নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তো আমিই।

আধারে আমি৪২০

আধারে আমি৪২০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ও দেশের বর্তমান অবস্থা......................

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে মূলত ১৯৮৯ সালে । সে সময়ে ‘হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী’ বা হুজি নামে এদেশে প্রথম জঙ্গী গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করে । সেই হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) মূলত পুরোপুরি প্রকাশ ঘটেছিল ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায়, জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেদিন আফগান মুজাহিদদের কাবুল বিজয়ে উল্লসিত ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি ‘স্বেচ্ছাসেবী’দের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করেছিল । পাকিস্তানে হুজির প্রাথমিক রূপ তৈরি হয় ১৯৮০ সালে, কিন্তু এর আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে এবং এর প্রসার ঘটে পরবর্তী চার বছরে। এই সময়েই সাংগঠনিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশে বিস্তারের পরিকল্পনা করা হয় এবং তার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে হুজির যাত্রা শুরু। পাকিস্তানে হুজির সংগঠকেরা প্রধানত বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল রোহিঙ্গাদের লড়াইকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারকে অস্থিতিশীল করতে। এদেশের জঙ্গীরা আর্থিকভাবে সহযোগীতা পেত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, কুয়েত, লিবিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে। তারা টাকা ও অস্ত্রের সরবরাহ করত। এই অর্থের বেশিরভাগ অর্থ যেত দেশের মাদ্রাসাগুলোতে।
এরপর ১৯৯৮ সালে আত্মপ্রকাশ করে ‘জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ বা জেএমবি নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠন । যার প্রধান ছিলেন শায়খ আব্দুর রহমান । এতে করে হুজির তৎপরতা আরো বেড়ে যায়। অতঃপর ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ’ বা জেএমজেবি নামক উত্তরবঙ্গে আরেকটি জঙ্গি গ্রুপের আবির্ভাব ঘটে । এর প্রধান ছিলেন ছিদ্দীকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই। চার দলীয় জোটের আমলে জঙ্গীবাদ সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করে এবং সরকারের প্রত্যক্ষ্য সহযোগীতায়। চার দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আজিজুল হক এবং অন্য অংশের ফজলুল হক আমিনীর তত্বাবধানে আফগান ফেরৎ যোদ্ধাদের দিয়ে ও জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটানো হয়। আমিনীই প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন, ‘ আমরা হবো তালেবান বাংলা হবে তালেবান। এছাড়া ২০০৪ সালে ১ এপ্রিল দশ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটকের পর জোট সরকারের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামির আমির নিজামি ও সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর সহ আরো অনেকে দোষী সাব্যস্ত হয়। দেশে জঙ্গীবাদের শুরুটা মূলত জিয়ার হাত ধরে। তিনি গনতন্ত্রের নামে স্বাধীনতা বিরোধি ইসলামিক দলগুলোকে দেশে রাজনীতি করার সুযোগ দেন। পরবর্তীতে সেই দলগুলোর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জঙ্গীরা এদেশে নিজেদের ঘাটি গড়ে তোলে।
গোয়েন্দা সংস্থার মতে দেশে ১১ টি জঙ্গী গ্রুপ সক্রিয় আছে কিন্তু প্রকৃত সংখ্যাটা এর চেয়ে বেশি। হুজি, জেএমবি, জেএমজেবি ছাড়াও তাওহীদ জনতা, ইসলামি যুব সংস্থা, হীযবুত তাওহীদ, ইসলামি সংস্থা, সাহাদাৎ এ আল হিকমা , আল্লাহর দল, তওহিদী জনতা সহ আরো কিছু বিদ্যমান।
১৯৯৯ সালে জেএমবি সর্বপ্রথম কুষ্টিয়ার বড়কান্দি গ্রামে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় সন্ত্রাসী হামলা চালায় । এর কিছুদিন পর যশোরে উদীচির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এক শক্তিশালী বোমা হামলা চালায় যাতে সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পীসহ ১০ জন নিহত হয় । অতঃপর ২০০১ সালে রমনার বটমূলে, ২০০২ সালে পল্টনময়দানে কমিউনিষ্ট পার্টির এক জনসভায় হামলা চালায় ইসলামি জঙ্গীরা।
২০০২ সালের ১৫ অক্টোবর দি টাইম ম্যাগাজিনে এলেক্স পেরির এক এক্সক্লুসিভ নিবন্ধে বলা হয়, এমভি মক্কা নামক একটি জাহাজে চড়ে ১৫০ জন আফগান ফেরত সশস্ত্র যোদ্ধা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেই যোদ্ধারাই দেশের মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গী তৈরীতে লিপ্ত হয়। এ জঙ্গীদের সহযোগিতায়ই তৎকালীন সরকার বেছে বেছে আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল নেতাদের খুন করার মিশনে নেমে পড়ে। এ খুনের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শেখ হাসিনা সরকারের সফল অর্থমন্ত্রী- এসএসএস কিবরিয়া, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা- আহসান উল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিন, খুলনার- মনজুরুল হক এডভোকেট, সাংবাদিক শামসুর রহমান, বালু প্রমুখ। তারপর থেকে সিনেমা হল, মাজার, উপাসনালয়ে বোমা হামলা করে নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে থাকে।
২০০৪ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি লেখক হুমায়ুন আজাদের উপড় হামলা করে জঙ্গিরা এবং ২১ আগষ্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা আইভি রহমান সহ আরো ২২ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।
এরপর, ২০০৫ সালের ১২ জানুয়ারি শেরপুর ও জামালপুরের পৃথক দুটি স্থানে বোমা হামলা হয় ও ১৫ জানুয়ারি বগুড়া ও নাটোরে যাত্রাপালার মঞ্চে বোমা হামলায় দু জন নিহত ও প্রায় ৭০ জন আহত হয়।
এবং ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্টে নারায়ণগঞ্জ ব্যতীত দেশের ৬৩ টি জেলায় প্রায় ৫’শতাধিক স্থানে বোমা হামলা চালায় । এছাড়াও ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বরে ঝালকাঠীতে আদালত প্রাঙ্গনে বোমা হামলায় বিচারক সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাড়ে নিহত হন। এছাড়াও গাজীপুর ও চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গনে আত্মগাতী বোমা হামলা চালিয়ে বিচারকসহ বহু নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করে। ফরিদপুরের নানিয়ার চর গীর্জাও হামলার শিকারে পরিনত হয় জঙ্গীদের।
বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের ফাঁসির পর দেশে জঙ্গী কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে এলেও তা একবারে নিশ্চহ্ন হয়ে যায় নি। সম্প্রতি দেশে আবারো জঙ্গীবাদ মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠেছে।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ একদম ফিল্মী কায়দায় কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে ময়মনসিংহে নেয়ার পথে জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সাজাপ্রাপ্ত তিন জঙ্গী বোমারু মিজান, সালেহীন ও রাকিবকে। পরবর্তীতে এদের একজন র্যাবের গুলিতে মারা গেলেও বাকি দুজনের এখনো কোন খোঁজ নাই।
দেশে একের পর এক ব্লগার হত্যা, বিদেশি নাগরিক হত্যা, সাম্প্রদায়িক হামলা, সেই বিভিষিকাময় দিনগুলোর কথা আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই হামলা গুলোর দায় স্বীকার করেছে আনসারুল্লা বাংলা টীম ও আল কায়েদা বাংলাদেশ শাখা নামের দুটি নব্য জঙ্গী সংগঠন।
এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশে আইএস আছে কিনা? দেশে আইএস থাক আর না থাক আইএস ভাবাপন্ন মানুষের অভাব নাই, আইএসের সমর্থকের অভাব নাই। দেশকে ধ্বংস করতে আইএসকে এখানে আসতে হবে না, সুযোগ পেলে এরা আইএসের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
আইএস, আল কায়েদা, জেএমবি, হুজি এবং হালের আনসারুল্লাহ্ বাংলা টীম এরা নামে আলাদা হলেও কাজটা কিন্তু একই। নাম পরিবর্তন অনেকটা 'নতুন বোতলে পুরাতন মদের' মতো। তাই দেশে আইএস থাকুক না থাকুক জঙ্গী আছে এটা নিশ্চিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.