুদ্ধে যাওয়া বড় কঠিন।তবুও নিজেই নিজেকে বলি -নিজের মত হও বনশ্রী।এতকিছুর পরেও অসম্ভব কল্পনায় ভেসে যাই আমি।আমার ভেতরের পাথরের দেয়াল নিমিষে হয়ে যায় বরফের দেয়াল।নদীর আছড়ে পড়া ঢেঊ হয়ে যায় জলোচ্ছ্বাস। অনেক বছর চলে যায়।নিখিল তবুও রয়ে যায় শ্যামল গ্রামের ছবির মতন চির ভাস্বর।

এইতো কয়েকদিন আগে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল দেখতে গিয়েছি।এত সুন্দর ছিমছাম সাজানো।ভেতরে ঢোকার আগে ওদের ড্রেস পরতে হয়।মাথায় এক ধরনের নরম টুপি,মুখে মাস্ক আর সাথে হাঁটার জন্য অনটাইম জুতো যা জুতোর উপর পরে নিলেই হয়।একে একে সব ওষুধ বানানো দেখেছি।সিভিটের ওখানে যখন গেলাম তখন ওরা সিভিট খেতে দিল।শুধু ইনজেকশনের সেকশনে যেতে মানা।আমরা রাজশাহী মেডিকেল থেকে এসেছি।ডাক্তারদের ট্যুর বলা যেতে পারে।এরপরের অংশ একটা মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন।
প্রথমে ঢুকতে একটু ভয় করছিল।আমাদেরকে অভয় দেয়া হল কোন সমস্যা নেই।আমি মেঝের দিকে তাকালাম, মোজাইক করা।আমি যেখানটায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আগে অনেক চুন খসে পড়েছিল।সাদা রঙয়ের চুন কেমন হলদে রঙয়ের হয়ে উঠেছে।
আমার ভীষণ অস্বস্তি আর ভয় করছিল;কারণ পাবনা মেডিকেল হাসপাতালে এবারই প্রথম এসেছি।ছেলেটা তালি বাজালো।তার তালির শব্দে চলে গিয়েছিলাম নিখিলের কাছে।অথচ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অন্য এক নিখিল।নিখিলই তো। সেই একই চোখ,সেই একই মানুষ!অথচ এই নিখিল আমায় চেনে না! আচ্ছা পৃথিবীর সব ঘড়িতে এখন ক'টা বাজে?

বিকেলের চিরল রোদ্দুরে;সূর্য এখন পশ্চিমে।
সাথে চলছে পাহাড়িকন্যা;লজ্জাবতী সে যে।
কনে দেখা আলো মেখে চলে যায় দূর দিগন্তে
দেখে আসি শালের বনে;
কেমন করে উঠেছে চাঁদ সে বেঁকে।
প্রশান্ত নি:শ্বাসে বনানীর তুমুল অভিসারে নির্ঝর সংগীতে,
আহা! কতকাল ধরে আহা!
কতকাল তোমারি অপেক্ষায়!
©রুবাইদা গুলশান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.