নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ্যাস্ট্রলজি বা জ্যোতিষতত্ত্ব কি কোনও বিজ্ঞান?

০৯ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০


কিছুদিন আগে পরিচিত এক চায়ের দোকানে বসে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম আর সাম্প্রতিক বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা পারিপার্শ্বিক ঘটনা, ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ কিংবা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্যহীন ঘটনা, রঙ্গ তামাশায় ব্যতিব্যস্ত ছিলাম, আশেপাশে কে আছে না আছে সেদিকে কোনো খেয়াল করার তো কথা না, খেয়াল করছিও না। কথার তুবড়িতে কোনো এক প্রসঙ্গে দুর্ভাগ্য আর সৌভাগ্য নিয়ে কথা উঠতেই বলে বসলাম ওপর বন্ধুকে,” যা না জ্যোতিষীর কাছে, এতো হায় হায় করছিস যখন, তোর রাশি দেখে সংখ্যা দেখে দেখবি তোকে ভবিষ্যদ্বাণী করে দেবে তোর শুভ অশুভ কি কি আর কি কি করলে কোন পাথর ব্যবহার করলে আপদ যাবে আর কপাল খুলবে…’’ বলেই আমি হেসে উঠেছিলাম, আর এরই মধ্যে পাশের বেঞ্চে বসে থাকা চা পানরত আমাদের বয়সই এক ছেলে মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,” ভাই কি অ্যাস্ট্রলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছেন?’’ আমরা হাসি থামিয়ে এবার তার দিকে তাকালাম, গাম্ভীর্যে ভরা চেহারাটাই বলে দিলো যুবকটি রসকষহীন। আমি সবিনয়ে বললাম,’’ জী না ভাই, তবে হালকা একটু ধারণা আছে আর কি!’’
‘’আপনি কি গণনা করতে পারেন কিংবা রাশি দেখে স্বভাব বৈশিষ্ট্য বলে দিতে পারেন?’’ ছেলেটি খুব সিরিয়াসলি আমাকে জিজ্ঞেস করল।
‘’না তো ভাই পারিনা। আমি পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছি। অ্যাস্ট্রোনমি (জ্যোতির্বিদ্যা) নিয়ে আমার ধারণা আছে।‘’
‘’আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র অথচ বলছেন অ্যাস্ট্রলজি বিজ্ঞান নয়? তাছাড়া রাশি গণনাও করতে জানেন না। আপনি একটা ব্যাপার না জেনে এতো নিশ্চিত হয়ে মন্তব্য আর ঠাট্টা করছেন কিভাবে? আপনার জানার ওপরই কি সব নির্ভর করে?’’
এবার আমি চায়ের কাপ টেবিলে রেখে ভালো করে তাঁর দিকে মুখ করে বসলাম। আমার বন্ধু আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে আয়েশ করে পা তুলে বেঞ্চে বসল, কারণ বাগবিতণ্ডা এবার তুমুল হবে আর আমার সম্পর্কে আমার বন্ধুর অতিরিক্ত উঁচু ধারণা থাকায় সে মুচকি মুচকি হেসে নীরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করতে লাগল। এবার আমি শুরু করলাম, ‘ফিজিক্সে আমি এম এস সি করেছি অথচ অ্যাস্ট্রলজি বলে কোনো শব্দই আমি পাই নি, অ্যাস্ট্রোফিজিক্স পেয়েছি। এবার আপনি আমাকে বলুন অ্যাস্ট্রলজি যে বিজ্ঞান এই তথ্যটা আপনি কোথায় পেলেন? হ্যাঁ, মানছি প্রাচীনকালে অ্যাস্ট্রলজিই ছিল আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে আলোচনা করার শাস্ত্র। তবে সেটা ছিল মানুষের ভাগ্য সংক্রান্ত শাস্ত্র, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞান থেকে আলাদা হয়ে যায়। তা, আপনি কি জ্যোতিষী? গণনা পারেন?’
‘না, তবে আমি বিশ্বাস করি আর আমি বিভিন্নভাবে এর সত্যতা পেয়েছি। তাছাড়া ইতিহাসে এমন ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত আছে যা অ্যাস্ট্রলজির স্বপক্ষে কথা বলার জন্য যথেষ্ট।’
‘তাই? আপনি তাহলে আপনার গুরুর কাছে আমাকে নিয়ে চলুন, সাথে আমার আরো জনা-দশেক বন্ধু যাবে। আপনার গুরুকে বলবেন আমাদের সবার এই বছর বা মাসটা কেমন যাবে? যদি আমাদের এক জনের ভবিষ্যদ্বাণীও মিথ্যে হয় তাহলে তাকে বলবেন তাঁর পেশা পরিত্যাগ করার জন্য।’
‘কেনো? এক-দুইজনেরটা তো ভূল হতেই পারে?’
‘তাহলে আমি আপনাকে বলছি, ভাই অ্যাস্ট্রলজি বিজ্ঞান এ-কথাটা বলার আগে আপনি বিজ্ঞানের সংজ্ঞাটা ভালো করে জেনে আসুন। বিজ্ঞান পরীক্ষিত কিংবা গাণিতিক পদ্ধতিতে প্রমাণিত সত্য, যা সর্বদা নির্ভূল মান দেবে। অভিকর্ষের মান প্রায় ১০ নিউটন, যা পৃথিবীর যে কোনো পরীক্ষক পৃথিবীর যে কোনো নির্দিষ্ট তত্ত্ব দ্বারা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করলে সবসময় একই মান আসবে। যদিও এটি কিছুটা স্থান নির্ভর, তদুপরি প্রায় একই মান আসবে, পরীক্ষাটা যেই করুক। এটা কোনো ব্যক্তি নির্ভর মান নয়। বাল্ব জ্বাললে আলো দেবে, ঐ একি বাল্ব পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় সংযোগ দিলেই জ্বলবে, যে মানুষই সংযোগ দিক। আমি বলতে চাচ্ছি বিজ্ঞান কারো কোনো ব্যক্তিগত দর্শন নয়, বিজ্ঞান হচ্ছে সার্বজনীন সত্য। আর অ্যাস্ট্রলজি? আপনি দশটা পত্রিকা কিনে দেখবেন একই রাশির জাতককে নিয়ে করা ভবিষ্যদ্বাণী দশ রকমের, কিংবা আমি দশটা জ্যোতিষীর কাছে গেলে দশ রকম করে আমার ভবিষ্যৎ বলবে। আর এমনভাবে বলবে যা সরাসরি পরীক্ষা করার কোনো উপায় নেই। আর এটাই হচ্ছে এদের ফাঁকি দেবার কৌশল। আর বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য হল যা কিছু পরীক্ষা করা যায় না কিংবা যা কিছুর গাণিতিক ভিত্তি নেই, এমনকি প্রকৃতির কোনো ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যাদানে বার বার ব্যর্থ হয়, তা কোনোভাবেই বিজ্ঞানের আওতায় পরেনা। আর যারা এ সত্য স্বীকার করেন না, হয় তারা নিজেরা ভণ্ড, নাহয় তাদের শাস্ত্র হচ্ছে অপবিজ্ঞান।…’
যাই হোক, তর্কে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হল সেটা বিষয় নয়। মনস্তাপের বিষয় হল- অগণিত মানুষ আছেন যারা নিয়ত এসব অপবিজ্ঞান কিংবা কুসংস্কারে বিশ্বাস করে প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন। একজন নগণ্য মুসলিম হয়েও আমি জানি যে, ইসলাম ধর্মে জ্যোতিষ শাস্ত্র বিশ্বাস করা সরাসরি হারাম। অথচ মুসলিম প্রধান এই দেশে ধর্মভীরু অনেক মুসলিম কিংবা যে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষই হোক, তারা এসবে বিশ্বাস করে। আর করেই বলেই এদেশে এসব অপবিজ্ঞানীরা রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পবিত্র কোরআনে বার বার বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ দাবি করেছেন- ‘শিরক সবচেয়ে বড় অপরাধ’, এবং নবীজি (সঃ) এর একটি হাদিস (আমার জানামতে মুসলিম শরীফে উল্লেখিত) আছে ভাগ্যগণনা নিয়ে, যেখানে তিনি সরাসরি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে গেলে এবং তার নিকট কিছু জানতে চাইলে ৪০ দিন ও রাত পর্যন্ত সালাত কবুল হবে না।’
যেহেতু ধর্ম নিয়ে আমার পড়াশুনা কম, তাই আমার জানা সীমিত বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়েই আমি এখন আলোচনা করার চেষ্টা করব জ্যোতিষ শাস্ত্রের বৈজ্ঞানিক বৈধতা নিয়ে।
প্রথমেই আমি অ্যাস্ট্রলজি আর এস্ট্রোনমির সংজ্ঞাটা পরিষ্কার করে দুটোকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে চাই। কারণ, অনেকে দুটো ব্যাপারকে এক করে ফেলেন কিংবা গুলিয়ে ফেলেন। অ্যাস্ট্রোনমি হচ্ছে জড় বিজ্ঞান বা পদার্থ বিজ্ঞানেরই একটি শাখা যা মূলত মহাবিশ্বের বস্তুসমূহ যেমন- গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, নেবুলা ইত্যাদি নিয়ে পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা এবং গবেষণা করে থাকে। যেমন- বিগ-ব্যাং থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের উৎপত্তি, বিবর্তন, কিংবা নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু, ব্ল্যাকহোল থেকে শুরু করে মহাজাগতিক সব ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দান করে এই অ্যাস্ট্রোনমি বা জ্যোতির্বিজ্ঞান।
বলাবাহুল্য, বিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে কিভাবে ঘটে সেটার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া, কেনো ঘটে সেটা নয়। যেমন- বিমান কিভাবে আকাশে উড়বে তা বিজ্ঞানের আবিষ্কার, কিন্তু বিমান কোথায় যাবে সেটার সাথে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই। বিমান আমেরিকায় যাবে নাকি দুবাই যাবে, সেটা নির্ধারণ করবে বিমান কর্তৃপক্ষ।
এবার মনোযোগ দেওয়া যাক অ্যাস্ট্রলজির দিকে। অ্যাস্ট্রলজি কি? যদি অ্যাস্ট্রলজির উৎপত্তির পুরো ইতিহাস আর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে লিখতে যাই তাহলে আস্ত একখানা বই লিখে ফেলতে হবে, যা এই সীমিত পরিসরের সাধারণ প্রবন্ধে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আমি সাধারণ বোধগম্য লেখনীর মধ্য দিয়ে জ্যোতিষশাস্ত্রের পরিচিত কিছু তথ্য, যা মোটামুটি সবার কমবেশি শোনা- সেগুলো পর্যালোচনা করব বিজ্ঞানের জানা কিছু তথ্য দিয়ে।
অ্যাস্ট্রলজি হচ্ছে মানুষ কিংবা পার্থিব বিভিন্ন ঘটনা সমূহের ভবিষ্যৎ বলার নিয়মনীতি বা শাস্ত্র যা মূলত মহাকাশের বস্তুসমূহ যেমন গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদির আপেক্ষিক অবস্থান ও গতিবিধি পর্যালোচনা করে প্রাচীন কালে সৃষ্ট হয়েছিল। ধারনা করা হয় প্রায় ২২০০ বছর পূর্বে এটির উৎপত্তি ঘটা শুরু হয়েছিল।
কিন্তু শুরুটা ঠিক কিভাবে হয়েছিল? ব্যাখ্যাটা মোটামুটি এরকম যে, প্রাচীন কালের মানুষ লক্ষ্য করেছিল যে সূর্য, চন্দ্র এই সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রের দ্বারা পৃথিবী বেশ প্রভাবিত। যেমন- চন্দ্রের নির্দিষ্ট সময় পরপর পূর্ণিমা কিংবা অমাবস্যায় প্রত্যাবর্তন, সূর্যের প্রভাবে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার চলমান প্রক্রিয়া অথবা ধরুন বছর ঘুরে ঘুরে ঋতুর পুনরাবৃত্তি ইত্যাদি। গ্রহ-নক্ষত্রের এই চক্রাকার প্রভাবের কারণে ধীরে ধীরে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের মনে এই ধারণা উঁকি দিতে শুরু করল যে গ্রহ-নক্ষত্র গুলো শুধু পৃথিবীর উপর নয়, হয়ত মানুষের ভাগ্যের উপরও চক্রাকারে মাসে মাসে কিংবা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর প্রভাব ফেলে। তারপর ধীরে ধীরে সৌরজগতে অবস্থিত জানা গ্রহ-নক্ষত্র গুলোর বিভিন্ন অবস্থানকে নিয়ে হিসেব-নিকেশ করে একেকটির একেক নাম, চিহ্ন আর অর্থ দিয়ে যে নকশা চিত্র, সংখ্যাতত্ত্ব বা বর্ষপঞ্জি তৈরি হল তাই হচ্ছে আজকের জ্যোতিষশাস্ত্র। জ্যোতিষশাস্ত্রের ভবিষ্যতদবানী করার রয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন রাশিচক্র, সংখ্যাতত্ত্ব ইত্যাদি।

যাই হোক। জ্যোতিষশাস্ত্র একদিনে নয়, ধীরে ধীরে এটি বিকাশ লাভ করেছে যা আজও একধরনের মানুষের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য ‘বিজ্ঞান’। যে সমস্ত সভ্যতাগুলো এই অ্যাস্ট্রলজির বিকাশে গভীরভাবে অবদান রেখেছে সেই সভ্যতাগুলো হলো- ভারতীয় সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা, মায়ান সভ্যতা ইত্যাদি। তবে পশ্চিমা অ্যাস্ট্রলজি, যা বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয়, এটির গোড়াপত্তন ঘটেছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১৯-১৭ অব্দে, এবং প্রাচীন কয়েকটির মধ্যে পশ্চিমা অ্যাস্ট্রলজিকে একটি বলে গণ্য করা হয়। আর এই পশ্চিমা অ্যাস্ট্রলজিই পরবর্তীতে বিস্তার লাভ করে প্রাচীন গ্রীস, রোম, মধ্যপ্রাচ্যে এবং শেষ দিকে একেবারে পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত। সমকালীন পশ্চিমা অ্যাস্ট্রলজি মূলত রাশিচক্র নির্ভর শাস্ত্র যা বর্তমান বিশ্বের প্রায় বেশির ভাগ অ্যাস্ট্রলজারদের দ্বারা সর্বাধিক সমাদৃত ও ব্যবহৃত হয়।
এবারে দেখা যাক বিজ্ঞান এই অ্যাস্ট্রলজি নিয়ে কি বলে? বিজ্ঞান অনেক আগেই একে কোনও চর্চা করার মতো সাবজেক্ট হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাকচ করে দিয়েছে। কেউ শিখতে চাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিখতে পারেন, কোনো আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিকে কোনও সাবজেক্ট হিসেবে কখনো পড়ানো হয় না। এর কারণ, এর সুনির্দিষ্ট কোনো সূত্র বা প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত নির্ভুল কোনো নিয়মনীতি নেই। আর তাছাড়া এটিকে নিয়ে অনেকবার অনেক পর্যালোচনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। এবং অবশেষে একে অপবিজ্ঞান হিসেবে চূড়ান্তরুপে বাতিল বলে চিরতরে বর্জন করা হয়েছে।
যেমন- ১৯৮৫ সালে ন্যাচার জার্নালে (ব্রিটিশ বিজ্ঞান জার্নাল যে বিশ্বের সব বড় বড় গবেষকদের গবেষণাপত্র বা বিজ্ঞানমূলক প্রবন্ধ ছাপা হয় এবং নির্ভরতা ও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে র্যাঙ্কিয়ে প্রথম দিকে আছে) প্রকাশিত এক নিবন্ধে প্রকাশ করা হয় যে সম্প্রতি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ২৮ জন অ্যাস্ট্রলজারদের নিয়ে একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বিখ্যাত পদার্থবিদগনও উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষায় দেখা গেল বিভিন্ন জনের বৈশিষ্ট্য ও ভবিষ্যৎ একেকজন একেক রকম করে বলছেন এবং সবগুলোর মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে পদাথবিদগণ সরাসরি ঘোষণা দিলেন যে, এটি সম্পূর্ণ একটি অ-নির্ভরযোগ্য যাদৃচ্ছিক ব্যাপার, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং এটি একটি অপবিজ্ঞান বৈ আর কিছুই নয়। (সুত্রঃ উইকিপিডিয়া)
প্রাচীনকাল থেকেই অ্যাস্ট্রলজি বিতর্কিত হয়ে আসছিল। কারণ, ভূ-প্রকৃতির উপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে মানুষের ভাগ্যের উপর এর প্রভাব রয়েছে, এটি নিতান্ত হাস্যকর কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। যেমন- যখন কোনো ভূমিকম্পে প্রায় হাজার বা লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়, তাহলে এরা বারোটি ভিন্ন ভিন্ন রাশির জাতক হওয়া সত্ত্বেও একই দিনে একই কায়দায় কেনো সবাই মৃত্যুবরণ করে? জ্যোতিষীরা হয়ত উত্তরে বলবেন- ‘নগর পুড়িলে কি দেবালয় এড়ায়?’
আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। যেকোনো একটু দৈনিক জাতীয় পত্রিকা কিনে আপনি যে রাশির জাতক তা নিয়ে আজকের দিনটা কেমন যাবে তা পড়ুন। ধরুন, আপনি বৃশ্চিক রাশির জাতক এবং জ্যোতিষী মশাই বলে দিয়েছেন যে, বৃশ্চিক রাশির জন্য আজ যানবাহনে চড়া শুভ নয়। এখন প্রশ্ন হল- বাংলাদেশে মানুষ বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি। হিসেবের সুবিধার্থে ধরুন দেশে মানুষ আছে ১২ কোটি। তাহলে গড়ে এখন দেশে বৃশ্চিক রাশির জাতক রয়েছে এক কোটি। তাহলে এক কোটির মধ্যে নূন্যতম এক-লাখ মানুষ যদি আজ যানবাহন চলাচল করে, তাহলে ধরুন সারাদেশে ২/৩টা যানবাহন দুর্ঘটনার কবলিত হতে পারে। তারমানে বাকি অন্যান্য যানবাহনের নিরানব্বই হাজার নয়শত সাতানব্বই জনের কিছুই হয় নি।
এবার দেখা যাক, দুর্ঘটনার শিকার যারা হয়েছেন তাদের ব্যাপারটা। তিন গাড়িতে তো তিনজন বৃশ্চিক জাতক হতাহত হয়েছেন, কিন্তু বাসে যে আরো বিভিন্ন রাশির জাতক যাত্রী ছিলেন তারা কেনো হতাহত হলেন? আপনার জন্য? নাকি গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি, ড্রাইভারের অদক্ষতা কিংবা সড়ক পরিবহন সংক্রান্ত সমস্যা? কোনো জ্যোতিষীকে জিজ্ঞেস করুন এ-ব্যাপারে। তিনি উত্তর দেবেন, যিনি গণনা করেছেন তার ভুল হয়েছে, শাস্ত্র ঠিকই আছে। আর তাছাড়া এরা এমনভাবে আপনার স্বভাব-বৈশিষ্ট্য বলবে, দেখবেন গড়ে প্রায় সব জাতকেরই প্রায় একই বৈশিষ্ট্য। আর এমন সব ভবিষ্যদ্বাণী করবে যে, এই হালকা-পাতলা বাণীগুলো আলাদাভাবে পরীক্ষা করার উপায় নেই।
আপনি নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন। যান ওদের কাছে। শুভ সংখ্যা, শুভ বার, তারিখ- এগুলো জেনে আসুন আর পরীক্ষা চালিয়ে যান। ধীরে ধীরে আপনার নিকট এদের ফাঁকিগুলি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো কোন ধরনের মানুষ এই সমস্ত জ্যোতিষীদের কাছে যায়?
সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে যে-সমস্ত মানুষদের কথা উল্লেখ করেছেন, সেই অনুযায়ী আমি যদি সহজে বলে দিতে চাই, তাহলে বলতে হবে- সমাজের ঐ সমস্ত মানুষ, যারা বিজ্ঞান সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান নেই, অর্থাৎ মাধ্যমিক লেভেলের বিজ্ঞান যারা জানে এরা, আবার মুসলিমদের মধ্যে যারা নিজের ধর্ম সম্পর্কে মাধ্যমিক পর্যায়ের জ্ঞান যারা রাখেন তারা। এককথায়, আধা বিজ্ঞান আর আধা ধর্ম যিনি জানেন এরা বেশি ঐসব অতীন্দ্রিয় ভণ্ড মানুষদের দ্বারে যান। যান ভণ্ড পীর-ফকিরদের কাছে। আর নিয়ে আসেন তাদের কাছ থেকে ভাগ্য বদলে দেবার তাবিজ-কবচ। আর তাছাড়া হতাশাগ্রস্ত মানুষ, যারা স্রষ্টার দেওয়া কর্মক্ষমতার উপর আস্থা নেই, নেই নিজের উপর আত্মবিশ্বাস, কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগেন, ভবিষ্যৎ আগে জেনে নিয়ে সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে নিশ্চয়তার গ্যারান্টি চান, এরাই শেষ পর্যন্ত অ্যাস্ট্রলজারদের দ্বারস্থ হোন। কোনো আলেম কোনোদিন অ্যাস্ট্রলজারদের কাছে যান না এবং কোনো বিজ্ঞানীও অ্যাস্ট্রলজারদের নিকট যান না। যিনি যত বেশী বিজ্ঞান জানেন অ্যাস্ট্রলজির প্রতি তার বিশ্বাস ততো কম।
যাই হোক, এই প্রবন্ধের সমাপ্তি এখানেই টানছি। ভালো থাকবেন সবাই। সবার জন্য রইল শুভ কামনা।
[বিঃদ্রঃ প্রবন্ধটি আমার লেখা 'জানা বিজ্ঞান অজানা বিজ্ঞান'- গ্রন্থ থেকে প্রকাশ করলাম। বইটি ২০১৭ সালের বইমেলায় নাগরী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫

বিজন রয় বলেছেন: এতদিন তো বিজ্ঞানই জেনে এসেছি।

০৯ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:২১

অনন্ত নিগার বলেছেন: যেকোনও তত্ত্বেই আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। এটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, মানে এই আধুনিক যুগে, প্রমাণ ছাড়া (হাতে-কলমে প্রমাণ না থাকলে নূন্যতম পক্ষে গাণিতিক প্রমাণ তো দেখাতেই হবে) বিজ্ঞান কোনও কিছুকেই গ্রহণ করতে নারাজ। তাই দর্শনকে বিজ্ঞান এখন তাদের গন্ডির আওতা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। এমনকি যা কিছু আপনি দেখাতে পারবেন না, (যেমন- কোনও আলৌকিক সত্ত্বা) সেটা নিয়ে বিজ্ঞান মাথা ঘামাবে না। কারণ, পরীক্ষা ও গাণিতিক যুক্তি বহির্ভূত সব জিনিশকে বিজ্ঞান এখন দর্শন অথবা মনোবিজ্ঞানের উপর ছেড়ে দিয়েছে।

২| ০৯ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩

নতুন বলেছেন: চমতকার..... এমন লেখা আরো দরকার যেটা সাধারন মানুষকে সচেতন করবে।

মানুষ যখন নিজে সত্য না খুজে অন্যের কথা বিশ্বাস করে তখনই এই সব ধান্দাবাজীর প্রচলন হয় সমাজে।

আমাদের দেশে এই রকমের অনেক জিনিসেই মানুষ বিশ্বাস করে।

আরেকটা প্রচলিত জিনিস হলো.... পীর/মাজার, ঝাড়/ফু আর হোমিওপ্যাথি :)

০৯ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০৮

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার সাথে একমত আমিও। অবশ্যই আরও প্রচলিত কুসংস্কার নিয়ে হাজির হব সামুতে।

৩| ০৯ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: সাধু সন্যাস গণক
এরা ধর্ম বীরু মানুষদের অনেক দিন ধরেই ঠকিয়ে আসছে ।
যত দিন তারা বিজ্ঞান কে ভালভাবে না বুঝবে তত দিন তারা ঠকতেই থাকবে।
জানা অজানায় অনেক কিছু জানা হলো ।
আমার ব্লগে একবার ঘুরে আসার অনুরোধ রইল।

০৯ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯

অনন্ত নিগার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে লেখটি পড়ার জন্য। অবশ্যই আপনার ব্লগে ভিজিট করব।

৪| ০৯ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:২১

রাজীব নুর বলেছেন: লালবাগ শাহী মসজিদের ইমাম বলেন, প্রথমত ইসলামে ধোকবাজদের কোন জায়গা নেই দ্বিতীয়ত আল্লাহকে দূরে ঠেলে দিয়ে রিযেক ও ভাগ্য বদলানোর জন্য পাথরকে বিশ্বাস করলে আল্লাহর সাথে শিরেক করা হবে।

০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:১১

অনন্ত নিগার বলেছেন: সঠিক উপদেশই দিয়েছেন ইমাম।

৫| ০৯ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সব যুগেই কিছু বেকুব থাকে। তাদের জন্যই জ্যোতিষ শাস্ত্র বেঁচে আছে...

০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:১২

অনন্ত নিগার বলেছেন: দারুণ বলেছেন।

৬| ১০ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৩৯

গরল বলেছেন: বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত মানুষ তাবিজ গলায় দেয়, ঝাড়-ফুক করে, পীর-ফকির-দরবেশ এর কাছে যায়। এমনকি সরকার পর্যন্ত ইউনানি, আয়ুর্বেদী ও হোমিওপ্যাথ মেডিক্যাল কলেজ খুলে অপবিজ্ঞান চর্চা করছে। কোনদিন দেখবেন অ্যাষ্ট্রলজী কলেজ খুলে ফেলেছে সরকার।

১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ১:১২

অনন্ত নিগার বলেছেন: হাহ! হাহ! হাহ! বিচিত্র কিছু নয় ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.