নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবন্ধঃ শিক্ষা বনাম সুশিক্ষা

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

অনন্ত নিগার

আজকাল কোনো বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের দিনে পত্রিকা খুলে আমি আগ্রহ নিয়ে রেজাল্ট কিংবা পাশের হার দেখি না, এমনকি রেজাল্ট বের হয়েছে শুনে পাশের বাড়ির কোনো পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট কি সেটা আমি জানার জন্য কোনো কৌতূহলও বোধ করি না। যদি বাসায় মিষ্টি পাঠানো হয়, তো ধরে নেই পাশ। কিন্তু পাশের রঙ কি সোনালী নাকি রূপালী, সেটা আমি আর জিজ্ঞেস করিনা, ঐ একটা হলেই হল। কারণ, সোনালী, রূপালী, নাকি তামাটে, এসবের মৌলিক তফাৎ ধরার মত মেধা আমার নেই। এই যুগের পরীক্ষা পদ্ধতি কিংবা শিক্ষা পদ্ধতিই এতটা জটিল আর লেজে গোবরে, যে সেটা বুঝার চেয়ে ক্যালকুলাসের গণিত বুঝা অপক্ষাকৃত সহজ মনে হয়। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে দেখি যে ছেলেমেয়েরা কম্পিউটারের দারুন দারুন সব সফটওয়্যারের কাজ অনায়াসে ঘরে বসে শিখে ফেলে কারো সাহায্য ছাড়াই, এরাই আবার তাদের পাঠ্যপুস্তকের অনেক সহজ সহজ অধ্যায়গুলোর মাথামুন্ডু কিছুই বুঝে না; ফলস্বরূপ এরা সারাদিন স্যারের বাসায় আর কোচিং সেন্টারে দৌঁড়ায়। এক্ষেত্রে তাদের প্রবল আগ্রহও আছে, শারীরিক স্ট্যামিনাও আছে। কিন্তু নিজে মাথা খাটিয়ে নিজের অধ্যায় নিজে ধৈর্য্য ধরে পড়ে অনুশীলনীর সমস্যাগুলো শেষ করার মত আগ্রহ কিংবা স্ট্যামিনা, দুটোর কোনোটিই তাদের মধ্যে নেই। বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই এখন পরজীবী হয়ে উঠেছে, কিংবা উল্টোভাবে বললে তাদের পরজীবী বানানো হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষকদের অবহেলা আর অভিভাবকদের দ্বারা। শিক্ষকদের ব্যাপারটা নাহয় কিছুটা শিথিলযোগ্য, কারণ উঁনারা যে বেতন ভাতা পান, সেই অল্প কিছু নোট দিয়ে তাদের জন্য প্রতিযোগিতায় মত্ত বস্তুবিলাসী সমাজে দিনযাপন করাটা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠেছে। আর সেখান থেকে জন্ম হয় ওভার টাইম করার ভাবনা। আর শিক্ষা ব্যবস্থা? সৃজনশীল বলুন আর সৃজনরোধক বলুন, বইয়ের ভেতরে থাকা কিছু প্রচলিত টপিক আর প্রশ্নকেই ঘুরে ফিরে চেহারা পাল্টিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর এর ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদেরকে আগে থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয় অর্থ্যাত প্রচলিত কিছু বিষয় আর প্রশ্নের ভেতরে ঘুরপাক খায় শিক্ষার্থীদের ভাবনা, আর তাই তাদের ভাবনাগুলোও একসময় জান্তে কিংবা অজান্তে প্রচলিত ভাবনায় পরিণত হয়ে সমাজের চলমান নষত স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। সোনালী রেজাল্টের প্রচলিত স্রোতে তাই আমরা খুব কমই দেখতে পাই এমন মৌলিক ও সৃজনশীল রেজাল্ট যা কষ্ঠি পাথর দিয়ে ঘষলে দেখা যাবে সেটা সত্যিই খাঁটি সোনা! তবে সবচাইতে ভয়ংকর এবং ধ্বংসাত্মক অবদান মনে হয় আমার কাছে আমাদের তথাকথিত অতি সচেতন অভিভাবকদের। এদের সাথে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বললে আমি রীতিমত আঁতকে উঠি। এরা শিক্ষা বলতে বুঝে বছর শেষে একটা প্লাস পাওয়া স্কোর; সুশিক্ষা বলতে যে পৃথিবীতে কোনো শব্দ আছে কিংবা এর সংজ্ঞাটা কি, সে বিষয়ে তারা পুরোপুরি অজ্ঞ, অজ্ঞের চেয়েও অজ্ঞ। এদের সন্তান প্লাস না পেলে পাশের বাসার প্রতিবেশীর সন্তান প্লাস পেয়েছে বলে তাদের মাথা নত হয় আর কথার স্টীমরোলার চালানো হয় নিজ সন্তানের উপর। প্লাস পেলে গর্ব করে প্রচার করা যায়, প্লাস পেলে শিক্ষাজীবন শেষে (তাদের ঘুণপোকায় ধরে যাওয়া ধারণা) বিরাট ক্যারিয়ার গড়া যায়, বিরাট ক্যারিয়ার গড়ে সন্তানের টাকা দিয়ে তাদের নির্জীব, অনুভূতিহীণ ভোতা শরীরগুলোকে বস্তুরাশি দিয়ে সাজিয়ে, ইন্দ্রিয়সুখে গা ভাসিয়ে যাওয়া যায়, আর সেইসাথে সন্তানও তাদের প্রতি একদিন চিরকৃতজ্ঞতা অনুভব করবে তাদের দূরদর্শন ক্ষমতা উপলদ্ধি করে। কিন্তু আসলে কি তাই? প্রতি বছরে কয়টা প্লাস মার্কা ছাত্র ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে? কয়টা ডিগ্রীধারী ছাত্র একটি চাকরির ইন্টার্ভিউতে সাধারণ প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে? দেশে কয়টা বিজ্ঞানী আর দার্শনিকের জন্ম হচ্ছে? কয়টা প্লাস মার্কা ছাত্র দেশপ্রেম আর মানবপ্রেমে প্লাস পাচ্ছে?
আমি অনেক প্লাস পাওয়া ছাত্রের সাথে কথা বলেছি, যারা দিনরাত পড়াশুনা করে, কোচিং করে আর কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে গাইড বই আর প্রাইভেট টিউটর রেখে প্লাস পেয়েছে। আমি কথা বলে বারবার হতাশ হয়ে দেখলাম এরা বইয়ের কিছু মুখস্থ তথ্য জানে, স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা যন্ত্রের ব্যবহার এরা খুব ভালো জানে। আর পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়া হয় কিনা বললে বলে সময়ে কুলায় না, তবে ফেসবুকে আর নেট ব্রাউজিংয়েই তারা কিছুটা সময় দেয়, ওটাই এখন তাদের এক্সট্রা কারিকুলাম হয়ে ওঠেছে। আর দরকার পড়লে মাঝে মাঝে পিডিএফ ডাউনলোড করে কাজ চালিয়ে নেয়। আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এরা সময় পাড় করে দেয় প্রেম করে, টিউশনি করে, রাজনৈতিক আলোচনায় টেবিল চাপড়িয়ে বাপ-দাদার সাপোর্ট করা দলের মতাদর্শ নিয়ে বিতর্ক করে, আর পরীক্ষার আগের রাতে অমুক স্যারের তমক স্যারের বিশুদ্ধ অথচ শর্টকাটে ভালো নাম্বার পাবার ম্যাজিক শীট পড়ে। আগের রাতের পড়া বলুন কিংবা সারা বছর মুখস্থ বলুন, শিক্ষাজীবন শেষে এই অচল পয়সাগুলো দেশের সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অদক্ষভাবে দেশ চালায় আর চাকরি না পেলে তখন দার্শনিকের মত গম্ভীর আর দুঃখিত গলায় বলে, 'এই দেশে প্রতিভার কদর নেই!' আর এদিকে আমরা বেকুবরা ঘর থেকে বের হয়ে একটা দেশপ্রেমিক পাইনা, মানবপ্রেমিক পাই না, সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরটরীতে ঢুঁ মেরে পাইনা কোন দক্ষ, সম্ভাবনাময় সচল পয়সা আর আরেকদিকে দেখি ভাল ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাল ভাল পোস্ট খালি পড়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার চেয়েও মেধাবীরা স্বপ্ন দেখে বিসিএস পাশ করে পুলিশ হতে কিংবা সরকারী কোন দপ্তরের চেয়ার দখল করে বসে বসে দেশের সমস্যা নিয়ে ভাবতে। আর মেধাবীদের বিরাট একটা অংশতো ডিগ্রী নিয়ে পাশ করার সাথে সাথেই বিদেশে পাইকারী হারে প্রতিবছর রপ্তানি হয়ে যায়। আর যারা তথাকথিত প্লাস মার্কা মেধাবীরা থেকে যায়, এনারা জীবনে শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ পড়েন নি, তারা জীবনানন্দ পড়েন নি, আহমদ ছফার মত লেখকের নামও শুনেন নি, আর দেশী কিংবা পাশ্চত্য দর্শন পড়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। আর তাই দেশ এমন নৈতিক অবক্ষয় আর মূল্যবোধহীনতার সীমা ছাড়িয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কারণ, আমরা এই বর্তমান যুগে এসেও শিক্ষা আর সুশিক্ষার তফাৎ কিংবা সংজ্ঞাই জানি না। অন্ততঃ তবুও একটু খুশি হতাম যদি শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যবইগুলোই ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মনযোগ সহকারে নিজে নিজে পড়ে শেষ করত। আর এক্সট্রা কারিকুলাম নাহয় বাদই দিলাম। দেখি আমাদের শিক্ষার মান স্রোতের টানে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে, কোন সমুদ্রে গিয়ে মিশে একাকার হয়!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.