নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরল ভাবনাঃ এ কোন তারুণ্য?

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:০৮

অনন্ত নিগার
অবক্ষয়ের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিরলদৃষ্ট লেখক আহমেদ ছফা ‘আমার কথা ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ গ্রন্থে অবক্ষয় নিয়ে যে ছোট্র প্রবন্ধটি লিখেছিলেন, তার মধ্যে কিয়দংশ হলো- ‘…একটি সমাজে যখন কোনোকিছু সহজ, স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক নয়; সবটাই নকল এবং ভঙ্গি-সর্বসবতায় পর্যবসিত হয়েছে, বুড়োরা চ্যাংড়ার মতন আচরণ করে, যুবকেরা প্রৌঢ়তবের ভান করে, শিশু-কিশোরেরা এঁচড়ে পেকে যায়, ধীমান পাঠক ইত্যাকার লক্ষণ বিবেচনা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন যে , ঐ সমাজে ঝাঁকঝাঁক পঙ্গপালের মতো অবক্ষয় নখ-দাঁত মেলে আক্রমণ করতে ছুটে আসছে। …’ এই মহামূল্যবান পরিচ্ছেদটুকু নিয়ে যদি আমরা পাঠকেরা একটুখানি ভাবি তাহলে অতিসহজেই আমরা ধরে নিতে পারি যে আমাদের সমাজ নৈতিক অবক্ষয়ে পর্যবসিত হয়েছে। তবে আমি চ্যাংড়া বুড়োদের নিয়ে আলোচনা প্রসারিত না করে বরং শুধু আজকালকার তরুণ ‘স্মার্ট’ প্রজন্ম নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব (কারণ আমি নিজেও একজন তরুণ, বিধায় চ্যাংড়া বুড়োদের নিয়ে আলোচনা করে আমি নিজে এঁচড়ে পাকা তরুণ হিসেবে সুনাম কুড়াতে চাই না)।
আজকাল ঘর থেকে বের হলে খুব অবাক হই ছেলেমেয়েদের ফ্যাশন দেখে। ফ্যাশন ডিজাইনাররা কাপড়ের মধ্যে সূতা, নকশা, রঙের সমাহার আর কাপড়ের সাইজের এমন সব বাহার আর জটিল মারপ্যাঁচ তৈরী করেন যে, যার ঘরে পরিধানযোগ্য বিশটা কাপড় এক্সট্রা আছে, তা সত্ত্বেও নতুন করে তার আবার কাপড় কেনার চাহিদা তৈরী হয়। আগের দিনে মানুষ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরী করত, আর আজকাল পুঁজিপতিরা পণ্য দিয়ে চাহিদা তৈরী করেন। পাশাপাশি আছে বিচিত্র ঢঙ্গের হেয়ার স্টাইল। আর এইসব স্টাইল মূলত আমাদের দেশের তরুণ-তরুনীদের প্রভাবিত করে পশ্চিমা আর ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো। আজকাল ছেলে মেয়েরা হিন্দি স্টাইলে কথা বলে; ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়- আধা ইংরেজি, আধা হিন্দিতে, পাশাপাশি অশুদ্ধ বাংলায়। মোদ্দা কথা, ভাষা নিয়ে আমরা যেমন এক সংকটে আছি, পাশাপাশি সংশয়ে আছি আমাদের এই তরুণ প্রজন্মের পরিচয় নিয়ে। পোশাক-আশাকে আধুনিক হওয়াটা সমস্যা না, কারণ গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে সবকিছুই সবাই সহজে জানতে পারে, আদান-প্রদান করতে পারে। তবে সমস্যা হলো যখন এই আমদানি-রপ্তানির মধ্যে কোনটা শালীন আর কোনটা অশালীন, কোনটা আমাদের সমাজে খাপ খাবে আর কোনটা বেখাপ্পা ঠেকবে সেটার তফাৎ বুঝতে সক্ষম না হওয়া। কাপড় আর চুলের ব্যাপারটা নিয়ে একরকম কম আলোচনা করাই শ্রেয় কারণ, সব দেশের সব ছেলে-মেয়েরা আজকালকার চলতি ফ্যাশন অনুসরণ করে বিধায় সেটা অত বেশী মাথাব্যাথার কারণ নয়, তবে নিজ দেশের সাংস্কৃতিক পোষাক কি সেটা যেমন জেনে রাখা উচিত, মাঝে মাঝে পড়াও উচিত। তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার হলো যখন পোষাক আশাকের সাথে বিদেশী ভাষা আর অশালীন আচার-ব্যবহার তরুণদের দ্বারা অনুসৃত হতে থাকে। আজকাল পড়াশুনা আর জ্ঞানচর্চার চেয়ে ছেলেমেয়েরা অধিক গুরুত্বারোপ করে বাহ্যিক সাজসজ্জা আর পোষাক পরিচ্ছেদ নিয়ে, কারণ আধুনিকতা বলতে তারা বুঝে শপিং মলে গিয়ে কাপড় কিনা, পার্লারে গিয়ে শরীর সাজানো আর জিমনেশিয়ামে গিয়ে শরীর ফোলানো। কিন্তু প্রশ্ন হলো- পোশাক-পরিচ্ছেদে আধুনিক হলেই কি চেতনায়ও আধুনিক হওয়া যায় কিংবা হওয়া যায় স্মার্ট? স্মার্টফোন হাতে থাকলেই স্মার্ট যেমন হওয়া যায় না যতক্ষণ না এর সঠিক ব্যবহার আর প্রয়োগ আয়ত্তব না করলে, তেমনি আইনস্টাইনের মতো চুল রাখলে তাঁর মতো পদার্থবিদ হওয়া যায় না, ক্রিশ্চানো রোনালদোর মতো চুল ছাঁটলেই তাঁর মতো দক্ষ ফুটবলার হওয়া যায় না। আইনস্টাইনের লম্বা চুলের ডিজাইন ফলো না করে আগে তাঁর আপেক্ষিকতার সুত্র বুঝার চেষ্টা করা যেমন বুদ্ধিমানের কাজ, তেমনি রোনালদোর চুলের চেয়ে ফুটবল মাঠে তাঁর কূটকৌশলগুলো আগে ফলো করা অধিক বুদ্ধিমানের কাজ। যে সমস্ত টিভি তারকা, লেখক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক আর প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব দ্বারা তরুণ প্রজন্ম প্রভাবিত হয়, তারা কিভাবে তারকা হলো কিংবা কিভাবে পৃথিবীতে প্রভাবশালী মানুষ হলো আগে সেটা জানা উচিত, পড়া উচিত, তাঁদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জানা উচিত, তাঁদের গঠনমূলক কাজ অনুসরণ করা উচিত- সেটাই হচ্ছে সত্যিকারের স্মার্টনেসের পরিচয় দান, শুধুমাত্র তাঁদের পোশাক-আশাকে নিজেকে আচ্ছাদিত করার নাম স্মার্টনেস নয়। কথায় কথায় হিন্দি বলাটা গর্বের কাজ নয় বরং হীনমন্যতার কাজ, কারণ আমরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি, হিন্দিভাষীরা দেয়নি, এমনকি পৃথিবীর আর কোনো জাতিই দেয়নি। অশুদ্ধ বাংলার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয়ভাবে ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে কথা বলা, কিংবা ইংরেজিতে ইচ্ছাকৃতভাবে টেনে টেনে কথা বলা কিংবা এমনভাবে বাংলায় টেনে টেনে কথা বলা যেনো বাংলায় কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে এই ধরণের গর্দভ ঘরানা বক্তারা ভাবে এরকম কথা বলাটা স্মার্টনেসের কাজ, মানুষ তাদেরকে উচ্চবিত্ত পরিবারের আহ্লাদি সন্তান ভাববে। স্মার্ট হতে হলে আগে নিজের পড়াশুনায় স্মার্ট হতে হয়, আধুনিক হতে গেলে প্রথমে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান জানতে হয়।
পোশাক-আশাক যেমনই থাকুক, তবে আমাদের মনটা যেনো আধুনিক থাকে, চেতনা যেনো পরিষ্কার থাকে, শুদ্ধ থাকে এটাই হচ্ছে আধুনিকতার মূল চাবিকাঠি। অন্যথায়, আমরা আধুনিক নয়, বরং জ্ঞানীদের নিকট আমরা হাস্যকর আদিম প্রজন্ম বলেই বিবেচিত হব।
আমরা পড়াশুনা করব, জ্ঞানী-বিজ্ঞানীদের, লেখকদের লেখা পড়ব, সাহিত্য চর্চা করব, নিজের দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি আগে ভালো করে জানব, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার জানব- তখন সমস্ত বিশ্ববাসী আমাদের আধুনিক বলবে, স্মার্ট বলবে।
আর পোশাক-আশাক? আমাদের পোশাক-আশাক আমরাই ঠিক করে নেব আমাদের নিজস্ব রুচি অনুযায়ী। আমরা জ্ঞানী হলে কিংবা খ্যাতিমান হলে আমরা যা পরব, তাই হবে আধুনিক ফ্যাশন।
সব প্রজন্মের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রাখা উচিত। একজন প্রবীণের মুখের উপর যুক্তিহীন কথা দুম করে বলে বসলেই যুক্তিবাদী হওয়া যায়না। কারণ প্রবীণরা অনেক কিছু দেখেছে, অভিজ্ঞতা দিয়ে শিখেছে আর সবসময় মনে রাখা উচিত পুঁথিগত জ্ঞান আর বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। বরং সত্যিকার জ্ঞানী তারাই যারা একই সাথে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে দুটোর মধ্যে সুন্দর সম্মিলন ঘটায়। বলার কিংবা প্রকাশ করারও কিছু নিয়মনীতি বা শালীনতা আছে। কথা বলার আগে আমাদের বুঝে শুনে যেমন বলা উচিত, তেমনি অন্যের কথাও মন দিয়ে শোনা উচিত। কারো ভূল ধরা, পরনিন্দা চর্চা করা খুবই সহজ কাজ, বরং প্রতিটি মানুষের গুণ নিয়ে আলোচনা করাই আজকাল অনেক কঠিন আর মেধার কাজ। তাই দৃষ্টিভঙ্গি পালটে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের নিজেদের কাজ নিজেরা করে যেতে পারি, আমরা যদি পরমত সহিষ্ণুতা বজায় রাখতে পারি, আমরা যদি পন্ডিত পন্ডিত ভাব না ধরে সঠিক সময়ে সঠিক কথাটা মার্জিত ভাষায় প্রকাশ করতে পারি, আমরা যদি আধা হিন্দি, আধা বাংলা বর্জন করে বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে শিখি কিংবা ইংরেজি বলার সময় বিশুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলতে অভ্যস্থ হতে পারি, আর পাশাপাশি যদি আজীবন পাঠাভ্যাস বজায় রাখতে পারি এবং বিশ্ব নামক বিরাট পাঠশালা থেকে নিয়ত পাঠ নিতে থাকি, তাহলে এই পৃথিবীতে আমাদের চেয়ে আর আধুনিক কোনো প্রজন্ম থাকতে পারে কি?
মানুষ চাইলে সব পারে। এই দেশের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী এবং বুদ্ধিমান। শুধু একটখানি দিক নির্দেশনা পেলেই আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মরা সারা বিশ্বে অনায়াসে ওড়াতে পারে বিজয়ের কেতন!
আমরা সব পারব, কারণ আমরা বিশ্বাস করি আমরা পারব!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৪১

মার্কো পোলো বলেছেন:
চমৎকার। সঠিক ও সময়োপযোগী পোস্ট। বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৫৩

অনন্ত নিগার বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মার্কো পোলো ধৈর্য্য ধরে আমার লেখাটি পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.