নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে শুরু হল ক্যালেন্ডারের যাত্রা?

২২ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:২১


প্রাচীনকালে আদিম মানুষেরা যখন গুহা থেকে বেরিয়ে বসবাস শুরু করেছে নদীর অববাহিকায়, তখন তারা শিখতে শুরু করেছিল কৃষিকাজ। মূলত কৃষি নির্ভর হওয়ার কারণেই মানবজাতি জঙ্গল ছেড়ে এসে খোলা জায়গায় বসবাস করতে শুরু করেছিল। কারণ, তারা আবিষ্কার করতে পেরেছিল যে, ফলমূল খেয়ে সেগুলোর বীজ উর্বর মাটিতে ফেলে দিলে সেখানে সেই বীজ থেকে চারা হয়, চারা থেকে গাছ এবং গাছ থেকে বসে বসেই ফল পাওয়া যায়। তাই তাদের মাথায় এই ভাবনার উদয় হল যে, শিকারের পিছু পিছু না ঘুরে বরং জায়গায় বসে ফলমূলের চাষ করে অনেক কম পরিশ্রমে খাবার জোগাড় করা যাবে। সেই থেকে মানুষ হতে শুরু করল কৃষি নির্ভর এবং শিখতে শুরু করল বসতভিটার নির্মাণকাজ। কারণ, খোলা জায়গায় বসবাস করতে গিয়ে তাদেরকে গুহার মত শক্ত ও সুরক্ষিত বাসস্থান পরিত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের ব্যবধানে মানুষ একটা ব্যাপার লক্ষ করল যে, তারা যেখানে বসবাস করে সেখানে সবসময় একই ফলের চাষ করা যায় না। যেমন গরমকালের ফলমূল বা শস্য শীতকালে ফলে না। দেখা গেল, শস্য বা ফলের গাছগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফলে অর্থ্যাৎ ভূ-প্রকৃতি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু মুশকিল হল, সেই নির্দিষ্ট সময় ঠিক কতদিন ব্যবধানে আবার ফিরে আসে, সেটার হিসেব তাদের জানা ছিলনা। শুরু হল চিন্তা ভাবনা। সময়ের ব্যবধানে তারা ঠিক করল যে, নির্দিষ্ট ফসলের সেই নির্দিষ্ট সময়টা চিনে নিতে হলে তাদেরকে সেই সময়কালের লক্ষণসমূহ মনে রাখতে হবে। প্রাচীনকালের মানুষেরা তখন অনেক হিসেব নিকেশ করত আকাশ দেখে। কারণ, আকাশটা ছিল তাদের কাছে এক বিরাট রহস্য। চন্দ্র, সূর্য এগুলো একেকটা তাদের কাছে ছিল একেকটা বিস্ময় এবং স্বর্গীয় নিদর্শন। সেকালে প্রাচীন মিশরের মানুষেরা খেয়াল করে দেখল যে, তাদের অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময় পর পর বন্যা হয় এবং বন্যার পরপরই শস্যের চাষ ভালো হয়। প্রশ্ন হল- সেই বন্যাটা কতদিন পরপর ফিরে আসে? আকাশের চাঁদের দিকে তারা খেয়াল করে দেখত যে চাঁদও একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে মিলিয়ে যায় এবং আবার ধীরে ধীরে বড় হতে হতে আবার পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে। চাঁদের সাথে তারা বন্যার একটা সংযোগ তৈরি করল। তারা আবিষ্কার করল যে, চাঁদের প্রায় ১২ বার পূর্ণতা প্রাপ্তির পর বন্যা তাদের এলাকায় ফিরে আসে। চাঁদের এই ১২ টা পূর্ণতা প্রাপ্তিকে তারা একেকটা মাস হিসেবে হিসেব করল। কিন্তু সেই হিসেবটা পুরোপুরি নিখুঁত না থাকায় তাদের হিসেবে গড়মিল হত প্রায়ই। সেজন্য তারা এবার ধীরে ধীরে অন্য পন্থার কথা ভাবতে লাগল। পরবর্তীতে মিশরীয় পুরোহিতগণ সূর্যনির্ভর একটা হিসেব করলেন। তারা লক্ষ করে দেখলেন যে, প্রতি বছরে বন্যার সময়ে ভোরের আকাশে সূর্য উঠার সামান্য আগে আকাশে একটা উজ্জ্বল তারা দেখা যায়। পুরোহিতগণ হিসেব করে দেখলেন যে প্রায় ৩৬৫ দিন পরপর ঠিক বন্যার সময় আকাশে সেই তারার আবির্ভাব হয়। এবারে তারা বছর হিসেব করতে শুরু করলেন প্রায় ৩৬৫ দিনে। এভাবে চন্দ্র নির্ভর হিসেব থেকে শুরু হয়ে গেল সূর্য নির্ভর হিসেব। অর্থ্যাৎ এভাবেই প্রথমে সূর্যকেন্দ্রিক ক্যালেন্ডারের আবির্ভাব ঘটে প্রাচীন মিশরে এবং সেটা ছিল আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগেকার ঘটনা।
এদিকে গ্রীকদের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে রোমানরা শুরু করে বছর গণনার আরেক পদ্ধতি। তাদের চালু করা সেই ক্যালেন্ডারে বছর হত দশ মাসে এবং বছরে মোট দিনের সংখ্যা ছিল ৩০৪ দিন। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তাদের বছর শুরু হত মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে। তারা তাদের ক্যালেন্ডারের মাসের নামকরণ করত বিভিন্ন দেবতা বা রাজাদের নামে। যেমন সেই সময়ে তাদের ক্যালেন্ডারের দশটি মাসের নাম ছিল যথাক্রমে মার্চ, এপ্রিল, মে , জুন, কুইন্টিলিস, সেক্সটিনিস, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৭৩৮ বছর আগে রোমের প্রথম সম্রাট রমুলাস এই ক্যালেন্ডার চালু করেন। এবারে সংক্ষিপ্তভাবে দেখা যাক এই দশটি মাসের নামকরণ হল কিভাবে। প্রাচীনকালে মানুষ দেবদেবীতে বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিতে বিশ্বাসী ছিল বলে তাদের প্রায় প্রত্যেকটা কাজেকর্মে দেব-দেবীর প্রাধান্য থাকত বা কর্মের সাথে তাদের বিশ্বাসের কোনো না কোনোভাবে একটা যোগসূত্র থাকত। বছরের প্রতিটি মাসের সাথেও এরকম ধর্মীয় বিশ্বাসের যোগসূত্র রয়েছে। যেমন- প্রাচীন রোমে জানুস নামে এক দেবতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করত তৎকালীন রোমবাসী। তারা যেকোনো কাজ করার পূর্বে জানুস দেবতার নাম নিয়ে সেই কাজ শুরু করত। সেজন্য জানুস দেবতাকে বলা হত সূচনার দেবতা। আর তারই প্রেক্ষিতে মাসের প্রচলন শুরু হওয়ার পর তারা বছরের প্রথম মাসের নামকরণ করে জানুস দেবতার নামে। আর সেই জানুস নামের মাসটিই বদলাতে বদলাতে আজ হয়ে গেছে জানুয়ারি। ফেব্রুয়া নামের একটা উৎসব প্রচলিত ছিল প্রাচীন রোমান সমাজে। এটি ছিল মূলত আত্মশুদ্ধির একটা উৎসব। কারণ, ফেব্রুয়া নামের অর্থই ছিল পবিত্র। বছরের দ্বিতীয় মাসটা ছিল নিজেদের পবিত্রকরণের মাস। তাই সেই পবিত্র মাসের নাম দেয়া হয়েছিল ফেব্রুয়া, যা বদলে গিয়ে আজ ফেব্রুয়ারি হিসেবে আমাদের নিকট পরিচিত। রোমান যুদ্ধ দেবতা মার্স এর নামানুসারে এবং তার সম্মানে তৃতীয় মাসের নামকরণ করা হয় মার্চ। বছরের চতুর্থ মাস এপ্রিলের নাম ধারণা করা হয় ল্যাটিন শব্দ এপিরিবি থেকে এসেছে, যার অর্থ খুলে দেওয়া। রোমান দেবী মেইয়ার এর নামানুসারে পঞ্চম মাসের নাম হয় মে। জুন মাসের নাম রোমানদের আরেক দেবী জুনো এর নামানুসারে। জুলাই আর অগাস্ট মাসের পূর্বনাম ছিল যথাক্রমে কুইন্টিলিস ও সেক্সটিনিস, যা পরবর্তীতে সম্রাট জুলিয়াস সিজার ও সম্রাট অগাস্টাস এর নামানুসারে করা হয়। এ নিয়ে পরের অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর শব্দের অর্থ সাত, নভেম শব্দের অর্থ নয় এবং ডিসেম শব্দের অর্থ ছিল দশ। যখন দশ মাসে বছর ছিল তখন সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম মাসের নাম ছিল যথাক্রমে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর। কিন্তু পরবর্তীতে রোমান সম্রাট নুমা তাদের ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি- এই দুটি মাস এনে যোগ করায় একটু গড়মিল হয়ে যায়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসকে দশ মাসের আগে এনে বসিয়ে দেওয়ায় সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর তাদের স্থান বদল করে পৌঁছে যায় আজকের অবস্থানে। এই ঘটনাটি ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩২ সনে। এই হল বারো মাসের নামকরণের মোটামুটি একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
এবারে আরেকটু বিশদে যাওয়া যাক। রোমানদের আরেক বিখ্যাত সম্রাট এসে রোমান ক্যালেন্ডারকে এবারে আরও নিখুঁত করে তুললেন। এই সম্রাট হলেন জুলিয়াস সিজার, যার নাম আমরা মোটামুটি সবাই শুনেছি। জুলিয়াস সিজার মিশরীয় ক্যালেন্ডারকে এবারে নিয়ে আসলেন তাদের কাছে। সেটা তখন খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দ। জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে জুলিয়াস সিজার তখন আদেশ দিলেন যে, চলতি বছরকে ৪৪৫ দিনের বছর হিসেবে ধরে নিতে হবে। এরপরের বছর থেকে প্রত্যেক বছরকে ৩৬৫ দিনের বছর হিসেবে ধরে নিতে হবে, শুধু লিপইয়ার অর্থ্যাৎ চতুর্থ বছর ছাড়া। সেই সাথে সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে রাখা হল জুলাই। এভাবে চলতে থাকল। পরবর্তীতে আরেক সম্রাট আসলেন অগাস্টাস। তিনি এসে সেক্সটিনিস মাসের নাম পাল্টে নিজের নামানুসারে রাখলেন অগাস্ট। মোটামুটি বারো মাসের নামের ইতিহাস আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এভাবেই বারো মাসের হিসেব চলছিল। কিন্তু সমস্যা হল- সিজার কর্তৃক চালু হওয়া সেই ক্যালেন্ডারে বছর হত সাড়ে তিনশত পঁয়ষট্টি দিনে। এদিকে যিশু খ্রিষ্টের জন্মকে কেন্দ্র করে আমরা যে খ্রিষ্টাব্দ হিসেব করি, তার গণনা শুরু করেছিলেন ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামে এক খ্রিষ্টান পাদ্রি ৫৩২ অব্দে। অন্যদিকে ইস্টার ও অন্যান্য ছুটির দিন নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল এবং সেই সাথে ধীরে ধীরে অতিরিক্ত দিন এসে জমা হচ্ছিল। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য অবশেষে ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে এগিয়ে এলেন রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি। তিনি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে চলতি বছর থেকে ১০ দিন বিয়োগ করেন এবং এরপরে এই ক্যালেন্ডারের হিসেব ঠিক রাখার জন্য ঘোষণা করেন যে, এরপর থেকে প্রত্যেক শতাব্দীকে ৪০০ দ্বারা ভাগ করা করে লিপইয়ার বাদ দিতে হবে। যেমন- ১৭০০, ১৮০০, ১৯০০ লিপইয়ার নয়। কিন্তু ১৬০০ এবং ২০০০ লিপইয়ার। এই ক্যালেন্ডারকেই পোপ গ্রেগ্ররীর নামানুসারে বলা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। আজ আমরা যে ইংরেজি ক্যালেন্ডারকে হিসেব করি সেটাই হচ্ছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, যা মোটামুটি বিশ্বের সব দেশেই মানা হয় কিছু দেশ ব্যতিরেকে। বিশ্বের অনেক দেশে এখনও তাদের নিজেদের প্রবর্তিত ক্যালেন্ডারকে গুরুত্ব দেওয়া হয় ধর্মীয় কারণে। যেমন আরব দেশে রয়েছে আরবি ক্যালেন্ডার। আবার ইহুদীরাও তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার মেনে চলে ধর্মীয় কারণে।
সপ্তাহের দিনগুলোর নামকরণঃ এবারে আমরা আসি সপ্তাহের সাতটি দিনের নামকরণের প্রসঙ্গে। মাসের উৎপত্তির ইতিহাস সম্পর্কে তো আমরা মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে গেছি ইতিমধ্যে। এখন দেখা গেল মাস বেশ লম্বা হওয়ায় দিনের সঠিক হিসেব রাখাটা মানুষের জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়ালো। যেমন ধরুন, কোনো অঞ্চলের একদল মানুষ তাদের হাটবাজার করার জন্য সবাই মাসে একদিন সমবেত হবে। এখন হাট বাজার তো আর একেকদিন একেক সময় ইচ্ছেমতো করা যায়না। যার যেদিন ইচ্ছে সেরকম করেও হাটবাজার বসানো যায়না। সেজন্য চাই নির্দিষ্ট একটা দিবস, নির্দিষ্ট একটা স্থান। তাছাড়া, মানুষ কি সারা মাসই কাজকর্মে ব্যস্ত থাকবে? বিশ্রাম নেওয়ার জন্যও তো একটা বিশ্রাম দিবস থাকা চাই। ধর্মীয় কাজ পালন করার জন্যও তো একটা দিন নির্দিষ্ট থাকা চাই। মোটকথা, এরকম নানা কারণে একটা মাসকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করাটা অপরিহার্য হয়ে উঠল। আর এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই উৎপত্তি হল সপ্তাহের ধারণা। পৃথিবীর কোথাও মাসকে আট দিনে, দশ দিনে কিংবা সাত দিনে বিভক্ত করা হল। ইহুদীরা সর্বপ্রথম ঠিক করল যে, ঠিক সাত দিন পরপর তারা সপ্তম দিনটিকে শুধু ধর্মীয় কাজে ব্যয় করবে, বিশ্রামও করবে। আবার ব্যবিলনীয়রা ঠিক করল সপ্তম দিনে তারা হাট বাজার বসাবে কিংবা বিশ্রাম নেবে। মূলত সব অঞ্চলের মানুষেরই একটা বিশ্রাম দিবসের দরকার ছিল। আবার একই সাথে ওই বিশ্রাম দিবসটিকে শুধু খেয়ে-বসে না কাটিয়ে উপাসনা করে কাটিয়ে ব্যয় করার পরিকল্পনাও তারা করেছিল। সেই সপ্তম দিবসটিকে নির্ধারণ করতে গিয়েই সাতদিন নির্ভর সপ্তাহের সৃষ্টি হল। আর মাসগুলো বিভক্ত হয়ে গেল মোটামুটি চার সপ্তাহে।
যেহেতু একটা কিছুর সৃষ্টি হয়ে গেলে তার নামকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যেভাবে মাসগুলো সৃষ্টি হবার পর তাদেরও সময়ের ধারাবাহিকতায় নামকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল, সেই একই ধারাবাহিকতায় এবারে সাতটি দিনেরও নামকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। তবে যে স্থানে, যেভাবেই সেই নামকরণ হোক না কেন, সেগুলো যে অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে করা হয়েছে তা নামের অর্থ কিংবা কারণ জানলেই আজকের যুগে আমাদের কাছে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। যেমন- ইংরেজি সাতদিনের মধ্যে থার্সডে হচ্ছে ষষ্ঠ দিবস। এই থার্সডের নামকরণ করা হয়েছে প্রাচীন উত্তর ইউরোপের এক দেবতার নামানুসারে। থর নামে সেই দেবতাকে বলা হত বজ্রের দেবতা। বজ্রের দেবতা যেহেতু বলা হচ্ছে, সেহেতু আমরা সহজেই বুঝতে পারি উনার কাজ কি ছিল। হ্যাঁ, আকাশের বজ্রপাতের জন্য তাকেই দায়ী করা হত। তিনি রেগে গেলে তার হাতে থাকা হাতুড়ি ছুঁড়ে মারতেন আকাশের যেকোনোখানে। আর তাতেই সৃষ্টি হত বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ বা বজ্র। অথচ আজ আমরা জানি বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক কারণ কি। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে যে সাতটি ইংরেজি দিবসের নামের পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই।
ল্যাটিন শব্দ সোলিস থেকে তারা একটি দিবসের নামকরণ করে ডাইচ সোলিস। ওই দিবসকে উত্তর ইউরোপের লোকেরা সাননানজায়েজ বলতো, যা পরবর্তীতে সানডে হিসেবে রূপ লাভ করে। একইভাবে ল্যাটিনরা একটি দিবসকে লুনায়েডাইস বলত, যাকে দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা মোনানডায়েস হিসেবে উচ্চারণ করত। আর আজ এই মোনানডায়েসই আমাদের নিকট পরিচিত মানডে হিসেবে। আবার এই দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরাই তাদের যুদ্ধের দেবতা টিউ এর সম্মনার্থে একটি দিবসের নাম দেয় টিউয়েজডায়েস। সেটি বদলে আজকের টুয়েজডে তে পরিণত হয়েছে। আবার উত্তর ইউরোপের লোকেরা তখন এক শক্তিশালী দেবতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করত যার নাম ছিল উডেন। তার সম্মানে একটি দিবসের নাম দেওয়া হল উডেনজডায়েস, যা আজকে ওয়েনজডে হিসেবে পরিচিত। থার্সডের কথা তো আগেই বলা হয়ে গেছে। এখন আসি ফ্রাইডে প্রসঙ্গে। ফ্রাইডে নামটি এসেছে ফ্রিগ নামে এক দেবীর নাম হতে, যিনি ছিলেন ওডিন নামক খুবই শক্তিশালী এক দেবতার স্ত্রী। সেই সুন্দরী ফ্রিগ দেবীর স্মরণে একটি দিবসের নাম দেওয়া হল ফ্রিগেডায়েস, যা পরবর্তীতে বদলে গিয়ে ফ্রাইডে হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। স্যাটার্ন নামে এক রোমান দেবতার নামানুসারে স্যাটার্নডায়েস হল শনিবারের নাম। সেই স্যাটার্নডায়েসের বর্তমান রূপই হল স্যাটারডে। মুলতঃ রোমানরা তাদের সাতটি দিবসের নামকরণ করেছিল সূর্য, চন্দ্র ও পাঁচটি গ্রহের নামানুসারে (তৎকালীন সময়ে তারা পৃথিবী বাদ দিয়ে যে পাঁচটি গ্রহের ধারণা পেয়েছিল)। রোমানদের সেই সাতটি দিনের নাম ছিল- সান, মুন, মার্স, মার্কারি, জুপিটার, ভেনাস এবং স্যাটার্ন। এই রোমানদের নামগুলোর মতোই অ্যাংলো-স্যাকসনরা তাদের সাতটি দিবসের নামকরণ করেছিল তাদের বিভিন্ন দেব-দেবীর নামানুসারে। আজ আমরা যে সাতটি দিবসের নাম ব্যবহার করি, তা মূলত অ্যাংলো-স্যাকসনদেরই দেওয়া নাম।
এভাবেই আমরা পেলাম ক্যালেন্ডার, তার মাসগুলোর নাম, সপ্তাহ ও সপ্তাহগুলোর দিবসের নাম। এই হল গোটা ৩৬৫ দিনের একটি সহজ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৩:০১

এরশাদ বাদশা বলেছেন: ঘাঁটাঘাঁটি খাটাখাটনি করে লেখাটা দিলেন, কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এ ব্লগে ধৈর্য্য ধরে এতো বড়ো লেখা পড়ার পাঠক নেই।
যাহোক, অনেক কিছুই জানা হলো, আশা করি নেক্সট টাইম বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে একটা পোস্ট দিবেন।

২২ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:৩২

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। অবশ্যই বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে লিখার ইচ্ছে আছে। চেষ্টা করব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.