নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘এ প্লাস’- একটি ভয়ংকর মানসিক ব্যাধির নাম!

২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

দুটো ঘটনা দিয়ে শুরু করি। ছাত্রাবস্থায় আমি বেশ ভালো বেতনের দুটো টিউশনি করতাম (অবশ্যই ঠেকায় পড়ে, মানে হাত খরচ যোগানোর জন্য)। একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে পড়িয়েছিলাম দীর্ঘদিন। তখন ওরা বেশ ছোট ছিল। সবে হাইস্কুলে উঠেছিল। যাই হোক। টিউশনি ছেড়েছিলাম গ্র্যাজুয়েশন কম্লপিট হওয়ার পরে। তবুও তাদের প্রতি আমার এক ধরণের স্নেহ ও তাদের মা-বাবার প্রতি আমার একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় আমি প্রায়ই সময় পেলে তাদের খোজ খবর নিতাম, কিংবা ওরাই মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে আমাকে নিত তাদের সন্তানদের উপদেশ, পরামর্শ দিতে কিংবা তাদের বাড়িতে কোনও ঘরোয়া ফাংশন থাকলে আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিত। ছেলেটার মা সরকারি চাকুরীজীবী আর বাবা ব্যবসায়ী। ব্যবসার সুবাদে বাবাকে প্রায় সারা মাসই অন্য একটি উপজেলায় থাকতে হত। আর মা চাকুরীর ব্যস্ততার কারণে সারাদিনই ঘরের বাইরে থাকতেন। বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যেত।
আর মেয়েটার বাবা হচ্ছেন প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা এবং বর্তমানে একজন ব্যস্ত ব্যবসায়ী। আর মা গৃহিনী। এবার তাহলে মূল ঘটনায় যাওয়া যাক।
লেডিস ফার্স্ট। প্রথমে মেয়েটাকে দিয়েই শুরু করি। সে খুব দামী প্রাইভেট একটা স্কুলে পড়ে। ওখানে ডিসিপ্লিন খুবই কড়া। প্রত্যেকদিন সঠিক সময়ে, সব হোমওয়ার্ক যন্ত্রের মত নিখুঁতভাবে শেষ করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে, ইউনিফর্ম পড়ে ফিটফাট হয়ে একেবারে বাবু সাহেবের মেয়ে সেজে তাকে খুব সকালে স্কুলে পড়িমরি করে দৌড়াতে হত। আমি যখন বিকেলবেলা পড়াতে যেতাম, তখন সে ঘুমে ঢুলু ঢুলু হয়ে বিছানা ছেড়ে পড়ার টেবিলে এসে বসত। এবং আমার কাজ ছিল- ক্লাসের যে সমস্ত বিষয়বস্তু তার কচি মাথায় ঢুকেনি, সেই বিষয়বস্তুগুলোর সারমর্ম আমার মোটা মাথার যুক্তি দিয়ে তাকে বুঝানো। এবং সেই সাথে তার হোমওয়ার্কগুলো ঠিকঠাক মত সম্পন্ন করতে তাকে সাহায্য করা। এবং অবশ্যই অবশ্যই আমার তরফ থেকে কোনও হোমওয়ার্ক না দেয়া। কারণ সে ক্লাস শেষে স্কুল থেকে এক ব্যাগ বাজারী হোমওয়ার্ক নিয়ে আসে। সুতরাং ওই এক ব্যাগ হোমওয়ার্ক শেষ করতেই তার আজকের রাতের পড়ার সময় শেষ হয়ে যাবে। আমার হোমওয়ার্ক সে করবে কখন? বুঝতেই পারছেন, আমি নিজেও আরেক যন্ত্রে পরিণত হয়েছিলাম। যখন গ্রাজুয়েশন করছিলাম, জীবন সম্পর্কে অনেক ফিল্মি চিন্তা মাথায় ছিল। মনে মনে ভাবতাম, আমি একাই একখান পিস! মহাপুরুষ! নিজেকে ভাবতাম আমি একজন অ্যালকেমিস্ট। ভাবতাম আমার স্পর্শে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী আসবে, তাদেরকে আমি সোনার মানুষে রূপান্তর করে ফেলব। কিন্তু ফল হল ভাই উল্টো। আমি কি ওদের সোনা বানাবো? বরং উল্টো ওরাই আমাকে পুড়িয়ে কয়লার খনি বানিয়ে দিয়েছে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম এক সমুদ্র নোনা জলে এক মগ লবণমুক্ত নির্মল পানি ঢেলে দিলে সমুদ্রের পানির তিল মাত্র পরিবর্তন হবেনা। যাই হোক। মেয়েটাকে একই কায়দায় পড়াতে পড়াতে একসময় আমি নিজেও বিরক্ত হয়ে গেলাম। সত্যি কথা যেটা, তখন আমি স্রেফ টাকার জন্য পড়াচ্ছিলাম। এবং পড়ানোর প্রতি আর বিন্দুমাত্র আমার আগ্রহ ছিলনা। যাই হোক, এরই মধ্যে মেয়েটার জেএসসি পরীক্ষা আসল। আমার ছাত্রীর ঘুম হারাম। এদিকে তার অভিভাবকেরাও আমার ঘুম হারাম করে দিলেন তাকে আরো কড়াকড়ি করে পড়িয়ে এ প্লাস পাইয়ে মেয়েকে একেবারে মাদাম কুরী বানিয়ে দেওয়ার জন্য। আর আমিও শালার কলুর বলদ দিনরাত খাটতে লাগলাম। আমার ছাত্রী খুবই দুশ্চিন্তায় সময় কাটাতে লাগল। কারণ, তার ক্লাসের মোটামুটি সবাই এ প্লাস পাবে। আর ভালো ছাত্রীর কাতারে সেও একজন। সুতরাং স্কুলে ইজ্জত রক্ষা করতে আর বাবা-মার মান-সম্মান রাখতে সে উদভ্রান্তের মত দিনরাত পড়তে লাগল। একদিন আমাকে প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,”স্যার, আমি না কাল রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেছি! দেখি আমি জেএসসি-তে ফেল করেছি!” পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হল। মেয়েটা খুব ভালো করেই পরীক্ষা শেষ করল। এবং ফলাফল আসল এ প্লাস। আমিও আর এই এ-প্লাসের গ্লানি থেকে মুক্তির জন্য টিউশনি ছেড়ে দিলাম। তারা খুব দুঃখ পেলেন। আমাকে মিনতি করলেন আরো একটা বছর পড়ানোর জন্য। আর আমিও আমার তিন নম্বর হাত, মানে অজুহাত দেখিয়ে ভাগলাম। এরপর স্রেফ আমার ছাত্রীর খোঁজ নিতাম যে, সে কোন প্লাস পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সিলভার নাকি গোল্ডেন। ব্যস।
এবার আসি ছাত্র সাহেবের কথায়। তিনি হলেন মহাপন্ডিত। মা সারাদিন ঘরের বাইরে থাকেন। আর বাবা তো আগেই বলেছি বাসায় থাকেন না। ঘরে তার এক দূর সম্পর্কের আপু থাকত। সেই ওদের খাবার-দাবার থেকে শুরু করে সব ধরণের ঘরোয়া দায়-দায়িত্ব পালন করত। মা-বাবা এসে স্রেফ খোঁজ নিত তাদের পড়াশুনার কেমন অগ্রগতি হচ্ছে আর আমাকে নিয়মিত তাদের অগ্রগতির রিপোর্ট দিতে হত। তারা আমাকে বার বার তাগিদ দিতেন যেন সোনালী এ প্লাসটা কম্মিণকালেও মিস না হয়। মিস হলে তাদের নাকি মান-স্মমান থাকবেনা। বাবা তার বন্ধু-বান্ধবদের সামনে মুখ দেখাতে পারবেনা, কারণ ওদের ছেলেমেয়েরা গোল্ডেন পায়। মা মুখ দেখাতে পারবেন না পাশের বাড়ির অমুকের মার কাছে, কারণ অমুকের মার মেয়ে পড়াশুনায় খুব ভালো, নিয়মিত গোল্ডেন পায়। আমি যখন ছেলেকে পড়াতাম, সমসাময়িক কালে পূর্বোল্লেখিত মেয়েটাকেও পড়াতাম। তফাত শুধু এতটুকু যে, মেয়েকে জেএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম আর ছেলেটাকে নবম শ্রেনি পর্যন্ত পড়িয়েছিলাম। যাই হোক, ছেলেটা পড়ায় মাশাল্লাহ। সরকারি পাইলটে পড়ত। অনেক মেধাবী। গণিত, বিজ্ঞান দুটোতেই সে খুব পারদর্শী। কিন্তু একটা সমস্যা ছিল তার। আর সেটাই ছিল ভয়ংকর সমস্যা। তার প্রত্যেকটা ভালো রেজাল্টের জন্য তাকে দামী কিছু না কিছু একটা গিফট করতে হত। মা-বাবাও নিজেরা নিজেদের দায়িত্বের হাত থেকে রেহাই পেতে ছেলে যা চাইত, তাই দিয়ে দিতেন। যেমন- জেএসসি তে তাকে খুবই দামী একটি স্মার্টফোন দিলেন উনার ছেলেকে স্মার্ট বানানোর জন্য। এর আগের বছর অবশ্য গেম খেলার জন্য ভালো রিকুয়ারমেন্টের পিসি দিয়েছিলেন বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য। অষ্টম থেকে নবম- এই এক বছরের মধ্যে সে তিন তিনটি দামী রেসিং সাইকেল খোয়ালও। মানে একটা চুরি যেতে না যেতেই মা ছেলের মনের দুঃখ লাঘব করার জন্য পরেরদিনই এরচেয়ে আরও দামী আরেকটি সাইকেল কিনে দিতেন। এভাবে পরপর তিনটি দামী সাইকেল খোয়া যাবার পর চতুর্থ নাম্বারটা যখন কিনে দেওয়া হল, ইতিমধ্যে আমি টিউশনিটা ছেড়ে দিয়েছি। তবে যদ্দুর জানি চতুর্থ নাম্বারটা এখনও কিভাবে কিভাবে জানি টিকে আছে। ছেলে নবম শ্রেণীতে উঠেই দাবী করল যে, তার পিসি এইটা পুরানা হয়ে গেছে। ভালো গেমিং এর জন্য আরও দামী পিসি লাগবে। মা প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে নতুন পিসি, প্রিন্টার, রাউটার, নতুন পিসি টেবিল, দামী চেয়ারসহ সব কিনে দিলেন। আমি হতবাক হয়ে, ভরাক্রান্ত হৃদয়ে তার মাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম,”আপা, আপনি জানেন আপনি কি করছেন? চাওয়া মাত্রই সব দিয়ে দিচ্ছেন। এই সব জিনিস মানুষ চাকরি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েও কিনতে পারে না। আর আপনি? দুদিন পরে তো এমন এমন আবদার করে বসবে যা আপনি টাকা দিয়েও মেটাতে পারবেন না, তখন?” মায়ের জবাব,”কি করব স্যার? ও তো পড়াশুনায় ভালো করছে, সুতরাং ওর আবদার ফেলি কিভাবে? আর তাছাড়া মা হিসেবে আমি সারাদিন বাইরে থাকি। আমার সন্তানের প্রতি আমি আমার কর্তব্য ঠিকমত পালন করতে পারছিনা, সময় দিতে পারছিনা। তাই সেটা পোষাতে গিয়ে ওর সব দাবিই আমি মেনে নেই।“ এরপরেও আমি আপ্রাণ চেষ্ঠা করেছি ওর মাকে, বাপকে বুঝানোর জন্য। কিন্তু ভাই আমি পারিনি। কারণ, তাদের মা-বাবার ধারনা এ প্লাস পাওয়াটাই হচ্ছে সন্তানের একমাত্র দায়িত্ব। সৎ চরিত্রবান হওয়া কিংবা আদর্শ একজন নাগরিক হওয়াটা কোনও বিষয় নয়। আর এ প্লাস পেলেই মা-বাবারা বিনিময়ে আকাশের চাঁদ হলেও তাদের সন্তানদের হাতে এনে তুলে দেবেন কিংবা দেওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন। আমি ছেড়ে দিলাম একসময় টিউশনি।
গতবছর ছেলেটা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এসএসসি তে কৃতিত্বের সাথে পাস করে জাতিকে কৃতার্থ করেছে। এখন সে ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ে। শুনেছি এখন তার দাবি নাকি একটি মোটরসাইকেল। সুতরাং আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে মানে এইচএসসি-তে সে গোল্ডেন এ প্লাস পেলে হয়তো একটা হেলিকপ্টার দাবি করে বসবে। আর বিজ্ঞ মা-বাপও মনে হয় তাদের সকল সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে তার দাবি মিটিয়ে তারা পথে বসে ভিক্ষে করে খাবেন। কারণ, এমনিতেই তার হাত-খরচ থেকে শুরু করে এটা ওটা কিনে দিতে হয়। রুমের পুরো ফার্ণিচার পর্যন্ত পালটে দিতে হয়েছে। এমন একখান দামী সন্তান তাদের চিন্তা করুন!
আর ওদিকে এই বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় আমার সেই ছাত্রীটা এ প্লাস পায়নি। কাছাকাছি গিয়েছে, কিন্তু প্লাস টিকেনি। তার মন ভীষণ খারাপ। তার বাবা-মা খুব বকাঝকা করেছে। তার মোবাইল অফ, তার ওয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেটেড...সব অফ! আমি তাকে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে অনেক বুঝিয়েছি। আমি তাকে বলেছি সামান্য একটা পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টে জীবনের কিছুই যায় আসেনা। এ প্লাস পেলেই সবাই সফল হয়না, আর সফল হলেও সবাই সুখী হয়না। সফলতা মানেই সুখ নয়। সফলতা মানে জীবনের কোনও এক পরিস্থিতি বা পরীক্ষায় কিংবা ক্যারিয়ার লাইফে ভালো করা, নিজের জীবনকে নিরাপদ করে তোলা সম্পদ ও শিক্ষার মাধ্যমে। কিন্তু সুখী হওয়া অত সহজ নয়, যতক্ষণ না তুমি নিজে নিজেকে সুখী করছ। সুখ হল আত্মিক ব্যাপার, মনের ব্যাপার। অনেক কোটিপতি শিক্ষিত আছে যারা রাতের বেলায় তাদের আলিশান বাড়ির এয়ারকন্ডিশন্ড বেডরুমেও ঘুমাতে পারেনা। তাদের ঘুম আসেনা বলে ঘুমের পিল খেয়ে ঘুমাতে হয়। আর অনেক দিন-মজুরও আছে, ভাঙা ঘরে, নড়বড়ে খাটে, জ্যোস্নার রুপালী আলোয় ঢুবে গিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ঘুমিয়ে পড়ে। নিস্তদ্ধ পৃথিবীতে সে এক অতল ঘুম। আমি তাকে এও বলেছি যে পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানী, মনীষীদের বেশীরভাগই স্কুল-কলেজ জীবনে পেছনের সারির ছাত্র ছিলেন। তাঁরা শেষের দিকে নক্ষত্রের মত জ্বলে উঠেছিলেন, আলোকিত করেছিলেন গোটা মানবজাতির আকাশকে। অনেকের তো আবার একাডেমিক যোগ্যতাই ছিল না। যেমন- আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। মাইকেল ফ্যারাডের ছিল সামান্য প্রাইমারী লেভেলের একাডেমিক শিক্ষা। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, তিনি সারাজীবনই পেছনের সারির ছাত্র ছিলেন। ভারতের পরমাণুবিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালামকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করার জন্য গ্রাম থেকে পরীক্ষার হলে যাওয়ার সময় তাকে গ্রামের লোকজন গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিল, যখন তারা জানতে পেরেছিল তিনি মুসলমান। পরে সেই ক্ষুদে বিজ্ঞানী দৌড়াতে দৌড়াতে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে পরীক্ষার হলে পৌছেছিলেন। আর তিনি সেদিন হলে পৌছাতে পেরেছিলেন বলেই আজ ভারত পরমাণু শক্তির অধিকারী হতে পেরেছে। সকল বিজ্ঞানী আর মণীষীদের জীবনই স্রেফ দুঃখ আর দুঃখেই পরিপূর্ণ। আর স্রেফ একটা এ-প্লাস না পেয়ে কিনা আজকালকার ছেলেমেয়েরা অতি সহজে হাল ছেড়ে দেয়? তারা ধরে নেয়, এ প্লাস না পাওয়ার অর্থ- তাদের জীবন থেকে সমস্ত স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিয়ে দেওয়া। অনেকেই আবার আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অভিভাবকদের কথার চাবুকের আঘাতের হাত থেকে নিস্তার পেতে। আর এরজন্য দায়ী আমাদের অতিসচেতন অভিভাবকেরা। যারা তাদের প্রতিবেশী, অফিসের কলিগ কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের ছেলেমেয়েদের সাথে প্রতিযোগিতার রাজনীতি করতে গিয়ে নিজেদের ছেলেমেয়েদের একেবারে বলি দিয়ে দেন। স্কুলের ছেলেরা, মেয়েরা আজকাল আর সময়ই পায়না মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করার, আকশে স্বপ্নের ঘুড়ি ওড়ানোর, পাখা মেলে হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে বেড়ানোর...। তারা সময়ই পায়না ভাবার যে তারা বড় হয়ে কি হতে চায়, কিসে তার ইন্টারেস্ট বেশী, দক্ষতা বেশী। সব তোতা পাখির বুলির মত তাদের বাবা-মা তাদের শিখিয়ে রাখেন। তার কাজ কি, জীবনের অর্থ কি, তার জীবনের লক্ষ কি, তাকে কত টাকা মাসে মাসে বেতন কামাতে হবে, যোগ্য মেয়েকে কোন কোন স্বর্গে বিয়ে দেওয়া যায়, কোন শীতের দেশে চাকুরী করানো যায় ইত্যাদি আজকাল বা-মায়েরাই আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখেন। তারা নিজে যা হতে পারেন নি, জোর করে ধরে-বেধে তাদের সন্তানকে তারা তা বানাতে চান। এরা কেউই প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের লেখা সেই বিখ্যাত চিঠিটি পাঠ করেন নি কোনোদিনও, যা তিনি লিখেছিলেন তার সন্তানের স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। ওই চিঠিটা যদি সকল শিক্ষক, অভিভাবকরা পাঠ করে হৃদয়ঙ্গম করে রাখতেন, তাহলে এ-প্লাস নামক এই ভয়ংকর মানসিক ব্যাধিতে আমাদের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আক্রান্ত হতনা।
আমার লেখা আপাতত আজ এখানেই শেষ। ফিল্মের নায়কের মত একসময় আমি সমাজ বদলানোর কথা ভাবতাম। শিক্ষা ব্যবস্থা নামক সিস্টেম নিয়ে ভাবতাম। কিন্তু আমি ভুলে গিয়ে ছিলাম আমি কোনো সিস্টেম নই, বরং বৃহৎ এক সিস্টেমের সামান্য এক অণুমাত্র। অসংখ্য অণু-পরমাণু মিলেই তো একটা বস্তু হয়। আর অনেকগুলো বস্তু সুশৃংখলভাবে সজ্জিত হয়ে একটি সিস্টেমে পরিণত হয়। সুতরাং গোটা সিস্টেম যদি একটা মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে, তো ভাই আমি ক্ষুদ্র একখানা অণু একাই কোন মহাভারত উদ্ধার করে ফেলব, বলুন? এই বেকুবকে ক্ষমা করে দেবেন। সবার জন্য শুভ কামনা রইল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: এ প্লাস না পেলে সব কিছু বরবাদ এই মানসিকতা তৈরীতে তো আমাদের পরিবার সমাজ আর শিক্ষা ব্যাবস্থাই দায়ী।
আমরা যদি এই মনোভাব থেকে বের হতে না পারি তবে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য খারাপ কিছুই অপেক্ষা করছে।
সুন্দর লেখনির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২৩ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৩০

অনন্ত নিগার বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

সজল৯৫ বলেছেন: ভাল লিখেছেন। অনু পরমানু গুলো জড়ো করে করে, একসময় বস্তু তৈরি করা যাবে। হাল ছেড়ে দিলে তো সবই মাটি!

২৩ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৩১

অনন্ত নিগার বলেছেন: হ্যাঁ ভাই। হাল ছাড়া আমাদের চলবে না। ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:৪৬

নাদিম আহসান তুহিন বলেছেন: অভিভাবকদের কিভাবে যে বুঝাই এটা ভাই।

২৩ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৩৯

অনন্ত নিগার বলেছেন: চেষ্টা করতে হবে ভাই, যে যেরকম পারি। ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ২৫ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:১৬

ফ্রিটক বলেছেন: ভাল পোষ্ট।(+++)

২৫ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.