নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ তুমি আর আমি...আমি আর তুমি...

২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫

মেয়েটা ছেলেটার কানের কাছে ফিসফিস করে গাঢ় গলায় বলল,’’আমাকে কখনও ছেড়ে যাবে না তো?’’ ছেলেটা মুচকি হেসে জবাব দেয়,’’এক প্রশ্ন কয়বার করবে? কেন এ ভয় বারবার উঁকি দেয় হৃদয়ে?’’ মেয়েটা বলল,’’ তুমি যে একজনই। তোমার ভালোবাসা, তোমার কথাবার্তা, তোমার চলাফেরা, এমনকি তোমার গায়ের ঘামের গন্ধটা পর্যন্ত আমার কাছে অপার্থিব মনে হয়! এ অপার্থিব অনুভূতি আমি যে হারাতে চাই না! মূল্যবান কিছু নিজের কাছে থাকলে যে মানুষ বড্ড শঙ্কায় থাকে, এই বুঝি চোরে নিল, ডাকাতে নিল কেড়ে, গেল বুঝি হারিয়ে চিরতরে! না, না, না...আমি তোমাকে হারাতে পারবনা! কখনোই না! বাস্তবে তো নাইই, স্বপ্নেও না! তুমি থাকবে তো? বল, তুমি থাকবে তো?” বলতে বলতে ছেলের বুকে মুখ গুজে বসে রইল মেয়েটা। ছেলেটা বেশ খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,’’ রোজ একই জিজ্ঞাসা শুনতে ভাল্লাগে না। আমার ভয় হয় শেষ পর্যন্ত তোমার ভয়টা না আবার আমার মাঝে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। আরে বাবা, ভালো কিছু বলো, সামথিং পজিটিভ। সারাদিনে এতো নেতিবাচক কথা শুনতে হয়, নেতিচিন্তা করতে হয়! দুজনে দেখা হলে একটু হাওয়ায় চড়ে মেঘের দেশে ঘুরে একটু হালকা হব, তা না। এখানে এসেও আরেক দুশ্চিন্তা- হারিয়ে যাবে নাতো, হারিয়ে যাবে নাতো? আরে কি এতো হারানোর ভয়? তোমার ভেতরে তুমি যে কল্পনার রাজ্য বানিয়েছ, সেটা নিয়ে যদি শঙ্কা থাকে, তো হারাতেই পারে। রাজ্য থাকা সত্ত্বেও তোমাকে সারাজীবন রাজমহলের বাইরে প্রজার বেশে থাকতে হবে। তাই ভেতরটাকে বড় কর, শক্ত কর। দেখবে তোমার কল্পনা আর কল্পনা থাকবেনা, বাস্তব হয়ে তোমার সামনে এসে ধরা দেবে, যেখানে তুমি হবে রানী। বুঝলে?’’ মেয়েটা ছেলেটার বুকের মাঝে মাথা রেখেই বলল,’’ অত তত্ত্ব কথা বুঝি না। ভালোবাসি, ব্যস ভালোবাসি! কিভাবে বিয়ে হবে, কিভাবে সফল হব কিচ্ছু জানিনা! সব তোমার দায়িত্ব! আমি শুধু জানি তোমার এই হাত ধরে এই নির্জন জ্যোৎস্না রাতে, এই দোতলা ছাদে, ঝিরিঝিরি বাতাসে অনন্তকাল বসে থাকব, বসে থাকব, স্রেফ বসেই থাকব...তুমি আর আমি...আমি আর তুমি...পৃথিবীর কোথাও আর কেউ থাকবে না!!’’ ছেলেটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,’’আচ্ছা বাবা, ভালো। সব দায়দায়িত্ব আমার। কথা দিচ্ছি, হাত আমি কখনও ছাড়ব না। যদি কেউ ছাড়ে, তো তোমাকেই ছাড়তে হবে। আমি ছাড়ার পাত্র না।’’ মেয়েটার মুখ জোছনার এক ফালি আলো এসে ঈষৎ আলোকিত করে রেখেছিল। আর সেই আলোয় ছেলেটা দেখল সেই মুখখানায় লাল ছোপ পড়েছে। রাঙা মুখে, স্বপ্নাবিষ্টের মতো হয়ে, তন্ময় সুরে মেয়েটা বলল,’’ ইস! উনি ছাড়বেন না! আর আমি বুঝি ছেড়ে দেব? কি ভাবো আমাকে? দেহে যদি হাত থাকে, তো সে হাত তোমার হাত ধরেই বসে থাকবে অনন্তকাল...তুমি আর আমি...আমি আর তুমি...’’
পাঁচ বছর পরে রিকশায় করে, শীতে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে যাচ্ছিল ছেলেটা। বৌয়ের নিজ হাতে তৈরি করে দেয়া উলেন সোয়েটারটাও দেহের তাপমাত্রা বিকিরণ ঠিকমতো ঠেকাতে পারছে না। কুয়াশা এতো ঘন, যেন সমস্ত পৃথিবীতে কেউ শীতল ধোঁয়া ছড়িয়ে দিয়েছে। রিকশাওয়ালা মাফলারে সারা মুখ একেবারে ডাকাতের মতো পেঁচিয়ে কুয়াশার চাদর ভেদ করে এগিয়ে চলেছে। হঠাত সামান্য দূরে ছেলেটা দেখল কালো সেই দামি গাড়িটা রাস্তার বাঁ পাশে পার্ক করা, যেটা একটু আগে সাঁ করে তার রিকশাটাকে ওভারটেক করে গিয়েছিল। রাস্তায় ফুটপাতে চটপটি বিক্রি হচ্ছিল। সেখানে কটা চেয়ার পাতা। সেই কুয়াশার ফাঁকে দূর থেকে, চলন্ত রিকশা থেকে ছেলেটা দেখল মেয়েটাকে, ডেনিম জ্যাকেট গায়ে দেয়া স্বামীর পাশে বসে গরম চটপটি খাচ্ছে। স্বামীর কোলে দুই বছরের এক শিশুকন্যা, শীতের কাপড়ে পুরো শরীর ঢাকা, বাবার কোলে মাথা রেখে পিটপিট চোখে পৃথিবী দেখছে। স্বামী কানে কানে মেয়েটাকে কি যেন বলল, মেয়েটার গালে লাল ছোপ পড়ল। তারপর হেসে উঠে ওর কাঁধে আলতো থাবা দিল। ছেলেটার রিকশা পাশ দিয়েই নীরবে চলে গেল। কয়েকমিনিট ছেলেটা স্থবির, নিশ্চল হয়ে শুধু সামনের দিকেই তাকিয়ে রইল। রিকশার ঝাঁকুনিও তার চিন্তায় ছেদ ঘটাতে পারল না। সে ঝাপসা চোখে তার হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে রইল... স্রেফ তাকিয়েই রইল...আর শুনতে পেল হাওয়ায় ভেসে আসা ফিসফিসে একটা গলার আওয়াজ, কে যেন কানে কানে বলছে,’’তুমি আর আমি...আমি আর তুমি...!!’’

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: মোটামুটি লেগেছে। আশা করি সামনে আরও ভাল হবে

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৬

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৬

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: লেখা সুন্দর হয়েছে ।পরের বার আরো ভালো গল্প পড়তে পারবো। ভালো থাকুন।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৭

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.