নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Nazmul Naz Neel

Nazmul Naz Neel › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুফতি কাজি ইব্রাহীম ও তার অপরাধ

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩১

শিরোনাম দেখেই অনেকেই ভাবা শুরু করছেন মুফতি কাজি ইব্রাহীম, এত বড় একজন ধর্মিয় বক্তা তার আবার কিসের অপরাধ। এই লেখাটা সবার আগে আপনাদেরই পড়ার অনুরোধ করবো। মুফতি সাহেব তার বক্তৃতায় যত রকমের বৈজ্ঞানিক তত্ব দেয়, নাসার বিজ্ঞানীদের যে সকল রেফারেন্স নিয়ে আসে সবগুলোই মূলত ওনার মনগড়া। সেগুলো মিথ্যে কিনা সে দিকে আমি না যাই। (ওনার সব ধরণের রিসার্সের রেফারেন্স মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার, এমনকি মেডিকেল সায়েন্সের রেফারেন্সও)

এন্টারোকোটিক মহাদেশের নিচে আরেকটা পৃথিবী, হিটলারের সেখানে পালিয়ে যাওয়া, টাকনুর নিচে সেক্স হরমোন, ৫ বছরের মধ্যে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বন্ধ হয়ে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠা শুরু করা; তার এমন আরো অনেক তত্ত্ব নিয়ে সবাই হাসি-তামাসা করে। কিন্তু তার এমন দুটো ভয়ংকর তত্ত্ব আছে যেগুলো আমাদের দেশের প্রান্তিক মানুষদের সরাসরি বিভ্রান্ত করতে পারে। অনেকেই তা বিশ্বাস করে ফেলতে পারে। এই বিশ্বাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে নিজেরাই।

এই দুটো মনগড়া তত্ত্বের কারণেই যে ওনাকে অপরাধী বলা যায় সেদুটো নিয়ে বলি।

প্রথমত শিশুদের টিকা নিয়ে উনার একটা তত্ত্ব আছে। যেটাতে উনি বলেছেন, শিশুদের টিকা দেয়ার আসলে কোন দরকার নেই। এটা ইহুদিদের চক্রান্ত। এই টিকার মাধ্যমেই নাকি আফ্রিকাতে এইডস ছড়িয়ে দিয়েছে। শিশুদের জন্য আকিকাই যথেষ্ট। আকিকা দিলেই আর কোন রোগ হবে না।

আরেকটা তত্ত্বে তিনি বলেছেন, কুত্তি একসাথে এতগুলা বাচ্চা দেয় কোন চিকিৎসা ছাড়াই। মহিলাগো ক্যান এত ডাক্তার লাগে? সিজার লাগে? এত চেক আপ লাগে? এগুলোর নাকি আসলে কোন দরকার নাই!

১০-১৫ বছর আগেও পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম ও ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কি পরিমাণ ছিলো সেটা জানার জন্য কোন পরিসংখ্যানের দরকার হয় না। এসব মানুষের চোখে দেখা। আর ইপিআই সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে গত কয়েক বছরে এই ধরণের রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা একদম নেই বললেই চলে (২০১৪ সালে বাংলাদেশ পোলিও মুক্ত দেশের তালিকায় এসেছে)।

আর এমন একটি সময়ে জবাব ইব্রাহীম সাহেব বলে বসলেন, টিকাটুকার আসলে কোন দরকার নাই। আকিকাই যথেষ্ট।

এখন ইব্রাহীম সাহেবের এই কথায় বিশ্বাস এনে একজন বাবা-মাও যদি সন্তানকে টিকা না দেয় আর সেই সন্তান যদি পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম ইত্যাদি ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয় সেই দায়ভার কে নিবে? গ্রামের প্রান্তিক মানুষ হাজার বছরের কুসংস্কারের কারনে এমনিতে কিছুটা পিছিয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের এইসব বোঝাতে প্রচুর বেগ পেতে হয়। অনেক পরিশ্রমের ফলে মানুষ এখন টিকাদান ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখেছে। এই প্রান্তিক মানুষরাই ইব্রাহীম সাহেবদের সবচেয়ে শ্রোতা ও ভক্ত। তারা কেউ যদি ইব্রাহীম সাহেবের কথায় বিভ্রান্ত হয়, টিকা না নেয়, তাদের সন্তানরা পোলিওতে আক্রান্ত হয়, এই দায়ভার সম্পূর্ণ রূপে মুফতি ইব্রাহীমের ঘাড়ে বর্তায় না? এটা অপরাধ না?

গর্ভধারণ প্রক্রিয়া, সন্তান প্রসবের সময় মায়ের মৃত্যু, প্রসবের সময় শিশুর মৃত্যু এক সময় আমাদের দেশে স্বাভাবিক ঘটনা ছিলো। অপরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভবতী থাকা অবস্থায় সঠিক যত্নের অভাবে নানান ধরণের স্বাস্থ্য জটিলতায় প্রচুর মহিলারা এখনো ভোগে। গ্রামে বেশিরভাগ মুরুব্বি এখনো বিশ্বাস করে গর্ভবতী মায়ের আসলে এত চেকআপ টেকআপ এর দরকার নাই। এইসব আসলে হুদাই টাকা খরচ! তবে এই অবস্থায় পরিবর্তন ঘটছে। অনেক চেষ্টার ফলে গ্রামের অনেক মানুষ এখন গর্ভবতী মায়ের যত্নের বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করেছে।

এমন সময়ে যদি কাজী ইব্রাহীম সাহেবের এমন মনগড়া তত্ত্বে কেউ বিশ্বাস করে আবারো আগের ধ্যানধারণায় ফিরে যায়, এর ফলে যদি আবারো কোন মায়ের-শিশুর অকাল মৃত্যু ঘটে, ভয়াবহ স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হয় তার দায়ভার কে নিবে? কোন ধরণের গবেষণা ছাড়া এমন মনগড়া বিপজ্জনক তত্ত্ব দেয়ার জন্য তার দায়ভার কি মুফতি ইব্রাহীমের ঘাড়ে যায় না? উনি কি অপরাধী না?

সবশেষে মুফতি ইব্রাহীম সাহেবের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, গর্ভধারণের সময় কোন কুত্তি মারা যায় না; নাসার বিজ্ঞানীরা এমন কোন গবেষণাপত্র ওনার কাছে দিয়েছে কি না?

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৪

নতুন বলেছেন: এই রকমের মূখ` বক্তাদের থামাতে হবে। সরকারী ভাবে তাদের সাথে আলোচনা করা দরকার।

এদের কথায় অনেকেই প্রভাবিত হয়, তাই এরা ভুল কথা বললে সেটা বোঝাতে হবে।

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশে ওয়াজ বন্ধ করে দিতে হবে আইন করে।

৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৪

জাহিদ হাসান বলেছেন: এই দেশ এইসমস্ত বদমাশদের চারনভূমি।

৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০০

চোরাবালি- বলেছেন: এদেশে সবকিছুতেই চলে বাড়াবাড়ি। ওয়াজের নামে যেমন চলে বাড়াবাড়ি তেমনি চিকিৎসার নামেও চলে আরো অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি।

মুফতি সাবেহ তখনই সুযোগ পায় যখন তাকে সুযোগ দেয়া হয়।

আচ্ছা একজন মায়ের কতবার অলট্রাসনগ্রাফি দরকার গর্ভঅবস্থায়? এ দেশের ডাক্টারেরা কতবার করেন? সিজার কখন প্রয়োজন আর এ দেশের ডাক্টারেরা কিভাবে করেন?

মুফসি সাহেবের কিন্তু ৯টা বাচ্চা কোনরূপ সিজার বা সনোগ্রাফী ছাড়া এমনকি এদেশে লক্ষ ডেলিভারী হচ্ছে সনোগ্রাফী ও সিজার ছাড়া। কুসংষ্কার দুর করে গর্ভবর্তী মায়ের যত্ননিতে হবে সবার আগে যেকথা ইসলাম সর্বদা বলে থাকে।

ডাক্টারের কাছে যাবেন ডাক্টারের সহকারীরা এমন ভয় দেখাবে যে সিজার না করলে শেষ মরে যাবে। প্রতিমাসে সনোগ্রাফি করতে হয় অথচ মেডিকেলে একটিম বলছে- আলট্রা সাউন্ড সিন্টেম ক্ষতির কারণও হতে পারে।

কোন এক রিসার্জ এ পড়েছিলাম টিকা'র ফলে ঝুকি বাড়ছে স্টোক বা হৃদরোগের, এরকম হাজারও রিসার্জ আছে ফেসবুকে ও কিছু নাম সর্বস্ব পত্রিকাতে।

এন্টারকোটিতে কোনরূপ খনিজ সম্পদ আহরণ করা যাবে না যে চুক্তি ছির ১২দেশের মধ্যে বর্তমান চুক্তিবদ্ধ দেশের সংখ্যা ১২, মুফতি সাহেব পড়েছেন সেই ১২র কথা লেটেস্ট পড়েন নাই।

এইডস সংক্রান যে ছড়ানো হয়েছে সে মর্মেও কিছু লেখালেখি পাবে হয়তো পত্রিকা ঘাটলে।

সো মুফতি কেন একা এর দোষের ভাগিদার?

রাস্তার ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে দেশের সর্বচ্চস্থানে সৎ মানুষ কবে দেখেছেন বলতে পারেন?? আমরা কেন মুফতি কে বলার সুযোগ করে দিচ্ছি আগে নিজেরা কেন সৎ হচ্ছি না?

৫| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৭

পদ্মপুকুর বলেছেন: আমি যদিও জিরো লেভেলের টিভি ভিউয়ার, তবুও টিভিতে মুফতি ইব্রাহিমের বক্তব্য শুনেছি মাঝে মধ্যে। যুক্তিগ্রাহ্যভাবে কথা বলেন বলেই মনে হয়েছে। আপনি যেভাবে সরলীকরণ করে দিয়েছেন এমন অকাট মূর্খ মনে হয়নি। অনেক সময় খণ্ডিত বক্তব্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এজন্য আপনার বক্তব্যের সমর্থনে রেফারেন্স (লিংক) দিলে সুবিধে হতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.