নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অনুভূতির লিঙ্গ

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২৪


কদমতলীর চৌরাস্তার মোড়ে যখন গিয়ে রিকশা ছাড়লাম, দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম তমালকে। বড় রাস্তার ফুটপাতের সাথে লাগোয়া টঙের দোকানের সামনে দণ্ডায়মান, হাতে চায়ের কাপ আর আধপোড়া সিগ্রেট, আর হ্যাঁ বলাবাহুল্য সাথে তার সহজাত আর সঙ্গত বিরক্তি মাখানো রাগ। কৈফিয়ত কি দেব সেটা চলন্ত রিকশায় বসে আমাকে অতিক্রম করতে থাকা আশপাশের গতিশীল রমণীদের অবর্ণনীয় জ্যামিতিক কাঠামো দেখে উপভোগ করতে করতেই তার খসড়া তৈরি করে ফেলেছিলাম। তমাল চিরজীবন দেখে এসেছে আমি সদা কচ্ছপের ঘড়ি মেনে চলি, সময়ের ঘড়ি সবসময় আমার ঘড়ির থেকে নূন্যতম আধঘণ্টা ফাস্ট; মানুষের গালি খেতে খেতে ব্যাটারি পাল্টানোর অনেক ব্যর্থ চেষ্টা করেছি। লাভ হয়নি, আমি শালা কচ্ছপই থেকে গেলাম, আর তমালটাও আজীবন তার বিরক্তিটাকে চিরায়ত কাঠামোয় স্থায়ী রূপ দিয়ে রাখল। এতো সময় গেলো, এতো বছর গেলো, সেই তমালের আর সেই আমার আবাল্য বন্ধুত্বের রূপটার অনেক কাঠামোগত পরিবর্তন হলেও কি এক স্থবির মৌলিক টান যেন এখনও চিরায়তই থেকে গেলো।
‘শালা এই তোমার দশ মিনিট?’ তমালের কাছাকাছি আসতেই শুরু হল তার উত্তেজিত মারমুখো মুখস্থ বয়ান, আর আমিও আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অভ্যস্ত; ভোতা কান পেতে শ্রবণ করতে থাকলাম। ‘ঘড়ি দেখে প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি কাঙ্গালের মতো এখানে! পকেটে নেই দুই আনা, তার উপর এই চল্লিশ মিনিট কাটাতে গিয়ে এই নিয়ে তিন নাম্বার কাপ চলছে! প্রথম কাপের বিল আমার আর তুমি শালা রাজপুত্তুর বাকি দুই কাপের বিল দিও! তোমার দেরির জন্যই এক্সট্রা দুই কাপ মেরে দিলাম। আর, সিগ্রেটের বিল মাফ! ফোনে কতবার বললাম জরুরী জরুরী! লাভ কি? রাজপুত্তুরের ঘোড়ায় জিন চাপাতে চাপাতেই আধা দিন লেগে যায়…’
আমি এরই মধ্যে টঙের মালিককে চায়ের অর্ডার দিয়ে পকেট থেকে সিগ্রেট বের করে জ্বালিয়ে নিলাম। তমালের ভাষণ শেষ না হওয়া অবধি আমার বাপেরও সাধ্য নেই মাঝপথে পাল্টা ভাষণ দেবে, তার ওপর আমি এখন তিরিশ মিনিটের দায়ে অভিযুক্ত আর সাজা হিসেবে দুই কাপের বিল দিতে হবে জরিমানা। খয়েরি পাঞ্জাবিটার হাত গুটিয়ে রেখেছে সে, মাথায় উস্কুখুশকু লম্বা চুল, আর চোখে একখানা ভারি মাইনাস লেন্সের চশমা, আর চ্যাপ্টা পেটানো শ্যাম বর্ণের শরীর- এক কথায় দেখতে দারুণ! পূরবীর মত মেয়ের না আসক্ত হওয়ার কি কোনো সাধ্য আছে?
আমি সিগ্রেট খুব ধীরে সুস্তে ফুঁকতে ফুঁকতে ফুসফুসের লাবণ্য কমাতে থাকলাম। আর কিই বা করার আছে? প্রায় মিনিট সাতেক কেটে যাবার পর যখন হাতে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিতে শুরু করেছি, মনে হল ভাষণের আওয়াজের তীব্রতা বেশী হওয়ায় তমালের চিরায়ত রাগের মোটামুটি শক্তি ক্ষয়ে গেল।
‘আয় বেঞ্চে এসে বস কথা আছে!’
ফাঁক পেয়ে আমিও সাজানো কৈফিয়তটা চালান দিয়ে দিলাম, ‘সরি দোস্ত! অত দেরি হওয়ার কথা না, বেরোবার ঠিক আগ মুহূর্তে বাবা বলল বাবার শার্ট আর প্যান্ট দুটো জায়গায় দাঁড়িয়ে লন্ড্রি থেকে ইস্ত্রি করে নিয়ে আসার জন্য, কি করব বল? এমন সময় বললেন যে…’
‘থাক থাক হয়েছে! বাপ আর মা কে নিয়ে আর কত বানিয়ে বানিয়ে বলবি? আর বাড়ীতে ফিরতে দেরি হলে গিয়ে বলবি আমার কথা আর না হয় সজীবের কথা! তুমি শালা এমন জিনিষ, কোন গাড়ির ট্যাঙ্কে ডিজেল দিলে ভালো চলে আর কোনটায় পেট্রোল দিলে চলে সেটা তোমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না, গাড়ি তুমি ঠিকই চালিয়ে নেবে। শালা তোমাকে আমি তোমার থেকে বেশি চিনি!’ বলে সিগ্রেটের অবশিষ্টাংশ রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এবার একটু জুতসই হয়ে নড়েচড়ে বসে মূল প্রসঙ্গে আসলো তমাল, ‘পূরবীকে ফোন করে একটু ওকালতি করতে হবে দোস্ত! কাল রাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত এখনো আলাপ হয়নি, এরই মধ্যে শখানেক বার মোবাইলে ট্রাই করেছি, হারামজাদির যা মেজাজ, ধরছেই না…’
‘কিছুদিন আগেও তো তোদের একটা কেস মিটমাট করে দিলাম, এরই মধ্যে আরেকটা বাঁধিয়ে ফেলেছিস? শালার তোদের দুই নায়ক নায়িকার মাঝখানে পড়ে আমাকে ধোলাই খেতে হয়! দুইটা দিন একটু শান্তিতে কাটাতে পারি না এরই মধ্যে তোদের লেগে যায়! তা এবারের কেসটা কি?’
‘আর কি? ঐ ইয়ে আর কি…অপুর মায়ের সাথে দেখা হয়ে গেল গত পরশু সকালে, ইস্কুল গেটের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখি মহিলা ছেলেকে ইস্কুলে দিয়ে গেট দিয়ে বেরোচ্ছে মাত্র, আমাকে দেখা মাত্রই ডাক দিলো। উফ! যা লাগছিলো দোস্তো! হালকা নীল একটা শাড়ী পড়েছিলো গাঢ় নীল ব্লাউজের সাথে, ত্রিশের উপরে যে বয়স চলছে বুঝার কোনো সাধ্য আছে…’
‘হয়েছে হয়েছে!’ মাঝপথে আমিও মুরব্বীদের মতো থামিয়ে ত্যক্ত গলায় বললাম, ‘অপুর মায়ের রূপ লাবণ্যের একই কবিতা আর কত শুনাবি, শালা কানেও আমার পচন ধরে গেছে!’
‘ইয়ে ভাই রাগ করিস না বুজতেই তো পারছিস চাকরিও পাচ্ছিনা, প্রেমিকাকেও নিয়েও সুবিধে করতে পারি না তো যাবোটা কোথায়? এই বয়সে কি এভাবে থাকা যায়, আর তাছাড়া মহিলাটাও যেন জ্যান্ত এক কামের প্রতীক, স্বামী বিদেশে, একা একা বেচারি কতদিন ঘুমাবে…’
‘আচ্ছা থাক থাক! তুমি ওকালতি করছ অপুর মা’র পক্ষে আর আমাকে ওকালতি করতে হবে তোমার পক্ষে। তা কুকীর্তিটা করলি কখন, আর পূরবীর কানে কতটুকু গিয়েছে নাকি শুধুই সন্দেহ?’
‘আরে না না! পুরোটা পূরবীর কানে গেলে তো এতক্ষণে আমাকে কি আর খুঁজে পাওয়া যেত! শালী তো পুরোটা জানতে পারলে আগে আমাকে আস্ত গিলে খেয়ে শেষে নিজে বিষ গিলত! মহিলার সাথে যখন দেখা হল সাথে সাথেই সচরাচর যে রকম ইঙ্গিত দেয় আর কি, বলল অনেকদিন পরে দেখা চলো বাড়ীতে কাজ না থাকলে, চা খেয়ে আসবে, খালি বাড়ীতে দুপুর বেলাটা আমার বড্ড একা একা লাগে। ব্যস! আমিও মর্মটা ধরে ফেললাম। রিকশা করে দুজনে যখন এক সাথে যাচ্ছিলাম ঐ সময় আরিফ হারামজাদাটা জানি কোথায় দেখে ফেলল। তাও বলবি তো বলবি একবারে তিলকে তাল বানিয়ে রঙ মাখিয়ে বলল যে দুজনে নাকি রিকশাতে একেবারে হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পরছিলাম, শালা জানোয়ারের বাচ্চা! নিজে পূরবীকে পায় নি দুই বছর নেড়ি কুকুরের মত পেছনে ঘুরেও, আর এখন রাজনীতি করতে শুরু করেছে আমার সাথে শালা অপজিট পার্টি! কর কর, ইলেকশনে আমিই যাবো! পূরবী আমার, আমারই থাকবে!’
‘এরপর?’
‘এরপর আর কি? খবরটা শোনার ঘন্টাখানেক পর ফোন করল, ভাই গলার যা আওয়াজ, মুখটা না দেখেও অনায়াসে কল্পনায় দেখতে পারছিলাম সাক্ষাৎ নাগিনী ফণা তুলে ফোঁসফোঁস করছে, এই বুঝি ছোবল দিলো, তমাল বাবার কাহিনিতে বোধহয় এখানেই উপসংহার টেনে দেবে! আমার কোনো কৈফিয়ত, টালবাহানা কোনো কিছুই কানে নিচ্ছে না, লাগাতারে চেঁচিয়ে বলে যাচ্ছে- ঐ বেটির সাথে তোমাকে প্রায়ই তো রাস্তা ঘাটে দেখা যায় রং-তামাশা করতে! মিথ্যুকের মিথ্যুক! আমি বুঝিনা না, আমি বুঝিনা! মহিলার স্বামী বিদেশে আর ভরা যৌবন শরীরে, ওর সামনে পরলে আর আমার হালকা পাতলা শরীরের কথা তো মনে থাকে না! তোমরা সব, সব কটা পুরুষের বাচ্চা একেকটা খাঁটি জানোয়ার! সুযোগ পেলে কেউই সাধু থাকে না! ইতরের ইতর! ইস, আমি তো মাত্র দুয়েক দিনের কথা শুনেছি তারমানে না জানি আর কতদিন আমার অজান্তে আসা যাওয়া হয়েছে!’ বুজলি দোস্ত! আমারও তো তিরিক্ষি মেজাজ। আমিও শুনিয়ে দিলাম দুমদাম দুয়েক কথা! বললাম ‘ তুমিই বা কম কি? আমার আগে রওনকের সাথে তোমার সম্পর্ক ছিলো, আমি জানি না কিছু? তোমরা ঐ এক বছরে কি কি ঘটনা ঘটিয়েছ আমি জানি না? ঐ হারামজাদার মা-বাপ দূরে কোথাও কয়েকদিনের জন্য ঘুরতে গেলেই তোমাকে খালি ফ্ল্যাটে যেতে বলত আর তুমিও সতী মেয়ে বলিউড নায়িকাদের মতো সঙ সেজে হেলে দুলে ওর বাড়ীতে যেতে, আমি জানি না কিছু? খালি বাড়ীতে ইচ্ছামতো বিছানায় গড়াগড়ি দিইয়েছ ঘণ্টার পর ঘন্টা, আমি জানি না এসব?’
‘শালা! তুমিও তো কামানের বদলে কামান মেরে দিয়েছো। যে কথা শুনিয়েছ ওকে এখন তো ও আর কামান নয় আগ্নেয়গিরির মতো ফাটবে। মনে হয় না আমার বরফে কাজ হবে! আর কি কি বলেছিস?’
‘আর কি? আমার কথা শোনা মাত্রই যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল তুমি আমাকে সন্দেহ করছ? আমি সাথে সাথে পালটা গলায় জবাব দিলাম, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তুমি সতী? যাবে আমার সাথে মেডিক্যালে টেস্ট দেবার জন্য আমার পরিচিত নার্স আপার কাছে? ঐ কথাটা বলার সাথে সাথে কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকার পরপরই কান্নায় একেবারে ভেঙ্গে পড়ল আর লাইন কেটে দিলো। কাল সারারাত ট্রাই করেছি, মোবাইল সুইচড অফ। আর দুপুর থেকে খোলা পেয়েছি, কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। ভাই, অনেক বড় ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেললাম। তুইই আমার শেষ ভরসা। এবারের মতো জোড়া লাগিয়ে দে, এই তোর মাথায় হাত রেখে বলছি এই শেষ! আর এরকম অত বড় গণ্ডগোল হবে না!’
‘আমার মাথায় হাত রেখে লাভ নেই। তুমি শালা দুই নাম্বার মাল আর আমি শালা দোকানদার। আমার মাথা কোন সাধুর যে হাত রাখলে তুমি এক নাম্বার হয়ে যাবে?’
‘আর পূরবী বুঝি এক নাম্বার, না? তুই জানিস রওনককে নিয়ে আমি যা বলেছি তার একটা অক্ষরও মিথ্যে না। আর দেখলি না, সতীত্বের কথা তুললেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।‘
‘হয়েছে হয়েছে! এ যুগে মেয়ে বল আর ছেলে বল, সুযোগ পেলে কেউই ছাড়ে না। এখন কথা হল তোর ফোন তো রিসিভ করবেনা। আমারটা দিয়েই আধঘণ্টা সাফাই গাইতে হবে, কলের টাকাটা অ্যাডভানস লোড দাও। আর মামলায় জিতলে চায়ের সব কাপের বিলই তোমাকে দিতে হবে।’
‘তুমি হারামজাদা মাল একখান! কথায় আছে না হাতি ফাঁদে পরলে চামচিকাও লাথি মারে। আচ্ছা যা যা, দেবো। আগে তোর ব্যালেন্স রিচার্জ করছি…’
আমি হা হা করে উচ্চস্বরে হেসে বললাম, ‘সেই ছোটোবেলা থেকেই দেখে এলাম তোর পকেটে দুই আনাও থাকে না। আর ফাঁদে পরে শেষে চামচিকার লাথি খেলে সুড়সুড় করে পকেট থেকে পয়সা ঠিকই বের হয়ে আসে। নাহ! আমরা চোরে চোরে ভালই দোস্তি হয়েছে! তমালও হে হে করে হেসে উঠল। এরপর বলল, ‘তুই বস আমি রিচার্জ করে আসছি।’
প্রায় আধঘণ্টা মগজ ধোলাই দিতে হল পূরবীকে, তাও আবার আমার মতো পেশাদার মিথ্যুককে। ফোন রিসিভ করেছিল চারবারের সময়, আর ধরেই বলে দিলো, ‘জানি কেনো ফোন করেছেন! বর্তমানে আপনার পাশে দাঁড়ানো যে মক্কেল আড়ি পেতে রয়েছে তার পক্ষে ওকালতি করার জন্য! তা কত ফিস দিল আপনাকে?’ আর আমিও হে হে করে তেলতেলে হাসি দিয়ে শুরু করলাম আমার মক্কেলের পক্ষে সাফাই গাওয়া। পূরবীকে আমিও একই রকম শৈল্পিক কায়দায় বলতে লাগলাম, ‘মাননীয় আদালত, আমার মক্কেল সম্পূর্ণ নির্দোষ। ঘটনার দিন ইস্কুল গেট দিয়ে অপুর মা যখন বের হয় তখন সেখানে উপস্থিত থাকা আমার মক্কেল তমাল সাহেব রিকশা খুঁজছিলেন আজাদ মার্কেট এর কাঁচা বাজার যাবার জন্য। ঘটনাক্রমে ঐ একই সময়ে দুজনের দেখা এবং অপুর মাও কাঁচাবাজারে যাবার জন্যই রওয়ানা দিয়েছিলেন তরি তরকারি কেনার জন্য। দুজনের গন্তব্য দৈবাৎ একই হওয়ায় দুটি নিরপরাধ মানুষ একই রিকশা দিয়ে রওয়ানা হোন, যাদের মধ্যে কোনো প্রকার অবৈধ সম্পর্ক থাকার কথা তো দূর, এরকম অমূলক ভিত্তিহীন ব্যাপার কল্পনা করাও পাপ। অথচ তমাল সাহেবের ঘোরতর বিরোধী তারই প্রতিপক্ষ জনাব আরিফ সাহেব যিনি আপনার পেছনে প্রায় দুই বছর, আমার মক্কেলের ভাষ্যমতে ‘নেড়ি কুত্তার’ মতো দুই বছর ঘুর ঘুর করে পাত্তা না পেয়ে অবশেষে নিরপরাধ তমাল সাহেবের অনিষ্ট সাধনের প্রয়াসে চক্রান্তে লিপ্ত হোন। আর তারই জের ধরে ধারাবাহিকভাবে চলে আসা এতদিনের প্রতিহিংসার শিকার আবারো হলেন আমার সম্পূর্ণ নিরপরাধ মক্কেল সম্মানিত জনাব তমাল সাহেব। বস্তুত আপনাকে পাবার এক অসাধু উদ্দেশ্য নিয়ে জনাব আরিফ সাহেব সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আপনাদের দুজনের পবিত্র সম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন্য এই কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। অথচ দুনিয়া সাক্ষী (আমি ছাড়া) তমাল সাহেব আর অপুর মা’র মনের মধ্যে আদৌ ঐ ধরণের কোনো কুচিন্তার উদয় পর্যন্ত হয় নি। দুটি নিরপরাধ মানুষকে নিয়ে যে অশালীন চিন্তার বিষ-বাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হলো, তা শুধু আমার জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য এক বিরাট কলঙ্ক!…ছি, ছি, ছি…!!’
এই পর্যন্ত বলা মাত্র এতক্ষণের গম্ভীর পূরবী খিল খিল করে হেসে উঠল। আর এতক্ষণ লাউড স্পীকারে শুনতে থাকা তমাল আমার কথা শুনে মুখ চাপা দিয়ে খিক খিক করে হাসছিল, এবার সেও প্রাণ খুলে হে হে করে হেসে উঠল! পূরবী সাথে সাথে হাসি থামিয়ে বলল, ‘’ওই হারামজাদাটা হাসছে কেনো? ওকে বলুন এটা যেন না ভাবে যে আমি এবার ওকে অতো সহজে ছেড়ে দেবো! আপনি কি জানেন ও আমায় কি বলেছে?’
আমিও চালিয়ে যেতে লাগলাম নাছোড়বান্দার মতো, ‘জী মাননীয় আদালত, আমার বক্তব্য এখনো শেষ হয়নি। আমি জানি আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আপনার কাছে আরো অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে আমার মক্কেলই সাফাই সাক্ষ্য দেবেন। আপনি কি শুনবেন আমার মক্কেলের বক্তব্য?’
পূরবী ভভিমানী সুরে এক শব্দে জবাব দিলো, ‘না’।
‘তবে কি ফোনটা রেখে দেব মাই লর্ড?’
অপর প্রান্তে শুধুই নীরবতা। বুঝতে পারি পুরবীর কান উদগ্রীব হয়ে আছে তমালের কণ্ঠ শুনার জন্য। আমি ফোনটি বাড়িয়ে দিলাম তমালের দিকে। তমালও যেনো ফোনটা কেড়ে নিলো আমার কাছ থেকে। ফোনটা নিয়ে একটু আড়ালে সরে যায় তমাল। টঙের বেঞ্চে বসে সিগ্রেট ফুঁকতে ফুঁকতে তমালের নিষ্পাপ, আবেগী ফোনালাপ শুনতে পাচ্ছিলাম। সেসব কথার কিছুই যেনো আমায় ছুঁয়ে যাচ্ছিলো না। ভাবলেশহীন আমি দূরের রাস্তায় চোখ তুলে দেখছিলাম শত শত পূরবী আর তমালকে। মনের মাঝে ভাবনা খেলা করে যায়, প্রেম নামের যে অনুভুতি কাজ করে নর-নারীর দেহ মনে, তা কি নিরাকার কোনো অনুভূতি?

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: B-) B-)

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫

অনন্ত নিগার বলেছেন: :) :)

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭

আখেনাটেন বলেছেন: 'ভাবলেশহীন আমি দূরের রাস্তায় চোখ তুলে দেখছিলাম শত শত পূরবী আর তমালকে। মনের মাঝে ভাবনা খেলা করে যায়, প্রেম নামের যে অনুভুতি কাজ করে নর-নারীর দেহ মনে, তা কি নিরাকার কোনো অনুভূতি?' ভালো লাগল।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫২

অনন্ত নিগার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আখেনাটেন ভাই।

৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ওয়াও!
কী অসাধারণ একটা গল্প!
আমি প্রচন্ড হেসেছি পড়ে। এতো কাটকাট রচনা পড়িনি অনেকদিন।
সতীত্ব পরীক্ষা নিয়ে তমাল যা বলল, সেটা আসলেই বেশি হয়ে গিয়েছে। পাস্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ঠিক না একটুও।
খুব সুন্দর।
কিপ রাইটিং, ভ্রাতা

৪| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ওয়াও!
কী অসাধারণ একটা গল্প!
আমি প্রচন্ড হেসেছি পড়ে। এতো কাটকাট রচনা পড়িনি অনেকদিন।
সতীত্ব পরীক্ষা নিয়ে তমাল যা বলল, সেটা আসলেই বেশি হয়ে গিয়েছে। পাস্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি করা ঠিক না একটুও।
খুব সুন্দর।
কিপ রাইটিং, ভ্রাতা

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৪

অনন্ত নিগার বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আরণ্যক ভাই। আসলে ছোটগল্প খুব কম লিখি। অনেকদিন পরে লিখলাম ছোটগল্প। আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুব ভালো লাগছে। অবশ্যই আরো লিখব।

৫| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৭

নবিনের আলো বলেছেন: এটা শত শত পুরবী আর তমালদের অভিমানের অতি সাধারন ঘটনা । এই সাধারন ঘটনাটি অত্যন্ত সাবলীল ভঙ্গিমাই তুলে ধরায় অসাধারণ হয়েছে ।

২০ শে মে, ২০১৭ সকাল ৯:২২

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ নবিন

৬| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:২৮

নিভা ইয়ামা বলেছেন: বেশ মজা করে লেখা হয়েছে

২০ শে মে, ২০১৭ সকাল ৯:১৯

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ নিভা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.