নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীড় রশ্নী

নিজেকে এবং জীবনকে বোঝার চেষ্টা করছি.....। কিন্তু বার বার ভূল হয়ে যাচ্ছে। ভূল গুলো থেকে শিখার চেষ্টা করছি। সমস্যা এখানেই - শিখতে পারছি না!!!!!

নীড় রশ্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুতো

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৩



নন্দিনীর পায়ে এক জোড়া নতুন নীল সাদা ডোরা কাটা কনর্ভারস. সে জানে তার বাবার এই নতুন জুতাটি কিনতে অনেক কস্ট সাধিত হয়েছে .নন্দিনীর এক জোড়া নতুন জুতার খুবই দরকার ছিল . পুরাতন জুতা জোড়া একেবারেই নস্ট হয়ে গিয়েছিল , এক পায়ের জুতার তলি ক্ষয়ে গিয়েছিল সেই কবে . হাটতে গেলে পায়ের গুড়ালি , ভাঙ্গা রাস্তার ইটের সাথে লেগে মাঝে মধ্যেই রক্তাত্ব হয়ে যেত . তার বাড়ি থেকে বহুদূর পায়ে হেটে প্রতিদিন এই ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে তাকে কলেজ যেতে হয় . প্রতি বছরই রাস্তাটি মেরামতের কাজ পায় উওর পাড়ার শফিক আঙ্গেল . প্রায় প্রতিবছর রাস্তাটি মেরামত করা হয় , মেরামতের দুই তিন মাস যেতে না যেতেই রাস্তাটি তার পুরাতন শ্রী ফিরে পায় . নন্দিনীর বাবাও একসময় রাস্তা-ঘাট তৈরী ও মেরামতের জন্য PwD তে টেন্ডার জমা দিতো , কিন্তু সে কখনই টেন্ডার পেতনা . এক সময় নন্দিনী , তাদের অবস্তা ও তার বাবার অসফলতায় বড় কস্ট ও আক্ষেপ হতো . বারং বার শফিক আঙ্গেলের সাথে তার বাবার তুলনায় সে বাবার প্রতি আক্ষেপ নিয়ে তাকাতো . কিন্তু এখন সে জানে শফিক সাহেবের সফলতা আর তার দরিদ্র পিতার বিফলতার কারন . সে জানে বিধায় তার রক্তাত্ত পায়ে কখনো ব্যথা অনুভব করেনি সে , বরং আম্তগর্বে তার চিন্তা গুলি আরও প্রশারিত হতে থাকে .

অর্ক শহরের একটি নামী ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করে, তার প্রায় মনে হয় নিজস্ব একটি গাড়ি না থাকলে বন্ধুদের মাঝে ঠিক দামটি পাওয়া যায় না , তার একটি মোটর সাইকেল রয়েছে সেই কলেজ জীবন থেকে . সেটা এখন বেশ পুরাতন , তাই সে তার বাবার গাড়িটিই বেশি ব্যবহার করে ইউনিভার্সিটি যাওয়া-আসায় . অর্কের প্রায় মনে পরে বাল্যকালের কথা যখন তারা একটি একরুমের টিনসেট বাসায় ভাড়া থাকতো , তখনো তার বাবা PWD এর দ্বিতীয় শ্রেনীর একজন কর্মচারী , সেখান থেকে বাবা কি করে ধীর ধীরে বিশাল একটি ফ্লাটের মালিক হোন , তার পর গাড়ি , বাড়ি সবই করেন ,মাত্র ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকার বেতন দিয়ে . তা অর্ক একসময় প্রচুর ভাবতো . এখন আর ভাবে না , কি হবে ভেবে ? এইতো বেশ আছে . আজ তার অনেক দিনের আশাও পূরণ হয়ে গেল . তার নিজের একটি গাড়ি . তার বাবার এক বন্ধু যার নাম শফিক ,সে বাবাকে একটি গাড়ি উপহার হিসেবে দিয়েছে . এই শফিক সাহেবের ঠিকাদারী ব্যবসা .

গ্রামের ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে চকচকে নতুন গাড়িটি চালিয়ে যাচ্ছে অর্ক , ভাঙ্গা রাস্তার কারনে গাড়িটি ঠিক বশ মানছে না হাতে , একে বেকে যাচ্ছে . (এমন নয় যে সে ড্রাইভার হিসেবে কাচা , বরং সে ইউনিভার্সিটিতে ভালো রেসার হিসেবে পরিচিত , কতবার সে অন্য বন্ধুদের এয়ারপোর্ট রোড এ রেসিং এ হারিয়ে দিয়েছে ). অবস্য গ্রাম্য রাস্তা হিসেবে তার স্পীডটাও একটু বেশি বিধায় এমনটা হতে পারে . নতুন গাড়িটার কন্ডিশন পরীক্ষা করার জন্যই আরেটু স্পিড বারিয়ে দিলো অর্ক . স্পিড নিয়ে গাড়িটা বাক নিতেই প্রচন্ড জোরে কিছুর সাথে একটা ধাক্কা লাগায় অর্ক গাড়ির ব্রেক চেপে ধরে , গাড়িটা কিছুটা লাফিয়ে থেমে যেতেই অর্ক দেখতে পায় , গাড়ির ঠিক হাতখানি সামনে একটি মেয়ের দেহ নিথর হয়ে পরে আছে .

নন্দিনীর দেহটা থেতলে গেছে , অনেকটা যেমন তার নতুন জুতো জোড় . নন্দিনীর এক হাত সামনে এক পাটি জুতো গাড়ির চাকার সাথে লেগে ছিড়ে থেতলে গেছে , সে তার ঝাপসা চোখে জুতোটির দিকে তাকিয়ে আছে . মূত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তেও নন্দিনীর মনে হলো , তার বাবার সৎ পথে উপার্জিত অর্থে কিনা থেতলানো জুতোটি বড় বেশি উজ্জল , ঝকঝকে নতুন গাড়িটির সামনে.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.