নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনুসূর্যকে লেখা রূপকথা

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

অনুসূর্যকে লেখা রূপকথা

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোদকাটা কুকুর ও অন্যান্য কবিতা

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫


দীর্ঘশ্বাসের দিন

পার্টি অফিসের সিঁড়িতে তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা। আমাদের মনে আছে, আমরা একটা লাল মিছিল ফাঁকি দিয়ে দেখা করেছিলাম। ক্যালেন্ডারের গায়ে তেরো তারিখ ক্রুশবিদ্ধ যিশু হয়ে গেছে। আমাদের সমুদ্রসন্ধ্যা তারপর ঢেউ হয়ে ফুরিয়ে গেলো। নিমফুল বনের ধারে রাত হয়ে গেলো আরক্ত সন্ধ্যা, আমাদের মনে আছে। বিছানার পাশে গড়িয়ে গেলো দ্রাক্ষার ডালপালা, পাশের ছাতে সিগনাল টাওয়ার জাহাজের মাস্তুল। একটা নদীর পাশে ডানাবন্দী শঙ্খচিল ছিলো অথির, ছোটোপাখি ছোটোপাখি মুনিয়া দুপুর। আমাদের মনে আছে, নকশিকাঁথার মাঠের পাতায় অশ্রু হয়ে গেলো ঝরাবকুল; সাজুর বেদনা ঝাপসা হয়ে গেলো অশ্রুর দাগে। একটা কালো বাঁশি ফুলদানিতে হয়ে গেলো দীর্ঘশ্বাস। সেই দীর্ঘশ্বাসে এখনো দীর্ঘ হয় দখিনের আকাশ।

২০.১০১৬


নিকিতা আসো

নিকিতা আসো, ঝামা দিয়ে ঘষে ঘষে মুছে দিই আকাশের তারা। এইসব অথর্ব, বোকা-কালা সাক্ষী রেখে লাভ নেই। তারচে’ অমানিশা মিশে থাক অথৈ চোখের বিভ্রমে। দেখো, বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলির মাঠে ফুলও ছিন্ন হয়ে ফোটে, ফুলের বদলে তবে আসো বুনে দিই কণ্টকের বন। দুইফালি চাঁদ দুহাতে সরিয়ে দিই আসো জরাসন্ধের নিয়তি মেনে। আসো নিকিতা, ছিন্ন করে দিই দেয়াল থেকে জানলার উত্তাল শরীর, ঘর থেকে মুছে দিই দরোজার মায়া, চৌকাঠ থেকে পায়ের দাগ। সন্তুরের তার থেকে আলগোছে খুলি নিই আসো তিনতাল, তিনতাল ভেঙে আসো বাঁধি কর্কট মুদ্রা, ছিন্ন হবো জেনে।

০৫.১২.১৬


দেয়ালের ভয়

রাত অগোছালো করে দিয়ে ঘুম যাই উত্তরের ঘরে। দখিনের ঘর ফাঁকা রেখে দিই। হাওয়া এসে ঘুরে ঘুরে চলে যায়। নিয়ে যায় পিঠে করে দেয়ালের ভয়। নিয়ে যায় নৈকট্যের ঘ্রাণ ও কুসুম। আলো এসে পাশ ফিরে শোয় আমার বালিশে। আলোর শরীর তরল চাঁদের রূপ হয়ে ভোরবেলা ফুরিয়ে যায়। ফুরিয়ে যায় সূর্যের অত্যাচারে। উত্তরের ঘরে একটা পাহাড় আছে দেয়ালে প্রোথিত। খুন করে কবে তাকে দেয়ালে সেলাই করে রেখেছি। পলেস্তরায় ঢেকে আছে সুদীর্ঘ পাহাড়, প্রশ্রবণও ছিলো। এখন সে দেয়ালের অশ্রু হয়ে গেছে। দখিনের ঘর জানে না উত্তরঘরের বেদনা। যত শীত আর শৈত্য এসে উবু হয়ে বসে ইজেলের পাশে। কালার প্যালেটে নাক ডুবিয়ে বলে উষ্ণতার গল্প। দূরে জানালার ওপারে গল্পের ঘরগুলি ঘুমিয়ে থাকে প্রতিরাতে। ফুলের ভিতর ফুলদানির ভিতর ঘনীভূত হয় মানুষের আয়ু। আরো পরমায়ু জমিয়ে আমি দীর্ঘ পা মেলে শুই। আমার শাদা ক্যানভাসের দিকে চোখ মেলে শুয়ে থাকি। আমার চুল উত্তীর্ণ করে ঘাড়ের বাচালতা। আর দেয়ালের ভিতর থেকে পাহাড় মুখ ভেংচায়। এইভাবে প্রতিরাতে রাত অগোছালো করে ঘুম যাই। বিদেহি আলো এসে পাশ ফিরে শোয়। রাত ভেঙে গেলে সূর্য তাকে খুন করে সারাদিন চক্রবাল।

০৩.১০১৬


শ্রীমতি ছায়া

ধোঁয়ার পাশে সবুজবাতি পুড়ে যাচ্ছে অবরোহী। কতিপয় বাতি ভস্মও হয়ে গেছে অবেলায়। সেইসব অবেলার ঘুম ঠেলে আমি চিরদিন কেবল ছায়াই হতে চেয়েছি, সূর্যের বিপক্ষে একটুকরো ছায়া। চুপিচাপ জানলা দিয়ে দেখে ফেলি বৃক্ষরহিত বনে ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে গেছে। বুকের ভিতর থেকে দুহাত বাড়িয়ে সেই সন্ধ্যা জড়ানো বনকে ডাকি, আয় আয়। ওই বনের বুক কেটে চলে গেছে অজানিত নদীর রেখা। শ্রীমতি, আমাকে ওই নদীমধ্যে নিয়ে গিয়ে একদিন তোমার ছায়া বানিয়ে দিও, সূর্যের মৃত্যুর আগে।

০৯.০৮.১৬


রোদকাটা কুকুর

শাদাকালো কুকুর হেঁটে যায় রোদ কেটে। কুকুরের মুখে খ-িত হাস্যরস। এইবার ওড়বে জালের ভিতর। দূরের দরোজায় শয়ে শয়ে পাতা ঝরে। হাতে শালুকের বদলে ফুটছে মেডেলগুচ্ছ। গলায় মুক্তোর মালা আর চোখে চশমা। চিবুকের নিচে মকরক্রান্তি ছায়া। বাষ্প উড়ছে চক্রবর্তী রাতে। দেবতার শব পড়ে আছে মর্গে। পেছনে বইয়ের তাক কবিজীবনী। ক্রেন্স আর ফ্লাইং। সঙ্গে ওড়ছে অলৌকিক রেহেল। রেহেলে শোয়া মৃতশিশুদের চোখ। তোমার পেছনে বকফুল সিঁদুর। পাশে অ্যাংগ্রিপাখি পাশ ফিরে আছে। একটা লাল ইঁদুর পাঠাচ্ছে চিঠি দ্রুত। সঙ্গে অন্ধ কার্বনকপিও যাচ্ছে একা। চায়ের কাপের পাশে শুয়ে আছে খাতা। হাতের ঘড়িতে সময় থেমে গেছে। স্বরচিত লাল পড়ছে কেউ। নিজেকে নিলামে তুলেছো। তোমার দাঁতে লক্ষপোকা কাটছে মাড়ি। প্রশ্নপত্রে ঘি ঢেলে বানাচ্ছো পায়েস। শাদাকালো দাঁড়িয়ে আছো উঠানে। শালুক পুনর্বার জড়ো হয় নৌকো ঘিরে। ফিরে আসে জোড়াপাহাড়ের ঘ্রাণ। জলের ভাঁজে লুকিয়ে রাখছো হাসি। সঙ্গে লুকিয়ে রাখছো রোদকাটা কুকুর।

০৮.০৮.১৬

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:০৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: নিকিতারে আসতে বলাটা ভাল্লাগছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.