নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সম্পাদক, শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক \'মেঘফুল\'। প্রতিষ্ঠাতা স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠন \'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি\'।

নীলসাধু

আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ । আইটি প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করছি। টুকটাক ছাইপাশ কিছু লেখালেখির অভ্যাস আছে। মানুষকে ভালবাসি। বই সঙ্গে থাকলে আমার আর কিছু না হলেও হয়। ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে। ভালবাসি প্রকৃতি; অবারিত সবুজ প্রান্তর। বর্ষায় থৈ থৈ পানিতে দুকুল উপচেপরা নদী আমাকে টানে খুব। ব্যাক্তিগতভাবে বাউল, সাধক, সাধুদের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। তাই নামের শেষে সাধু। এই নামেই আমি লেখালেখি করি। আমার ব্লগে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো। ভালো থাকুন সবসময়। শুভ ব্লগিং। ই-মেইলঃ [email protected]

নীলসাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাস্থ্যসেবা

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৩


নওরিন যখন আমাকে জানালো, দাদা আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবো তখন আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম।
সেখানে আমাদের একটি বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চলছে। প্রতি সপ্তাহে একদিন ডাক্তার সেবা সহ জরুরী ঔষধ প্রদান করা হয়। অতোদূরে ডাক্তারদের কেউ যেতে চায় না, প্রতি সপ্তাহে ডাক্তার নিয়ে সেখানে যাওয়া এবং ফিরে আসা মোটামুটি একটা ঝক্কির কাজ। এর মাঝে নওরিন নিজেই যেতে চাইছে দেখে আমি কিছুটা চিন্তিত হলাম। এর আগে একজন মাত্র মহিলা ডাক্তার গিয়েছিলো, আর কাউকে রাজী করাতে পারিনি আমরা।
ডাক্তার নওরিনের সাথে যাবে আরেক ডাক্তার সরোজ। যাকে আমি চিনি না। একবার কথা হয়েছে মাত্র। যাইহোক পরিকল্পনা অনুযায়ী সকালের পারাবত ট্রেনে কমলাপুর স্টেশন হতে আমরা যাত্রা শুরু করলাম।
আমি, নওরিন, সরোজ এবং তুষার।
আমরা এক সপ্তাহ আগে থেকে চেষ্টা করেও ট্রেনের টিকেট পাইনি। যাবো ভৈরব অথচ বাধ্য হয়ে একটি মাত্র টিকেট কাটতে পেরেছি তাও সেটা কুলাউড়া পর্যন্ত। বেশী ভাড়া দিয়ে তাই নিয়েছিলাম। সেই সিটে জোর করে ডাক্তার নওরিনকে বসিয়ে আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন ভৈরব পৌঁছে গেলো।
দেড় ঘণ্টার জার্নি।


ভৈরব নেমে হোটেলে হাত মুখ ধুয়ে ডিম ভাজি পরোটা দিয়ে নাশতা করে নিলাম সবাই।
ব্যাটারি চালিত অটোতে করে লঞ্চ ঘাট।
কাটায় কাটায় নটায় লঞ্চ ছেড়ে দিলো। মেঘনার পানি কমছে। বাতাসও ছিলো না খুব একটা।
মেঘনায় দেখা মিললো প্রচুর নৌকার। সবগুলোতে প্রচুর মানুষ। সামিয়ানা টানানো। মাইকে গান বাজছে। কেউ ঘুরতে বের হয়েছে কেউবা ওরস উদযাপন শেষে ফিরছে। বালু ভর্তি অনেক ট্রলারতো আছেই। তাদের মাঝে মাঝে দেখা যায় দু একটা জাহাজ ধীর লয়ে যাচ্ছে।

সাড়ে দশটায় আমাদের কার্যক্রম শুরু হলো। টানা দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলেছে। দুজন ডাক্তার নিরবচ্ছিন্ন ভাবে গ্রামের মানুষদের এটেন্ড করেছে। আগ্রহ নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তাদের সমস্যা বুঝতে চেয়েছে। প্রপার মেডিসিন দিয়েছে।
আমরা এর মধ্যে ঘুরেছি।
ফিরেছি।
চা বিস্কিট খেয়েছি। কিন্তু এই দুজন ডাক্তার তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ছিলো নিষ্ঠাবান, একাগ্র। ডাক্তারদের সঙ্গে আমাদের সাধারণ মানুষদের এখানেই একটি পার্থক্য আছে।


দুপুরে নামাজ ও খাবারের বিরতি ছিল।
বড় মামার খুতবা শুনে আমিও নামাজে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। মসজিদে গিয়ে মামার পাঁশেই বসলাম। আমি বাড়ি এলে জুম্মা মিস করি না। এই মসজিদে আমার একেবারের শিশু বেলাটা কেটেছে। আমি কতো খেলেছি এই মসজিদে। দেয়ালের ইট, সবুজ হয়ে যাওয়া পলেস্তারা পর্যন্ত চেনে আমায়। যদিও সেই পুরনো মসজিদ একজন অনেকটা বদলে গেছে। চকচকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
নামাজ শেষে দেশি মাছ শুটকি মাংস দৈ টক ডাল দিয়ে খাবার সারলাম। দুপুরের খাবারের পর দুই ডাক্তার সহ নানুর কাছে গেলাম। আমার নানুর বয়স ১১০+ পুতুলের মতোন নানুর সাথে ডাক্তার সরোজ এবং নওরিনের ব্যাবহার দেখে আমি দুজনকে আবার নতুন করে ভালো বেসে ফেললাম। বৃদ্ধা অতি বয়স্ক একজন মানুষের সাথে তারা দুজন যে মমতাময় আচরণ করলেন তা দেখে আমি আপ্লুত। নানুকে দেখলাম তিনি খুব খুশী। নানুর আনন্দ দেখে আমার কাছেও ভালো লাগলো। তারপর আমরা গেলাম বড় মামার ওখানে। দুজনেই মামা ও মামিকে যত্ন নিয়ে দেখলেন। নানান পরামর্শ দিলেন। ঔষধের কথা বললেন।


এসব সেরে আবার আমরা বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করলাম, রোগীরা অপেক্ষা করছে। টোকেন দেয়া হয়েছে ইত্যাদি খবরে আর দেরি করা গেলো না। দুজনেই টানা ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখলেন।
ধৈর্য নিয়ে রোগীদের সমস্যার কথা শুনলেন।
তাদের নানাভাবে বোঝানো হল। স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য পরামর্শ ও উৎসাহ দেয়া হলো। নিয়ম করে ঔষধ যেন খায় তা মনে করিয়ে দেয়া হলো। খুব আন্তরিকতা নিয়ে দুজন ডাক্তার গ্রামের রোগীদের পাশে রইলেন।
আমি ভালো লাগা টের পেলাম।
মানবিক মন না থাকলে মানুষকে সেবা প্রদান করা তাদের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কিছু করা যায় না।


আমাদের পরিকল্পনা ছিলো বিকালে নৌকা নিয়ে ঘুরাঘুরি হবে। কিন্তু রোগীদের কারণে সে ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। একজনের পর একজন আসছে। রোগী আর শেষ হয় না। নৌকায় আর ঘুরাঘুরি করা হলো না।
কিন্তু শেষ লঞ্চে ফিরতে হবে তাই তাড়াহুড়ো করেই সব কার্যক্রম বন্ধ করা হলো। তুষারকে সংগে দিয়ে আমি ডাক্তার নওরিনকে ও ডাক্তার সরোজকে বিদায় জানালাম।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: "মানবিক মন না থাকলে এবং মানবিকতা প্রখর না হলে মানুষকে না নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসা যায় না মানুষের জন্য কিছু করা যায় " - নীল সাধু ভাই , আপনাকে ধন্যবাদ চমতকার মানবিকতার একটি ব্যাপার আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

সমাজে পাশবিকতা ও স্বার্থপরতা যদিও বেড়ে গেছে তারপরও এরকম কিছু মানবিক মানুষ ও তাদের কাজের জন্যই এখনো পৃথিবী এত সুন্দর এবং মানুষ এখনো হাসে ও বেঁচে থাকার আগ্রহ জাগায়।

আপনার পুতুলের মত নানীর সুস্বাস্থ্য , নীরোগ ও দীর্ঘায়ু কামনা কারছি সাথে সাথে চমতকার দুজন মানব-মানবী ডাঃ সরোজ ও ডাঃ নওরীন এর পেশাগত জীবনের সাফল্য কামনার সাথে সাথে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি মহান করুনাময়ের নিকট। এর ফলে তারা যেন আরও বেশী বেশী সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সেবা করতে পারেন। কারন , সৃষ্টির সেবা করার মাঝে পরোক্ষভাবে স্রষ্টারও সেবা করা হয়।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:০৯

নীলসাধু বলেছেন: আপনার আন্তরিক মন্তব্যে ভালোবাসা জানাই।
আমরা স্বেচ্ছাসেবী, তাই মানবিক কার্যক্রম আমাদের ব্রত।
চেষ্টা করছি আমরা। খুব অল্প পরিসরেই এই প্রচেষ্টা চলছে।

ভালো থাকুন।
শুভকামনা।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:০৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দাদা অনেক দিন পরে আপনাকে ব্লগে দেঝে ভালো লাগলো।
আপন্র ব্লগে আসা মানেই মানব সেবা! আপনার এই মহতী উদ্যোগ
চাকু থাকুক জীবন সে প্রত্যাশা ও আপনার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনায়
রইলাম আমি। ডাঃ নওরীন ও ডাঃ সরজের জন্য শুভেচ্ছা ও দোয়া।
আপনার নানু আরও দীর্ঘজীবী হোন।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:১১

নীলসাধু বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন সুপ্রিয় নূরু ভাই।
আশা করছি আপনারা কুশলে আছেন।
আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

হু অনেকদিন পরেই ব্লগেই এলাম।
আপনারা আছেন আরো অনেকে আছে, ব্লগ থাকবে তার মতোন। এটাই স্বাভাবিক। আমাদের অভ্যাস ব্লগে চোখ রাখা, সামাজিক মাধ্যমে হৈচৈ করা, এই আর কি!

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১১

অবন্তী সন্ধ্যা বলেছেন: আপনার এই মহতী উদ্যোগ তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ মানবিক মানুষ ও তাদের কাজের জন্যই এখনো পৃথিবী এত সুন্দর এবং মানুষ এখনো হেসে খেলে ও বেঁচে থাকতে পারছে


নিত্যনতুন রান্নার ভিডিও দেখতে চাইলে নিচে ক্লিক করুন
Easy Vuna Khichuri In Bengali Style, Bangla Bhuna khichuri recipe, ভুনা খিচুড়ি রেসিপি 2022

https://youtu.be/1NdSsrcRwe

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.