নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনুসূর্যকে লেখা রূপকথা

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

অনুসূর্যকে লেখা রূপকথা

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার সেইসব নারীরা

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

অনামিকা

বামহাতের কনুই আর কবজির মাঝামাঝি জায়গায় একটা কালো জন্ম দাগ আছে। পুরো নাম অনামিকা সরকার। টিস্যুপেপার পছন্দ করে। তার গরমও লাগে না। একদিন জ্বরের ঘোরে আমার মুখ থেকে একটা বহুযাচিত কথা শুনতে চেয়েছিলো, আমি বলিনি।


গায়ত্রী

মাথায় তেল দেয়। রাখালের কন্যা। এখন হাতে শাঁখা পরে। বাচ্চাদের জলরং শেখায়। বন্ধুত্বের রং জানে না। গরু ও বিস্ময়কে ভয় পায়। মাছকে তুচ্ছ করে। একটা কবিতা লিখেছিলো জীবনে। কবিতার নাম অচেতন।


কথা

বিস্ময়ের বিপরীতে থাকতো। বৈষ্ণব পদাবলি বুঝতো না। দেখে মনে হতো তুরস্ক থেকে এসেছে। আমি তার একটা পেইন্টিং করার পর নাম দিয়েছিলাম ওদালিক্স। তার বয়ফ্রেন্ড নীল রঙের শার্ট পরতো। সে বাদামি রঙের আলখাল্লা পরতো। তার অনামিকায় একটা রিং ছিলো।


সমাপ্তি

সমাপ্তির একটা সবুজ পাথর ছিলো। ওটা গলায় পরতো ঘুনসির সুতা দিয়ে। আর পাথর কুড়াতো সেগুনপাতায়। ব্যাগভর্তি বৃষ্টি নিয়ে ইশকুলে যেতো। স্বাতীতারা তাকে বকুল নামে ডাকতো। তার টিফিন বক্সে থাকতো একটা পাগলের দুপুরের ভাত। সে একবার জাপানে গিয়ে একটা পুরনো মন্দিরের একটা পাথরের কাছে তার একটা ইচ্ছা রেখে এসেছে। তার পাথর কুড়ানো শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু পাতা কুড়ায়।


রাজশ্রী

তার দীর্ঘ চুলের পাশ দিয়ে বাইশমাইল হেঁটে গেলে তার মুখ দেখা যেতো। তার মুখ ছিলো বৈষ্ণবপদাবলি। সোহানা বলতো জানিস! রাজশ্রীর চুলে দুর্গন্ধ। আমরা তার ঈর্ষা টের পেতাম, আর হাসতাম। আমরা তিনবন্ধু রাজশ্রীর প্রেমে পড়েছিলাম। সে তা জানতো কিন্তু আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করতো না। আমাদের তিনজনের মধ্যে একজনের দীর্ঘশ্বাস ছিলো আদিগন্ত দীলঘ। সে সেই দীর্ঘশ্বাসের সুতো ধরে একদিন পঞ্চাশমাইল হেঁটে রাজশ্রীর বাড়ির পাশে একটা বৌদ্ধ মন্দিরের গেটে ফিট হয়ে গেলো। পরের দিন যখন ফিরে এলো তার দুইচোখ হয়ে আছে রক্তজবা।


সংঘমিত্রা

রবিনাথের কবিতা নিজের নামে চালাতো। যে রাতে মোর দুয়ারগুলি গানটা গাইতে পারতো সব থেকে ভালো। তার দুইবেনিতে ঝুলে থাকতো এক একটা দুপুর। পিথাগোরাসের সূত্র পড়ে থাকতো তার পথের ধূলিতে। সে সব লাল লাল কথা বলতো। আর মিছিলে ধনেশপাখির মতো উড়ে বেড়াতো। অরিগামির হাত ছিলো ভালো।


মৃন্ময়ী

নিঃশব্দট্রেনের খোলা জানলা পাড়ে বসে বৃষ্টিতে ভিজে যায়। কিনু গোয়ালার গলিতে বাঁশি নিয়ে ঘুরে। একটা কর্কটক্রান্তি পার হয়ে এখনো লুকিয়ে থাকে কৃষ্ণচূড়ার বনে। কবিতার ইশকুলে বসে লিখে কবিতার পোস্টার। ঝর্ণার সঙ্গে তার সখ্য এখনো আছে কিনা জানি না। তাকে বলেছিলাম আমাদের পুকুরপাড়ে সাপ আর বেজির নৃত্যের কথা। সে আসলে কবিই ছিলো, তেরোবছর পরে জেনেছি। সে আমার জন্য একটা লাফিংবোদ্ধা কিনেছে চীনের রাস্তা থেকে। আরেকটা চিঠি লিখেছে। শেষ পর্যন্ত চিঠিটা সে আমাকে দেয়নি বলে সিদ্ধার্থ গৌতম পুনর্বার জন্ম নিলো সান্তাক্লজ হয়ে।


আগুন

তার আরেকটা নাম ছিলো অরুন্ধতী অগ্নি। অগ্নির কাছে স্বাহা অরুদ্ধতীর রূপ ধরেই ধরা পড়ে গিয়েছিলো। সে কোলরিজের কুবলা খান কবিতাটা পড়তে পড়তে আবিসিনিয়ার কোনো এক পাহাড়ে হাঁটতে হাঁটতে গান করে বেসুরো গলায়। তার হাতে একটা রক্তকরবী ফুল, আর হাতে শিমুল। সে কাকে খুঁজে বেড়ায়! পরে জেনেছি, সে আসলে অদর্শনের খোঁজে ডুবে থাকে নিজের ভিতর।


গীতবিতান

তার নামকরণের সার্থকতা হলো তাকে দেখলেই মাথায় ঘুরতো একটা লাইন, চিরদিন কেনো পাই না। তার হাতে সবুজরঙের একটা ডায়েরি থাকতো। আর মনে হতো সে সবুজ জলে পা রেখে হাঁটছে। তার কাজ ছিলো শুধু দেখে যাওয়া। এখনো তাই-ই। সে একদিন এটিএমবুথ থেকে টাকা তোলে। আর খালিহাতে ঘরে ফিরে সারারাত ধরে কাঁদে। তার পড়ার টেবিলের ওপর বইয়ের পেছনে একটা ঠান্ডা বাঁশবন আছে। ভাবে যদি বাঁশফুল ফোটে কোনোদিন, তবে হ্যামিলনের বাঁশিঅলা হবে। আমার এক বেহালাবাদক বন্ধু তার প্রেমে পড়েছিলো।


সুধা

আমার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ডাকঘরের অমল হবো। এই শুনে সুধা আমাকে বলেছিলো সেও সুধা হবে। সে সেতার বাজাতে পারতো। এবং সেন্ট্রাল মাঠের ওপারে যে পাহাড় তার ওপাশে একটা সমুদ্র আছে, এটা তার বিশ্বাসে ছিলো। তাই আমি তাকে আর কখনো বলিনি যে ওপাশে আসলে আরো সাতাশটা পাহাড় আছে। পাহাড়ের পায়ে পায়ে ঘুরে গেছে একটা পাথুরে নদী তার চুলে বাঁধা সবুজ ফিতার মতো। আমরা একদিন রোদের ভিতর বসেছিলাম মাঠের ধারে। অদূরে একটা জাফরান গাছ ছিলো। সেই গাছ থেকে জাফরান পেড়ে এনে তার হাতে দিতেই সে পায়ে পরলো অলক্তদুপুর। সুধা হারিয়ে গেছে। কিন্তু আমি ভাবি, ডাকঘর কোনোদিন মঞ্চে উঠলে আমি যখন ঘুমের ওপারে ফুরিয়ে যাবো—তখন সুধা আসবে, তার হাতভর্তি বকুল, অস্ফূটে বলবে, ‘সুধা তোমাকে ভোলেনি।’


সায়ন্তিকা

আমি তার একটা নাম দিয়েছিলাম। নামটা ভুলে গেছি। তিনতলা মেসের জানালার ওপাশে তাদের বাসা ছিলো। কোনোদিন ছুটির দিনে রান্না করতে ইচ্ছে না করলে তাদের বাসায় গিয়ে খেয়ে আসতাম। মাসি আমাকে খুব যত্ন করে খাওয়াতো। আর বলতো তুই দেখতে একদম হিন্দুর ছেলের মতো, জানিস। আমি দুষ্টুমি করে বলতাম, মাসি, আমি তো হিন্দুই। সায়ন্তিকা একবার কুমারীপূজার বেদিতে দাঁড়িয়েছিলো। আমার মনে আছে, আমি ভিড়ের মধ্যে তাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করেছিলাম, তার পায়ে ছিলো কাঁচা আলতা। সেই আলতার রং আমার কপালে লেগে গিয়েছিলো। শুনেছি, সায়ন্তিকা এখন পাহাড়ে থাকে। এখনো রোদ লেগে আমার কপালে সেই আলতারং আবছা জেগে ওঠে।


আমেনা

আমার ছিলো ফুলবাগানের শখ। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে আমি উঠানে আনতাম নানান ফুলের চারা, ডাল, কলম, শিকড়। রঞ্জুদের বাড়ি গিয়ে মুঠোভর্তি করে নিলাম বারোটাফুলের তেরোটা শিকড়। চলে আসবো বলে পেছন ফিরতেই আমেনা এসে হাতে গুঁজে দিলো পাঁচটা নয়নতারার গাছ। তারপর লুকালো সুপারিগাছের বাদামিপাতার আড়ে। তার পরনে ছিলো ঘিয়া রং ফ্রক। আমাদের দুজনের বয়স যোগ করলে হয় কুড়ি। আমি কুড়িবছরের ভার মুঠোতে ধরে সেদিন আমার উঠানে ফিরেছিলাম।


রাগিনী

শাটলট্রেনের জালানা দিয়ে দেখা যায় মুখ, চোখের মধ্যে হাসি—এমন একটা ছবি আমি বুকপকেটে রেখে দিয়েছি। আমার অষ্টম প্রেমিকার চেহারার সঙ্গে মিল বলে এখনো সেই ছবি আমি দেখি লুকিয়ে লুকিয়ে। তার শ্যামল ঘ্রাণ আর কাদামাখা হাতের রেখায় যেদিন জেগে উঠেছিলো আমার গ্রামের নদী, প্লাবন আর ভাঙন শেষের চর—সেদিন আমি তার নাম রেখেছিলাম রাগিনী। মঞ্জু আমাকে শুধালো, কোন রাগিনী, দাদা? আমি বললাম, বৃন্দাবনী।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:২২

হাসান মাহবুব বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর ফিউশন ফ্রেন্ডো!

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৪৮

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.