নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তো আমিই।

আধারে আমি৪২০

আধারে আমি৪২০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয়োনীয় দর্শন: বস্তুবাদী দর্শন ও বিজ্ঞান চিন্তার শুরুর কথা..................

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

পৃথিবীর প্রাচীনতম দর্শনগুলোর মধ্যে আয়োনীয় দর্শন অন্যতম। এই আয়োনীয় অঞ্চলেই সূত্রপাত হয়েছিল প্রাচীন গ্রীসের দর্শন শাস্ত্রের। আয়োনীয় দার্শনিকরাই সর্বপ্রথম প্রাকৃতিক ঘটনাবলীকে যুক্তির দ্বারা বিশ্লেষন ও প্রমান করতে শুরু করছিল। ভৌগোলিকভাবে, ইজিয়ান সাগরের পশ্চিম দক্ষিন প্রান্তের(বর্তমানে তুরস্ক) দ্বীপমালার অধিবাসীরা আয়োনীয় বলে পরিচিত ছিল। প্রাচীন এই জনপদ পারস্য, রোমান ও স্বজাতী গ্রিকদের দ্বারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। অনেকে মনে করেন- এই সমাজ ও সভ্যতা ইতিহাসের কালে হারিয়ে না গেলে, আমরা ১০০০ বছর এগিয়ে থাকতাম। আয়োনীয় দর্শন ছিল গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম প্রাকৃতিক দর্শন। এই অঞ্চলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর মিলিটাশে অনেক দার্শনিকের জন্ম। এজন্য আয়োনীয় দর্শন মিলেশিয়ান চিন্তাধারা( milesian school ) হিসেবেও পরিচিত। থেলিস, এনাক্সিমেন্ডার, এনাক্সিমেন্স এরা ছিলেন আয়োনীয় দর্শনের অগ্রদূত।
থেলিস ও অন্যান্য দার্শনিকদের দর্শন সম্পর্কে কিছু তথ্য:
থেলিস (মিলেটাসের থেলিস, Thales of Miletus: খ্রীষ্টপূর্ব ৬২৪ – খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪৬)
থেলিসকেই পৃথিবীর প্রথম দার্শনিক ধরা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম বস্তুবাদী দর্শনের ধারনা দিয়েছিলেন। সেই হিসাবে তিনিই পাশ্চাত্য দর্শনের জনক। থেলিসের পূর্বে মানুষ সবকিছুকেই দেবদেবীদের কর্মকান্ড বলে ভাবত। থেলিসেই সর্বপ্রথম ভাববাদ বা ঈশ্বরের সৃস্টিতত্ত্ব থেকে বেরিয়ে এসে প্রাকৃতিক জিনিসগুলোকে যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষন করা আরম্ভ করেছিল। তিনি একাধারে রাষ্ট্র দর্শন, গনিত, মহাবিশ্ব নিয়ে মতবাদ দিয়ে গেছেন। ধারনা করা হয়- যে থালেস মিশর ভ্রমণ করেছিলেন । মিশর ভ্রমণের সময় সেখানকার পুরোহিতদের কাছে তিনি জ্যামিতি শিখেন এবং তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মিশরীয় জ্যামিতি বিদ্যা গ্রীসে নিয়ে আসেন। মনে করা হয় যে জ্যামিতি সম্পর্কে মিসরীয়দের ধারনা ছিলো মূলতঃ অভিজ্ঞতালব্ধ (empirical) ও আইনকানুনহীন ব্যবহারিক পদ্ধতি।
কবি এবং দার্শনিক জেনোফেনিসের মতে থেলিস খ্রীষ্টপূর্ব ৫৮৫ সালের ২৮ মে তারিখে সংঘটিত সূর্যগ্রহণ সম্বন্ধে ভবিষ্যৎবাণী করেন এবং তা পুরোপুরি ফলে যায়। তবে হিরোডটাস মনে করেন থেলিসের সূর্যগ্রহণ বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করার কোন ক্ষমতা ছিলনা। উল্লেখ্য এই সূর্যগ্রহণের ফলে লিডিয়ার (Lydia) রাজা অ্যালিয়াটিস (Alyattes) এবং মিডিয়ার রাজা সিয়াক্সেরিস (Cyaxares) মধ্যে চলমান যুদ্ধটি থেমে গিয়েছিলো।
প্রাচীন গ্রীসের সলন(solon) ও ক্রোসাসের( Croesus) সমসাময়িক সাতজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যে থেলিস ছিলেন একজন। এদের প্রত্যেকেই এক একটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্যের জন্য খ্যাত ছিলেন। এবং সবাই সবক্ষেত্রে থেলিসকেই শীর্ষস্থানে রেখেছিলেন।
থেলিসের মতে- সমস্ত বিশ্ব একটি মাত্র উপাদান দ্বারা গঠিত। থেলিস মনে করতেন যে পানি-ই বিশ্বের সকল সৃস্টির উৎস এবং পানি থেকেই অন্যান্য বস্তু গঠিত। সবকিছু পানিতে লালিত এবং সবকিছু পানিতে ফরিনত হবে। তিনি আরো মনে করতেন যে পৃথিবী পানির উপরে ভাসমান। এজন্য ভূমিকম্প সম্পর্কে তার ধারনা ছিল- পানির তরঙ্গের কারনে পৃথিবী দুলে উঠলে ভূমিকম্পের সৃস্টি হয়। এরিস্টটল বলেছেন যে, থেলিস মনে করতেন যে- চুম্বকের মধ্যে প্রান বিদ্যমান। কারণ চুম্বক লোহাকে নাড়াতে পারে। তিনি আরো মনে করতেন সকল বস্তুর মধ্যেই প্রান বিরাজমান। এজন্য তাকে জড়বাদী(hylozoist) বলা হয়ে থাকে।
থেলিসেই প্রথম পৌরাণিক কাহিনীর সাহায্য ছাড়াই প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর বর্ণনা করতে শুরু করেন। এটাই বস্তুবাদী দর্শনের শুরু। এটাই পরবর্তিকালে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় বিপ্লব এনে দেয়। গণিত ব্যবহার করে তিনি পিরামিডের উচ্চতা ও সাগরের তীর হতে জাহাজের মধ্যবর্তি দূরত্ব মাপতে জ্যামিতির ব্যবহার শুরু করেছিলেন। জ্যামিতিতে প্রযুক্ত অবরোহী পদ্ধতি (deductive reasoning) তিনি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। চারটি অনুসিদ্ধান্ত তিনি আবিষ্কার পূর্বক তিনি থালেস উপপাদ্য (Thales’ Theorem : states that if A, B and C are points on a circle where the line AC is a diameter of the circle, then the angle ∠ABC is a right angle) তৈরী করেন।
থেলিস কিছু যুগান্তকারী উপপাদ্যের জনক। জ্যামিতির পাঁচটি উপপাদ্য প্রণয়নের জন্যই মূলত তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। উপপাদ্যগুলো হল:
১। একটি বৃত্ত তার যেকোনও ব্যস দ্বারা সমদ্বিখণ্ডিত হয়।
২। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান সমান বাহুগুলোর বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান।
৩। অর্ধবৃত্তস্থ কোণের পরিমাণ এক সমকোণ বা ৯০o।
৪। পরস্পরছেদী দুটি সরলরেখা দ্বারা উৎপন্ন বিপ্রতীপ কোণদ্বয় পরস্পর সমান।
৫। যদি কোনও ত্রিভুজের ভূমি এবং ভূমিসংলগ্ন কোণদুইটি দেয়া থাকে তবেই কেবল ত্রিভুজটি আঁকা যাবে।
বর্তমানে এগুলোকে খুব সরল মনে হলেও তৎকালীন সময়ের জন্য এগুলো ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
• থেলিসের জ্যামিতি হতে বীজগণিতের ধারণা পাওয়া যায় বলে কেউ কেউ মনে করেন, কারণ তিনিই প্রথম দেখান যে একটি বিন্দু নির্দিষ্ট শর্তাধীনে চলমান হয়ে জ্যামিতিক সঞ্চারপথ তৈরি করে।
থেলিস তৎকালীন ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করে সঠিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং পৃথিবীর সকল ক্ষণস্থায়ী বস্তু বা বিষয়ের মধ্যকার নিয়ম অনুসন্ধানের প্রচেষ্টার সূত্রপাত করেন। তিনি প্রকৃতিকে মানবীয় গুণাবলীসম্পন্ন দেবতাদের (Anthropomorphic Gods) কাজ (যেমনটি দেখানো হতো পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে) না ভেবে বরং প্রকৃতির মধ্যে কারণের অনুসন্ধান চালান।
• তিনি প্রথম বছরে প্রকৃত দিনের সংখ্যা গণনায় সফলতা অর্জন করেন।
• তারকারাজি পর্যবেক্ষণের দ্বারা সমুদ্রে অবস্থানরত কোন জাহাজের দূরত্ব নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
মিশরীয়দের জ্যামিতিক ধারণা ছিল শুধুমাত্র তল সংক্রান্ত। কিন্তু থেলিস উপযুক্ত যুক্তির সাহায্যে কোন চিত্রের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন। এর সাহায্যে কয়েকটি অংশের সাহায্যে অপর অংশগুলো সঠিকভাবে নিণর্য় করা যায়। এটি সমগ্র বিশ্বে একটি সম্পূর্ণ নতুন বিমূর্ত ধারণার জন্ম দেয় যার মূল প্রেরণা ছিল গ্রিকদের Abstract spirit বা বিমূর্ত চেতনা। এ আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্যোতির্বিদ্যার সূচনা ঘটে। গ্রিকদের এ জ্যোতির্বিদ্যির মূল উদ্দেশ্য ছিল জ্যোতিষ্কগুলোর গতির মধ্যে জ্যামিতিক সম্পর্ক নির্ণয় করা।
একজন দার্শনিকের মতই বিমূর্ত এর অস্তিত্ব আছে বলে বিশ্বাস করতেন।
থেলিস আরো বলেছেন
১। পৃথিবী পানিতে ভাসমান (কাঠের টুকরা বা জাহাজের মতো)। ভূমিকম্প ও জ্যোতিষ্কসমূহ গতিশীল হয় এই কারণে যে সকলেই ঐ পানির টলটলায়মান ঊর্মীমালার উপর দোদুল্যমান। (অর্থাৎ পৃথিবী একটি কঠিন কায়া এবং সে টলটলায়মান প্রবাহের উপর ভাসমান)
২। পৃথিবী জলে ভাসমান এবং সূর্য ও অন্যান্য জ্যোতিষ্ক এই পানির বাষ্পে খেয়ে থাক.
৩। তারকাসমূহ মাটির তৈরী কিন্তু খুব উত্তপ্ত। সূর্য এবং চন্দ্রও মাটির তৈরী।
৪। পৃথিবী রয়েছে এই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে। এবং পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলে সমগ্র মহা বিশ্বেরই ধ্বস নেমে আসবে। (অর্থাৎ গ্রিসে থেলিস-ই হলো ভূ-কেন্দ্রিকতা মতবাদের প্রবক্তা)
৫। জীবনের প্রয়োজন পড়ে খাদ্য ও নিশ্বাস: পানি হলো সেই খাদ্যের সাথে উপমেয় আর আত্মা হলো সেই নিশ্বাস-এর সাথে উপমেয়।
থেলিসকে বলা হয় বিজ্ঞানের জনক। অনেক তাকে জ্যামিতির জনকও মনে করেন।
থেলিসেই ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি পৌরানিক ঈশ্বর বা দেবদেবীর কবল থেকে মুক্ত হয়ে প্রাকৃতিক জিনিসগুলোকে যুক্তি ও প্রজ্ঞা দিয়ে প্রমান করার প্রয়াস চালিয়েছেন। মূলত সেখান থেকেই বিজ্ঞান চিন্তার শুরু। ব্যবীলনিয় কিংবা মিশরীয় সভ্যতা অনেক দিকে এগিয়ে থাকলেও, তারা পৌরানিক বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি।
(চলবে..................)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫

সিপন মিয়া বলেছেন: দারুণ লিখেছেন ভাই। অনেক কিছু জানলাম।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬

আধারে আমি৪২০ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১১

শামীম আরেফীন বলেছেন: "♦♦পৃথিবী পানিতে ভাসমান (কাঠের টুকরা বা জাহাজের মতো)। ভূমিকম্প ও জ্যোতিষ্কসমূহ গতিশীল হয় এই কারণে যে সকলেই ঐ পানির টলটলায়মান ঊর্মীমালার উপর দোদুল্যমান। (অর্থাৎ পৃথিবী একটি কঠিন কায়া এবং সে টলটলায়মান প্রবাহের উপর ভাসমান)
♦♦ পৃথিবী জলে ভাসমান এবং সূর্য ও অন্যান্য জ্যোতিষ্ক এই পানির বাষ্পে খেয়ে থাকে.
♦♦তারকাসমূহ মাটির তৈরী কিন্তু খুব উত্তপ্ত। সূর্য এবং চন্দ্রও মাটির তৈরী
♦♦পৃথিবী পানির উপরে ভাসমান। এজন্য ভূমিকম্প সম্পর্কে তার ধারনা ছিল- পানির তরঙ্গের কারনে পৃথিবী দুলে উঠলে ভূমিকম্পের সৃস্টি হয়।
♦♦চুম্বকের মধ্যে প্রান বিদ্যমান। কারণ চুম্বক লোহাকে নাড়াতে পারে।"


উপরের থিওরিগুলোর ব্যাখ্যা থেলিস নিশ্চয় দিয়েছেন। সেগুলোও বিস্তারিত জানার আগ্রহ রইল। লেখা ভাল লেগেছে।


২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬

আধারে আমি৪২০ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব।

৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪

দরবেশমুসাফির বলেছেন: আয়নিয় দার্শনিকদের চেনা থাকলেও তাদের জাতীয়তা জানতে পারলাম আপনার লেখা থেকে। ভাল লিখেছেন।

থেলিস পৃথিবীর ও সৌরজগতের প্রকৃতি সম্পর্কে ভুল মতবাদ পোষণ করলেও তার চিন্তাই এ ব্যাপারে আরও গবেষণা করতে সে সময়ের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ফলে আরিস্তারকাসের মত দার্শনিকদের আমরা পেয়েছিলাম।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৯

আধারে আমি৪২০ বলেছেন: একমত।

৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫২

নিয়েল হিমু বলেছেন: থেলিস.... কোথায় যেন পড়েছিলাম মনে হচ্ছে

৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১১

হাসনাত ইবনে তারিক বলেছেন: বস্তুবাদ নিয়ে সুন্দর লেখা পড়লাম। এ যেন দর্শন ও বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধন। সোফিস্ট সম্প্রদায় নিয়ে লেখার আহবান রইলো। সোফিস্ট সম্প্রদায় নিয়ে ভিডিওটি দেখতে পারেন : http://www.youtube.com/watch?v=JR0aqVlsgf4

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.