নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্প ও সাহিত্য জগতের এক তৃষ্ণার্ত পথিক।

অনন্ত নিগার

বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য বদলে দেবে আপনার জীবন!

অনন্ত নিগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মশার আদ্যোপান্ত: মশা কি সবাইকে সমানভাবে কামড়ায়?

০২ রা অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধরুন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে গল্প করছেন রাতেরবেলা কোনও ডোবা বা জলাশয়ের ধারে। কিছুক্ষণ পরপরই মশা আপনাকে কামড়াচ্ছে, আর আপনিও বারবার হাত-পা নাড়ছেন, শরীর চুলকাচ্ছেন। আপনি খেয়াল করে দেখলেন যে, আপনার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদেরকে আপনার মত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে তাদেরকে একটু কম কামড়াচ্ছে। এরইমধ্যে ব্যাপারটা খেয়াল করে বন্ধুদের কেউ একজন মন্তব্য করেই ফেলল,’ কীরে? এতো লাফালাফি করছিস কেনো? আমাদেরকেও তো কামড়াচ্ছে কমবেশি। আমরা তো এতো ছটফট করছি না!’ আসলে মূল ব্যাপারটা হল- মশা কিন্তু আপনাকে আপনার বন্ধুবান্ধবদের চেয়ে একটু বেশী কামড়াচ্ছে, যা আপনি কিংবা আপনার বন্ধুরা হয়তো টের পাচ্ছেন না। কিন্তু প্রশ্ন হল- মশা আপনাকেই কেন এতো পছন্দ করছে? কী আছে আপনার শরীরে, কিংবা রক্তে? নাকি গোটা ব্যাপারটাই কাকতলীয়?
প্রশ্নের জবাবটি জানার আগে প্রথমে মশা সম্পর্কে চলুন অল্পবিস্তর জেনে নেওয়া যাক।

মশাঃ প্রাণীজগতের সবচেয়ে বড় পর্ব আর্থ্রোপোডা-এর মাছি বর্গের অন্তর্ভূক্ত প্রাণী হচ্ছে মশা। মশা, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘Mosquito’- শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ mosca এবং diminutive নামক দুটি শব্দ থেকে, যেগুলোর অর্থ হল যথাক্রমে ক্ষুদ্র এবং মাছি। অর্থাৎ Mosquito শব্দটির অর্থ হল- ছোট মাছি বা উড়তে সক্ষম এমন ক্ষুদ্র পতঙ্গ।
মশাজাতীয় পতঙ্গের প্রথম ফসিল পাওয়া যায় কানাডায় এক টুকরো অ্যাম্বরের (অ্যাম্বর হল একধরনের ছোট গাছ, যার গা থেকে আঠালো একধরনের কেলাসিত পদার্থ নিঃসৃত হয় এবং এই কেলাসিত পদার্থ লক্ষ লক্ষ বছর অক্ষত থাকে) ভেতর। অ্যাম্বরের ওই টুকরোর ভেতর আটকে মরে যাবার পর সেই মশাজাতীয় পতঙ্গটি অক্ষত থেকে যায় প্রায় ৭৯ মিলিয়ন বা ৭.৯ কোটি বছর। বার্মিজ একটুকরো অ্যাম্বরে পাওয়া একটি প্রাগৌতিহাসিক মশার ফসিলের বয়স বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন প্রায় ৯০-১০০ মিলিয়ন বছরের মতো। তবে গবেষকদের মতে, মশার পূর্বপুরুষদের উৎপত্তি হয়তো আরও আগে হয়েছিল। ফসিল ছাড়াই বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন আজ থেকে প্রায় ২২৬ মিলিয়ন বছর আগে মশার পূর্বপুরুষদের উদ্ভব ঘটেছিল।
পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩,৫০০ প্রজাতির মশা আবিষ্কৃত হয়েছে, যাদের দেহের মূল গঠন মোটামুটি একই হলেও স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যে এদের ভিন্নতা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ প্রজাতির মশারাই কিন্তু প্রাণিদের রক্ত পান করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে কেবল এরা যে মানুষের রক্ত পান করে এমন নয়। কিছু প্রজাতি স্তন্যপায়ী প্রানীর রক্ত, কিছু প্রজাতি সরীসৃপ কিংবা উভচর, কিছু প্রজাতি আবার পাখির রক্ত পান করে। এমনকি মাছের রক্ত পান করে বেঁচে থাকে এমন প্রজাতির মশাও আছে! তবে জেনে রাখা উচিত, রক্তচোষা মশাদের মধ্যে শুধুমাত্র স্ত্রীমশারাই জীবের শরীর থেকে রক্ত পান করে। এর কারণ হচ্ছে, ডিম পাড়া কিংবা বংশবিস্তারের জন্য স্ত্রী মশাদের বাড়তি প্রোটিনের প্রয়োজন হয়, যা মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীর রক্তে থাকে। যে সমস্ত প্রজাতিরা রক্ত পান করেনা, এরা আবার উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। এরা ফুলের রস, মধু কিংবা গাছের দেহ থেকে বিভিন্ন প্রকারের রস শোষণের মাধ্যমে নিজেদের খাদ্য সরবরাহ করে।

দেহ এবং বংশবিস্তারঃ অনেকগুলো পা বা উপাঙ্গবিশিষ্ট মশাদের মাথায় থাকে একটি লম্বা শুঁড়, যা দিয়ে এরা প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে। মাথায় থাকে একজোড়া এন্টেনা, যা সংবেদী তথ্যের রিসেপ্টর হিসেবে কাজ করে। পুরুষ-মশাদের মাথা স্ত্রী-মশাদের থেকে অধিক লোমশ হয়।
মশারা বংশবিস্তারের জন্য বেছে নেয় বদ্ধ পানি, ড্রেন, ডোবা, হ্রদ, জলাশয়, পানির কাছাকাছি জায়গা এবং জলজ উদ্ভিদকে। একটি স্ত্রী-মশা তার জীবনচক্রে প্রায় ১০০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। এ-সমস্ত জায়গায় ডিম পাড়ার পর ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশায় পরিণত হতে প্রায় ৪০ দিনের মত সময় অতিবাহিত হয়।
একটি পুরুষ মশার আয়ু সাধারণত ৫-৭ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিপরীতে একটি স্ত্রী মশা ডিম দেবার পরও প্রায় এক মাসের মতো বাঁচতে পারে। তবে বেশীরভাগ স্ত্রী-মশারাই এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাঁচে।

মশা যে সমস্ত রোগ ছড়ায়ঃ সব মশার কামড়ে যে মানুষ রোগে আক্রান্ত হবে এমন নয়। যে সমস্ত মশা রোগজীবাণু সংক্রামক, এদের কামড়েই মানুষ রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন-এডিস মশা। জীবাণুবাহী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা ভাইরাস, পীতজ্বর ইত্যাদি রোগ হতে পারে। সাধারণত মশার কামড়ে ত্বকে লাল দাগ পরে বা চুলকানির উদ্রেক হয়। এর কারণ হচ্ছে, মশা যখন ত্বকে শুঁড় ঢুকায় তখন শুঁড়ের মধ্যে লেগে থাকা লালা ত্বকে লেগে যায়, যা চুলকানির উদ্রেক ঘটায়।
হঠাৎ হঠাৎ মশাবাহী নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব হয় কেন?
সব মশারা কিন্তু জীবাণু বহন করেনা। কিছু পরিচিত জীবাণুবাহী মশা প্রায়ই মানুষের দেহে রোগের সংক্রমণ ঘটায় যেমন- এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। কিন্তু হঠাৎ নতুন করে মশার দ্বারা কোনও রোগের আবির্ভাব ঘটে থাকে কেন?
জীবাণুবাহী বেশীরভাগ মশার আবাসস্থলই হচ্ছে বনজঙ্গল। এদের দেহে অনেক অজানা ভাইরাস থাকে। এধরণের মশাদের বলা হয় চলক মশা। যদি কোনও কারণে এদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যায়, মানে বনজঙ্গল, ঝোপঝাড় কেটে উজাড় করে ফেলে হয়, তখন এইসব চলক মশারা এসে হাজির হয় লোকালয়ে। এদের কামড়েই মানুষ অজানা ভাইরাসঘটিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং একজন থেকে আরেকজনের মাধ্যমে রোগটি সংক্রমিত হতে থাকে।

মশারা কি সব মানুষকে সমানভাবে কামড়ায়?

এবার আসা যাক আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর প্রসঙ্গে। নাহ। রক্তচুষা মশারা সব মানুষদের দ্বারা সমানে আকৃষ্ট হয়না। তারা তাদের পছন্দের শিকারকেই বেশী কামড়ায়। এখন প্রশ্ন হল- পছন্দের শিকার কারা? কিংবা কীসের ওপর ভিত্তি করে চলে তাদের এই যাচাই-বাছাই?
আগেই বলেছি, মশাদের মাথায় একজোড়া এন্টেনা থাকে যা রিসেপ্টর হিসেবে কাজ করে। এই এন্টেনা দিয়ে এরা প্রায় ১০০ ফুট দূরে থাকা কোনও মানুষের শরীরের রক্তের ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পারে। মানুষের রক্তের গ্রুপ মূলত চারটি। সেগুলো হল- A, B, AB এবং O । মশারা বেশী আকৃষ্ট হয় O গ্রুপের রক্তবহণকারী মানুষের দ্বারা। এবং তাদের সবচেয়ে কম পছন্দের রক্তের গ্রুপ হল A।
রক্তের ঘ্রাণ ছাড়াও মশারা মানুষের প্রশ্বাস হতে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড দ্বারা আকৃষ্ট হয়। যে যত বেশী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে সে ততো বেশী আক্রান্ত হবে। এক্ষত্রে শিশুরা কম আক্রান্ত হবে, কারণ শিশুদের ফুসফুস ছোট হওয়ায় তারা কম পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। এছাড়াও মানুষের ঘামের গন্ধ দ্বারাও এরা এদের শিকারকে শনাক্ত করে। অতিরিক্ত ঘামেন যারা, তাদেরকেও এরা বেশী কামড়াতে পারে। যাদের ত্বকে ল্যাক্টোজেনের মাত্রা বেশী, তাদের দ্বারাও এরা বেশী আকৃষ্ট হয়। রক্তের ঘ্রাণ, ফুসফুস হতে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘ্রাণ, ঘাম এবং ত্বকের ল্যাক্টোজেন- এর সবই এরা শনাক্ত করে নিজেদের মথায় থাকা এন্টেনা দ্বারা।
তো এই হল মশার আদ্যোপান্ত। আশা করি এর মধ্যেই আপনাদের অনেক জানা প্রশ্নের অজানা উত্তর পেয়ে গেছেন।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং এনিম্যালস ডট মম ডট মি অবলম্বনে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: চমশার উপরে আমার অনেক রাগ।
ওরা কামড়ায় তাতেও ওদের আমি ক্ষমা করি। কিন্তু ওরা কঠিন অসুখ বিসুখ ছড়ায় এটা কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:২৬

অনন্ত নিগার বলেছেন: কানের কাছে মশার ভনভন শব্দটাও বিরক্তিকর।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৪

মিঠু পারভেজ বলেছেন: মশার কামড়ে আলাদা একটা ছন্দ খুজে পাওয়া যায় " কথাটা আমার এক গাঞ্জা খোর বন্ধু বলেছিলো।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:২৫

অনন্ত নিগার বলেছেন: কী বুঝে তিনি বলেছিলেন কে জানে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.