নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাবিশ্বের টুকিটাকি

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪২

আমাদের মাথার উপর সুবিশাল, অনন্ত আকাশ। সেই আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ, উল্কা, ধূমকেতু ইত্যাদি নানা বস্তুসমূহ, যা নিয়ে গঠিত আমাদের এই পুরো মহাবিশ্ব। কিন্তু অপার এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা সাধারণ মানুষরা কতটুকু সাধারণ জ্ঞান রাখি, যা অন্তত আজকের এই আধুনিক বিশ্বে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জ্ঞান হিসেবে সবার জানার দাবি রাখে। কোনো শিশু যখন তার মাকে রাতের আকাশের তারা দেখিয়ে বলে, ”মা ওটা কি?” মা তখন শুধু উত্তর দেন, “তারা”। কিন্তু পরের প্রশ্নটা যখন অবোধ, অনুসন্ধিৎসু শিশু করে বসে, “তারা কি?”, সে প্রশ্নের জবাবে তখন মা কিংবা বাবা দুজনেই নীরব থাকেন, অথবা ধমক লাগিয়ে বলবেন, “এতো কথা কি? তারা মানে তারা!”। ব্যস! শিশুদের জানার যে আগ্রহ কিংবা তাদের মধ্যকার সুপ্ত সম্ভাবনা থাকে, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেকসময় এভাবেই তাদের মেধার বিকাশ একেবারে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায় আমাদেরই কূপমন্ডকতার কারণে। আমাদের আশেপাশেই এমন অনেক বয়োবৃদ্ধ বা পুরুষ, নারী রয়েছেন অহরহ যারা আজো জানে না যে, পৃথিবীটা গোলাকার, থালার মত চ্যাপ্টা নয়। আবার অনেক হাইস্কুল শিক্ষার্থীও আছে যারা এখনও জানে না যে, মানুষ নামক প্রজাতিটি গোলাকার পৃথিবীর বাইরের পৃষ্ঠদেশে থাকে, ভেতরে নয়। এমনকি এদের অনেকে এটাও জানে না যে, গ্রহ কি কিংবা নক্ষত্র কি। আর তাদের দোষ দিয়েই বা লাভ কি? আমি একবার বেসরকারি একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডিগ্রীধারী এক বেচারার সাথে আলাপকালে জানতে পারলাম যে, গ্রহ আর উপগ্রহের নাকি তফাৎ হচ্ছে- গ্রহ হল ঘূর্ণায়মান বড় বস্তু আর উপগ্রহ হচ্ছে গ্রহ থেকে অপেক্ষাকৃত ছোটবস্তু! ব্যাস, এই ‘আকারের’ পার্থক্যটাই হচ্ছে উনার কাছে গ্রহ নক্ষত্রের তফাৎ। এই হচ্ছে মহাকাশ কিংবা মহাবিশ্ব নিয়ে আমাদের জ্ঞানভাণ্ডারের অবস্থা। চলুন তাহলে আর দেরি না করে মহাবিশ্ব নিয়ে আমরা আজ কিছু টুকিটাকি জিনিস শিখে রাখি।
মহাবিশ্বঃ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে অনন্ত স্থান। সেই স্থানে রয়েছে দৃশ্য ও অদৃশ্য নানাধরনের বস্তু ও শক্তিসমূহ। পৃথিবীসহ সমস্ত গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, দৃশ্য ও অদৃশ্য সকল জ্যোতির্বস্তু ও স্থান এবং স্থানে বিদ্যমান শক্তি, অর্থ্যাৎ এককথায় মহাশূন্যের সমস্ত পদার্থ, স্থান এবং শক্তিকে একত্রে বলা হয় মহাবিশ্ব। মহাবিশ্ব যে কি পরিমাণ বিশাল ও চমকপ্রদ তা বর্ণনা করতে গেলে তো এই সীমিত লেখায় সংকুলান হবেই না, বরং সত্যি বলতে গেলে আজো প্রসারমাণ এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে নিত্যনতুন তথ্য আবিষ্কারের মধ্যদিয়ে মহাবিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডার ক্রমশঃ প্রসারিত হচ্ছে। তবে কিছু সাধারণ তথ্য আমি তুলে ধরছি মহাবিশ্ব সম্পর্কে। বিগ-ব্যাং (মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তথ্য) তত্ত্ব অনুযায়ী, আজ থেকে প্রায় ১৩৭৫ কোটি বছর আগে আমাদের এই মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল। জন্মের পর থেকেই পুরো মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বের সমস্ত দৃশ্যমান বস্তুসমূহ অণু ও পরমাণু দ্বারা গঠিত। প্রতিটি পরমাণু ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন নামক কণিকা দ্বারা গঠিত। ফুলানো বেলুনের মতো ক্রমশ ফুলতে থাকা বা বাড়তে থাকা পুরো মহাবিশ্বকে যদি পৃথিবীর মতো একটি গোলক কল্পনা করা হয়, তাহলে সেই মহাগোলকের ব্যাস হবে প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোক বছর। অর্থাৎ গোলাকার মহাবিশ্বের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে সময় লাগবে ৯৩ বিলিয়ন আলোক বছর। এখন কথা হল আলোক বছর কি? আলোক বছর মানে হল- আলো এক বছরে যতদূর যায়। আলো এক সেকেন্ডে অতিক্রম করে ১,৮৬০০০ মাইল বা ৩০০০০০০০০ মিটার! তাহলে এক বছরকে সেকেন্ডে রূপান্তরিত করে সেই বিশাল সংখ্যাকে ৩০ কোটি মিটার দিয়ে গুণ করলে পাবেন আলো এক বছরে কতদূর যায়। এবার সেই সংখ্যাকে গুণ দিতে হবে ৯৩ বিলিয়ন বছর দিয়ে। ১ বিলিয়ন= ১০০ কোটি। তারমানে ৯৩ বিলিয়ন বছর মানে হল ৯৩০০ কোটি বছর। অর্থ্যাৎ ৯৩০০ কোটি বছরকে সেকেন্ডে রূপান্তরিত করে সেই কল্পনাতীত সংখ্যাকে ৩০ কোটি মিটার দিয়ে গুণ দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেবার মত যে বিশাল সংখ্যা পাওয়া যাবে সেটাই হবে এখন পর্যন্ত জানা মহাবিশ্বের ব্যাস! এবার একটু ভাবুন তো দেখি, কতটা বড় এই মহাবিশ্ব!! তারমানে মহাবিশ্ব এতটাই বড় যে, তার প্রান্তদেশে থাকা মহাদূরবর্তী কোন একটি তারার মৃত্যু হবার আগে শেষবারের মত যে আলোটুকু সে নিক্ষেপ করেছিল, তা আপনাকে আমাকে দেখতে হলে বেঁচে থাকতে হবে শত কোটি বছর! যেখানে মানুষ নামক পুরো প্রজাতিটিরই যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র দেড় থেকে দুই লক্ষ বছর আগে অর্থ্যাৎ পুরো মানবজাতির আয়ু একজন মানুষকে দিয়ে দিলেও সে তার এই হাস্যকর আয়ুষ্কাল দিয়ে দূর নক্ষত্রের শেষ হাতছানিটুকুও দেখতে পাবে না!
সমস্ত মহাবিশ্ব অসংখ্য গ্যালাক্সি নিয়ে গঠিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের এই মহাবিশ্বটি দৃশ্যমান ছোট বড় প্রায় ১০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি নিয়ে গঠিত। তাহলে এবারে আমরা দেখি গ্যালাক্সি কি?
গ্যালাক্সিঃ গ্যালাক্সি, যাকে বাংলায় বলা হয় ছায়াপথ, সেই ছায়াপথ হচ্ছে মহাকাশের কোনো এলাকায় অবস্থিত একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা যেখানে নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস, এবং অনেক অদৃশ্য বস্তুসমূহ একটি সুশৃঙ্খল নিয়মে আবদ্ধ থাকে। মূলতঃ গ্যালাক্সির সমস্ত বস্তুসমূহ নিয়ে এই ব্যবস্থা বজায় থাকে মহাকর্ষীয় শক্তির দ্বারা। গ্যালাক্সি তৈরির সংক্ষিপ্ত বিবরণ হল- মহাকাশের কোথাও কাছাকাছি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বস্তুসমূহ যখন মহাকর্ষীয় আকর্ষণে সবাই পরস্পরের কাছাকাছি এসে জড়ো হতে থাকে এবং একসময় বস্তুসমূহ নিজ নিজ কক্ষপথ তৈরি করে ঘূর্ণায়মান সেই পথে নিয়ম মেনে চলতে শুরু করে, তখন ওই এলাকার সমস্ত বস্তু নিয়ে গঠিত সিস্টেমটিকে বলা হবে গ্যালাক্সি। অধিকাংশ গ্যালাক্সির ব্যাস কয়েকশ আলোকবর্ষ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার একটি গ্যালাক্সি থেকে আরেকটি গ্যালাক্সির দূরত্ব মিলিয়ন মিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমরা যে গ্যালাক্সিতে থাকি তার নাম মিল্কিওয়ে। এর ব্যাস প্রায় একলক্ষ আলোকবর্ষ। আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্যালাক্সির নাম এনড্রোমিডা। আমরা মিল্কিওয়ে নামক যে গ্যালাক্সিতে থাকি তার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য তারকা নিয়ে গঠিত অসংখ্য সৌরব্যবস্থা। আমাদের পৃথিবী এমনই একটি সৌরব্যবস্থায় অবস্থিত যার নাম সৌরজগত। আমাদের সৌরজগতটাই প্রাণধারণের সবচেয়ে উপযোগী বিধায় পৃথিবী নামক গ্রহটিতে প্রাণের সৃষ্টি হতে পেরেছিল। আমাদের সৌরজগতের ব্যাস হল প্রায় ১০ ঘণ্টা আলোকবর্ষ।
নীহিরিকাঃ নীহিরিকাকে ইংরেজিতে বলা হয় নেবুলা। সাধারণত নীহিরিকা বলতে আমরা যা বুঝি তা হল- আমাদের গ্যালাক্সির বাইরে দৃশ্যমান দূরবর্তী কুয়াশার মত একধরণের আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ। এই মেঘ বিভিন্ন ধরণের ধূলিকণা, হাইড্রোজেন গ্যাস এবং প্লাজমা দিয়ে গঠিত। তবে আগে নীহিরিকা বলতে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে অবস্থিত অন্য যেকোনো গ্যালাক্সি কিংবা গ্যালাক্সিতে মেঘের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সবধরনের জ্যোতির্বস্তুসমূহকে বুঝানো হতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এনড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে আগে বলা হত এনড্রোমিডা নীহিরিকা।
নক্ষত্রঃ গ্রহ, উপগ্রহ কি তা জানার আগে প্রথমে জানতে হবে নক্ষত্র বা তারা কি। নক্ষত্রের বর্ণনা না দিলে এমনকি কোনো গ্যালাক্সির একটি সৌরজগত সম্পর্কেও ভালো করে বলা যাবে না। এককথায় বলতে গেলে নক্ষত্র হচ্ছে, এমন একটি উত্তপ্ত গ্যাস পিন্ড যা আলো বিকিরণ করে কিংবা নিজস্ব আলো রয়েছে, যেমন- সূর্য। সূর্য হচ্ছে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র, যা পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস। কিভাবে সৃষ্টি হয় এই নক্ষত্র? নক্ষত্রসমূহ মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস নিয়ে গঠিত। মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা কাছাকাছি গ্যাসসমূহ (হাইড্রোজেন, হিলিয়াম) মহাকর্ষ বলের টানে এরা একসময় ঘনীভূত হতে থাকে। এক সময় সেই গ্যাস কণাগুলো ঘনীভূত হতে হতে প্রচণ্ড অভিকর্ষের চাপে সংকুচিত হয়ে একটি অতি উত্তপ্ত ঘন কেন্দ্রের সৃষ্টি করে। সেই উত্তপ্ত কেন্দ্র হতেই একসময় নিউক্লিয় ফিউশন নামক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন প্রচুর পরিমাণ শক্তি ও আলো নির্গত হয়। তখন ওই উজ্জ্বল গ্যাসপিন্ডকেই আমরা নক্ষত্র বা তারা বলি। সূর্য নামক তারা নিয়ে আমাদের সৌরব্যবস্থা গঠিত। সূর্য হতে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে প্রায় ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড।
নক্ষত্রের জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে একসময় সেটি বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে জীবনের ইতি টানে। তবে বিস্ফোরণের পরে অবশিষ্ট থাকা কেন্দ্রভাগ মাঝে মাঝে আবার ছোট নক্ষত্রে পরিণত হয় এবং ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য টুকরো গ্রহ, উপগ্রহে পরিণত হয়। আমাদের সূর্য নামক নক্ষত্রটিও এরকম অন্য একটি নক্ষত্রের বিস্ফোরণের পর সৃষ্টি হয়েছিল এবং আমাদের পৃথিবীটাও নক্ষত্রেরই ছিটকে পড়া একটা অংশ থেকে তৈরি হয়েছিল।
গ্রহঃ নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান গোলাকার বস্তুপিন্ডকে বলা হয় গ্রহ। গ্রহ হবার শর্তগুলো হল এরকম যে, নিজ অভিকর্ষ বলে ঘুরতে ঘরতে গোলাকার রূপ ধারণকারী এমন বস্তুপিণ্ড যা নিজে আলো উৎপন্ন করতে পারে না, নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরে, নিজের একটি বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার কক্ষপথ রয়েছে যেখানে অন্য কোনো গ্রহ এসে প্রবেশ করে তার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে না। যেমন- পৃথিবী একটি গ্রহ যা সূর্য নামক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান।
উপগ্রহঃ যে বস্তু গ্রহকে কেন্দ্র করে নিজস্ব কক্ষপথে ঘুরে তাকেই বলে উপগ্রহ। যেমন- চাঁদ। চাঁদ একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ। কিন্তু মানুষ নিজেও কৃত্রিমভাবে যান্ত্রিক উপগ্রহ তৈরি করে পৃথিবীর বাইরে নিয়ে পৃথিবীর চারিদিকে ঘূর্ণায়মান করে রাখতে পারে, সেজন্য এখন কৃত্রিম উপগ্রহ বলেও আরেক ধরণের উপগ্রহকে জানতে হয়। মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট এই উপগ্রহগুলো মানুষেরই বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন- গবেষণার কাজে কিংবা স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখার কাজে।
গ্রহাণুঃ গ্রহাণু বলতে বুঝায় সূর্য বা কোনো নক্ষত্রের আশেপাশে ভাসমান পাথরখন্ড যেগুলো গ্রহও নয়, উপগ্রহও নয়। মূলতঃ নক্ষত্রের বিস্ফোরণের পর যে সমস্ত টুকরো গ্রহ কিংবা উপগ্রহ হতে পারেনি এবং এদের নির্দিষ্ট কক্ষপথ নেই, এরাই শেষপর্যন্ত গ্রহাণুতে পরিণত হয়। মূলতঃ বড় কোনো গ্রহের আকর্ষণের কারণে এরা নিজেরা মিলে কোনো গ্রহ বা উপগ্রহ হতে পারেনি। একরকম পাথরখন্ড বা লৌহখন্ড হিসেবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আকাশে ঘুরে বেড়ায়। কাছাকাছি থাকা গ্রহাণুর সঙ্গে অনেক সময় যেকোনো গ্রহেরই সংঘর্ষ হতে পারে। আমাদের সৌরজগতে সবচেয়ে বড় গ্রহাণুর আকার প্রায় ৯৪০ কিলোমিটার।
ধূমকেতুঃ ধূমকেতু হচ্ছে সূর্যের খুব নিকট দিয়ে অতিক্রমকারী মহাজাগতিক বস্তু যা মূলতঃ ধুলো, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর, বরফ ও গ্যাসের তৈরি। এটি প্রস্থে কয়েকশ থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার এবং লেজসহ দৈর্ঘ্যে প্রায় কয়েকশ কোটি কিলোমিটারও হতে পারে। প্রশ্ন হল ধূমকেতুর লেজ কি? এই লেজের জন্যই ধূমকেতুকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। আগেই বলেছি ধূমকেতুর মধ্যে বরফ ও গ্যাস থাকে। সূর্যের অতি কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সূর্যের তাপে বরফ বাষ্পীভূত হতে থাকে এবং ধূমকেতুটি গতিশীল থাকায় সেই গতিশীল বাষ্পকে দূর থেকে অনেকটা লেজের মত দেখায়। এটাই ধূমকেতুর লেজ। আরেকটা ব্যাপার আছে ধূমকেতুর, সেটা হল কমা। ধূমকেতুর গ্যাস সূর্যের চারিদিকে পরিভ্রমণ করার সময় পৃথিবীর মত অনেকটা পাতলা গ্যাসীয় বায়ুমণ্ডল তৈরি করে। একেই বলা হয় ধূমকেতুর কমা। ধূমকেতুরা নক্ষত্র বা গ্রহ ইত্যাদির আশপাশ দিয়ে ভ্রমণ করে। কিছু ধূমকেতুর আবার নির্দিষ্ট বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার কক্ষপথও আছে। এদের নির্দিষ্ট পর্যায়কাল থাকে। অর্থ্যাৎ নির্দিষ্ট সময় বা বছর পরপর এদেরকে দেখা যায়। যেমন- হ্যালির ধূমকেতুকে প্রতি ৭৫-৭৬ বছর পরপর আকাশে মানুষ দেখতে পায়। একটি ধূমকেতুর পর্যায়কাল কয়েকবছর থেকে শুরু করে কয়েকশ হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে।
আকাশঃ আকাশ দিয়ে শুরু করেছিলাম মহাকাশের গল্প। তাই আকাশ দিয়েই গল্পটা শেষ করি। আকাশ কি? আসলে আকাশ বলতে কিছুই নেই। মহাশূন্যে যে অসীম স্থান আছে তাই হচ্ছে মহাবিশ্বের মহাকাশ। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষ ঊর্ধ্বে থাকা স্থানকে আকাশ বলে অভিহিত করে। আসলে আকাশ বলে আলাদাভাবে কিছু নেই। আমাদের আকাশটা আসলে মহাকাশেরই একটি অংশমাত্র। তাহলে উপরে আমরা নীল যে আকাশ দেখি, সেটা কি? পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা উর্ধপানে তাকিয়ে নীল যা দেখি, সেটা হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। বায়ুমণ্ডল হচ্ছে পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বায়ুর আবরণ। কেন পৃথিবীকে ঘিরে রাখে? এজন্য পৃথিবীর অভিকর্ষ বল দায়ী। পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের আকর্ষণে পৃথিবীর গ্যাসসমূহ, যেমন- নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নিষ্ক্রিয় গ্যাস ইত্যাদি উপরে গিয়ে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এই বায়ুমণ্ডল আবার কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। সবার নীচের স্তরে মেঘ জমা হয়। এখন কথা হল বায়ুমণ্ডলকে আমরা নীল দেখি কেনো? এর উত্তর হল- সূর্য থেকে যে সাদা আলো আসে, তা কিন্তু যৌগিক রংয়ের আলো, যা মূলত সাতটি রংয়ের সমন্বয়ে গঠিত। সাত রং মিলে সৃষ্ট সেই সাদা আলো যখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে প্রবেশ করে, তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ানো ছোট ছোট ধূলিকণায় সেই সাদা আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সাত রংয়ে আলাদা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাত রংয়ের মধ্যে নীল রং হল একটি, যার তরঙ্গের দৈর্ঘ্য খুব ছোট ছোট হয়ে থাকে। নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হওয়ার কারণে এটি ধূলিকণায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলে দ্রুত নীলাভ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তখন বায়ুমণ্ডলের সেই অংশের গ্যাসসমূহের রং দিনের বেলায় নীল দেখায়। আর আমাদের আকাশ আর মহাকাশের মাঝখানে আসলে কোনও বর্ডার নেই যে আমাদের বায়ুমণ্ডলকে আলাদাভাবে আকাশ বলতে হবে। বলা যেতে পারে, মহাকাশের যে অংশ আমরা দিনের বেলায় নীল দেখি, সেটাকেই আমরা ‘আমাদের নীল আকাশ’ বলে দাবি করি।
আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকবেন সবাই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৫

কালীদাস বলেছেন: মাথা ঘুরে লেখা পইড়া :-0

২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৯

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে রসকষহীন লেখাটি ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য। আমিও বিজ্ঞান খুব একটা ভালো বুঝি না। যতটুকু বুঝি ততটুকুই ছড়িয়ে দেওয়ার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠা মাত্র।

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। পড়ে ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ।

২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫

অনন্ত নিগার বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.