নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক কাপ চা

২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩২


সেই রাতে ঘুম হল না।
আর সেই ঘুম যখন আসলো তখন বাজে ভোর ৪.৩০টা।
হঠাৎ ছোট ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙল।আমি ধচমচ করে উঠে বসে ঝিমুতে লাগলাম।আমার ট্রেন ছিল ৬.৫০ মিনিটে।ট্রেনে প্রচন্ড ভিড়,সেই ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া রীতিমত যুদ্ধ।অবশেষে নিজের সিট খুঁজে পেলাম।আর সিট নং মিলিয়ে দেখি সেটা জানালার ধারে।মূহুর্তে মন চাপা আনন্দে ভরে উঠল।মনে মনে বললাম বেশ সবুজ দেখা যাবে!
তখনো পাশের সিটে লোক এসে বসেন নি।আমি একটু ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে গেলাম,তাকিয়ে দেখি ইয়া মোটা এক লোক।শার্টের ফাঁক দিয়ে ভূঁড়ি বের হয়ে আসছে।মধ্যবয়সী। গায়ের রং বেশ চাপা।আর অনেক লম্বা।এর আগে যত বার ট্রেনে উঠেছি আমরা এসি চেয়ারে গেছি।
এইবার টিকিট পাইনি তাই শোভন চেয়ার।লোকটা ধপ করে বসে পড়ল।বসেই লোক টা হাত রাখার মাঝের জায়গা খুব বাজে ভাবে তার হাত রাখল।আমি সরে গেলাম জানালার দিক টায়।আমি যত সরছি তার হাত তত সরে আসছে।
আমি তাকালাম।কাজ হল না।
আমার মুখোমুখি সিটের একজন পরিক্ষার্থী আমার বিরক্তি ধরে ফেলে একটা হাসি দিল।আমি পাশের লোকটার দিকে তাকিয়ে তার হাতের দিকে তাকালাম।
কোন গত্যন্তর হল না।সেই আগের মত করে বসে রইল।আর বার বার নড়ছিল। মেজাজ তখন আরো খারাপ হতে থাকল,কিন্তু ধৈর্য্য ধরার চেষ্টা করলাম।এইদিকে সূর্যের তীক্ষ্ণ আলো সমস্তটা উঁকি দিচ্ছে আমার জানালায়।আমি তাকাতেই পারছিনা।এদিকে গরম লাগছে।এদিকে লোকটার এই অদ্ভুত জ্বালাতন।আবারো বললাম কিন্তু সে যেন কানে শুনে না।
সে শুনলোও না।এবার আমি তার দিকে আবার তাকিয়ে বললাম" আপনার হাত'টা সামলে রাখুন আমি অস্বস্তিবোধ করছি"।বিশ্বাস হয় আমার এই কথায় কেমন কাজ হতে পারে?মোটেও না, বিন্দু মাত্র কাজ হল না।ট্রেন থামল,সামনে ক্রসিং।অনেক সময় ধরে থেমে আছে।লোকটি এদিক সেদিক করছে,উঁকি দিল একবার আমার জানালার কাছে এসে।বেশ বেলা হয়ে এল,ব্যাগে শুকনো খাবার ছিল খেয়ে নিলাম।বাহিরে একটা ছেলে ঘুরছে,আর জানালার এদিকটায় এসে বন্ধুকে বলছে
"এই শোন আমাকে কোক খাওয়া!"।
আমার পাশের সেই লোকটি হঠাৎ ছেলেটির কাছে জানতে চাইল দোকান দেখা যায় কিনা?
ছেলেটা বলল জ্বী দেখা যায়!এই ছেলে শোন- আমার জন্য এক বোতল পানি এনে দাও তো!
ছেলেটা বলল দোকান টা বেশ দূরে আপনি নেমে নিজে গিয়ে পানি নিয়ে আসুন।সে কি করল,সে কোন দিক না তাকিয়ে যারা এডমিশন দিতে এসেছে তাদের একজনের একজনের ব্যাগে বোতল বাহিরের দিকে রাখা,কোন কথা ছাড়া বোতল নিল, পানি খেল।

আমি পুরাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম কি করে অনুমতি ছাড়া সে পানি পান করল।এর পর ট্রেন ছাড়ল সে লাফ দিয়ে এমন ভাবে সিটে এসে বসল আমার পায়ে লাগল।
মনে হল একটুর জন্য গায়ে এসে পড়েনি।
আমি রেগে গেলাম।মনে মনে উপায় খুঁজছিলাম কি উপায়ে তার এহেন ও আচরণ হতে মুক্তি পেতে পারি!লোকটিকে বল লাম কী জব করেন? কোথায় বাড়ি?তারপর সে বলছে এই আছি একটা জবে।কিন্তু কি জব সেটা বলছে না।
এরপর শুধু বলছে বাড়ি নড়াইল।
এরপর রাজিয়া নামে একজনকে ফোন দিয়ে বলল" আমি পোড়াদহ ক্রস করছি।আপনার কথা মনে পড়ছে,আপনার বাড়ির উপর দিয়ে" তাই ফোন দিলাম।
এর পর সকালে কেনা পেপার টা ওলট পালট করে পড়ার চেষ্টা করে রেখে দিল।
এর একটু পর দেখলামযারা এডমিশ দিবে তাদের অনেকেই পেপার টা নিচ্ছে।কিন্তু উনি হাসি মুখেই দিচ্ছেন।ট্রেনের একজন কর্মচারী চা খাবো কিনা জানতে চাইল।
আমি রঙ চা খাবো বললাম।পাশের ভদ্রলোক চা খাবেন বলে জানিয়ে দিলেন।বেশ সময় চলে যাবার পর চা এলো। চা পান করলাম।এরপরব্যাগ থেকে টাকা দিতে গিয়ে দেখি ব্যাগে কোন ১০ টাকার নোট নেই।
আছে শুধু ১০০টাকার নোট।
টাকা দেওয়ার সময় ঝামেলা বাধালো পাশের সেই ভদ্রলোক। সে আমাকে কিছুতেই টাকা দিতেই দিল না
আমি অনেক চেষ্টা করেও বাধ্য হয়ে হাল ছাড়লাম।আচ্ছা।এরপর শুরু হল নতুন কাহিনি। দশ টাকার চায়ের বিনিময়ে তার সাথে গল্প করতে হবে মানে সে গল্প শুরু করল,বিবাহের আঠারো বছর পর এই প্রথম সে তার শালীর বাড়ি যাচ্ছে।সে গণপূর্ত বিভাগে কাজ করে।এরপর বলতে শুরু করল....আরো অনেক কথা,যা শুনলে ঘুম এসে যায়।মনে মনে বললাম হায় রে চা
!!!দশ টাকার চায়ের বদলে সে কথা কেনার ট্রাই করল।
আর সংযত করল তার হাত।
আমি মনে মনে ভাবলাম শুধু "এক কাপ চা" বদলে দিতে পারে একটা অসংযত মানুষের মন।হুট করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি একটা মানুষ সম্পর্কে,অথচ বাস্তবিকপক্ষে সে হয়ত একজন ভালো মানুষ,দ্রুত সিদ্ধান্তের কারণে আমরা ভুল ধারণা পোষণ করি।আর যেকোন ভুল ধারণা সবচেয়ে বড় ধরণের মিথ্যা,কারোর সম্পর্কে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিবেন না সে কেমন, তা না হলে বড় কোন ভুল হয়ে যেতে পারে।

ভ্রমণ-২
৬ নভেম্বর ,২০১৬

#রুবাইদা গুলশান

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঘটনা।

আজ সন্ধ্যায় যে চায়ের দোকানে চা খেয়েছি সেই দোকানের নাম 'এক কাপ চা'।

২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪২

নীল মনি বলেছেন: হিহিহি মজা তো

২| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪১

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: গল্প ভালো লিখেছেন ;)



২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪১

নীল মনি বলেছেন: ঘটনা সত্য আর কি :)

৩| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: "সেই রাতে ঘুম হলো না"
শুরুর এই কথাটি পাঠককে টেনে নিয়ে গেল গভীরে।
চমৎকার লেখা।
আমার শুভেচ্ছা নিন।

২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪৩

নীল মনি বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা আমার ওয়ালে বেড়াতে আসার জন্য এবং লেখাটি পড়ার জন্য। শুকরিয়া জানাই।আর আপনার শুভেচ্ছা আন্তরিকতার সাথে গৃহীত হল।:)

৪| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০২

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: প্রথমেই কারো ব্যাপারে খারাপ ধারণা করা হয়ত ঠিক নয় তবে যারা ভাল আমি মনে করি তারা সবসময়ই ভাল। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা-ও নয়।

গল্প খুব ভাল লাগল। আরও লিখুন।

২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪৫

নীল মনি বলেছেন: মানুষকে খারাপ ভাবতে কষ্ট হয় কিন্তু পরিস্থিতি কখনো ভাবতে বাধ্য করায়।
গল্প ভালো লাগল জেনে সেও খুশি :)

৫| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০৫

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: এক কাপ চা দেখে পড়ার ইচ্ছে জাগলো । ভ্রমণ কাহিনী ভালো লেগেছে ।
চা নিয়ে কেউ কিছু লিখলে আমার চোখ সরানো যায়না । এ আমার চা নিয়ে আদিখ্যেতা ।
এক কাপ চা নামে খিলগাঁও আর বেইলি রোডে দোকান ছিল । এখন নাম পাল্টে ফেলছে , চায়ের বাড়ি রাখা হয়েছে ।
ওনাদের চা অসাধারণ ।

২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪৭

নীল মনি বলেছেন: আপা মণি শুকরিয়া বেড়াতে আসার জন্য।আপনার মত আমারও চা নিয়ে আধিখ্যেতা আছে।গোপন কথা হল চা'য়ের দাওয়াত দিলে না করতে পারি না

৬| ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০৯

মাআইপা বলেছেন: গল্পটা পড়ে যে কৌতুহলঃ
১. ভদ্রলোকের হাত রাখার বিষয়টা ভদ্রচিত নয় যেটা আপনার লেখা উঠে এসেছে
২. অন্যের ব্যাগ থেকে বিনানুমতিতে পানি নিয়ে খাওয়াও ভদ্র আচরণ বহন করে না
৩. আপনে শুধু তার খারাপ দিকটাই আমাদের সামনে এনেছেন, ভাল দিকগুলো বললে পড়ে আরো তৃপ্ত হতাম।
শুভ কামনা রইল।

২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪১

নীল মনি বলেছেন: শুকরিয়া।

প্রথমত আপনার সহযাত্রী যদি বিপরীত লিঙ্গের হয় তবে অবশ্যই সচেতনভাবে বসতে হবে।বারবার নিজের হাত অন্যের গায়ের দিকে
রাখাটা অভদ্র ছাড়া অন্য কোন কিছু ভাবার অবকাশ নেই তবে প্রতিবন্ধী হলে ভিন্ন কথা।

দ্বিতীয়ত অবশ্যই ব্যক্তির উপস্থিতিতে পানি চেয়ে নিতে হবে,তার অনুপস্থিতিতে বিষয়টি কাম্য নয়।ট্রেনে কিন্তু পানি সহজে কিনতেও পাওয়া যায়।
আমি আসলে সত্যি ঘটনাটুকুই লিখেছি।আর তার ভালো দিক ছিল সে চা খাওয়ার পর নিজের হাতকে সংযত করেছিল।আসলে উনি আলাপ জমাতে চেয়েছিলেন।

যদিও মানুষের ভালো দিকটা দেখার চেষ্টা করি কিন্তু মানুষ তো কখনো বিপরীত চিন্তা মাথায় ভর করে।

সুন্দর থাকুন।
:)

৭| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৩০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি ভাল লেগেছে।

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২

নীল মনি বলেছেন: শুকরিয়া

৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৪৭

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: ভালো লাগলো... গল্পটি

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩

নীল মনি বলেছেন: দোয়া করবেন :)

৯| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৫:৩৭

ওমেরা বলেছেন: জী ঠিক কোন মানুষ সম্পর্কে হুট করে খারাপ কিছু ভাবা বা বলা ঠিক না।

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩

নীল মনি বলেছেন: কিন্তু এমনটাই অনেক বেশি করে ফেলি তাই না!

১০| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১

প্রত্যয় তাওিহদ বলেছেন: ভাল লাগলো

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩

নীল মনি বলেছেন: শুকরিয়া

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.