নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সম্পাদক, শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক \'মেঘফুল\'। প্রতিষ্ঠাতা স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠন \'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি\'।

নীলসাধু

আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ । আইটি প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করছি। টুকটাক ছাইপাশ কিছু লেখালেখির অভ্যাস আছে। মানুষকে ভালবাসি। বই সঙ্গে থাকলে আমার আর কিছু না হলেও হয়। ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে। ভালবাসি প্রকৃতি; অবারিত সবুজ প্রান্তর। বর্ষায় থৈ থৈ পানিতে দুকুল উপচেপরা নদী আমাকে টানে খুব। ব্যাক্তিগতভাবে বাউল, সাধক, সাধুদের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। তাই নামের শেষে সাধু। এই নামেই আমি লেখালেখি করি। আমার ব্লগে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো। ভালো থাকুন সবসময়। শুভ ব্লগিং। ই-মেইলঃ [email protected]

নীলসাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

.

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৬



রুবিনা আক্তারকে এক কিলোমিটারের বেশি রাস্তা টেনে নিয়ে গাড়িটা যখন নীলক্ষেত মোড়ে থামল, সাধারণ একজন মানুষ হিসাবে আপনার তখন কি আশা করা উচিত?

তাকে তৎক্ষনাৎ হাসপাতালে পাঠানো এবং গাড়িসহ ড্রাইভারকে আটক করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশে দেওয়া। আমি এটা চাইতাম এবং আমি নিশ্চিত আপনারাও এটা চাইতেন।
কিন্তু আমাদের চাওয়া এবং কাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক।

সাইকেল নিয়ে প্রাইভেট কারের পিছু নিয়ে যখন নীলক্ষেত পৌঁছালাম ততক্ষণে উত্তেজিত জনতা গাড়ি থামিয়ে ভিক্টিমকে গাড়ির নিচ থেকে বের করে ফেলেছে।

ড্রাইভারকে বের করে ধোলাই করছে জনতা।সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে গালি দেচ্ছে আর একটা হলেও কিল ঘুষি লাথি মারার চেষ্টা করছে ড্রাইভার এবং গাড়িতে। এক বান্দা গাড়ির ছাদেও উঠে গেছে। লাথি দিয়ে দিয়ে উইন্ডশিল্ড আর উইন্ডো গ্লাস ভাঙায় ব্যস্ত সে। আর এই মারামারি ভাংচুরের দৃশ্য ভিডিও করতে ব্যস্ত আরেকদল মানুষ।

সবাই এত ব্যস্ত,এত উত্তেজিত যাকে কেন্দ্র করে সেই রুবিনা আক্তার নিথরভাবে পরে আছে রাস্তার অন্য পাশে। শুধু হৃৎপিণ্ডডা ছটফট করছে।

তাকে ঘিরে ছবি তোলা আর ভিডিওতে ব্যস্ত একদল মানুষ,আরেকদল ব্যস্ত পকেটে হাত দিয়ে এক্সিডেন্টের দুঃখে হা হুতাশ করতে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এটা কারও মনে পড়ছে না। সবাই ভুলে গেছে।

সাইকেল নিয়ে ভিড় ঠেলে যতটুকু সম্ভব সামনে গিয়ে এক রিক্সাওয়ালা মামাকে বললাম মামা জলদি রিক্সা আনেন! হাসপাতালে নেওয়া লাগবে। আমার মায়ের সেই ভাই, রিক্সা পিছায়ে উল্টো দিকে চলে গেল। খোদার কসম! মন চাইছিল একটা টান দিয়ে কল্লা ছিড়ে ফেলি!

চিল্লায়ে যতই বলি কেউ একটা রিক্সা ডাকেন, হাসপাতালে নেওয়া লাগবে, কেউ একটা ভ্যান ডাকেন। কেউই কথা কানে নেয় না।সবাই ব্যস্ত ভিডিও করতে। কয়েক মুহুর্ত পরে এক ভাই একটা ভ্যান নিয়ে আসল পিছন থেকে।ভ্যানে তুলে রুবিনা আক্তারকে নেওয়া হল ঢাকা মেডিকেলে। ইমার্জেন্সিতে তার সাথে ছিল মাত্র একজন আপু। যিনি নিজেও র‍্যান্ডম একজন পথচারী।

ইমার্জেন্সি রুম থেকে যখন ইসিজি রুমে নিয়ে যাচ্ছিলাম রুবিনা আক্তারকে, ঐ আপু কান্নায় ভেঙে পরছিলেন বারবার। ইসিজি রুম থেকে রিপোর্ট নিয়ে ইমার্জেন্সি রুমে ব্যাক করার পরে যখন সার্টিফাই করল "শি ইজ নো মোর",ঐ আপু আবারও কান্নায় ভেঙে পরলেন আরেকবার।

ইমার্জেন্সি রুমে আরেকজন ভাই ছিল। কথা বলার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম তিনি সাংবাদিক। আপুর থেকে,আমার থেকে বেশ কিছু তথ্য নিলেন। ভিক্টিমকে যখন ডেড ঘোষণা করা হল তখনও তার ফ্যামিলির কেউ উপস্থিত নেই সেখানে। ওনার দেবর ছিলেন রক্তের খোজে বাইরে। আছি শুধু আমি আর ঐ আপু।আর দুই সাংবাদিক ভাই। রুবিনা আক্তারকে মৃত ঘোষণার পরেই এক সাংবাদিক ভাই আমাকে বললেন, " ভাই চলেন,এখানে আর থাকার দরকার নেই।"
আমি অস্বীকৃতি জানালে সে নিজেই বের হয়ে গেল।তার কাজ শেষ সেখানে।কালেক্ট করার মত কোন ইন্টারেস্টিং আর কিছু নেই।

এইযে মানুষের ব্যবহার; একজন মুমূর্ষু ব্যক্তিকে ফেলে রেখে ছবি তোলা বা ভিডিও করা,এগুলো কিভাবে শুরু হল? বা এর থেকে উত্তরণের উপায় কি? আমার জানা নেই। আছে শুধু একরাশ খারাপ লাগা অনুভুতি।

আগে অনেক শুনেছি অসহায় মানুষকে ফেলে রেখে মানুষ ফটোগ্রাফি-ভিডিগ্রাফি-লাইভ স্ট্রিমিং এ ব্যস্ত হয়ে যায়। আজ নিজে প্রত্যক্ষ করলাম।

পথচারী লোকগুলো কি পারত না রুবিনা আক্তারকে ভিডিও না করে সাথে সাথেই মেডিকেলে নিয়ে যেতে বা ঐ রিক্সাওয়ালা মামা কি পারত না এগিয়ে আসতে?
বা ঐ সাংবাদিক ভাইটির দায়িত্ব কি শুধুই তথ্য কালেক্ট করা? দায়িত্বের উর্ধ্বে মানবিকতা বলে কি কিছু নেই?
তিনি কি পারতেম না রোগীর স্বজন কেউ আসা অব্দি আমাদের সাথে অপেক্ষা করতে?

মানবিক দিক বিবেচনা করার মত মানবিকতাও আমাদের মধ্যে আর নেই। প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে মানবিকতা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে!

.
.
লেখাটি মীর সাফায়ত হাসান এর।
আমি লেখা এবং ছবি নিয়েছি Mita Mehedi র ওয়াল থেকে।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০১

সোনাগাজী বলেছেন:



মুল লেখককে ধন্যবাদ, তিনি আসল বাংগালী।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০০

জুল ভার্ন বলেছেন: মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়!

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪০

নীলসাধু বলেছেন: হু।
আমরা সবাই যার যার একলা জীবন পছন্দ করি শুধু।

৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- খুবই দুঃখজনক হলেও এটাই চরম সত্যি। আমরা যা করা উচিত তা না করে বাহবা নেয়ার জন্য অথবা শুধুই দর্শক হয়ে অকাজ করি।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪১

নীলসাধু বলেছেন: হু। এই প্রবণতাই বেশি। সবাই দেখবে। হাসবে। কথা বলবে কিন্তু কাজের কাজটি করবে না।

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: নীলসাধু,




মীর সাফায়ত হাসানকে ধন্যবাদ, এরকম ঘটে যা্ওয়া বহু ঘটনাগুলি সম্পর্কে বিবেকবান মানুষের অনুচ্চারিত অনেক আক্ষেপের কথা তুলে ধরায়।
মূল্যবোধের এমন চরম অবক্ষয় কেবল এদেশেই দেখে যেতে হবে দিনদিন!

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪২

নীলসাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো ভাই।
আশা করছি কুশলে ছিলেন।

হু চরম অবক্ষয়ের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। আফসোস।

৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪০

শেরজা তপন বলেছেন: আনি হলে কি করতাম জানি না- হয়তো ঝামেলা মুক্ত হতে এভাবে ফেলে পালিয়ে যেতাম।
পুরো বাংলাদেশের মানুষের মানসিক অবস্থা এমনটাই দাড়িয়েছে- মজা নেয়া না হয় পলায়ন!
মীর সাফায়েতকে ধন্যবাদ; সে গড় পড়তা বাঙ্গালীদের মত নয়।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪৩

নীলসাধু বলেছেন: কেমন আছেন আপনি?
আশা করছি কুশলে ছিলেন।


হু, দেশের অনেক মানুষকে এখন আমার অচেনাই লাগে।
আমরা বদলে গেছি। এই বদল দেখা যায় এখন। বোঝা যায়। সবাই যার যার নিজের জীবন নিয়ে আছে। একেবারেই স্বার্থপর একটা সমাজ। খুব হতাশার।

৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মানুষ দিন দিন অমানবিক হচ্ছে। গাড়ি চালক একজন শিক্ষিত সজ্জন হয়ে কঠিন নির্মম কাজ করেছেন। বিচার চাই দ্রুত সময়।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৯

নীলসাধু বলেছেন: তার দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি কামনা করছি। সে একটা পাষণ্ড।

৭| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি দীর্ঘদিন ধরে সামুতে আছেন। কিন্তু আপনার পোষ্ট এবং মন্তব্য একদম নগন্য।

সামু ছাড়া আপনি আর কোথায় কোথায় লেখেন?
আপনার কি বই প্রকাশ হয়েছে?

৮| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:০০

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: রাজীব দা নীল দা একজন পুরাতন ব্লগার কবি সাহিত্যক এবং একরঙা একঘুড়ি প্রকাশক
আরও সামাজিক সেবামুলক কাজ করেন- একুশে বইমেলাতে বইয়ের দোকান থাকে

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৮

নীলসাধু বলেছেন: আলমগীর সরকার ভাই তারে কিছু বলার দর্কার নাই। নীলসাধু কী করে না করে সবই সে জানে। জানে না শুধু সব তার মুখস্ত। এইসব আমাদের জানা। চেনা। এমন বহুত রাজীব নুর আমরা দেখছি। সে পুরান মাল।

৯| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৮

নতুন বলেছেন: আমাদের দেশে মানুষ ঝামেলায় পড়তে চায় না। অনেক সময় বিপদের পরিস্থিতি দেখে এগিয়ে গিয়ে মানুষ সমস্যায় পড়েছে সেটা একটা বড় কারন।

তবে আমরা বাঙ্গালী, মানুষের বিপদে কেউই না কেউ এগিয়ে আসবেই সেটা আমি এখনো বিশ্বাস করি।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৬

নীলসাধু বলেছেন: হু, দেখার মানুষ অনেক হলেও পাশে থাকার এবং উদ্যোগী মানুষ একেবারেই নেই আমিও তা মনে করি না। তবে তারা সংখ্যায় খুব কম এ সত্যি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.