নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তো আমিই।

আধারে আমি৪২০

আধারে আমি৪২০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তমনা ব্লগার হত্যার জন্য কি সরকার দায়ী নয়?

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৪

দেশের অন্যতম সৃস্টিশীল ও প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদকে ২০০৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি ঢাবির প্রানকেন্দ্র টিএসসিতে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে ১২ আগস্ট জার্মানীতে তিনি রহস্যজনকভাবে মারা যান।
এটা হলো প্রায় এক যুগ আগের ঘটনা। এত দিনেও এই মামলার কোন সুরাহা নেই। এমনকি গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী হাইকোর্ট মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বললেও কাজের কাজ কিছুই হয় নি। সবই চলছে ঢিমেতালে। এই মামলার ৫৮ স্বাক্ষির মধ্যে স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে মাত্র ৩২ জনের। ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেএমবির ৫ শূরা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এদের ৩ জন গ্রেপ্তার হলেও বাকি দুজন এখনো পলাতক।
এক যুগ পেরিয়েও এই মামলার যে অবস্থা তাতে একবুক হতাশা ছাড়া কিছুই আশা করা যায় না।
২০১৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি গনজাগরন মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ও মুক্তমনা লেখক রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবাকে তার বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাজীব হত্যার দুই বছর পর ৮ জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে গত ২১ এপ্রিল স্বাক্ষ্য গ্রহনের দিন ধার্য্য করা হলেও এযাবত এর কোন অগ্রগতি নেই। প্রধান আসামী রেদোয়ানুল আসাদ রানা প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এখনো ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।
এ বছর ২৭শে ফেব্রুয়ারি টিএসসিতে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিত রায়কে নৃশংশভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা মারাত্মকভাবে আহত হন। এই মামলারও তেমন কোন অগ্রগতি নেই। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সহায়তা করতে চাইলেও বাংলাদেশ প্রশাসন ও সরকারের সহযোগিতার অভাবে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। আর আমাদের দিয়ে যায় একরাশ হতাশা।
অভিজিত রায় হত্যার একমাস পরেই ব্লগার ওয়াশিকুর বাবুকে তার বাসার কিছুদুরে দিনদুপুড়ে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যদিও দুই আসামি জিকরুল্লাহ ও আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই ধরা পরে কিন্তু তবুও এই মামলারও তেমন কোন অগ্রগতি নেই। হামলার মূল হোতারা ধরাছোয়ার বাইরে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ই মে সিলেটে গনজাগরনকর্মী, মুক্তামনা লেখক ও যুক্তি পত্রিকার সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাশকে একইভাবে তার কর্মস্থল যাওয়ার পথে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও মূল অর্থ যোগানদাতা সন্দেহে তিনজনকে ১৭আগস্ট রাতে রাজধানীর নীলক্ষেত ও ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে র্যাব ।আটক হওয়া তিন জন হলো- তোহিদুল ইসলাম, সাদেক আলী ও আমিনুল মল্লিক। পরবর্তীতে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলা থেকে মান্নান ইয়াহিয়া এবং তার ভাই মোহাইমিন নোমান নামে ওই দুজনকে আটক করে। এছাড়াও সিলেটের একজন সাংবাদিককে আটক করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। এখনো কোন কুল কিনারা খুজে পায় নি পুলিশ।
এরপর গত ৭ই আগষ্ট নীলয় নীলকে তার বাসায় ঢুকে নৃশংসভাবে খুন করে তথাকথিত ইসলামের রক্ষকেরা। সেই একই কায়দায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পুলিশ আল নাহিয়ান ও মাসুদ সহ আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করলেও এ মামলারও তেমন কোন অগ্রগতি নেই। আদৌ শাস্তি পাবে কি খুনীরা?
এছাড়াও ২০১৩ সালের ৯ই এপ্রিল বুয়েটের কবি নজরুল হলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার আরিফ রায়হান দ্বীপকে। ২০১৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলে ব্লগার জাফর মুন্সীকে, ২৮শে ফেব্রুয়ারি মামুন হোসেন ও ২ মার্চ ব্লগার জগতজ্যোতিকে হত্যা করা হয়।
উপরোক্ত ঘটনাগুলোর কোনটারই কোন বিচার হয় নি, কোন সুষ্ঠ তদন্ত হয় নি।
এবং আজকে অভিজিৎ রায়ের মতো এই কায়দায় হামলার শিকার হয়েছেন তার বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল। রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকে নিজের কার্যালয়ে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে হামলার স্বীকার হন। টুটুলের সঙ্গে থাকা ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকেও কোপানো হয়। টুটুল ও রনদীপম বসুর অবস্থা গুরুতর।
এখানেই শেষ নয়। এই ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শাহবাগের আজিজ মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনার কর্নধার ফয়সাল আরেফিন দীপনকে একই কায়দায় অফিসে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করে ইসলামের রক্ষকরা।
আমরা জানি এই হত্যারও কোন বিচার হবে না। এটা এদেশে সম্ভব না।
এখন কোটি টাকার প্রশ্ন, এই হত্যাকান্ডগুলোর জন্য দায়ী কে? হত্যা করতেছে মৌলবাদী কিছু জঙ্গী সংঘটন। কিন্তু সরকার কি এর দায় এড়াতে পারে? পারে না, অবশ্যই না।
হুমায়ুন আজাদের হত্যাকারীদের এক যুগেও কোন বিচার হয় না। থাবা বাবার খুনীরা জামিনে প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়ায়। অভিজিতদার হত্যাকারীরা ধরাছোয়ার বাইরে।
সরকার ও প্রশাসন কোন ভাবেই এসবের দায় এড়াতে পারে না। হুমায়ুন আজাদ কিংবা থাবা বাবার খুনীদের যদি শাস্তি হতো তাহলে হয়তোবা আমাদের পরের ব্যক্তিগুলোকে হারাতে হতো না। কিন্তু প্রশাসন সবসময় নিরব ভূমিকায় থেকেছে। সরকারের কাছ থেকে এই পরিবারগুলো কি পেয়েছে? চুপিসারে সমবেদনা, কারো ভাগ্যে সেটুকুও জোটে নি। সুষ্ঠ বিচার তো দুরের কথা।
উপরন্তু, জয় সাহেব বললেন, আমরা( আওয়ামীলীগ) নাস্তিকের দল হিসেবে পরিচিত হতে চাই না।
একথা বলে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন? তারা নাস্তিক ব্লগার হত্যার বিচার করবে না?এই কমেন্টগুলো কি জঙ্গীদের আরো খুন করতে উৎসাহিত করে না?
তারা কিন্তু শুধু ব্লগার হত্যায় থেমে নেই। তাদের গোড়া এখন অনেক শক্ত। বিদেশি নাগরিক হত্যা কিংবা তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলোও পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোরই পরের ঘটনা। সবগুলো একই সূত্রে গাঁথা। আজকে ব্লগার মারছে, শিয়া মিছিলে হামলা করছে, কিছুদিন পর মসজিদ, মন্দির বোমা মারবে ও আপনার আওয়ামীলীগের লোকদের ধরে মারবে। কিন্তু আপনার কিছুই করার থাকবে না।
সরকারকে বলছি, এখনও সময় আছে কিছু করেন। দানবকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে না পারলে তা সবাইকে ধ্বংস করে দেয়। দয়া করে, দেশটাকে জঙ্গীদের অভয়ারন্যে পরিনত হতে দেবেন না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.