নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তো আমিই।

আধারে আমি৪২০

আধারে আমি৪২০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ভূত দর্শনের কাহিনী....................

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩০

ছোটবেলা থেকেই ভূত দেখার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল আমার। অথচ আমি ভূতকে ভয়ানক রকমের ভয় পেতাম। এখন যে পাই না, সেটা না, কিন্তু আগের চেয়ে অনেক কম। ছোটবেলা থেকেই দাদা দাদীর কাছে অনেক রকম ভূতের কথা শুনতে শুনতে মনে ভুতের ভয় নামক একটা জিনিস স্থান পেয়ে গেছে। অথচ ভূত সম্পর্কে আমি সংশয়বাদী ছিলাম। অনেক রকম ভূতের কথা বললাম, কারন গ্রামের মানুষের কাছে হাজারো আকার আকৃতির ভূতের গল্প শোনা যায়। কালো ভূত, সাদা ভূত, এক চোখা ভূত, মাথা বিহীন ভূত, আবার কোন ভূতের হাত পা নেই। কোন ভূত তাল গাছের চেয়ে লম্বা তো কোন ভূত ইদুরের চেয়ে ছোট। আরো হরেক প্রকারের ভূত নাকি আছে এই দুনিয়ায়। ভূতের স্ত্রী লিঙ্গ নাকি পেত্নী। পেত্নীদেরও আকার আকৃতিও নাকি কিম্ভুদকিমাকার। এছাড়াও জ্বীন আর পরী নামে আরো দুই অশরীরি প্রজাতি নাকি বিদ্যমান। যাই হোক, আমার ভূতে বিশ্বাস যেটুকুই হোক না কেন? ভয় ছিল পুরোপুরি, এখন কিছুটা লঘু হলেও একেবারে কাটিয়ে উঠতে পারি নি।
এবার আসি মুল ঘটনায়। ঘটনাটা ২০০৬-০৭ সালের দিকের। তখন আমি ক্লাশ নাইন কি টেনে পড়ি। তখনো আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসি নি। আমাদের বাড়ী অত্যন্ত প্রতন্ত এলাকায়, সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। তো, একদিন সন্ধ্যাবেলা কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে পড়তেছিলাম। হঠাৎ এক ভাইজ্তা এসে বলল- বাবা, টর্চলাইট টা নিয়ে আয় তো, রত্নাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। রত্না হলো আমার ভাতিজি। সাথে সাথে লাইটা কোনমতে নিয়ে দিলাম দৌড়, তাদের বাড়ীর দিকে। ততক্ষনে পাড়ার অনেক মানুষই রত্নাকে খোজা শুরু করে দিয়েছে। আমরাও কয়েকজন মিলে খোঁজা শুরু করলাম। প্রথমে সবার বাড়ী বাড়ী খুঁজলাম, পাওয়া না যাওয়ায় বাড়ীর পাশের জঙ্গলে খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ তার বাবার গগন বিদারী চিৎকার শুনে সেদিকে ছুটে গেলাম। বললাম- রত্না কই? বলল- গাছের উপড়ে। গাছের উপড়ে লাইট মেরে যা দেখলাম- সেটার জন্য কেহই প্রস্তুত ছিল না আর আমি তো ছিলামই না। দেখি গাছের একটা শাখা থেকে তার জিহ্বা বের করা নিথর দেহটা ঝুলছে। শুধুমাত্র কয়েক সেকেন্ড সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম। তার পরেই সেখান থেকে বের হয়ে আসি। কি কারনে আত্মহত্যা করেছে, সেটা কেহই জানে না। অনেকে বলতে লাগল- তার উপড় জ্বীনের আছড় ছিল। কারন সে যে গাছটায় ফাঁস লাগিয়েছিল, সেটা ছিল শেওড়া গাছ। শেওড়া গাছে নাকি জ্বীন ভূতেরা বাস করে। আবার অনেকে বলতে লাগল- তাদের পারিবারিক ঝামেলার কারনে আত্মহত্যা করেছে। আমার কাছে দ্বিতীয়টাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। তার বাবার ছিল অভাবের সংসার। তার উপড় ওরা ছিল চার বোন এক ভাই। ঠিকমতো তিনবেলা খেতে পারত না। তাছাড়া, ওর বিয়ের বয়স হয়ে গেছিল। কিন্তু তখনো তার বিয়ে হয় নি।
যাই হোক, সেদিনের পর থেকে ভয় কি জিনিস হারে হারে টের পেয়েছিলাম। সপ্তাহ খানেক সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে যেতাম না। এমনকি প্রস্রাব করার সময়ও টয়লেটের সামনে ছোটভাইকে দ্বাড় করিয়ে রাখতাম। শুধু আমি না, পাড়ার সব লোকের মধ্যে ভয় কাজ করত। তাই, সন্ধ্যা হলেই পাড়া নিস্তব্ধ হয়ে যেত।
এরমধ্যে হঠাৎ একদিন শোনা গেল, সেই জঙ্গল থেকে নাকি প্রায়শই কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। জঙ্গলটা ছিল আমাদের বাড়ীর পাশেই। আমি প্রথমে বিশ্বাস নি। শোনা কথায় আমার কখনোই বিশ্বাস হয় না। কিন্তু একদিন সন্ধ্যাবেলা সেই জঙ্গলের পাশ দিয়ে ছয়- সাত জন মিলে বাজার থেকে আসতেছিলাম। মোটামুটি সবার হাতেই ছিল টর্চলাইট। সেখানে আমিই ছিলাম সবার ছোট, বাকি সবাই বয়সে বড়। হঠাৎ একটা কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। একে অপরকে জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারলাম- সবাই শুনতে পেয়েছে। অবজ্ঞা করে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। কিন্তু আবারো কানে এল সেই একই কান্নার শব্দ। এবার একটু বেশি জোরে। অনেকটা ছোট শিশু চিৎকার করে কাঁদলে যেরকম শোনায়। আমার বুকে দুরুদুরু শব্দ শুরু হয়ে গেছে। গায়ের লোমগুলো কাটা দিয়ে উঠল। অবজ্ঞাভরে দু এক কদম হাটার পর সবাই দাড়ালাম। একজন বলল- চল, ভিতরে গিয়ে দেখি কে কাঁদে? মোটামুটি সবাই তাতে সম্মতি জানালো। আমার ভয় লাগলেও মুখে তা প্রকাশ করলাম না। তাছাড়া ভূত দেখার একটা আাকাঙ্খা তো ছিলই।
সবাই টর্চলাইট জ্বালিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়লাম। আমি ছিলাম মাঝখানে। বাইরে প্রকাশ না করলেও মনে ছিল প্রচন্ড ভয়। না জানি কি অদ্ভুদ জিনিস দেখতে হয়। আস্তে আস্তে সেই গাছটার দিকে যেতে লাগলাম, যেখানে মেয়েটা গলায় ফাঁস দিয়েছিল। তখনো কান্নার শব্দ থামে নি। কাছাকাছি আসতেই দেখলাম- দুটি সাদা বিড়াল একে অপরের দিকে তাকিয়ে কান্নার মত শব্দ করছে। প্রথমে একটু ভয় পেলেও দেখলাম এগুলো আমাদের এলাকার বিড়ালের মতই। মাটির দলা নিয়ে ঢিল ছুড়তেই আমাদের দিকে একবার তাকিয়েই দিল দৌড়। তারপর আরো কিছুক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম। যদি ভূতের দেখা পাই। শুধু আমি না সবারই ভূত দেখার ইচ্ছা ছিল। তারপর একবুক হতাশা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
বাড়ীতে এসে এই ঘটনা বলতেই, মা দাদী সবাই আমার নিজের চাইতে বেশি আতঙ্কিত হয়েছিল। না জানি আমার কি হয়? যদিও আমার কিছুই হয় নাই।
এটাই ছিল আমার ভূত দেখতে যাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.