নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

।হই আমি বীর অথবা হই আমি ধীর,আমি শুধু বাংলাদেশের নয়,আমি সমগ্র পৃথিরীর ।।হই আমি বীর অথবা হই আমি ধীর,আমি শুধু বাংলাদেশের নয়,আমি সমগ্র পৃথিরীর ।

মো: নিজাম গাজী

আমি ঐ সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি,আমি তারই বান্দা, আমি শুধু বাংলাদেশের নয় আমি সমগ্র পৃথিবীর বাসিন্দা। গাজী পরিবারে আমি জন্মগ্রহন করেছি বলে আমি শুধু গাজী পরিবারের নয়, আমার জন্ম এই পৃথিবীর সর্বময়। শুধুমাত্র সোনাখালী গ্রামে আমার জন্ম নয়, আমার জন্ম পৃথিবীর সর্বময়। এই গ্রাম এই দেশের নয় আমি শুধুমাত্র, আমি এই সারা দুনিয়ারই ছাত্র। শুধুমাত্র একটি মহল্লায় আমার আগমন নয়, আমার আগমন বিশ্বময়। হই আমি ধীর হই আমি মহাবীর, আমি শুধু বাংলাদেশের নয় আমি সমগ্র পৃথিবীর।

মো: নিজাম গাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পান্তাখোর [নাটক]

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৩

১ম দৃশ্য
এলাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছদরুল । বয়স তার বাইশ তেইশ হবে । বাবা তার অনেক আগে মারা গেছে । তার পরিবারে আছে তার মা ও একটি মাত্র ছোটবোন,নাম লতা । ছদরুলদের যথেষ্ট জায়গা জমি ও তার বাবার রেখে যাওয়া সয়-সম্পত্তি আছে । আর তা দিয়েই খুব ভালোভাবে চলে তাদের সংসার । ছদরুল একটু বোকা টাইপের ছেলে,কিন্তু সে নিজেকে খুব স্মার্ট ও চালাক ভাবে ।
[একদিন ছদরুল ঘরের মধ্যে পাঞ্জাবি,পাজামা পরে গায়ে সেন্ট মেরে চোঁখে একটা কালো সানগ্লাস লাগিয়ে রেডি হচ্ছে সে বাহিরে বের হবে বলে]
[এরমধ্যে ছদরুলের বাড়িতে ছদরুলের দুই বন্ধ নিজাম ও কাওসারের আগমন]
নিজামঃ- ছদরুল কই তারাতারি বের হ,দেরি হয়া যাইচ্ছে ।
[বাহিরে ছদরুলের মায়ের আগমন]
ছদরুলের মাঃ- এ কি ছদরুলরে ডাকাডাকি করতিছিস ক্যান,কই যাবি তোরা?
কাওসারঃ- আইজকে তো আমাদের দাওয়াত আছে খালাম্মা ।
ছদরুলের মাঃ- কিসের দাওয়াত?
নিজামঃ- কেনো ছদরুল কিছু বলে নায়?
[এরমধ্যে ছদরুলের আগমন]
কাওসারঃ- এই ছদরুল খালাম্মারে বল যে আমরা কোথার দাওয়াতে যাই ।
নিজামঃ-হু ছদরুল বল খালাম্মাকে ।
ছদরুলঃ-আম্মা আসসালামু আলাইকুম ।
ছদরুলের মাঃ- কিরে বাবা সাইজা গুইজা কোথায় যাচ্ছিস?
ছদরুলঃ- আম্মা একটা দাওয়াত খেতে যাচ্ছি ।
ছদরুলের মাঃ- কোথায় দাওয়াত?
ছদরুলঃ- আম্মা আজ নুপুরের জন্মদিন । তাই ওদের বাড়ি দাওয়াত ।
নিজামঃ- জ্বি খালাম্মা আমরা সবাই নূপুরদের বাড়িতেই যাবো ।
ছদরুলের মাঃ- ও নুপুরের জন্মদিন(একটু মুচকি হেসে দিয়ে) । ঠিকাছে তাহলে যা,ভালোভাবে যাইস বাবা ।
ছদরুলঃ- ঠিকাছে আম্মা যাচ্ছি ।
কাওসারঃ- খালাম্মা আমরাতো সাথে আছি । চল ছদরুল ।
২য় দৃশ্য
[ছদরুল ও তার দুই বন্ধু রওয়ানা হলো নূপুরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে]
[পথে ওদের সাথে ছদরুলের বোন লতার সাথে দেখা]
লতাঃ- ভাইয়া এতো সাইজা গুইজা যাও কই? পান্তা খাইছো তো? তোমার তো আবার পান্তা না খাইলে মাথা ঠিক থাকেনা ।
ছদরুলঃ- তা তোরে বলতে হইবে ক্যান? বেশি কথা বলিস । যা এখান থেকে যা ।
নিজামঃ- লতা আমরা নূপুরদের বাড়ি যাচ্ছি ।
লতাঃ- ওহ নিজাম ভাই তোমার পান্তাখোর বন্ধুটারে সামলাইও ।
ছদরুলঃ- কানের উপর একটা বসাইয়া দেবো,যা এখান থেকে ।
কাওসারঃ- ছদরুল ঝগড়া করতে হবেনা চল?
[লতা একটা দৌড় দিয়ে চলে গেলো]
৩য় দৃশ্য
[পথ দিয়ে তিন বন্ধু যাচ্ছে নূপুরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে]
চা দোকানদার মোখলেছঃ- কিরে ছদরুল সাইজা গুইজা কই যাচ্ছিস? চা খাইয়া যা ।
ছদরুলঃ- না আমি চা খাবোনা মোখলেছ ভাই । আমি এখন নূপুরদের বাড়ি যাচ্ছি দাওয়াত খাইতে । আর তুমিতো জানো আমি পান্তা ছাড়া কিচ্ছু খাইনা ।
নিজামঃ- হ মোখলেছ ভাই ছদরুল তো পান্তাখোর তা তুমি জানোনা?
চা দোকানদারঃ- জানিতো,পুরা এলাকাবাসীইতো জানে । আচ্ছা ছদরুল তাইলে তোরা দাওয়াত খাইতে যা । যওয়ার সময় চা খাইয়া যাইস ।
ছদরুলঃ- ঠিকাছে । এ নিজাম,কাওসার তোরা চল ।
চা দোকানদারঃ- হালার বলদ এট্টা চা খাবেনা,পান্তা খাবে । বোকদাডায় আবার ভাব লয় সারুখ খানের মতো ।
৪র্থ দৃশ্য

ছদরুলঃ- বুঝছো নিজাম,কাওসার চা কি খাবো এখন । যেখানে যাচ্ছি সেখানে যা খাওয়াবেনে,তাই এখনকি চা খেয়ে পেট টা নষ্ট করবো ।
নিজামঃ-তুই যা খাবি আনে পান্তা ছাড়া তো কিচ্ছু বুঝিস না ।
কাওসারঃ- ঠিক বলছো নিজাম ।
ছদরুলঃ- এই তোরা বেশি কথা না বইলা চল ।
[নূপুরের বাড়িতে ছদরুলসহ ওদের তিনজনার আগমন]
ছদরুলঃ- নূপুর,নূপুর বাড়িতে আছো?
নূপুরঃ- কিরে ছদরুল ভাই আপনারা?
ছদরুলঃ-কেনো তুমি আমাকে দাওয়াত করছিলেনা তাই আসছি ।
নূপুরঃ- কিসের দাওয়াত?
ছদরুলঃ- ক্যান তোমার জন্মদিনের দাওয়াত । তুমি আমায় দাওয়াত করছিলেনা তাই আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে চলে আসলাম ।(খুব স্টাইল করে) ।
নিজাম+কাওসারঃ- হ্যা তুমিতো ছদরুলরে দাওয়াত করছিলে ।
নূপুরঃ- গিফট টিফট কিছু আনিছেন?
ছদরুলঃ- আরে আমার ভুল অয়ে গেছে । আমার এক্কেবারে মনে নেই । অসুবিধে নেই আমি পরের বার দিয়ে দেবানি ।
নূপুরঃ- আরে ছদরুল ভাই আমিতো একটু আপনার সাথে মজা নিছি । আসলে আমার আজ জন্সদিন না । আপনাকে মিথ্যা বলতে আমার খুব মজা লাগে(হেসে দিয়ে) ।
ছদরুলঃ- ছি নূপুর আমি তোমাকে অন্যরকম মনে করতাম । তুমি আমার সাথে এমন করতে পরলা?
নূপুরঃ- ছদরুল ভাই রাগ কইরেন না । আসছেন যখন ভিতরে আসেন । জন্মদিন না হলে হবে কি । জন্মদিন ওলে যা খাওয়াতাম তাই খাওয়াবানে । আপনারা সবাই আসেন ।
[নূপুরদের ঘরের মধ্যে ছদরুলসহ তিন বন্ধুর প্রবেশ]
৫ম দৃশ্য
নূপুরঃ- আপনারা বসেন আমি আসতেছি ।
ছদরুলঃ- ঠিকাছে ।
[নূপুর মিষ্টি,সেমাই আপেল কমলা নিয়ে আসলো]
নূপুরঃ- খান ছদরুল ভাই আপনারা খান ।
ছদরুলঃ- এ তুমি কি আনিছো নূপুর? আমিতো এসব খাইনা । আমি পান্তা খাই ।
নিজাম+কাওসারঃ-হও ছদরুল তো একেবারে পান্তাখোর ।
নুপুরঃ- তাতো জানি কিন্তু এই সময়ে পান্তা ভাত পাবো কোথায়?
ছদরুলঃ- হাহা সিষ্টেম আছে সিষ্টেম আছে ।
নূপুরঃ- কি সিষ্টেম ছদরুল ভাই?
ছদরুলঃ- তুমি এক গামলা ভাত আর পানি নিয়ে আসো আমি দেখাবানি । সাথে লবন আর কাচা মরিচ ও আইনো ।
নূপুরঃ- ঠিকাছে । নিজাম ভাই আর কাওসার ভাই আপনারা ফল খান । পাগল জানি কোথাকার(মনে মনে) ।
[নূপুর এক গামলা ভাত,পানি,কাচা মরিচ ও লবন নিয়ে আসলো]
[ছদরুল গরম ভাতের মধ্যে পানি ঢেলে দিয়ে পান্তা বানিয়ে লবন দিয়ে কাচা মরিচ দিয়ে এক গামলা ভাত খেয়ে ফেলছে]
নুপুরঃ- হাহা ছদরুল ভাই আপনি এ কি কান্ড করলেন? আজব তো ।
ছদরুলঃ-পান্তা ছাড়া খালি আমার জানটা,
তাই পান্তা খেয়ে ঠান্ডা করলাম প্রানটা ।
পান্তা ছাড়া আমি যে কিছু বুঝিনা,
পান্তা ছাড়া অন্য কিছু আমি খৃঁজিনা ।
দরকার হলে পান্তার জন্য আমি হতে পারি চোর,
হে আমি যে এক মস্তবড় পান্তাখোর ।
[নূপুরের বাড়ি থেকে ওদের তিনজনার প্রস্থান]
৬ষ্ঠ দৃশ্য
[এদিকে আজ ছদরুলের মা একটু অসুস্থ,আর ওর বোন লতা ওর মায়ের সেবা করছে বলে আজ রান্না বান্না হয়নি । কিন্তু ছদরুল খাবে কি?ছদরুলের তো পান্তা না খেলে মাথা ঠিক থাকেনা । সারাদিন না খাওয়া ছদরুল । ছদরুলের শুধু রাতের অপেক্ষো]
ছদরুলঃ- শালা এখনও রাত হচ্ছেনা কেনো? ওহ আচ্ছা নিজামকে একটা ফোন দিই ।
নিজামঃ- হ্যালো ছদরুল কি খবর?
ছদরুলঃ- বন্ধু আমার জন্য এক গামলা ভাত নিয়ে আয় ।
নিজামঃ- আরে দোস্ত আমাদের ভাততো খাওয়া হইয়া গেছে ।
ছদরুলঃ- ধুর,তাহলে তুই এখন আমাদের বাড়ি আয় । সাথে কাওসারকে ও নিয়া আসিস ।
নিজামঃ- আচ্ছা আইতাছি ।
৭ম দৃশ্য
[ছদরুলের বাড়িতে নিজাম ও কাওসারের আগমন]
নিজামঃ- কি খবর ছদরুল ডাকছিস ক্যান?
ছদরুলঃ- শোন আম্মা অসুস্থ,আর লতা তার সেবা করতেছে তাই আজ রান্না করা হযনি । আর তোরাতো জানো যে পান্তা না খেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা । তাই এখন পাশের বাড়ির আজাহার চাচার ঐ মাটির ঘরে সিং দিয়ে এক পাতিল ভাত চুরি করতে হবে ।
নিজামঃ- আচ্ছা ঠিকাছে ।
ছদরুলঃ- চল সাবল নিয়ে আসি সিং কাটার জন্য ।
[তিনজনে মিলে আজাহার চাচার মাটির ঘরে সিং কাটলো । সিং কেটে গর্ত করে নিজাম আর কাওসার ভিতরে লুঙ্গি কাচা দিয়ে ঢুকে এক পাতিল পান্তা ভাত চুরি করে আনলো ।]
নিজাম+কাওসারঃ- এই নে ছদরুল তোর ভাত ।
ছদরুলঃ-ধন্যবাদ তোদের ।
[ছদরুল রাতে বাগানে বসে এক পাতিল ভাত সব খেয়ে ফেলল]
৮ম দৃশ্য
[পরের দিন সকালে রাস্তা দিয়ে ছদরুল যাচ্ছে]
চায়ের দেকানদার মোখলেছঃ- ঐ ছদরুল এদিকে আয় ।
ছদরুলঃ- কি ডাকছো কেনো মোখলেছ ভাই?
মোখলেছঃ- চা খাইয়া যা সকালবেলা । ভালো লাগবে আনে ।
ছদরুলঃ- না মোখলেছ ভাই চা খাবোনা । তুমিতো জানো আমার একটাই নেশা আর তা হলো পান্তাভাত খাওয়ার নেশা ।
মোখলেছঃ- বিড়িখোর দেখছি,চাখোড় দেখছি,পানখোড় দেখছি,সুদখোর দেখছি,ঘুষখোড় দেখছি কিন্তু তোর মতো পান্তাখোড় আমি আমার সাত জন্মে ও দেহি নাই ।
ছদরুলঃ-মোখলেছ ভাই তুমি আমারে এক গামলা পান্তা ভাত দিয়ে যাও একটু সকালবেলা পেট ভরে খাই । মা অসুস্থ তাই রান্না বান্না হয়নি ।
মোখলেছঃ- মোর খাইয়া বইয়া কাম আছেতো এহন দোকান থুইয়া মুই তোর জইন্যে পান্তাভাত আইন্না দিমু ।
ছদরুলঃ- দ্যাহো মোখলেছ ভাই তোমারে টাকা দেবো,তুমি পান্তা নিয়া আসো ।
মোখলেছঃ- না আমার টাহা লাগবেনা ।
ছদরুলঃ- দ্যাখো মোখলেছ ভাই পান্তা না খাইতে পারলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা ।
[এই কথা বলে ছদরুল মোখলেছের দোকানের ঝাপের খুটা উঠাইয়া দোকান ভাঙ্গা শুরু কইরা দেছে । মোখলেছ ছদরুলকে ঠেকাইয়া রাখতে পারছে না । । এরমধ্যে নিজাম এবং কাওসার দৌড়ে এসে ছদরুলকে ধরে]
৯ম দৃশ্য
নিজামঃ- মোখলেছ ভাই তুমি তারাতারি পান্তা ভাত নিয়া আসো,না হয় কিন্তু আমরা দশজন মিলেও ওরে ঠেকাইতে পারবো না । ও কিন্তু তোমার দোকান ভাইঙ্গা ফেলাবে ।
মোখলেছঃ-হ তোরা এট্টু ওরে ঠ্যাহা আমি পন্তাভাত নিয়া আসতাছি ।
ছদরুলঃ- এ তোরা আমারে ছাড় আমি দোকান ভেঙ্গে ফেলবো ।
কাওসারঃ- একটু ধৌর্য ধর দোস মোখলেছ ভাই পান্তা আন্তে গেছে তোর জন্যে ।
১০ম দৃশ্য
[মোখলেছ এক গামলা পান্তা নিয়া আসছে । তা ছদরুল সব খাইছে]
ছদরুলঃ- মোখলেছ ভাই কিছু মনে কইরো না । পান্তা না খাইলে আমার সাথা ঠিক থাকেনা ।
মোখলেছঃ- হ মুই বোঝতে পারছি ।
নিজাম+কাওসারঃ- বন্ধু আমরা এখন যাচ্ছি তুই ঠান্ডা মাথায় বাড়ি যা ।
[সকলের প্রস্থান]
১১ তম দৃশ্য
[ছদরুল বাসায় গেলো । ছদরুলের মা সুস্থ,তাই আজ দুপুরে ভাত রান্না করছে]
লতা(ছদরুলের বোন)ঃ- ভাইয়া মা তোরে ভাত খাইতে ডাকতেছে ।
ছদরুলঃ- আসতেছি ।
ছদরুলের মাঃ- কই ছদরুল এখনও যে এলনা?
ছদরুলঃ- কই মা আমি এইতো ভাত দাও ।
ছদরুলের মাঃ- এই নে বাবা খা ।(এক প্লেট গরম ভাত দিল) ।
ছদরুলঃ- মা তুমি জানোনা আমি পান্তা ছাড়া অন্য কোনো ভাত খাইনা ।
[ছদরুলের ছোটবোন হাসতেছে]
ছদরুলের মাঃ-বাবা এসময় পান্তা ভাত পাবো কই বল?
ছদরুলঃ- দেখো মা আমি হচ্ছি বাপকা বেটা । আমার আব্বাজানও আমার মত পান্তাখোর ছিলেন ।
ছদরুলের মাঃ- হ্যা বাবা তুই যখন ছোট ছিলি তখন তোর আব্বা পান্তাখোরের প্রতিযোগীতায় এলাকার মধ্যে চ্যম্পিয়ন হইছিল । আর তুই সেরকম হইছো ।(মুখটা কালো করে) ।
ছদরুলঃ- ঐ লতা এক জগ পানি নিয়া আয় ।
লতাঃ- হ্যা ভাইয়া আনছি । পাগল যেনো কোথার ।
ছদরুলঃ- তারাতারি নিয়া আয় বান্দর ।(ওর বোনের কান ধরে) ।
[লতা পানি নিয়া আসলো । ছদরুল সেই পানি গরমভাতের মধ্যে ঢেলে দিয়ে পান্তা বানিয়ে খাওয়া শুরু করলো । ওর কান্ড দেখে ওর মা ও বোন হাসতেছে]
১২ তম দৃশ্য
[রাস্তা দিয়ে ছদরুল ও ওর দুই বন্ধু নিজাম আর কাওসার যাচ্ছে । হঠাৎ করে ওরা শুনতে পেল মাইকে বলতেছে]
মাইকঃ-সুপ্রিয় এলাকাবাসী আগামী পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে খানপাড়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এক বিশাল পান্তা খা্ওয়া প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে । আপনারা যারা অংশগ্রহন করতে চান তারা চৈত্র মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমান ফি দিয়ে নিবন্ধন করুন । নিবন্ধনের স্থান খানপাড়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইবে্ররী । এখানে প্রথম পুরুষ্কার একটি একুশ ইঞ্চি রঙ্গীন টেলিভিশন,২য় পুরুষ্কার একটি বাই সাইকেল এবং ৩য় পুরুষ্কার বিশাল একটি গামলা । সুপ্রিয় এলাবাসী……
নিজামঃ- দোস্ত ভালো খবর তুইতো ভালোই পান্তা খাও । তুই এই পান্তা খাওয়ার প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন কর ।
কাওসারঃ- হ দোস্ত নিজাম ঠিক বলছে । তাছাড়া তোর ঘরেতো টেলিভিশন নাই । তুই ফাষ্ট হইতে পারলে টেলিভিশন পেয়ে যাবি ।
ছদরুলঃ- সত্যি আমি ফাষ্ট হইতে পারবো?আমি টেলিভিশন পাবো?
নিজামঃ- অবশ্যই তুই ফাষ্ট হইতে পারবি দোস্ত । তুই নাম লেখা,নিবন্ধন কর ।
ছদরুলঃ- আচ্ছা আমি রাজি আমি নাম লেখাবো ।
১৩ তম দৃশ্য
[অবশেরষ ছদরুল প্রতিযোগীতায় নাম লেখাল]
[রাস্তায় নুপুরের সাথে ছদরুলের দেখা]
নূপুরঃ- কিরে ছদরুল ভাই আপনি নাকি পান্তা খাওয়ার প্রতিযোগীতায় নাম লেখাইছেন?
ছদরুলঃ- হ্যা লেখাইছি কিন্তু তা তুমি জানলে কিভাবে?
নূপুরঃ- আরে কি বলেন ছদরুল ভাই এ খবর তো এলাকার সবাই জানে । সবার মুখে মুখে আপনার নাম । আপনি তো পুরো সুপারহিট হইয়া গেলেন । আর যদি আপনি ফাষ্টই হইতে পারেন তাহলে আপনাকে পান্তাখোর ছদরুল হিসেবে এক নামে এলাকার সবাই চিনবে ।
ছদরুলঃ- বেশি কথা বলনা নূপুর । তুমি যাচ্ছো কই?
নূপুরঃ- কই আবার যাবো? আসছিলাম সুপারহিট ছদরুল ভাইয়ের খোজে ।(হেসে হেসে)
ছদরুলঃ- তুমি কিন্তু আমাকে ইনসল্ট করতেছো নূপুর ।
নূপুরঃ-আরে না আপনারে ইনসাল্ট করতে যাবো কেনো? আমি এখন যাই ।
ছদরুলঃ- যাচ্ছে কেনো দাড়াও ।
নূপুরঃ- না আমার সময় নেই ।
[উভয়ের প্রস্থান]
১৪ তম দৃশ্য
[ছদরুল পান্তাখোরের প্রতিযোগীতায় নাম লেখাইছে জেনে ওর মা ও বোন খুব খুঁশি । তাই তারা দুপুরে ও রাত্রে ভাত রান্না করে আর পানি দিয়ে ভিজায় । আর এতে ওদেরকে সাহায্য করে ছদরুলের বন্ধু নিজাম ও কাওসার । ছদরুল শুধু বসে বসে পেট ভরে পান্তা খায় । অতিরিক্ত পান্তা খেতে খেতে ছদরুল অসুস্থ হয়ে পড়ে]
নিজামঃ- খালাম্মা ছদরুলকে হাসপাতালে নিতে হবে ।
ছদরুলের বোনঃ- হ্যা নিজাম ভাই তুমি ঠিক কইছো ভাইয়াকে হাসপাতালে নিতে হবে ।
কাওসারঃ- হ্যা তারাতারি সবাই ধরো ।
ছদরুলের মাঃ- হ্যা ধরো সবাই ধরো ।
ছদরুলঃ- না আমাকে হাসপাতালে নিলে কাজ হবেনা । আমাকে আরেক গামলা পান্তা এনে দাও ।
নিজামঃ- দোস্ত তুই পাগল হইছো নাকী পান্তা খেয়ে তোর এই অবস্থা আবার তুই পান্তা খাবি?
ছদরুলঃ- তোরা বেশি বুঝবিনা তোরা পান্তা এনে দে দ্রুত । না হয় কিন্তু আমার মাথা গরম হয়ে যাবে । আমি অরো অসুষ্থ হয়ে পরবো ।
কাওসারঃ- হ এই লতা ছদরুলকে আরেক গামলা পান্তা এনে দাও ।
[লতা আরেক গামলা পান্তা এনে দিল ছদরুল তা খেয়ে সুস্থ হয়ে গেল । সবাই তো এটা দেখে অবাক]
১৫ তম দৃশ্য
[এলাকার মুরাব্বিরা দোকানদাররা সবার মুখে মুখে,যে ছদরুল জিতে যাবে]
[এদিকে খবর পাওয়া গেল পাশের গ্রাম থেকে রুস্তুম নামে এক বীর পাহলান পান্তাখোর আসতেছে]
[বাজারের মোখলেছের চায়ের দোকানে কয়েকজন লোক কথা বলতেছে]
সাহাবুদ্দিনঃ-না ছদরুল ঐ রুস্তুমের সাথে পারবে না ।
রেজাউলঃ- মনে হয়না । কারন ঐ রুস্তুম আইজ পর্যন্ত কোনো প্রতিযোগীতায় হারে নায় ।
মাইনুদ্দিনঃ- হয় ছদরুইল্লা পারবে না ঐ রুস্তমের লগে ।
মোখলেছঃ- না না মনে হয় পারবে না । দেহি প্রতিযোগীতার দিন কি অয়,ছদরুইল্লা কি হরে?
[সবার প্রস্থান]
১৬ তম দৃশ্য
[ছদরুলের রুমে ছদরুলের মায়ের আগমন]
ছদরুলের মাঃ- বাবা তুই জিততে পারবিতো? তোর বাবার মানটা রাখবিতো? শুনছি পাশের গ্রাম থেকে বীর পাহলান রুস্তুম আসছে ।
ছদরুলঃ-মা তাতে কোনো সমস্যা নাই । আমি কেউরে ডরাই না । আর আমি অবশ্যই জিতবো । তুমি দোয়া করো আমি বাবার মান রাখবো । আমার যে রঙ্গীন টেলিভিশন আনতেই হবে মা ।
ছদরুলের মাঃ- ঠিকাছে বাবা তুই এখন ঘুমা । আমি যাচ্ছি ।
[ছদরুলের মায়ের প্রস্থান]
১৭ তম দৃশ্য
[রাতে ছদরুল স্বপ্নে দেখতেছে প্রতিযোগীতায় ঐ রুস্তুম জিতে গেছে । ছদরুল এই স্বপ্ন দেখে ওরে মা বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে ।]
ছদরুলের মাঃ- ছদরুল বাবা তোর কি হয়েছে?(দৌড়ে এসে) ।
ছদরুলঃ- মা,মা আমি দেখছি,দেখছি ঐ ।
ছদরুলের মাঃ- কি দেখছো বাবা?
ছদরুলঃ- মা আমি স্বপ্ন দেখলাম ঐ রুস্তুম ফাস্ট হয়ে টেলিভিশন নিয়া গেছে ।
ছদরুলের মাঃ- বোকা এটা তোর মনের ভয় । তুই ফাষ্ট হবিই হবিই বাবা । চিন্তা করিসনা,এখন ঘুমা বাবা ।
[ছদরুলের মায়ের প্রস্থান]
১৮ তম দৃশ্য
[আজ পহেলা বৈশাখ । সকাল ১০ টা বাজে শুরু হবে পান্তাখোরের প্রতিযোগীতা]
[ছদরুল জোগাড় হয়ে রওয়ানা হয়েছে প্রতিযোগীতার উদ্দেশ্যে]
ছদরুলের মাঃ- বাবা দাড়া ।
ছদরুলঃ-মা আমার জন্য দোয়া কইরো ।
[ছদরুলের মা ছদরুলকে আশির্বাদ দিয়ে দিল আর হাতের মধ্যে কি যেনো একটা গুজে দিল]
ছদরুলের মাঃ-বাবা ঐটা পকেটে রাখিস ।
ছদরুলঃ- ঠিকাছে মা আমি যাচ্ছি ।
ছদরুলের মা আচ্ছা বাবা ভালো মত যা । দোয়া রইল ।
[ছদরুলের প্রস্থান]
১৯ তম দৃশ্য
[এদিকে প্রতিযোগীতার স্থানে আগে থেকেই ছদরুলের বোন লতা,নূপুর,নিজাম ও কাওসার ছদরুলের জন্য অপেক্ষা করতেছে । সবাই ছদরুলকে অনুপ্রেরনা দিচ্ছে]
নূপুরঃ- ছদরুল ভাই আপনি পারবেন । আপনি জিতবেন । দোয়া রইল আপনার জন্য ।
ছদরুলঃ- শুধু দোয়াই দিবা আর অন্য কিছু দিবানা?
নূপুরঃ- আর কি দেওয়ার আছে ছদরুল ভাই?আপনি এখন প্রতিযোগীতায় যান । প্রতিযোগীতা আরেকটু পর শুরু হবে ।
২০ তম দৃশ্য
[এদিকে দশটা বেজে গেছে ছদরুল রুস্তুম সহ সব প্রতিযোগী বসছে লাইন দিয়ে । সবার সামনে কর্তৃপক্ষের লোক বড় গামলায় করে পান্তা ভাত দিয়ে গেছে]
কর্তৃপক্ষের লোকঃ- বাশি দেওয়া মাত্র আপনারা খাওয়া শুরু করবেন ।
প্রতিযোগীরাঃ- ঠিকাছে ।
কর্তৃপক্ষের লোকঃ- বাশি দিল ।
প্রতিযোগীরাঃ- আমাদের লবন দেননি কেনো?লবন ছাড়া পান্তা খাবো কিভাবে?
কর্তৃপক্ষের লোকঃ- এটা আমাদের প্রতিযোগীতার নিয়ম । লবন দেওয়া যাবেনা,লবন ছাড়াই আপনাদের পান্তা খেতে হবে ।
[একথা শোনার পরে সব প্রতিযোগী পান্তা খাওয়া শরু করলো । ছদরুল সবার আগে দুইগামলা পান্তা খেয়ে ফেলল । ছদরুল ফাষ্ট হয়ে গেল । তাকে ডেকে নিয়ে প্রথম পুরুষ্কার রঙ্গীন টেলিভিশন দিয়ে দিল । নুপুর,লতা,নিজাম,কাওসার সহ সারা এলাকাবাসী ছদরুলের জয়ে উল্লাসে ফেটে উঠলো]
২১ তম দৃশ্য
রুস্তুমঃ- ছদরুল তোমার কাছে আমার একটা প্রশ্ন তুমি কিভাবে ফাষ্ট হলে । আমি জীবনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিরযগীতায় হারি নাই । আর তুমি আমাকে হারালে? এতো পান্তা কিভাবে খেলে?
ছদরুলঃ- শোনেন রুস্তুম ভাই আমি যখন বাড়ি থেকে প্রতিযোগীতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম,তখন আমার মা আমাকে দোয়া দিয়ে দিল আর হাতের মধ্যে একটা পোটলায় লবন দিয়ে দিয়েছিল । আমি প্রতিযোগীতার সময় পকেট থেকে ঐ লবন বের করেই পান্তা খেয়েছি ।
রুস্তুমঃ- ওহ তাই । স্যাড,স্যাড,স্যাড ।
২২ তম ও শেষ দৃশ্য
[এদিকে গ্রামবাসী ছদরুলকে মাথায় করে টেলিভিশনসহ মিছিল দিতে দিতে ছদরুলের বাড়ি চলে গেল । ছদরুলের মা খুব খুঁশি]
জিতে গেল পান্তাখোর ছদরুল ।
[সমাপ্ত]







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.