নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নগরবালক এর রোজনামচা

নগরবালক

উড়তে চাই, অনেক উপরে, ভোকাট্টা ঘুড়ীর মত, অনেক উপরে.।.।.।.।।

নগরবালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেলজিক গল্প ৪৯৭০

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০২

বেলজিক গল্প ৪৯৭০

কুউউউ ঝিক ঝিক, ঝিক ঝিক।
পার্বতীপুর স্টেশনে ট্রেন টা এসে থামলো। এখানে ট্রেন ৪৫ মিনিট দাড়াবে। ড্রাইভার চেঞ্জ হবে, ইঞ্জিন চেঞ্জ হবে, লাইন চেঞ্জ হবে। ও আচ্ছা বলতে ভুলে গেছি নূতন দুইটা বগিও লাগানো হবে। ছাদের উপরে, দরজায়, টয়লেটের ভেতরে, দুই বগির ফাকে কোথাও তিল পরিমান যায়গা নেই। এডভেঞ্চারের নেশায় মত্ব একদল তরূন যায়গা করে নিয়েছে ছাদের উপরে, বেসুরো আর হেড়ে গলায় গাইছে গগনবিদারী গান।

ডিজেল আর মবিল বিক্রির টাকায় কেনা ভাজা ইলিশ মাছ আর ভাত খেয়ে স্টেশনের দিকে দৌড় দিল ড্রাইভার রফিক। ট্রেনটা আজ তারই চালানোর কথা।

প্রচন্ড শব্দে আর্তনাদ আর প্রতিবাদ জানিয়ে যাত্রা শুরূ করলাম আমি। আমি এই ট্রেনের ইঞ্জিন। কত নাম ডাক সুনাম আর গর্ব ছিল আমার। শৌর্যবীর্য আর ক্ষমতায় আমার চেয়ে পারদর্শি আর কোন অটোমোবাইলের ছিল না। সেই আমার নিজেকে এখন ভারবাহী গাধার মত মনে হয়। ধারন ক্ষমতার চারগুন যাত্রী নিয়ে আমি চড়ে বেড়াচ্ছি শহর বন্দর নগর। আজ আরো বাড়তি দুইটা বগি লাগিয়ে দিয়েছে আমার ল্যাজে। মন মেজাজ আগুনের মত গরম। প্রবল শ্বব্দে গালি দিতে দিতে আমি এগিয়ে চলেছি আমার লক্ষ্য স্থলের দিকে। আপনার আমার এই গালির শব্দকেই ইঞ্জিনের ঘটাং ঘটাং আওয়াজ বলে শুনতে পাচ্ছেন। যদি আসলে আমার মনের কথা শুনতে পারতেন তাহলে লজ্জায় আপনাদের কান খসে পরে যেত। এইসব গালি আমার মত অভিজাত মেশিনের মুখে মানায় না। কিন্তু এখন আমি আর অভিজাত নই আমি এখন একটা ভারবাহী পশূ। এইসব গালি শিখেছি স্টেশনের কুলি, আর ছিন্নমূল মানুষের কাছথেকে।
যা বলছিলাম, আজ লোড একটু বেশীই হয়ে গেছে। প্রচন্ড কস্ট হচ্ছে আমার লক্ষ্যস্থলের দিকে এগিয়ে যেতে। দম বের হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা এটাতো আমার লক্ষ্যস্থল নয়। এটাতো আপনাদের লক্ষ্যস্থল। আমার লক্ষ্যস্থল আর কৌতুহলের যায়গা হচ্ছে মাঠের ঐ পাশে বিকালে যেখানে সূর্যটা ডুবে যায় ঠিক সেখানে।
মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।

অবৈধ টাকায় কেনা ঈলিশ মাছ, আজ একটু বেশীই খাওয়া হয়েছে। বেশ ঘুম ঘুম পাচ্ছে ড্রাইভার রফিকের।
এডভেঞ্চার প্রিয় ছেলেগুলা এখন এক হিজরাকে নাচাচ্ছে ছাদের উপরে, সেই সাথে নিজেরাও নাচছে।
বাদাম বিক্রি করছিল সালাম, পকেটমার আবদুল, স্কুল শিক্ষক জালাল। ধান বিক্রির টাকা নিয়ে ফিরছিল কৃষক সগীর।
ঘুম ঘুম ঘুম রফিক ড্রাইভার ঘুমায়।

শালার আর কতকাল আমি এভাবেই ছুটেযাবো।
কতকাল,,,,,,,,
আর কতকাল,,,,,,,,,,,,
আজ আমি যাবোই সূর্য যেখানে ডুবে সেই যায়গায়। সুতরাং লাইন থেকে ছুটে গেলাম আমি।
ধান ক্ষেত, তার পরে গ্রাম, তার পরে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। ওইতো অই মাঠের পরেই সূর্য ডুবছে। যাচ্ছি আমি কুউউউউউউউউ ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক।

খবরে প্রকাশ, অতিরিক্ত ওজন আর ড্রাইভারের ঘুমিয়ে যাওয়ার কারনে ট্রেন লাইনচ্যুত। প্রচুর প্রানহানী আর হতাহতের আশংকা। প্রথম চার বগি এবং ইঞ্জিন এমন ভাবে দুমরে মুচরে গেছে যে উপরে ভিতরে আর পাশে যারা ছিল তারা সবাই নিহত বলে ধারনা করা হচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.