নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষকদের শাস্তি হলেই কি শুধু দেশ ধর্ষণমুক্ত হয়ে যাবে?

২০ শে মে, ২০১৭ সকাল ৯:৩৫

ইদানীং আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্ষণ আর যৌন হয়রানির ঘটনা। ভারতে, বাংলাদেশে, পাকিস্তানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন এখন নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যদিও কোনোকালেই নারীরা পুরুষতন্ত্রের শিকলমুক্ত ছিলনা, তবুও এই আধুনিক যুগে এসে আমরা সভ্য মানুষদের আশাবাদ ব্যক্ত করাটা খুবই স্বাভাবিক ছিল যে পৃথিবীতে নারীরা একটি নিরাপদ এবং স্বাধীন জীবন যাপন করবে এবং সর্বক্ষেত্রে তারাও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখবে। জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে হলে ঘর থেকে বের হতে হয়। পড়াশুনা করতে হয় কিংবা কর্মস্থলে যেতে হয়। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়াটাকেই যদি ওঁত পেতে থাকা হায়েনারা সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে সব সময় মনে করে থাকে এবং খুন, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটায়, তাহলে কয়টা হায়েনাকে শাস্তি দিয়ে, কয়টাকে ধরে বেঁধে বিচার করে, কবে এই সমাজকে সাফ-সুতর করা সম্ভব? নারীরা তো ঘরের ভেতরেও স্বামী দ্বারা, স্বামীর পরিবার দ্বারা কিংবা নিজ পরিবার দ্বারা নির্যাতিত হয়। কিন্তু সেগুলো তো মুখে কীলক লাগিয়ে সহ্য করা ছাড়া তাদের পক্ষে আর কিছুই করা সম্ভব নয়, এমনকি প্রকাশ করাও সম্ভব নয়। কারণ কথায় আছে না, ঘরের খবর যেন বাইরের মানুষ টের না পায়। তো, স্বামীর বাড়ি হোক আর বাপের বাড়ি হোক, কিংবা হোক যেকোনো পুরুষশাসিত বাড়ি, সেটা তো নিজেরই বাড়ি, তাই না? তো নিজের বাড়ির খবর পাড়াপড়শি বলুন কিংবা সাধারণ পাবলিক বলুন কিংবা মিডিয়ার সাংবাদিক বলুন, ওরা জানবে কেন? কিন্তু যখন খুন, ধর্ষণের মত বড় বড় ঘটনা ঘটে যায়, তখন? যখন বাপ আর মেয়ে রেল লাইনের নীচে নিজেদের অসহায় শরীর এলিয়ে দেয় বিচার না পাবার যাতনা থেকে মুক্তি লাভের আশায়, যখন তনুর ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত শরীর পড়ে থাকে অন্ধকার জংলা জায়গায়, যখন রক্তাক্ত রিশা পড়ে থাকে রাস্তায়, যখন খাদিজারা চাপাতির কোপে লুটিয়ে পড়ে ক্যাম্পাসের লেকের পাড়ে কিংবা যখন বনানীর রেইন ট্রির মত অভিজাত হোটেলে অভিজাত অমানুষরা আদিম বর্বরতা চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ওপর, তখন কি বলবেন আপনারা? বলবেন যে, ঘটনা যেহেতু গণমাধ্যমে এসেছে, সেহেতু প্রশাসন নড়েচড়ে বসবে, এবং ইজ্জত বাচানোর জন্যে হলেও তদন্ত করবে এবং সুষ্ঠ বিচার হবে। প্রশ্ন হল- তা কদ্দিন চলবে এই ‘ইজ্জত বাচানোর’ বিচার? একজন সুশীল নাগরিক হিসেবে আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, এভাবে সমাজ থেকে একদিন একে একে সব ধর্ষকদের ধুয়ে মুছে ফেলে দেয়া যাবে? এই দেশে হাজারও ছোটখাটো যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে ঘরে, বাইরে, অফিসে, রাস্তাঘাটে... রোজ, তার কয়টার খবর রাখা সম্ভব আপনার আমার পক্ষে? আমরা স্রেফ বনানীর ঘটনার মত ফোকাস হওয়া ঘটনাগুলো জানি আর সেই কয়টার বিচার পেয়ে আমরা হাততালি দেই, আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন,”দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।“ কিন্তু আসলেই কি তাই? আমি বলব, ‘দেশে লিখিত আকারে আইন আছে, কিন্তু তার প্রয়োগ নেই।‘
এভাবে বড় বড় কয়টা চোখে পড়ার মত কেসের তদন্ত করে, বিচার করে আপনারা যদি বলেন যে, আপনাদের মা-বোন দিন দিন সুরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে, তাহলে সেটাকে এক অলীক কল্পনা ছাড়া আমার দৃষ্টিতে আর কিচ্ছু বলার নেই। বরং দিনকে দিন এসব বর্বরতা বেড়েই চলেছে। হয়তো আমি যখন এই লেখাটি লিখছি, তখনও হয়তো এই দেশের কোথাও না কোথাও কোনও নারী আক্রমণের শিকার হচ্ছে কিংবা শিকারের পরিকল্পনা চলছে। আর এই সমস্ত অপরাধীদেরকে সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হলে স্রেফ সামাজিক মাধ্যমে কিংবা আড্ডার ঢেড়ায় বসে টেবিল চাপড়িয়ে প্রতিবাদী কয়টা কবিতার লাইন বলেই ক্ষান্ত হওয়া চলবে না। চাই বাস্তবিক পদক্ষেপ নেওয়া। দু-চারটা বদমাশের জন্য সারা এলাকা কাঁপে। বাস্তবতা হল এটাই। আর এদের নির্মূলের জন্য প্রয়োজন সমাজের অবকাঠামোগত বাস্তবিক পরিবর্তন। যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে হবে, যা ঘটছে আকাশ সংস্কৃতি কিংবা মুঠোফোনে থাকা ইন্টারনেটের সুবাদে। আগে চাই সুশিক্ষা, তারপর প্রযুক্তি। এদেশে ধনীর দুলাল বলুন আর রাস্তার টোকাই সংঘ বলুন, মুঠোফোনের কিংবা প্রযুক্তির বদৌলতে তারা সহজেই জেনে নিচ্ছে নারীদের সাথে তাদের সবচেয়ে পাশবিক আনন্দে পরিপূর্ণ সম্পর্কটা আসলে কোন জায়গায়? দাড়িগোঁফ গজানোর আগেই ছেলেগুলো মাদকের মত আসক্ত হয়ে পড়ছে বিদেশী সংস্কৃতির প্রতি। এই বিদেশী সংস্কৃতির অনৈতিক প্রভাব থেকে আপনার আমার ছেলেমেয়ে নিরাপদ কিনা, অভিভাবক হিসেবে সেটা দেখার দায়িত্ব আপনার আমারই। হাত খরচার টাকা দিয়েই যদি মনে করেন আপনি অভিভাবক হয়ে গেছেন, তাহলে ভুল করছেন আপনি। আপনার ছেলেমেয়ে কি শিখছে, কি করছে, কি পড়ছে, তা পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব আপনার, ঘরে টাকা দিয়ে পুষে রাখা টিউটর কিংবা স্রেফ স্কুলের মাস্টার মশাইর না। রাস্তার টোকাইরা যদি যৌন হয়রানি করে তাহলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক প্রতিবাদ না জানিয়ে কিংবা সম্মিলিত প্রতিরোধ না গড়ে আদপে কিছুই করা সম্ভব হবেনা। আর প্রভাবশালী নেতা-টেতার ছেলে কিংবা স্থানীয় ক্যাডার হলেও উচিত সেটা সবাইকে জানানো। উচিত সবার সাথে শলা-পরামর্শ করা। উচিত আশেপাশে থাকা কোনও নারী উন্নয়ন সংস্থা বা নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠাকারী কোনও প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা। পুলিশ যদি কেস না নেয়, স্থানীয় সরকারকে কিংবা সাংবাদিককে জানাতে হবে। মোটকথা, বুকে কষ্ট চেপে রেখে মরার চেয়ে বিচার করার ঝুঁকিটা সম্পন্ন করেই না হয় মরুণ। ঝুঁকি শব্দটা ব্যবহার করলাম। কারণ, মরার সাহস যার আছে, তার বিচার করার ঝুঁকি নেবার সাহস তো থাকা উচিত, তাই না? বেপরোয়ার মত এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে সারাজীবন আমাদেরকে ঘরে বসে বসে শুধু নিউজ আর টকশো দেখে জীবন কাটাতে হবে আর যদি নিজের মা-বোনদের কেউ এহেন দুর্ঘটনার কবলে পতিত হয়, তখন ঘরে বসে বসে কপাল চাপড়িয়ে কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। শুধু একটাই অনুরোধ- যে যেভাবে পারুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.