নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনুসূর্যকে লেখা রূপকথা

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

অনুসূর্যকে লেখা রূপকথা

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাচীরভ্রমণ

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১০

মাকড়সা

আমার একজন প্রিয়তম নারী মাকড়সা ভয় পায়। আমি ভাবি, আমি যখন কাফকার ছেলেটার মতো একদিন ঘুম থেকে উঠে মাকড়সা রূপ ধারণ করবো, তখন সে কী করবে। হতেও তো পারে, জগত তো বড়ই রহস্যময়।

মানুষ

বাবা বলতেন, মান আর হুশ (চেতনা) এই দুইয়ে মিলেই মানুষ। এখন মনে হয় বাবা জেনেবুঝেই ভুল কথা বলতেন।

চাটাই

গ্রামে ধান শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। আর শহরে শব মোড়ানোর কাজে।

রক্ত

বাচ্চা আর রংপুর বিভাগের লোকজন বলে অক্ত। এটা একটা বাঙলা সিনেমার নাম। পরীমনির অস্ত্রধরার ভঙ্গিতে তার পিনোন্নত স্তন দৃশ্য হয়ে যায়।

মৃত্যু

মৃত্যুর একটা নিজস্ব দুর্গন্ধ আছে। প্রাণ পচে-গলে সেটা নাক নিয়ে যখন বের হয় তখন প্রাণির মৃত্যু হয়। প্রাণপচা গন্ধের রং গাঢ় খয়েরি, এর স্বাদ তিক্ত। দুর্ঘটনার মৃত্যুতে এই গন্ধ থাকে না। স্বাভাবিক মৃত্যু এবং রোগে ভোগে মৃত্যুতে এই গন্ধ থাকে।

সকাল

সকাল জিনিশটাকে ভোরের সঙ্গে আটকে রাখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ভোর তাকে পায়ে ঠেলে সূর্যের দিকে পাঠিয়ে দেয়। তখন অফিসে যেতে হয়।

বিবাহ

মানুষ মাত্রই বিবাহ করে, ভুল জেনেই করে। এবং ক্রমশ জড়িয়ে যায়। বিবাহ এমন এক অভিজ্ঞতার নাম যা জীবন দিয়ে অর্জন করেত হয়।

ভবিষ্যত

মানুষ সবসময় বর্তমানে বসবাস করে। সুতরাং ভবিষ্যত বলে কিছু নাই। বর্তমান দাঁড়ায়, বসে, হাঁটে আর ঘুম যায় অতীতের ওপর। এই দ্বিকাল মানুষই সৃষ্টি করে।

বেশ্যা

নারী এবং নারীবাদীরাও এখনো বেশ্যা শব্দটাকে গালি হিবেশে ট্রিট করে। এটা বোঝা যায়, যখন তারা এই শব্দটাকে এড়িয়ে অন্য শ্রুতিমধুর শব্দ খোঁজে এবং প্রয়োগ করে, যথা যৌনকর্মী ইত্যাদি।

স্বাস্থ্য

আমরা যারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পান করি, তাদের চোখে কোনো চশমা থাকে না, তারা জন্মান্ধ রাতের আঁধারেও দেখতে পায় ধাক্কা দিলে সরে যাচ্ছে সমুখের দেয়াল।

শরীর

শরীর খুবই ভঙ্গুর বিষয়। তাই শরীরকে ভেঙে ভেঙে আবার গড়তে হয়। শরীর কাদামাটি, চাইলেই বানানো যায় ঘটি অথবা ভাস্কর্য। সাবান দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেললেই শরীর শুদ্ধ হয়।

আপেল

আপেল আর গড়ায় না। গড়াতে গড়াতে সে মনোটোনাস আর পঙ্গু হয়ে গেছে। তাই আমরা কদবেল কিংবা চালতার দিকে তাকাই।

কার্ল মার্কস

তিনি অনেক প্রেমের কবিতা লিখেছেন যৌবনে। তারপর তিনি মানুষকে স্রোতের বিপরীতে একটা দরজা দেখালেন। দরজায় একটা তালা, তালার আকার দরজার দ্বিগুণ। আর সেই তালার কোনো চাবি নেই। একমাত্র কবিরাই এমন প্রহসন বানাতে পারেন।

শূন্য

প্রকৃত অর্থে শূন্য হলো পৃথিবীর ভিত্তি। এটাই মহিষের শিং।

চাঁদ

চাঁদ সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। এটা আমাদের কল্পনা। আমরা স্বভাবতই সূর্যের বিপরীতে চাঁদকে বানিয়েছি কোমল আলোর গোলক। এটাও কবিদেরই কাজ।

৫২৭

এটা একটা হোটেল রুমের নাম্বার। এই রুমে একটা পাহাড় ছিলো। পাহাড়ে একটা রেলস্টেশন। একটা ট্রেন থামে একদিন। ট্রেন থেকে দুইটা ঝর্ণা একসঙ্গে নেমে ভিন্ন নদী হয়ে গেলে এর দেয়ালে লেগে থাকে দীর্ঘশ্বাসের রং। এই রং সিঁদুরবর্ণ। এই রং বারংবার অপোর্চুনিটি ফার্নিচার স্টোরের সামনে দিয়ে আসা যাওয়া করে।

হাসি

যে হাসি চোখে ছড়ায় না, সেই হাসি মেকি। তবে দুই প্রকারের হাসিই আমাদের অন্তর্গত যাতনার মুখপত্র। হাসির হাতে থাকে কাচের চুড়ি। তার একটা ভেঙে গেলে কেউ বুকপকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় জন্মাবধি।

ভয়

খুব ছোটোবেলায় আমার বোবায় ধরা অসুখ ছিলো। আমি জানতাম, বোবায় ধরাকালে কারো হাতের ছোঁয়া লাগলেই কেবল বোবা ছেড়ে যেতো। যেহেতু আমি আমার জানলাবিহীন ঘরে একা একাই থাকতাম, এই ভয় আমার সঙ্গে ঘুমাতো। একদিন দুপুরবেলা ভয় আমার পায়ের ওপর এসে বসলো, টিনের চালা ছোঁয়া তার মাথা, থলথলে, গাঢ় অন্ধকার গায়ের রং। আমি তাকে লাথি দিয়ে সরিয়ে দিলাম।

ধৈর্য

ছোটোবেলা থেকে ধৈর্যের দড়ি ধরে আছি। তিনি বললেন, ইন্নালাহা মা সাবেরিন। তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নয়, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই এখনো সেই দড়ি ধরে আছি, টান টান। কেননা আমি যতটা পারি নিজেকেই ভালোবাসি।

নীরবতা

নীরবতা একটা শাদাফুলের নাম। আমাকে শাদাফুল ভালোবাসতে শিখিয়েছিলো আমার অভিমান। অভিমান নীরবতার ভাষায় কথা বলে। এখন আমি সেই ভাষা বুঝতে শিখে গেছি।

সলোমন

ঘুণপোকারা প্রথম জানতে পারলো তার মৃত্যুর খবর। আর তার ভর দেয়া কাঠের লাঠি ঘুণপোকাদের উচ্ছিষ্ট হয়ে ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়লো। সেই খবর তারা জানালো জিনশ্রমিকদের। আর শ্রমিকরা সলোমনকে প্রতারক জ্ঞান করে কাজ ছেড়ে চলে গেলো। আর পৃথিবীতে একটা অসমাপ্ত দেবালয়ের জন্ম হলো। সেই থেকে সবকিছুই অসমাপ্ত।

প্রাক্তন

প্রাক্তন মানে হলো ছেড়ে আসা বা ছেড়ে যাওয়া ঘর এবং জানলার গলিত ও বিগলিত স্মৃতি, যা মানুষ কখনোই ভুলতে পারে না।

ইচ্ছা

ইচ্ছা মানুষের চিরবন্দীত্বকে উপহাস করার একটি শব্দমাত্র, এটার বস্তুরূপ নাই।

সেপারেশন

সবকিছুর সঙ্গে সবকিছুর সেপারেশন সম্ভব। কিন্তু পুরোপুরি সম্ভব নয়।

গাছ

এইটা একটা উলম্ব সত্য। কিন্তু মুক, বধির ও স্থবির। এই জাতীয় সত্যের আসলে দরকার নেই।

পতাকা

এইটা একসময় পদাতিকের হাতে উড্ডীন ছিলো। এখন হয়ে গেছে গায়ের কাপড়।

দরজা

দরজা প্রকৃত অর্থে একটা অশ্লীল বস্তু, যেটা ঘরের মধ্যেই বৈষম্য বানায়। এটা সভ্যতার মুখপত্র। সভ্যতা না থাকলে ঘরে দরজার প্রয়োজন পড়তো না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৪৪

সুমন কর বলেছেন: বেশ কিছু চমৎকার লেগেছে।

শুভ নববর্ষ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: মজার।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.