নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই

নীহারিক০০১

বিশ্বাস,বন্ধুত্ব,ভালোবাসায়পূর্ণ পৃথিবীর প্রত্যাশায়

নীহারিক০০১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি! আমার মেয়েবেলা....আমার কলোনি বেলা....

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২১

পাতার উপর পড়ন্ত বিকেলের রৌদ্রজ্জ্বল ছায়া,কচি শিমের পত্র দল গাছের গায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত...শীত আসেছে..একটি কাঠ পিঁপড়া খাদ্যের খোঁজে এঁকেবেঁকে উপরে উঠছে তো উঠছে..সেও জানেনা তার গন্তব্য..একটা দিন যাচ্ছে নতুন অভিজ্ঞতায়।একটা নতুন দিন আসে অজানা আশংকায়,যখন স্কুলে পড়তাম তখন সময়টা কতো মধুর ছিল কোন টেনশন নেই কোন দায়িত্ব নেই।আমরা বড় হয়েছি কলোনিতে।চট্টগ্রাম এর ব্যস্ততম এলাকায় এমন ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ কল্পনাই করা যায় না।এখানেই আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে।..আমরা থাকতাম তিনতলায়।বারান্দায় দাঁড়ালেই বিশাল আকাশ। আমার জানালা দিয়ে সামনের রাস্তা দেখা যেত...দেখতাম বিচিত্র মানুষের আনাগোনায় গোধূলি বেলা।আর সামনের বিশাল মাঠ আর সারি সারি নারিকেল গাছ। আশে পাশে ছিল আম,বড়ই,চালতা,আতা,পেয়ারা আরো হরেক গাছের সারি আর ছিল নীলকন্ঠ ফুল..ভীষণ প্রিয় ছিল আমার এখন আর দেখিনা। আমার স্কুল ছিল দূরে আম্মুর সাথে যেতাম আর আসতাম একাই!নিজেকে খুব সাহসী মনে হতো তখন।বাসায় ফেরার পথের সব অলিগলি তখনি চিনে ফেলেছি..এ এক বিশাল অর্জন।দুপুরের পর হতো আমার সুখের সময়।আমাদের বিশাল একটা দল ছিল ছেলে মেয়ে সবাই আমরা দল বেঁধে খেলতাম।এমন কোন খেলা নেই আমরা খেলিনি।দাঁড়িয়াবান্দা এখনকার ছেলে মেয়েরা নামই হয়েতো জানেনা।বউছি,পাখির ডিম,মাছ মাছ,গোল্লাছুট,ফুল পাতা,এক্কাদোক্কা,ছোঁয়াছুঁয়ি,লুকোচুরি,ক্রিকেট,ব্যাডমিন্টন,ফুটবল আরো অনেক নাম মনেই পড়ছে না। কত জানালার কাঁচ আমরা ভেঙেছি!কোন কোন ছেলেরা মেয়েদের সাথে খেলবে না বলে গোঁ ধরে থাকত,শেষ পর্যন্ত দেখা যেত বেচারা রা মন খারাপ করে মসজিদের বারান্দায় বসে বসে আমাদের খেলা দেখছে।আর ফলের মৌসুমে চুরির ধুম পড়ে যেত।আমাদের কলোনির লাগোয়া আরো একটি কলোনি আর অফিস এর বাউন্ডারি ছিল।ওদের প্রচুর আম আর বড়ই গাছ..আমাদের কাজ ছিল ঐ কাঁটাতার বেয়ে উঠা আর গাছের ফল চুরি।আমরা যারা খুব উঁচু গাছ গুলোতে উঠতে পারতাম না তারা হাভাতের দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে থাকতাম কখন একটি আম এসে পড়বে।আর ছিল দোলনায় দোলার হিড়িক..আম গাছের ডালে রশি ঝুলিয়েছিলাম সবাই মিলে আর রীতি মতো লাইন দিয়ে নির্দিষ্ট টাইমের জন্য আমরা চড়তে পাড়তাম।দিন শেষে খুলেও নিতাম যাতে চুরি না হয়।চোর কিন্তু আমরাই!!আর রোজায় একমাস স্কুল বন্ধ থাকত ঐ সময় প্রতিদিন আমাদের ঈদের দিন..প্রতিদিন পিকনিক।বাসা থেকে কেউ আলু কেউ ডিম কেউ চাল নিয়ে আসতাম।(বাসায় গিয়ে মার ও খেয়েছি কতবার তাই)!কেউ আনত আগুন জ্বালানোর কাঠি,কাগজ,ডাল যা পেত তাই।তাহলে ভাগ পেত!!আমাদের ছিল ছোট ছোট পাতিল,রান্না প্রায় অখাদ্য ছিল।তবুও আমাদের কাছে অমৃত মনে হতো।একতলা বিল্ডিং এর ছাদে চলত আমাদের রান্না।নিচে থাকত এক বড় ভাই ওনি ঢাকায় পড়তেন।রোজায় আসতেন আমরা তার হাড়জ্বালা করে ছাড়তাম।যত রকম দাপাদাপি করা যায়।বেচারা অতিষ্ঠ হয়ে ছাদে উঠে আসতেন আর আমাদের কান ধরে উঠবস করে শাস্তি দিতেন।আমরা বুঝতে পারলেই পড়িমরি করে পাইপ বেয়ে..কার্ণিশ বেয়ে পগার পার।অবশ্য আমাকেও কবার কান ধরেতে হয়েছিল!!তবু্ও চলত আমাদের এই পিকনিক।অনেকে ছিল আরো ডানপিটে আমাদের কলোনিতে মুরগী পালেন অনেক আন্টি!ওরা সেই মুরগী দিন দুপুরে নিজেরাই রান্না করে খেয়ে ফেলত।মুখ বন্ধ করার শর্তে আমরাও ভাগ পেতাম্।ওটা ছিল আমাদের সিনিওর গ্রুপ।পানি দেওয়ার ট্যাংক ছিল উঁচু ওটার সিঁড়ি হলো আমাদের প্লেনের সিঁড়ি কতবার ওটায় উঠে টা টা দিয়ে বিদেশ গেছি!! B-) আর ছিল ভয়ের জায়গা আমরা ভুতের ভয় পেতাম ওখানে নাকি শাশ্বান ছিল!জঙ্গল ছিল জায়গাটা আমরা সত্যিই ভয় পেতাম অন্যদের ও ভয় দেখাতাম!এখন জায়গা টা পরিস্কার করা হয়েছে।এখন আর ভয় নেই।আমাদের কতো বিচিত্র পাখি আছে..চড়ই,টিয়া,ডাহুক,দোয়েল,শালিক আরো কত কি এখনো ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে।আর ছিল আচার চুরি আমরা তক্কে তক্কে থাকতাম কে আচার শুকোতে দিচ্ছে।চামচ দিয়ে সব গুলো বয়াম খুলে আমাদের চেখে দেখতে হতোই!!মাঝে মাঝে বিকেলে হুজুর পড়াতে আসতেন কত কি বলতাম পেট ব্যাথা!জ্বর জ্বর লাগছে!!যখন পড়তাম মন থাকতো মাঠে।হুজুর আসার পথে কাঁদো কাঁদো স্বরে বন্ধুরা অনুরোধ করত আজ যেন না পড়ান বা তাড়াতাড়ি ছুটি দেন।দুপুর ছিল আমার প্রিয় সময়..হলুদ রোদের সোনালি আলোর খেলায় পাতা ঝরার দিন দেখেছি কতো..।এখনো দুপুর হলে আমার শৈশব এসে দাঁড়ায় যেন,দুপুরের আয়নায় আমি আমার ছেলেবেলাকেই দেখি।কৃষ্হ চূড়ার দিনে পুরো পথ হয়ে যেত লাল আর লাল।ফুলের রেণু দিয়ে কাটাকাটি খেলতাম।ফুটে থাকা রক্তবর্ণে পুরো আকাশ আর পথ যেন ধুয়ে যায়।আর রাতে জোনাকির খেলা।সাদা সাদা ঝকমকে টর্চলাইটের পিছনে কতো দৌড়েছি।কি অসাধারন এই সময়।আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম।আমার এ মুগ্ধতা এখনো কাটেনি।শহরের প্রাণহীন জগতে আমরা ছিলাম প্রাণে প্রাণে ভরপুর।এখন কে কোথায় আছে খোঁজ ও নেই।আমরাই এখন সবচেয়ে পুরনো বাসিন্দা।যাদের সাথে খেলেছি কে কোথায় হারিয়ে গেছে..স্মৃতির দেয়ালে বন্দী হয়ে শুধু সময়গুলো আছে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩০

নীল ভোমরা বলেছেন: আমারও ছেলেবেলা কেটেছে কলোনীতে। কলোনীর লাইফ যে কি মজার...সেটা তারা বুঝবেন না, যাদের ছেলেবেলা কলোনীতে কাটেনি! সেই সব বন্ধুদের আজ কে কোথায়!...... আপনার পোস্ট পড়ে নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসলো। শুভকামনা!

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৭

নীহারিক০০১ বলেছেন: আমি ও প্রায়ই নস্টালজিক হই!!!

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৭

অসামাজিক শাহেদ বলেছেন: কোন কলোনী বললেন না তো । অনেক কিছুই মিলে যাচ্ছে

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৮

নীহারিক০০১ বলেছেন: আপনি কই থাকতেন!!!তাই না হয় বলেন!

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৮

নীহারিক০০১ বলেছেন: আপনি কই থাকতেন!!!তাই না হয় বলেন!

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৪

কস্কি বলেছেন: সবই শুধু স্মৃতি!!! :(


সবকিছুকেই কোথাকার কোন এক দূরদেশে হারিয়ে ফেলেছি!! :( :(( :(

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৮

নীহারিক০০১ বলেছেন: হুমম!!

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:১৩

রামন বলেছেন:
আমারও শৈশব বেলার একটি পর্ব কেটেছে মতিঝিল এ জি বি কলোনিতে। সে সময়ের এমন কিছু স্মৃতি মনে গেথে আছে যা ভুলবার নয়। কলোনির সমবয়েসী বন্ধুদের ছাড়াও বড় আপাদের সাথে ছোয়াছুয়ি, এক্কাদোক্কা কানামাছি এ রকম কতই না খেলা খেলেছি যা এখনও মানসপটে ভেসে আসে।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৯

নীহারিক০০১ বলেছেন: এই জীবন ভুলবার নয়!!খালি মন পোড়ায়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.